কদরের রাতে করণীয় সমূহ কি কি?
কদরের রাতের ফজিলত সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত কিন্তু কিভাবে পালন করতে হয় তা নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়।।। আসুন আমরা কুরআন ও সহীহ্ হাদিসের আলোকে দেখি।।
★★রাতের সালাতের ফজিলতঃ
উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সা) বলেছেন। যে ব্যক্তি রাতে জেগে ওঠে (উপরোক্ত ) দু’আ পড়ে –
(দু’আর অর্থ ) “এক আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সব কিছুর উপরে শক্তিমান।
যাবতীয় হাম্দ আল্লাহ্রই জন্য, আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। আল্লাহ্ মহান, গুনাহ হতে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোন শক্তি নেই আল্লাহ্র তাওফীক ব্যতীত”। অতঃপর বলে, “হে আল্লাহ্ ! আমাকে ক্ষমা করুন”। বা (অন্য কোন ) দু’আ করে, তাঁর দুআ কবুল হয়। অতঃপর উযু করে (সালাত আদায় করলে ) তার সালাত কবুল হয়।
সহিহ বুখারী-১১৫৪
★★তারাবি সালাতঃ
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে সিয়াম পালন করেছিলাম। রমযান মাসে তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন না। যখন মাসের মাত সাত রাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল, তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র সালাত আদায় করতে লাগলেন রাত্রের তৃতীয় প্রহর অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। যখন মাসের ছয় রাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন না।
যখন পাঁচ রাত্র অবশিষ্ট রয়ে গেল তিনি আমাদের নিয়ে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন অর্ধ রাত্রি অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! যদি আপনি আমাদের নিয়ে অত্র রাত্রের অবশিষ্ট অংশেও নফল সালাত আদায় করতেন! তিনি বললেন,
যে ব্যক্তি ইমামের সাথে তারাবীহ্র সালাত আদায় করে ঘরে ফিরে যায় আল্লাহ তা’আলা তার জন্য পূর্ণ রাত্রি সালাত আদায় করার সওয়াব লিখে রাখেন। অতঃপর তিনি আমাদের নিয়েও তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন না এবং নিজেও আদায় করলেন না। যখন মাসের তিন রাত্রি অবশিষ্ট রয়ে গেল,
তিনি আমাদের নিয়ে ঐ রাত্রে তারাবীহ্র সালাত আদায় করলেন (এবং ঐ সালাতে) তাঁর সন্তান-সন্ততি এবং পরিবারবর্গও জড়ো হয়ে গেল। আমরা আশংখা করতে লাগলাম যে, “ফালাহ” না হারিয়ে ফেলি। আমি বললাম, “ফালাহ”-এর অর্থ কি? তিনি বললেন, সাহ্রি খাওয়ার সময়।
আন-নাসায়ী ১৬০৫
★★নফল/তাহাজ্জুদঃ
আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একজন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! রাতের বেলা সালাতের পদ্ধতি কি? তিনি বললেনঃ দু’ দু’ রাক’আত করে। আর ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলে এক রাক’আত মিলিয়ে বিত্র করে নিবে।
সহিহ বুখারী ১১৩৭
ইব্নু ‘ঊমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নবী (সা)-এর নিকট রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। আল্লাহ্র রসূল (সা) বললেনঃ রাতের সালাত দু’ দু’ (রাক’আত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হবার আশঙ্কা করে, সে যেন এক রাক’আত সালাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সালাত আদায় করলো, তা তার জন্য বিত্র হয়ে যাবে।
সহিহ বুখারী ৯৯০
(বিতর অধ্যায়)
আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সা) বলেছেনঃ রাতের সালাত দু’ দু’ রাক’আত করে। অতঃপর যখন তুমি সালাত শেষ করতে চাইবে, তখন এক রাক’আত আদায় করে নিবে। তা তোমার পূর্ববর্তী সালাতকে বিত্র করে দিবে। ক্বাসিম (রহঃ) বলেন, আমরা সাবালক হয়ে লোকদের তিন রাক’আত বিত্র আদায় করতে দেখেছি। উভয় নিয়মেরই অবকাশ রয়েছে। আমি আশা করি এর কোনটিই দূষনীয় নয়।
সহিহ বুখারী ৯৯৩
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা) রাতে দশ রাক’আত সলাত আদায় করতেন এবং বিতর পড়তেন এক রাক’আত। অতঃপর ফাজ্রের দু’ রাক’আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করতেন, এ নিয়ে সর্বমোট তেরো রাক’আত হতো।
আবু দাউদ ১৩৩৪
সহীহ :বুখারী ও মুসলিম
উরওয়াহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন, আল্লাহ্র রাসূল (সা) (তাহাজ্জুদে) এগার রাক’আত সালাত আদায় করতেন এবং তা ছিল তাঁর (স্বাভাবিক) সালাত। সে সালাতে তিনি এক একটি সিজদা এত পরিমাণ করতেন যে, তোমাদের কেউ (সিজদা হতে) তাঁর মাথা তোলার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারত। আর ফজরের (ফরজ) সালাতের পূর্বে তিনি দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি ডান কাতে শুতেন যতক্ষণ না সালাতের জন্য তাঁর কাছে মুআয্যিন আসত।
সহিহ বুখারী ১১২৩
সবচেয়ে ভালো হয় ২ রাকাত করে যত পড়া সম্ভব। তবে রাসুল (সা) এর আমল কিন্তু দীর্ঘ তিলোয়াত ও সময় আর রাকাত অল্প ছিলো, যা আমাদের সমাজে নাই। সুতরাং রাকতের চেয়ে কত সময় ধরে পড়া যায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ যা উপরের হাদিস গুলোর আলোকে বলা যায়। সালাতে দোয়া করার তিনটি স্থান রুকু, সিজদাহ্ এবং সলাম ফিরানোর পূর্বে ।
এই তিন যায়গায় বেশি করে হাদিসের দোয়া/ করআনের আয়াতের আংশিক পরিবর্তন করে পড়তে হবে। মাঝে কুরআন ও জিকির পড়বেন।। তবে বেশি সময় দিবেন সালাতে।। কেননা, সালাত হচ্ছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সর্বত্তম ইবাদত।। সালাতের মাধ্যমে যত বেশি ডাকা যায়, অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যমে সম্ভব নয়।।।
জিকিরের মধ্যে ও পার্থক্য রয়েছে। যা মোহাম্মদ (সা) অনুমোদিত সেগুলোর বাইরে যাওয়া যাবে না৷ কতিপয় জিকির হলোঃ
★ সুবহান আল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ
সহীহ মুসলিম- ১৩৮০
মিশকাত- ৯৬৭
★সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি ওয়া সুবহানাল্লাহি আজিম।
সহীহ বুখারী-শেষ হাদিস
মিশকাত- ২২৯৬-৯৮
★আল্লহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’আ ফুন্নী।
ইবনে মাজাহ- ৩৮৫০
তিরমিজি- ৩৫১৩
মিশকাত- ২০৯৩
★আল্লাহুম্মা ইন্নী আস আলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াহ ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।
আবু দাউদ- ৫০৭৪
★আল্লাহুম্মা ইন্নী আস আলুকাল হুদা ওয়াত তুক্বা ওয়াল আফা-ফা ওয়াল গিনা।
সহীহ্ মুসলিম- ২৭২১
তিরমিজি- ৩৪৮৯
মিশকাত- ২৪৮৪
ইবনে মাজাহ- ৩৮৩২
★ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পড়বেন।
সহীহ্ বুখারী- ৬৩০৬
আবু দাউদ- ৫০৭০
তিরমিজি- ৩৩৯৩
মিশকাত-২৩৩৫
সালাতের মাঝে বিরতিতে এসব জিকির এবং কুরআন তিলোয়াত করবেন।।
লক্ষনীয়ঃ
শুধু মাত্র ২৭ রামাদান সম্পর্কে যে হাদিস সহীহ মুসলিমে আছে, তা ১জন সাহাবীর নিজস্ব মত যে, ২৭ রামাদান হতে পারে।।
সহীহ মুসলিম- ৭২৬, ১১৬৯
মিশকাত- ২০৮৮
মুহাম্মদ (সা) নির্দিষ্ট করে কোন রাতের কথা বলেন নী, বরং তিনি শেষ দশকের বিজোড় রাতের কথা বলেছেন।
সহীহ বুখারী- ২০২৩
মিশকাত- ২০৯৫
মুহাম্মদ (সা) বলেন, ক্বদরের রাতে বৃষ্টি হতে পারে এবং পর দিন সকালে সূর্যের আলোর তেজ থাকবে না
সহীহ্ মুসলিম- ৭২৬, ১১৫৯
মিশকাত- ২০৮৮
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআন ও সহীহ হাদিস অনুযায়ী আমল করার এবং ভুল গুলো সংশোধন করার তৌফিক দান করুক।।।
আমিন
👉 বিপদের সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে ৩টি দোয়া পাঠ করতেন:
👉 অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা:
👉 প্রশ্ন: খারাপ স্বপ্ন দেখলে কী করণীয়?: