বাদশাহ হারুনুর রশিদের রাণী ছিল চারজন। চারজনই রূপসী। চাঁদের মতো সুন্দরী। একজন বাঁদি ছিল। সে ছিল কালো ও কুৎসিত। কিন্তু বাদশাহ তার রমণীদের যতই-না ভালোবাসতেন, এই কালো বাঁদিকে এর চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন!
তাই চার রমণী একজোট হয়ে বাদশাহর কাছে গিয়ে নালিশ করল, ‘আমরা আপনার রমণী, সে হলো আপনার বাঁদি। তা ছাড়া আমরা হলাম রূপসী ও সুন্দরী, সে হলো কালো ও কুৎসিত; কিন্তু আপনি আমাদের চারজনকে যতই-না ভালোবাসেন, সে একা একজনকে তার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। এর কারণ জানতে চাই আমরা।
বাদশাহ তাদের প্রশ্ন শুনে নিশ্চুপ রইলেন। মনে মনে ভাবলেন, তাদেরকে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে। কিছুদিন পর বাদশাহ তার সব সম্পত্তি ও ধনভান্ডার উন্মুক্ত করে দিলেন। হিরা, মুক্তা, জওহর ও পান্না সবকিছু পেশ করলেন। এরপর বাদশাহ বললেন, ‘আজ সবকিছু তোমাদের জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ আমার যেকোনো বস্তুর ওপর হাত রাখলে নিমিষেই সে তার মালিক হয়ে যাবে!’ এ সুযোগে সবচেয়ে দামি ও উত্তম বস্তুটির কীভাবে মালিক হওয়া যায়, সব রানিই সে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলো।
কিন্তু এ কালো বাঁদি বাদশাহর অদূরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রানিরা বলাবলি করল, ‘দেখো না, বাদশাহর ধনভান্ডার বণ্টন হচ্ছে, কিন্তু নাদান বাঁদি দাঁড়িয়ে আছে।’ তখন বাঁদি বাদশাহকে সম্বোধন করে বলল, ‘আপনি যে ফরমান জারি করলেন তা পুনরায় বলুন তো?’ বাদশাহ বলল, ‘আজ সবকিছু তোমাদের জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ আমার যেকোনো বস্তুর ওপর হাত রাখলে নিমিষেই সে তার মালিক হয়ে যাবে!’ বাদশাহ এ কথা শেষ না করতেই বাদি বাদশাহর মাথায় হাত রেখে বলল, ‘আপনার মাথায় হাত দিলাম। সুতরাং আপনি আমার ৷’
হাকিমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলি থানবি (রহমাতুল্লাহ আলাইহ) উক্ত বাঁদির অবস্থা বর্ণনা দিয়ে বলতেন, ‘তোমরা নিয়েছ জিনিস, আমি নিয়েছি গিরিছ (মালিক)।’
মাল-সম্পদ দিয়ে কী হবে যদি মালিককে পাওয়া না যায়? আর মালিককে পেলে মাল সম্পদের তো অভাব থাকবে না। সেজন্য তো আল্লাহর অলি-বুজুর্গরা বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে পেয়েছে সে সবকিছু পেয়েছে। আর যে আল্লাহকে পায়নি, দুনিয়ার সব বস্তু পেলেও সে কিছুই পায়নি।”
হযরত শাকীক বলখী (রহমাতুল্লাহ আলাইহ) কেউ জিজ্ঞাসা করলো যে,
“মানুষ আমাকে নেককার বলে, এখন আমি কিভাবে বুঝবো যে, আমি নেককার না বদকার?” তিনি উত্তর দিলেন, তিনটি গুণের দ্বারা বুঝতে পারবে:
(১) নিজের অন্তরের অভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গদের কাছে বর্ণনা কর। যদি তারা তা পছন্দ করেন, তবেই তুমি নেককার অন্যথায় বদকার ।
(২) স্বীয় অন্তরের সামনে দুনিয়াকে পেশ কর। যদি সে পার্থিবতাকে দূরে ঠেলে দেয় তা হলে তুমি নিজেকে নেককার জানবে অন্যথায় বদকার জানবে।
(৩) নিজের সামনে মৃত্যুকে উপস্থিত কর। যদি অন্তর ইহার উপর সন্তুষ্ট থাকে আর আনন্দ পায় তবেই নিজেকে নেককার মনে করবে, অন্যথায় নহে।
যদি কেউ এই তিনটি গুণ লাভ করতে পারে, তবে তার জন্য উচিত সে যেন আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে এবং স্বীয় অক্ষমতা প্রকাশ করে। যাতে তার আমলে রিয়ার সঞ্চার না হয়। আর রিয়া সমস্ত আমলকেই ধ্বংস করে দেয়।
সূত্রঃ তাম্বীহুল গাফিলিন ও জীবন গড়ার পাথেয়, মুফতি শামসুদ্দিন জিয়া হাফিযাহুল্লাহ, চেতনা প্রকাশন, পৃষ্ঠা ২৭-২৯.
[দ্বীনী ইলম প্রচারের {দাওয়াত ও তাবলীগের} নিয়তে অন্যদের কাছেও কথাগুলি গুলি পৌঁছে দেই বা Share করি, ইনশাআল্লাহ বহুত নেকী ও ফায়দা হবে]
সফলতার চাবি, জান্নাতে যাবার কলেমা:
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে দিলের মধ্যে খাঁটি শিরকমুক্ত ঈমান দান করুন, জামাতের সাথে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার এবং আলেমদের ও বুজুর্গদের সোহবতের সংস্পর্শে ইসলাহী নফস, দিলে উম্মতের দরদ নিয়ে দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ এবং ঈমান ও আমলের মেহনত করার তাওফীক দান করুন…আমিন।
আল্লাহ হাফেজ।