দুআ কবুলের গল্প
ঘটনা সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের । কোন এক রামাদ্বান মাসের ঘটনা । এক দ্বীনদার মহিলার এক দু’আ কবুলের গল্প । প্রতিদিন ইফতারের আগ মুহুর্তে
তিনি দু’আ করতেন । তিনি তাঁর সন্তানদের কাছে ডেকে বলতেন , “ বাচ্চারা ! আমি যা যা বলে দু’আ করব , তােমরাও আমার সাথে তাই তাই বলে দু’আ
করবে । এরপর তিনি আসমানের দিকে দুই হাত উঠিয়ে বলতেন , “ হে আমার রব ! আপনি আমাদেরকে এমন একটি বাড়ি দান করুন , যার সামনে থাকবে
একটি প্রবাহিত নদী । ” স্ত্রীর কণ্ঠে প্রতিদিন এই দু’আ শুনে পাশ থেকে তাঁর স্বামী হাসতে হাসতে বলত , “ তুমি ঘরের ব্যাপারে দু’আ করছে , সেটা না হয় বুঝলাম
, কিন্তু ঐ ঘরের সামনে নদী থাকার বিষয়টি বুঝলাম না । এই মরুভূমির দেশে বাড়ির সামনে নদী আসবে কোত্থেকে বলােতাে ? ” তাঁর স্ত্রী প্রচন্ড
আত্মবিশ্বাসের সাথে তাঁর এই প্রশ্নের জবাব দিতেন । তিনি বলতেন , “ আপনার এটা জানার কি দরকার বলুনতাে ! এটা আল্লাহ্ তা’য়ালা আর তাঁর
এক বান্দীর ব্যাপার । আপনি বারবার কেন মাঝখানে ঢুকে যাচ্ছেন । তিনি তাে বলেছেন , “ আমার কাছে চাও , আমি দান করব ।
আমার মনে যা আসে আমি তা – ই চাইতে থাকব , বারবার চাইতে থাকব ।
তাকে কোন মতেই থামানাে যাচ্ছিল না । প্রতিদিন ইফতারের আগ দিয়ে রুটিন মাফিক তিনি এই দু’আ করতেন । আল্লাহর রব্বল ইজ্জাহর প্রতি তাঁর ছিল অগাধ
বিশ্বাস । বান্দা তাঁর রবকে যেমন ভাববে , তাকে সেরকমই পাবে । এই হল আল্লাহ ও বান্দার মাঝে বােঝাপড়ার সমীকরণ । তিনিই তাে তাঁর বান্দাকে
অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন । নদী কেন , বান্দাকে নিয়ামতের সাগরে ভাসিয়ে দিতেও তিনি পরওয়া করেন না । দেখতে দেখতে
গােটা রামাদ্বান মাস চলে গেল । শাওয়ালের চাঁদ উঠল । ঈদুল । ফিতর সম্পন্ন হল । কিন্তু তাঁর দু’আ তখনও কবুল হল না । একদিন তাঁর স্বামী হাসতে হাসতে
বলেই ফেলল , “ কি গাে , কোথায় তােমার বাড়ি আর কোথায় । সেই নদী !! ” তাঁর স্ত্রীর বিশ্বাসে কোন ঘাটতি বা কমতি নেই । ভিতরে তখনও ঈমানী হাওয়াহ
বইয়ে চলছে । সে বলল , “ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অবশ্যই বড় বাড়ি দান করবেন । আপনি দেখে নিয়েন , তিনি আমাদের সকল উদ্দেশ্য পূরণ করে
দিবেন । প্রিয় পাঠক ! এরপরের ঘটনা অলৌকিক । ঐ নারীর মুখেই শুনি চলুন “ আমি শাওয়াল মাসের ছয়টি রােজা শেষ করেছি মাত্র । একদিন এক
আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে গেল । আমার স্বামী আসরের সলাত শেষ করে মাত্রই মাসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন । এমন সময় রিয়াদের এক ধনাট্য ব্যক্তি উনার
রাস্তা আগলে দাঁড়ালেন । আমার স্বামী এর আগে কোনদিনই তাকে দেখেননি । তাঁর সাথে আগে থেকে কোন চেনাজানাও ছিল না তাঁর । লােকটি উনাকে
সালাম দিয়ে বললেন , “ আমার একটি বাড়ি আছে , ঐ বাড়ির একাংশে আমার আব্বা থাকেন । আর বাকী অংশ খালি পড়ে থাকে । আল্লাহ তায়ালা আমাকে ।
| ও আমার সন্তানদেরকে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহে অনেক কিছুই দান করেছেন । এই মূহুর্তে আমাদের ঐ অর্ধেক বাড়ির কোন প্রয়ােজন নেই । আজ আমি এই ।
নিয়তে ঘর থেকে বের হয়েছি যে , আসরের সলাতের পর মাসজিদ থেকে যে,
বাক্তি প্রথমে বের হয়ে আসবে , আমি তাকে আমার ঐ বাড়ির অর্ধেক অংশ দান । করে দিব । আর আপনিই হলেন সেই প্রথম ব্যক্তি । ভাই ! হাদিয়াস্বরুপ আপনি
আমার অর্ধেক বাড়ি গ্রহণ করুন । আছে , যদি মূল্য কিন্তু মূল্য পরিশােধ করা ছাড়া বাড়িটি নিতে আমরা সংকোচবােধ করছিলাম । বাড়ির মালিক আমাদের
অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন , পরিশােধ করতেই চান , তাহলে আপনাদের জন্য যতটুকু সহজ হয় , ততটুকু দিলেই চলবে , এর বাইরে আমার আর কোন চাওয়া
– পাওয়া নেই । আমরা আমাদের জমানাে অর্থগুলাে একসাথে করলাম । সর্বসাকূল্যে আট হাজার রিয়াল জমা হল । আমরা লােকটিকে নগদ অর্থ বুঝিয়ে
দিয়ে আল্লাহর ফজলে ঐ বাড়ির অর্ধাংশের মালিক হলাম । ঘরটি রিয়াদের এক অত্যাধুনিক এলাকায় অবস্থিত । সত্য কথা বলতে , আল্লাহ তায়ালাকে কেউ
খাস দিলে ডাকলে , তিনি তার ডাক অবশ্যই শুনেন । শুধু একটু আপন করে ডাকার মত ডাকলেই হয়ে যায় । কিন্তু একটি বিষয় আমি তখনও বুঝতে পারলাম
না । একটি প্রশ্ন আমার মাথার মধ্যে নানাভাবে ঘুরপাক খেত । আমি তাে আল্লাহর কাছে এমন একটা বাড়ি চেয়েছিলাম , যার সামনে একটি প্রবাহমান
নদী থাকবে । বাড়ি তাে মিলে গেল , কিন্তু তার সামনে তাে কোন নদী নেই ? একদিন আমি এক শায়খের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম , আল্লাহ তা’য়ালা তাে
বলছেন , “ আমার কাছে চাও , আমি তােমাদেরকে দিব । আমি আল্লাহর কাছে । নদীর কিনারায় বাড়ি চাইলাম । বাড়ি পেলাম , কিন্তু তাঁর সামনে কোন নদী তাে
পেলাম না । শায়খ ! আমার দু’আ কবুলের ঘটনা শুনে আশ্চার্যান্বিত হলেন । সর্বাগ্রে আল্লাহর প্রশংসা করলেন । এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন , “ এখন
আপনার বাড়ির সামনে কি আছে ? – আমি বললাম , তেমন কিছু না , তবে সুন্দর একটি মাসজিদ আছে । শায়খ তখন মুচকি হেসে বললেন , “ এটাই তাে সেই নদী । “
আপনি জানেন না রাসুলুল্লাহ সাঃ সাহাবিদের উদ্দেশ্যে কি বলেছিলেন ? তিনি বলেছিলেন আচ্ছা বল তাে , তােমাদের কারাে বাড়ির দরজার কাছে যদি একটি
নদী থাকে , আর সে নদীতে ( প্রতিদিন ) পাঁচবার গােসল করে , তাহলে কি তার শরীরে কোনাে ময়লা থাকতে পারে ? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন , ‘ না ’ ,
কোনাে ময়লা থাকতে পারে না । তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন , এ হলাে পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের দৃষ্টান্ত । এ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন । ”
( ১ ) 25 . 5 . তথ্যসূত্র : মাওক্কাউ মুনতাদায়াতি মাদিনাতিল আহলাম মিন
কিসমি রামাদান থেকে ভাবানুবাদ । ১। বুখারি , মুসলিম , নাসাঈ , তিরমিজি , মুসনাদে আহমদ , ইবনে হিব্বান , তারগিব)