আক্ষেপহীন নিঃসন্তান মা আয়েশা রাঃ এর কথাঃ
নারীদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ
মুমিনদের মা,আবু বকর রাঃ এর কন্যা,আল্লাহর হাবীব সাঃ এর পবিত্র স্ত্রী আয়েশা রা.-এর কোনও সন্তান ছিল না।
তিনি সন্তানসম্ভবা হয়েছিলেন, এমন কোনও তথ্যও হাদীসে নেই। নবীজির ঘরে খাদীজা রা.-এর ছয়জন সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিলো।
চার কন্যা, দুই ছেলে। এটা দেখে আয়েশা রা.-এর মনেও আশা জাগা বিচিত্র কিছু ছিলো না, আমারও সন্তান হোক!
কিন্তু তিনি সন্তানের জন্যে দোআ করেছেন বা নবীজির সাঃ কাছে দোআ চেয়েছেন এমন কোনও নজীর হাদীসে নেই বলেই জানি। অথচ তিনি ছিলেন
নবীজির সাঃ প্রিয়তম স্ত্রী। সন্তান চাওয়া অন্যায় কোনও কিছু নয়। নবীজিকে বললেই হতো।তিনি আল্লাহর কাছে দোআ করতেন। আয়েশা রাঃ এমনটা করেন নি।
নবীজি যখন ইন্তেকাল করেন, তখন আয়েশা রাঃ এর বয়স মাতর আঠারো । তিনি ইন্তেকাল করেছেন ৫৮ হিজরীতে।
তার মানে নবীজির সাঃ পরও তিনি প্রায় ৪৭ বছর বেঁচে ছিলেন। এই দীর্ঘ সময় তিনি স্বামী সন্তান ও সংসার ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছেন।
কখনো সন্তান বা সংসারের জন্যে সামান্য আক্ষেপ করেছেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই। তিনি ইলমচর্চা, ইবাদত-বন্দেগী,
শিক্ষকতা-ফতোয়াপ্রদান করেই জীবনের পুরো সময়টা কাটিয়ে দিয়েছেন। বড় বড় সাহাবী রাঃ গণ তার কাছ থেকে পাঠ নিয়েছেন। তিনি মদীনার সমস্ত মহিলাকুলের শিক্ষিকা ছিলেন।
সন্তান না হলে একজন মেয়ের জীবন ব্যর্থ হয়ে যায় না।
স্বামী মারা গেলে একজন মেয়ের জীবন থমকে যায় না।
মা-বাবা মারা গেলে একজন মেয়ের জীবন স্থবির হয়ে পড়ে না।
সংসার না হলে একজন মেয়ের জীবন অর্থহীন হয়ে যায় না।
এগুলো কোনটাই ব্জীবনের ব্যর্থতা বা সফলতার মানদন্ড নয়।
কোন কিছু পাওয়া না পাওয়া আল্লাহতা’লার ইচ্ছা,এতে বান্দার ভালো বা মন্দ হওয়া প্রতিফলিত হয় না।আবার কখনো আল্লাহ তা‘আলা যা ছিনিয়ে নেন, তার চেয়ে উত্তম কিছু বান্দাকে দান করেন।
দুনিয়া একটি পরীক্ষার স্থান। কেউই এখানে পরীক্ষা দেয়া ছাড়া থাকতে পারে না।সন্তানাদি থাকা যেমন পরীক্ষা,না থাকাও তেমনি পরীক্ষা।
আয়েশা রাঃ বিষয়টা ভালভাবে জানতেন এবং কর্মের মাধ্যমে তা মেনে দেখিয়েও দিয়ে গিয়েছেন।জীবনকে তিনি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন।
আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থেকেছেন। সবর-শোকরের সাথে জীবন কাটিয়েছেন।
চপল কিশোরী অবস্থায় বিয়ে হলেও তিনিই ছিলেন রাসুলে কারীমের সবচেয়ে আস্থাভাজন স্ত্রী।
হিজরতসহ জীবনের বহু বিষয়ে তিনি আয়েশা রাঃ এর সাথে পরামর্শ করেছেন।
ইফকের ঘটনায় আল্লাহ সরাসরি তার বিষয়ে আসমানী ওহী নাযিল করেছেন।তিনি কুরআন কারীমকে সাথী বানিয়েছেন,
হাদীসচর্চাকে জীবনের অনুষঙ্গ বানিয়েছেন। সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারীদের মাঝে অন্যতম হলেন হযরত আয়েশা রাঃ । তিনি রাসুল সাঃ থেকে ২২১০ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
বুখারী ও মুসলিম যৌথভাবে (মুত্তাফাকুন আলাইহি) ১০৭৪ টি, এককভাবে বুখারীতে ৫৪ টি এবং মুসলিমে ৫৮ টি হাদীস তার সুত্রে উল্লেখ রয়েছে।
সাহাবী আবু মুসা আশআরী রাঃ বলেন,যখন কোন হাদীস বুঝতে আমাদের অসুবিধা হতো আমরা সরাসরি আয়েশার কাছে চলে যেতাম।
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ তাকে “উম্মাহর ফকীহা” হিসাবে বিবেচনা করতেন। রাসুলের সাঃ আর কোন স্ত্রী ফতোয়া দেবার মতো স্টেটাস অর্জন করতে পারেননি।
রাসুলুল্লাহ সাঃ রাতের তাহাজ্জুদ সব সময় আয়েশার বিছানায় পড়েছেন। হাদীসে এসেছে,তিনি যখন সিজদা দিতেন তখন বিছানা সংকীর্ণ হবার কারণে
মা আয়েশার পা রাসুল সাঃ এর মাথা স্পর্শ করতো আর তিনি পা গুটিয়ে ফেলতেন। আরো বিস্ময়ের বিষয় যে বিবি খাদিজার রাঃ পর আয়েশার সাঃ সাথে
থাকাকালীন আল্লাহর রাসুল সাঃ ওহী পেয়েছেন,অন্য স্ত্রীগণের এ অভিজ্ঞতা হয়নি।সবশেষ ইন্তেকালের সময়ও রাসুলুল্লাহ সাঃ আয়েশার সান্নিধ্যে ছিলেন এবং তার হুজরাতেই তাকে শায়িত করা হয়।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকে স্বপ্নে তোমাকে দেখানো হয়। একজন ফেরেশতা রেশমের টুকরোতে করে তোমাকে নিয়ে আসে। তিনি বলেন, ইনি আপনার স্ত্রী।
অতঃপর আমি চেহারা খুলে তোমাকে দেখতে পাই। আমি বললাম, ইনি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকলে তা যেন অবধারিত হয়।’(উম্মুল মুমেনীন,ইয়াসির ক্বাদিহ)
একবার আমর বিন আস (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনার কাছে প্রিয়তম ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, আয়েশা।
আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে? তিনি বলেন, তাঁর বাবা।…’। (বুখারি, হাদিস : ৩৬৬২)
আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পূর্ণতা অর্জন করেছেন।
তবে নারীদের মধ্যে পূর্ণতা অর্জন করেছেন কেবল মারইয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া।
আর সব খাবারের মধ্যে সারিদ যেমন, তেমনি সব নারীদের মধ্যে আয়েশা শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
আয়িশা রাঃ ছিলেন নবী মুহাম্মদ সাঃ এর তিনজন কুরআন মুখস্থকারী স্ত্রীদের মাঝে একজন। জনগণ তাকে নবীজি সাঃ এর কাছ থেকে “সিদ্দিক”(সত্যবাদী)
উপাধি প্রাপ্ত আবু বকর রাঃ এর কন্যা হিসেবে “সিদ্দিকা বিনতু সিদ্দিক”(সত্যবাদীর কন্যা সত্যবাদিনী) বলে ডাকতো।
ইসলামের ঐতিহ্য অনুসারে, তাকে “উম্মুল মু’মিনিন” বা “বিশ্বাসীদের মাতা” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।