বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
স্ত্রী ও সন্তানদের মরুভূমিতে নির্বাসনের পর ইব্রাহিম যখন তার পরিবারের খোঁজে পুনঃরায় সেখানে গেলেন, তখন তাদের বেঁচে থাকা দেখে আনন্দে আপ্লুত হলেন।
সেখানে তাদের থাকার সু-ব্যবস্থা এবং জীবিকা অর্জণের সু-বন্দোবস্ত দেখে আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন। অতঃপর তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন-
যে সর্বশক্তিমান, দয়ালু আল্লাহ তার সন্তান, পরিবারকে নির্জন মরুভূমিতে আহার্য জুটিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন, তাঁর কোন অনাহারী বান্দাকে আহার না করিয়ে তিনি কখনও আহার গ্রহণ করবেন না।
হিব্রোণে ফিরে এসে ইব্রাহিম তার গৃহ সংলগ্নকরে একটি মেহমানখানা নির্মাণ করলেন। তিনি সারা বৎসরই প্রায় রোজা রাখতেন।
এ কারনে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একজন অতিথি ডেকে এনে ঐ মেহমান খানায় তার সঙ্গে আপ্যায়ণ করতেন।
প্রতিদিনের মত একজন অতিথির খোঁজে ইব্রাহিম পথের ধারে বসে আছেন। সন্ধ্যা প্রায় সমাগত কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন অতিথির দেখা নেই।
অতঃপর জনৈক অচেনা লোকের সাথে তার সাক্ষাৎ হল। তিনি তাকে সমাদর করে নিজ গৃহে নিয়ে এলেন।
খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। যখন উভয়ে খাবার খেতে শুরু করবেন তখন ইব্রাহিম আগন্তুক মুসাফিরকে বললেন, ‘বলুন, আল্লাহর নামে শুরু করছি।’
অতিথি লোকটি ছিল পৌত্তলিক। সুতরাং সে বলল, ‘আল্লাহ কাকে বলে আমি জানি না।’
তার এ কথায় ইব্রাহিম রাগান্বিত হয়ে তাকে তাড়িয়ে দিলেন। যখন সে বের হয়ে গেল তখুনি জিব্রাইল উপস্থিত হল এবং তাকে বলল,
‘আল্লাহ বলেছেন-আমি ঐ ব্যক্তির কুফরী জানা সত্ত্বেও তাকে সারা জীবন আহার্য ও পানীয় দিয়ে আসছি। আর তুমি তাকে একবেলা খাবার দিতে পারলে না?’
একথা শুনে ইব্রাহিম তৎক্ষণাৎ ঐ ব্যক্তিকে খুঁজতে বের হয়ে পড়লেন। অবশেষে তাকে খুঁজে পেয়ে গৃহে ফিরিয়ে আনলেন। কিন্তু খাবার সময় ঐ ব্যক্তি বেঁকে বসল।
বলল, ‘আপনি প্রথমে আমাকে তাড়িয়ে দিলেন-পরে আবার সাধাসাধী করে কেন নিয়ে এলেন তা না জানা পর্যন্ত আমি খাবার স্পর্শ করব না।’
ইব্রাহিম ঘটনা বর্ণনা করলেন। এতে পৌত্তলিক লোকটির মধ্যে ভাবান্তর হল-তার চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। ক্ষণকাল মৌণতা অবলম্বনের পর সে বলল,
‘তিনি সত্যিই পরম দয়ালু। Bismillah, আল্লাহর নামে শুরু করছি।’
তারপর সে খাবার খেতে শুরু করল।