মায়াজাল
হঠাৎ করেই জীবনে ঝড়টা এসে পুরো
জীবনটাই পালটে দিলো। ভেবেছিলাম কি
আর কি হয়েছে,,,নিজের ভালোবাসার
মানুষটিও আমাকে বিশ্বাস করলো না।
[ও হ্যাঁ আপনাদের পরিচয় দেই আমি নুসরাত
আর যাকে ভালোবাসি তার নাম নীল। আমি
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান,, মানে আমার
আরো এক ভাই আছে।]
এবার আসি মূল কথায়,,,
কয়েকদিন আগের কথা……
নীল ছেলেটাকে অসম্ভব ভালোবাসতাম
আমি। সেও ভাসতো। সুখেই চলছিল দিনগুলা।
কিন্তু,,কথায় আছে না বেশি সুখ সহে না।
তেমনটাই হয়েছে আমার সাথে।
একদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম।
কলেজে প্রোগ্রাম থাকার কারণে সন্ধ্যা
হয়ে গেছিলো,, তার মাঝে ঝুম বৃষ্টি,, কোন
রিক্সাইই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।
হঠাৎ,,অজানা এক ব্যক্তি আমার সামনে এসে
গাড়ি ব্রেক করে।
-আমি কি আপনাকে কোন সাহায্য করতে
পারি(অজানা)
-কিছু সময় অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম,,কারণ
উনি কথাটি বলছিলেন নিচের দিকে
থাকিয়ে। না ঠিক আছে ধন্যবাদ।(নুসরাত)
-আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আর এই
বৃষ্টি মাঝে গাড়ি ও পাবেন না। যদি কিছু
মনে না করেন আপনাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে
দিতে পারি।(অজানা)
-এবার আমার খুব রাগ হলো,,আমি চেঁচিয়ে
বললাম,,বললাম তো আমার কোন সাহায্যের
প্রয়োজন নেই, তারপর ও কেন বারবার বিরক্ত
করছেন
। (নুসরাত)
-ওহ,,দুঃখিত! ঠিক আছে আল্লাহ হাফিজ।
(অজানা)
উনি চলে গেলেন,,আর আমি এই বৃষ্টির মধ্যেই
হাটতে লাগলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর। একদল
ছেলেদের দেখতে পেলাম।
ওরা আমার দিকেই আসছিল। ভয়ে আমার
আত্মা বেড়িয়ে আসার মতো।
-দুস্ত কি সুন্দর দেখেছোস মেয়েটে। আর
আজকে ওকে উঠিয়ে নিয়ে যাই।
ওকে দুস্ত চলো সবাই। (ছেলেগুলা)
-এটা শুনার পর আমি প্রাণপনে দৌড়াতে
লাগলাম।
ছেলেগুলাও আমার পেছনে দৌড়াতে শুরু
করলো।
আমি দৌড়াতে হঠাৎ করেই কিসের সাথে
বাড়ি খেলাম।
তারপর…
আমি দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ একটা গাড়ির
সাথে বারি খেয়ে পড়ে গেলাম।
তারপর,,আর কিচ্ছু মনে নেই। যখনি চোখ
খুললাম দেখলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি।
চারিদিকে চোখ বুলিয়ে যা বুঝতে পারলাম,,
এটা তো আমার ঘর না।
তখনই মনে পড়ে গেলো,,আমাকে তো একদল
ছেলেরা ধাওয়া করছিলো।
তাহলে আমি এখানে কি করে,, এসব ভাবতে
ভাবতে হঠাৎ চোখ গেলো,,আমার সামনে
একজন বয়স্ক মহিলা সোফায় বসে ঝিমুচ্ছে।
আর তখনি,,আমি দিলাম এক চিৎকার,,, আমার
চিৎকারে মহিলাটি ধড়ফড়িয়া উঠল। আর আমি
ভয়ে শেষ। এ কোথায় আসলাম আমি। আর কি
করে ।
আমার চিৎকারে আরো কে যেন দৌড়ে আসল।
ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম। আরে এই
তো সেই অজানা লোকটি।আমি এখানে কি
করে আসলাম।
উনি মাথা নিচু করে
সালাম দিলেন,,
-আসসালামু আলাইকুম কি হয়েছে আপনার…?
(অজানা)
-আমি এখানে কি করে আসলাম। আর ইনি বা
কে(মহিলা কে উদ্দেশ্য করে)
-ইনি আমার মা। আর আপনি দৌড়াতে
দৌড়াতে আমার গাড়ির সামনেই এসে
পড়েছিলেন। তাই আপনাকে আমার বাড়িতে
নিয়ে আসলাম। মা আপনি উনাকে ফ্রেস
করে। কিছু খাইয়ে দিন। উনি দুর্বল। (অজানা)
-আচ্ছা বাবা,,আমি খাইয়ে দিবো নে। তর কি
কোন কাজ আছে বাবা ইমন(মহিলা)
ওহ উনার নাম তাহলে ইমন,,। একটা জিনিস
ভেবে পাইনা। উনি একটিবারের জন্য ও
আমার দিকে তাকালেন না।
সবসময় মাথা
নিচু করে কথা বলেন কেন। উনার কি কোন
সমস্যা না কি(মনে মনে নুসরাত কথাগুলা
বলছে)
তখনি উনি বললেন,,,
-হ্যাঁ,,মা কিছু কাজ ছিলো অফিসে,,তাই
যেতে হচ্ছে।
চিন্তা করবেন না আমি তাড়াতাড়ি ফিরবো।
(ইমন)
তখনি আমি বললাম,,
-প্লিজ আমাকে আমার বাসায় দিয়ে আসুন।
আমি সুস্থ আছি(নুসরাত)
-না,,মা তুমার এখন বিশ্রাম এর প্রয়োজন। তুমি
একটু বিশ্রাম নাও। কাল সকালেই ইমন
তোমাকে দিয়ে আসবে মা।(ইমনের মা)
-হ্যাঁ,,আপনি বরং বিশ্রাম নিন। আর কালকেই
আপনাকে বাড়ি দিয়ে আসবো..(ইমন)
আমার আর কি বলার,, আমি বললাম,,,
-জ্বী ঠিক আছে।
-আল্লাহ হাফিজ,,
বলেই উনি বেড়িয়ে গেলেন।
-আচ্ছা মা তুমি বিশ্রাম নাও আমি তুমার জন্য
খাবার নিয়ে আসছি(ইমনের মা)
-না,,আন্টি আপনি কেন কষ্ট করবেন। আমার
খিদে নেই। প্লিজ এমনিতেই অনেক সাহায্য
করছেন আর না।
-না মা এইটা কেমন কথা। তুমি অসুস্থ,, খাবার
খেয়ে ঔষধটাও খেতে হবে।
আমি আসছি।
এই বলে মহিলাটি বেড়িয়ে গেলেন। আমি
ঘুরে ঘুরে পুরো ঘরটা দেখছি। অনেক সুন্দর
করে সাজানো গুছানো। খুবই সাধারণ।
রুমে একটা বেড,,একটা টেবিল। সোফা।
আরে এ তো দেখি বইয়ের দোকান। এতো বই।
বইগুলা ভালোভাবে গিয়ে লক্ষ করলাম।
সবগুলা ইসলামিক বই।
আমি তো অবাক হচ্ছি। এখনকার যুগে কি
কেউ এইরকম ইসলামিক বই পড়ে। উনার কথা
বলার ভঙ্গি ও অনেক নম্র ও শান্ত।
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম,,উনারা খুব ধার্মিক।
-কি মা তুমি উঠে গেলে কেন,,?
হঠাৎ কারো কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলাম,,।
তারপর দেখলাম,,,,,,,
হঠাৎ চমকে উঠলাম কারো কন্ঠ শুনে,, পেছনে
ফিরে দেখি আন্টি দাঁড়িয়ে আছেন। উনার
সাথে ছোট একটা ছেলে বাবু ও দাঁড়িয়ে
আছে। বাবুটা দেখতে খুব মিষ্টি… ।
-তুমি কেন উঠলে মা,,অসুস্থ শরীর নিয়ে
(ইমনের মা)
-সমস্যা নেই আন্টি ঠিক আছি আমি(নুসরাত)
-আচ্ছা,,এই নাও খাবারটা খেয়ে নাও। খেয়ে
ঔষধটাও খেয়ে নিও। কেমন?
-জ্বী,,এই বলে খেতে লাগলাম। কিন্তু,,হাতে
প্রচণ্ড ব্যাথার কারণে খেতেই পারছি না।
মনে হয় ব্যাথাটা খুব বেশিই পেয়েছি।(মনে
মনে নুসরাত কথাগুলা বলছিল)
-আচ্ছা বুঝেছি। দাও আমার কাছে দাও,,আমি
খাইয়ে দিচ্ছি। এই বলে আন্টি আমাকে
খাইয়ে দিতে লাগলেন(ইমনের মা)
-আমি তো অবাক হয়েই চেয়ে আছি। হঠাৎ,,
আমার চোখটা ছলছল করে উঠল ।
-কি রে,,রান্না কি ভালো হয় নি। কাঁদছিস
কেন। আচ্ছা আমি আবার রান্না করে নিয়ে
আসি। আসলে কি যে হল।
আন্টি কথাগুলা বলছিলেন। আর আমি উনার
দিকেই অবাক হয়ে চেয়ে আছি। কারণ,,এইরকম
আদর করে আমার মা ও আমাকে খাইয়ে দেন
নি। তাই কান্না চলে আসলো…
-আরে আন্টি কি বলছেন। হঠাৎ,,করে এতো
আদর পেয়ে সুখে কান্না চলে আসলো। আর
অচেনা অজানা মানুষককে এতো আদর কেউ
করে। আমি আপনাদের দেখে সত্যি অবাক
হচ্ছি আন্টি। আপনারা অনেক ভালো ।
-আরে মা,,কি যে বলনা। মেহমানদের সাথে
ভালো ব্যবহার করা আমাদের নবী মুহাম্মদ
(সঃ) বলে গেছেন। এতে আল্লাহ ও খুশি হন।
নাও তো খেয়ে নাও।
-আন্টি আমাকে খাইয়ে দিয়ে ঔষধটাও
খাইয়ে দিলেন। আর পিচ্চিটা এতক্ষণ শুধু
তাকিয়েই ছিলো। এখন সে আন্টিকে বলল,,
-দাদু ইনি কে। আর আমাদেল বাতায় কি
কততে।
-ইনি তুমার এক আন্টি দাদুভাই। উনাকে
সালাম দিলে না যে।
-ও,,আমি ভুলে গেতি। আন্তি আসসালামু
আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম মুচকি হেসে জবাব
দিলাম।
এই ঘরের প্রত্যেকটা মানুষ এতো সুন্দর করে
কথা বলে।
সবাই এতো ভদ্র। পিচ্চিটাও কতো সুন্দর করে
কথা বলতে পারে। আমি তো তাদের যত
দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।(মনে মনে)
-আচ্ছা মা,, তুমি এখন শুয়ে পড়ো।
-আন্টি,,পিচ্চিটা কি ইমন সাহেবের ছেলে।
-আরে না মা,,ওর বড় ভাইয়ের ছেলে।
-ওহ আচ্ছা।
-দাদুভাই, চলে এসো। আন্টি এখন ঘুমাবে।
-না আমি আন্তির কাতে থাকবো,,আন্তির
কাতে থাকবো।
বলেই পিচ্চিটা আমার কোলে চড়ে বসল।
-থাক না আন্টি,,আমার কোন সমস্যা হবে না।
-আসসালামু আলাইকুম
সালাম করেই রুমে প্রবেশ করলো কেউ।
কন্ঠটা শুনে আবার চমকে উঠলাম,,তিনি বলতে
লাগলেন,,,
আরে কি বলেন আপনি,, ও অনেক দুষ্টু বিরক্ত
করবে আপনাকে। ঘুমাতে দিবে না। বাবু চলে
এসো বাবা(অজানা)
দেখলাম একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে। খুবই সুন্দর।
চেহারাটা এতো মায়াবী । বুঝতে পারলাম
উনি বাবুর আম্মু।
-না না ঠিক আছে। সমস্যা নেই। থাকুক আমার
কাছে।
বাবুটাও বলে উঠল,,না আমি আন্তির কাতে
থাকবো।
-ওহ,,তুমাকে পরিচয় করিয়ে দেই। ও হচ্ছে
ইমনের ভাবি(ইমনের মা বললেন)
-জ্বী,,আসসালামু আলাইকুম-জ্বী,,আসসালামু
আলাইকুম(নুসরাত)
-ওয়ালাইকুমুস সালাম। বোন ও তুমাকে বিরক্ত
করবে। তুমি অসুস্থ। তুমার বিশ্রাম দরকার।
আমি ওকে বুঝিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি ঘুমিয়ে
পড়।
-এই বলে উনি বাবুকে নিতে চাইলে
বাবুটা,,কান্না শুরু করলো।
তখন আমি বললাম,,
-জ্বী না ঠিক আছে। ও আমার কাছে থাকুক।
আমার সমস্যা হবে না।
আর কোন উপায় না দেখে।
ভাবি আর আন্টি বললেন,,
-আচ্ছা ঠিক আছে। বিরক্ত করলে আমাদের
ডাক দিও।
আল্লাহ হাফিজ।
এই বলে উনারা বেড়িয়ে গেলেন।আর আমি
বাবুটার সাথে কিছুক্ষণ খেলা করলাম।
কারণ,,, পিচ্চিদের আমার অনেক ভালো
লাগে। আর বাবুটা তো অনেক কিউট তাই আর
যেতে দিলাম না।
কিছুক্ষণ পর ও আমার
কোলে চড়েই ঘুমিয়ে গেলো।
হঠাৎ,,আমার মনে পড়ল
আরে নীলকে তো আমি ফোন করি নি
আজকে।
হায় আল্লাহ,,না জানি কি টেনশন
টাই না করছে বোধহয় । ইশ আমি যে কি করে
ওর কথা ভুলে থাকতে পারলাম। এই বলে
মোবাইলটা খুঁজতে লাগলাম।
দেখলাম টেবিলের উপর মোবাইল টা রাখা।
মোবাইল হাতে নিয়ে নীলকে কল করলাম।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং,,
এ কি নীল ফোন কেন ধরছে না। দেখি
আরেকবার ট্রাই করি।
হায় আল্লাহ,,এ কি,,এখন ফোন অফ করে
দিছে।
নিশ্চই অনেক রেগে গেছে।
আচ্ছা,,রাগ দেখানো হচ্ছে তাই না। কালকেই
দেখা করছি তুমার সাথে।
দেখবো তুমি রাগ
করে কতক্ষণ থাকতে পারো । হুহ
-এই বলে বাবুটাকে কোল থেকে নামিয়ে
বিছানায় শুয়ে দিয়ে। নিজেও শুয়ে পড়লাম।
নীলয়ের সাথে কালকেই গিয়ে দেখা করবো।
কে জানতো কালকেই নুসরাতের জীবনে
এতো বড় ঝড়
ঘুম ভাংল কারো মিষ্টি সুরে কোরআন খতম শুনে ।
ঘড়িতে চেয়ে দেখি ৫ টা বাজে। আরে এতো
সকাল কি কেউ উঠে। আর আমার ই বা কেন এতো
সকাল ঘুম ভাংল বুঝতাছি না।
যাই গিয়ে দেখি,,ঐদিকটায়।
আস্তে আস্তে দরজা খুলে বাইরে আসলাম।
দেখলাম আমার পাশের রুম থেকেই তেলাওয়াত শুনা
যাচ্ছে।
রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম।
আন্টি আর ভাবি কোরআন তেলাওয়াত করছেন। আহ
কি অদ্ভুত দৃশ্য,, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে।
আমি আমার রুমে চলে আসলাম। আবার বিছানায় গা
এলিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাংলো সকাল ১০টায়।
তড়িঘড়ি করে উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম। তখনি রুমে
আন্টি প্রবেশ করলেন।
-উঠে গেছিস,,,আয় নাস্তা করে নিবে। তারপর ইমন
তকে বাড়ি পৌঁছে দিবে।
-জ্বী,,,বলেই উনার সঙ্গে নাস্তার টেবিলে
গেলাম। নাস্তা করে রেডি হয়ে নিলাম। হঠাৎ মনে
পড়ল,,এই রে,, মা কে তো ফোন করলাম না। না
জানি,,কি টেনশন্টাই না করছেন। মোবাইল হাতে
নিয়ে দেখি মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে।
বোধহয় চার্জ শেষ। থাকুক,,,একটু পরই তো বাড়ি
যাব।
,,,,
আন্টি,,ভাবি আর বাবুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে
আসলাম। দেখলাম ইমন সাহেব গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে
আছেন। আমি পেছনের সিটে গিয়ে বসলাম।
আর
জানালা দিয়ে আন্টিদের দেখলাম। খুব খারাপ লাগছিল
ওনাদের ছেড়ে আসতে। কোন এক মায়ায়
জড়িয়ে গেছিলাম। এই একদিনে উনারা নিজের
মেয়ের মতো আদর যত্ন নিলো।
ভাবিতেই
চোখের কোণে জল আবিষ্কার করলাম ।
-নেমে পড়ুন,,আমরা চলে এসেছি।(ইমন)
-গাড়ি থেকে নেমে,,দেখলাম বাড়ির ভেতর
অনেক লোক জড়ো হয়ে আছে।
কি ব্যাপার কি হয়েছে,,এখানে এতো লোক
কোথায় থেকে আসল। দেখলাম আমাদের
দেখে কয়েকজন লোক বাইরে বেড়িয়ে
এলো।
লোকগুলা,,বলতে লাগলো।
এই দেখো,,আইছে নবাবজাদি,,সারারাত ফষ্টিনষ্টি
করে আবার বাড়িতে আসে। লজ্জা করে না। আমি
তাজ্জব হয়ে ওদের কথাগুলা শুনছিলাম। তখনই মাকে
দেখলাম আসছেন।
-মা দেখো, লোকগুলা কি বাজে কথা বলছে। আমি
বিশ্বাস করো,,আমি কোন খারাপ কাজ করিনি। বলতে
মা আমাকে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলেন,,
-লজ্জা করে না তোর আমাদের মানসম্মান মাঠিতে
মিশিয়ে,,,তুই আবার এই বাড়িতে আসছিস ।
-মা বিশ্বাস করো,,আমি কোন খারাপ কাজ করিনি
মা,,আমার কালকে এক্সিডেন্ট হয়ে গেছিলো।
একে একে মা কে সব বললাম। কিন্তু,,মা তারপর ও
বিশ্বাস করছেন না।
আর ইমন সাহেব মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি
উনার কাছে গিয়ে বললাম।
-এই যে,,আপনি মা কে বলুন না,,আমার কি
হয়েছিল,,আমি কোন খারাপ কাজ করিনি,,বলুন না। কান্না
করতে করতেই বলছিলাম।
-দয়া করে আমার কথাটা শুনুন। উনি কোন খারাপ কাজ
করেন নি। কাল সত্যিই উনার এক্সিডেন্ট
হয়েছিলো। আর উনি যা যা বলছেন। সব সত্যি। দয়া
করে বিশ্বাস করুন ।(ইমন)
তবুও কেউ আমাদের কথা বিশ্বাস করছে না। পরে
মা ইমন সাহেবের হাত ধরে বলতে লাগলেন,,বাবা যা
হওয়ার হয়ে গেছে। এখন তুমিও পারো ওদের মুখ
বন্ধ করতে। আমার মেয়ের ইজ্জত এখন তুমার
হাতে।
মা কান্না করতে করতে কথাগুলা বলতেছিলেন।
-মা কি বলছো,,এসব তুমি কি পাগল হয়ে গেছো।
-ওই তুই চুপ কর।
বাবা বলো, তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে।
এই কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কি
বলছে মা এইগুলা।
-মা,,কি বলছো, প্লিজ মা,, এইসব করো না।
-আমি আমার ভাবি,,আর মায়ের সাথে একটু কথা বলতে
চাই।(ইমন)
-হ্যাঁ বলো,,
ইমন সাহেব কিছু দূর গিয়ে,,ফোন এ কথা
বলছিলেন।
কিছু সময় পর ফিরে এসে বললেন। আমি বিয়েতে
রাজি।
-কি বললেন আপনি,,আপনার সাহস কি করে হয়। এই
কথা বলার। যান এখান থেকে আপনি চলে যান বলছি
।
মা এসে আমাকে আবার চড় মারলেন।
-তুই তো একদম কথা বলবি না। আয় আমার সাথে।
মা আমাকে রুমে টানতে টানতে নিয়ে এলেন।
-মা প্লিজ,,এমন করো না। বিশ্বাস করো তুমি ।
-এই আমি বিশ্বাস করলে কি হবে। বাইরের
লোকদের মুখ কি করে বন্ধ করবি। চুপচাপ কোন
কথা না বলে রেডি হয়ে নে।
এই বলে মা চলে গেল, আমি ধপাস করে নিচে
বসে পড়লাম। এটা কি হলো আমার সাথে,,,,,
কিছু সময় পর,, মা এসে দেখলো,,আমি এখনো
রেডি হয়। পরে জোড় করে আমাকে রেডি
করে নিচে নিয়ে গেলেন।
দেখলাম কাজি চলে
আসছে। আর আমার বুকটা কষ্টে ফেটে
যাচ্ছে,,নীলকে কি জবাব দিবো আমি । কেউই
আমাকে বিশ্বাস করলো না।
কাজি বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন। অবশেষে
বিয়েটা হয়েই গেলো।
আর আমি কান্না করতে করতে ওখানেই,,অজ্ঞান
হয়ে যাই।
যখন চোখ খুললাম দেখলাম,,,,,
চোখ খুলে দেখলাম। বিছানায় শুয়ে আছি। ইমন
সাহেব আমার পাশেই বসে আসেন। আস্তে
আস্তে উঠে বসলাম।
-আপনি কেন আমাকে বিয়ে করলেন। আমার
জীবনটা কেন নষ্ট করে দিলেন বলবেন ।
-দেখুন,,আমার আর কোন উপায় ও ছিল না। আমি যদি
বিয়েতে রাজি না হতাম। তাহলে,,লোকগুলা আরো
কথা শুনাতো। এতে আপনার পরিবার যেমন শান্তিতে
থাকতে পারতো না,,তেমনকি আপনিও না। আর আমিও
তো চেষ্টা করেছি।
কিন্তু,,কেউ কি আপনার আর
আমার কথা বিশ্বাস করেছে বলুন। (ইমন)
-আপনাকে এতো চিন্তা করতে কে বলছে। কে
কি বলবে সেটা আমি আর আমার পরিবার দেখবো।
আপনি কেন বিয়ে করতে গেলেন।
আসলে,,ভাবছিলাম আপনি খুব ভালো হবেন।
আজকে যা করলেন,,এখন তো আপনাকে যৃণা
হচ্ছে। একটা রিকুয়েস্ট করবো রাখতে পারবেন।
-জ্বী,,বলুন
-আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবেন। প্লিজ
উনি কোন কথাই বলছেন না দেখলাম। অবাক হয়ে
থাকিয়ে ছিলেন। হয়তো আমার হঠাৎ বলা এমন কথা
এক্সেপ্ট করতে পারছেন না।
আমি উনাকে হাত জুড় করে বলতে লাগলাম,,,
প্লিজ দয়া করুন আমার উপর। প্লিজ
,,,,
-নিশ্চুপ,,,,
-কথা বলুন প্লিজ।
উনি উঠে চলে যাচ্ছিলেনন।
আমি চেঁচিয়ে বললাম,,,
-আমি আপনার মতো ক্ষ্যতকে কখনোই মানতে
পারবো না বুঝলেন। আমি এই বিয়ে মানি না।
আমি নীলকে ভালোবাসি।
উনি একবার পেছনে থাকিয়েই, চলে গেলেন রুম
থেকে।
কিছুক্ষন পর মা আসলেন,,,
-কি হয়েছিল তোর বলত,,এইভাবে অজ্ঞান হয়ে
গেলি কেন।
-মা তুমি কি কিছুই বুঝতেছ না। আমি এই বিয়ে মানি না মা।
আমি পারবো না..
-দেখ তোর মানা না মানায় এখন কিচ্ছু আসে যায়
না,,আর ছেলেটাও দেখতে খারাপ না। নম্র ভদ্র।
হ্যা একটু ক্ষ্যাত টাইপের। মুখ ভর্তি দাড়ি। কিন্তু
চেহারাটা সুন্দর।
-দেখো মা আমি উনি সুন্দর না অসুন্দর,,এটা আমি
জানতে চাইছি না। আমি এই বিয়ে মানি না ব্যাস।
-তুই না মানলেও কারো কিছু যায় আসবে না। চল গাড়ি
বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
-কেন আমি কোথায় যাব
-বারে,,শশুড় বাড়ি যাবি। তুই কি ভুলে গেছিস তোর
বিয়ে হয়ে গেছে। এখন শশুড় বাড়িই তোর আসল
ঠিকানা।
-না আমি যাবো না,,কিছুতেই যাবো না।
বলেই কান্না করতে লাগলাম ।
মা আমাকে জোড় করেই,, নিচে নামিয়ে
আনলেন। দেখলাম অনেক মানুষ নিচে দাঁড়িয়ে
আছেন। আমার আর কিছুই বলার ছিলো না।
মা কে একটাই কথা বললাম,,এতো তাড়াতাড়ি পর করে
দিলে মা আমায়।
উনি শুধু তাকিয়ে ছিলেন। উনার চোখে জল ছলছল
করছিল। পেছনে ঘুরে চোখের জল মুছে।
আমাকে গাড়িতে তুলে দিলেন।
দেখলাম ভাইয়াটা দূর
থেকেই দাঁড়িয়ে সব দেখছে। কাছে,,আসছে
না। হয়তো সেও আমাকে সবার মতো খারাপ
ভাবছে। ভাবুক,,,
-গাড়ি চলছে আপন গতিতে। পাশেই ইমন বসে
আছে। ভালো লাগছে না কিছুই।
এখন নীলকে কি
বলবো আমি।
-গাড়ি থামলো,,নির্দিষ্ট স্থানে।
-আসুন,,এসে গেছি।
-এতক্ষণে হুশ ফিরলো। হ্যাঁ এসে গেছি। একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নামলাম
নেমে দেখলাম,,আন্টি দাঁড়িয়ে আছেন।
উনি মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,দেখ মা যা হওয়ার
হইছে। মন খারাপ করে থাকিস না,,,,আস্তে আস্তে
সব ঠিক হয়ে যাবে। আয়শা ওকে ঘরে নিয়ে যাও।
(ভাবিকে উদ্দেশ্য করে)
ইমন তুই আমার সাথে আয়।
ভাবি আমাকে রুমে বসিয়ে দিয়ে গেলেন। আমার
তো সব কিছু অসহ্য লাগছিলো।
নীলকে কে ফোন দেওয়া জরুরি,,,না জানি কি
ভাবছে। দুই দিন ধরে কোন কল করলো না।
মোবাইল ও মা নিয়ে নিলো।
,,,,,ইমন গেলো তার মায়ের সাথে।
-হ্যা মা বলো।
-বাবা কি থেকে কি হলো,,একটু বলবি।
ইমন তার মা কে সব কিছু বলে
,,,,,ইমন গেলো তার মায়ের সাথে।
-হ্যা মা বলো।
-বাবা কি থেকে কি হলো,,একটু বলবি।
ইমন তার মা কে সব কিছু বলল।
-আচ্ছা মেয়েটার মানতে অনেক কষ্ট হচ্ছে
হয়তো। সবকিছু হঠাৎ হয়ে গেছে।
তুই কোন
প্রেশার দিছ না ওকে।
-না মা আমি উনাকে কোন কষ্ট দিব না। দোয়া
করো মা শুধু তুমি।
-দোয়া তো সবসময়ই আছে তদের উপর। আচ্ছা
যা,, মেয়েটা একা একা বসে আছে হয়তো।
-আচ্ছা মা,
রুমে গিয়ে দেখি,,খাটের উপর হেলান দিয়ে
চোখ বন্ধ করে বসে আছে নুসরাত। সালাম দিয়ে
রুমে ঢুকল ইমন,,
-আসসালামু আলাইকুম
,,একবার থাকিয়েই মুখ ফিরিয়ে নিলাম। অসহ্য লাগছে
উনাকে। উনি দরজা বন্ধ করে সোফায় বসলেন।
-আপনি ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। অনেক দকল
গেছে আজকে (ইমন)
-আপনাকে আমার চিন্তা না করলেও চলবে। বলেই
উঠে ওয়াশরুমে চলে আসলাম।
ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে দেখি উনি। সোফায়ই বসে
আছেন।
-আমাকে আপনার মোবাইলটা একটু দিবেন। আসলে
আমার ফোনটা বাসায় রেখে এসেছি।(নুসরাত)
-হ্যা নিন,,আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
বলেই ফোনটা হাতে দিয়ে চলে গেলেন।
নীলের নাম্বারে ডায়াল করলাম,,ক্রিং ক্রিং ক্রিং।
-হ্যালো,,কে বলছেন(নীল)
-আমি নুসরাত,,কেমন আছো
-আরে তর সাহস কি করে হলো,,আমাকে কল করার
হ্যা,,নষ্টা মেয়ে কোথাকার। আমি তো তকে
ভালোবেসেছিলাম। আর তুই এই প্রতিদান দিলি
(নীল)
আরো অনেক বাজে বাজে কথা বলল নীল
আমায়। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো এ কি
আমার নীল। ওকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা
করলাম। কিন্তু আমি প্রতিবারই ব্যর্থ। ফোনটা হাতে
নিয়েই ফ্লোরে বসে পরলাম। চোখ দিয়ে
অঝর ধারায় অশ্রু ঝরছে ।
ইমন ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে দেখে,,নুসরাত কান্না
করছে,,দৌড়ে নুসরাতের কাছে গিয়ে বলল,,,
-কি হলো আপনার,,আপনি ঠিক আছেন তো।
বলেই উনি হাত ধরলেন।
আমি ধাক্কা দিয়ে উনাকে সরিয়ে দিলাম।
-খবরদার,, আপনি আরো একবার আমায় স্পর্শ
করছেন তো। খুব খারাপ হয়ে যাবে। আপনার সাহস
কি করে হয় আমাকে টাচ করার।
আমার চোখের সামনে থেকে আপনি চলে যান।
বলছি ।
স্পষ্ট দেখতে পেলাম,,উনার চোখে জল।
কিন্তু,,আমি পাত্তা দিলাম না।
উনি চলে গেলেন। আর আমি কান্না করতে
করতে। একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।
,,,,,,
ইমন বাইরে গিয়ে মায়ের রুমের আলো জলছে
দেখে,,মায়ের রুমে গেলো।
-মা আসবো,,,
মা তসবি পড়ছিলেন।
-হ্যাঁ আয় বাবা,,,কি হয়েছে মুখটা এতো শুকনা কেন
লাগছে।
-মা,,বলেই মা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে
লাগলাম ,,,,।
মাও আমাকে বাধা দিলো না। কিছু সময় কান্না করে
মনটা হালকা হলো।
-এবার বল কি হয়েছে,,,মা কে সব খুলে বললাম।
-মা উনি আমায় ভুল বুঝে আছে। আমার তখন তো
এছাড়া কোন উপায় ছিলো না।
-চিন্তা করিস না বাবা। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে
যাবে। যা এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পর।
,,,,রুমে চলে আসলাম। নুসরাত ঘুমিয়ে আছে।
মেয়েটাকে এই প্রথম খেয়াল করলাম
ভালোভাবে। অনেক মায়াবী মুখটা। কিন্তু,,,,,,
অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। কারণ,, একমাত্র
আল্লাহরর ইবাদতইই পারে মনে শান্তি দিতে। ২
রাকায়াত নফল নামায পরে উঠলাম। মনটা অনেক শান্তি
লাগছিল। তারপর সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম,,,,
আজানের ডাকে ঘুম ভেংগে গেলো,,,ক্লান্ত
থাকার কারনে আজকে তাহাজ্জত নামাজ পড়তে
পারলাম না..
নুসরাত কে ডাকতে লাগলাম,,,এই যে উঠুন,,আযান
দিয়ে দিছে। নামায পড়বেন উঠুন,,,
-নিশ্চুপ,,,,,
-এই যে উঠুন,, ডেকেই চলছি উঠার নামই নেই। তাই
বাধ্য হয়ে এক ফোটা পানি ছিটিয়ে দিলাম
মুখে,,নুসরাত,,ধরফড়িয়ে উঠে গেল,,
-দেখলাম উনি দাঁড়িয়ে আছেন।
-কি সমস্যা আপনার হ্যাঁ,,কেন বিরক্ত করছেন ।
একটু
শান্তিতে কি ঘুমাতেও পারবো না। যত্তসব (নুসরাত)
তিনি বিনিয়ের সঙ্গে বললেন,,
-দেখুন,,আযান দিয়ে দিছে। নামাজটা পড়ে নিন।
পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়বেন
-এই আপনার ন্যাকামো আপনার কাছে রাখুন।
পারবো
না আমি। যান এখান থেকে…(বিরক্ত হয়েই
বলছেলাম)
তারপর উনি বলতে লাগলেন,,
-দেখুন,,আযান দিয়ে দিছে। নামাজটা পড়ে নিন।
পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়বেন(ইমন)
-এই আপনার ন্যাকামো আপনার কাছে রাখুন। পারবো
না আমি। যান এখান থেকে…বিরক্ত হয়েই বলছিল
নুসরাত।
-নামায না পড়লে আল্লাহ নারায হবেন। দয়া করে
নামাযটা পড়ে নিন।
-এই আপনি আপনার লেকচার বন্ধ করে। যান তো,,
উনি আর কিছু না বলে চলে গেলেনন,,,হুহ আমার
সাথে ন্যাকামো দেখানো হচ্ছে। অসহ্য
কি করে নুসরাতকে দ্বীনের পথে আনবো
বুঝতেছি না। হে আল্লাহ তুমি নুসরাতকে হেদায়াত
দাও। মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে বাড়ি আসলাম। মায়ের
রুমে গেলাম। মা কোরআন পড়ছেন।
আমিও মায়ের
পাশে বসে কোরআন পড়তে লাগলাম।
পড়া শেষে মা বলল,,
-কি রে বাবা,,নুসরাত কি উঠেছে
-না মা,, ও ঘুমাচ্ছে। আমি ডেকেছিলাম ।
-ওহ আচ্ছা,,মা হয়তো বুঝতে পারছেন তাই আর কিছু
বললেন না।
,,,,এভাবেই চলছিল দিনগুলা। প্রতিদিন নুসরাতকে ডাকতাম
নামায পড়ার জন্য। ভাবি মা ও বুঝিয়েছেন।
কিন্তু,,তারপরও ও নামাজ পড়তো না। প্রতিটা
মোনাজাতেই ওর হেদায়াতের জন্য দোয়া চাইতাম।
,,,,,,
প্রায় ১ মাস পড়,,,
-জীবনটা অসহ্য হয়ে যাচ্ছে।
এই বাড়িতে আসার
পর থেকেই এমন হচ্ছে। সবসময়ই লেকচার
মারে। এই কর,,সেই করনা। জাস্ট অসহ্য। এ
থেকে মুক্তি কখনো যে মিলবে (নুসরাত)
-আসসালামু আলাইকুম। আসতে পারি(ইমন)
-উহ,,ন্যাকামি,,, আপনাকে আসতে কি বারন করেছি না
কি। প্রতিদিন এই সালাম দিয়ে রুমে ডুকা। এসব ন্যাকামি
আমার সামনে করবেন না প্লিজ ।
-সালাম দিলে সালামের উত্তর কেন দিন না। সালামের
উত্তর দেওয়া অনেক সওয়াবের কাজ।
এটা কি আপনি
জানেন। আমাদের নবীজি বলে
গেছেন,,,কারো সাথে দেখা হলে প্রথমে
থাকে সালাম দিও। এমনকি নিজের ঘরেও।
অনেক কথাই বললাম। কিন্তু,,নুসরাতের কোন
রেসপন্স ই পাই নি।
ও ওর মতো করে মোবাইল
হাতে নিয়ে গেইমস খেলে যাচ্ছে।
-আপনার লেকচার শেষ হলে আপনি আসতে
পারেন(ইমনকে উদ্দেশ্য করে)
-আমার কথাগুলা কি আপনার কাছে স্রেফ লেকচারই
মনে হয়,,,।আল্লাহ আপনাকে উত্তম হেদায়াত দিক।
বলেই উনি চলে গেলেন। আমি আপন মনে
কানে ইয়ারফোন গুজে গান শুনিতে লাগলাম।
হঠাৎ,,মোবাইলের স্ক্রিনে চিরচেনা,,নাম্বার
ভেসে উঠল। সাথে অন্যরকম শিহরণ।
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করলাম,,,
-হ্যা,,,,,হ্যাল-হ্যা,,,,,হ্যালো
-কেমন আছো নুসরাত(নীল)
-যেমনটা রেখেছো
-আজকে একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবে ।
প্লিজ না করনা। আমি আমার নিজের ভুল বুঝতে
পেরেছি। তুমাকে এইরকম বলা ঠিক হয় নি। প্লিজ
দেখা করবে আমার সাথে।
আমিও ওর আদরমাখা কন্ঠ শুনে আর না করতে পারলাম
না ।
-হ্যাঁ,, পারবো বলো কোথায় দেখা করতে হবে।
নীল ঠিকানা দিলো। বিকেলের দিকে বের হতে
বলল।
-বিকেলবেলা রেডি হয়ে নিলাম,,একটা নীল
শাড়ি,,চোখে ঘাড় কাজল ।,, আর চুলটা ছেড়ে
দিয়ে যেই বেড়িয়ে যাবো। অমনি ইমন সাহেব
এসে হাজির।
-আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন।
-দেখতেই যখন পাচ্ছেন। তখন জিজ্ঞেস কেন
করছেন ।
-দেখুন,,কোথায় যাবেন আমাকে বলুন। আমি নিয়ে
যাব। এইভাবে একা যাওয়া ঠিক হবে না।
আর শাড়ি কেন
পড়ছেন। শাড়ি যখন পড়ছেন। বোরকাটাও পড়ে
নিন। আর এইভাবে সেজেগুজে বাইরে গেলে
গায়রে মাহরামরা আপনাকে দেখবে। এতে গুনাহ
হবে আপনার।
পর্দাটা করে নিন। আমি গাড়ি বের করছি।,(ইমন)
-শেষ হইছে আপনার লেকচার,, চুপচাপ আপনার কথা
শুনছি এতক্ষণ । এইবার আমার কথাগুলাও চুপচাপ শুনুন।
প্রথমত আমি এই বিয়ে মানি না। আর আপনাকে আমার
বিষয় অধিকার খাটানো এইটার ও অনুমতি আপনাকে
দেই নি।
আপনি চাইলে আমাকে ডিভোর্স দিতে
পারেন। আর আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।
আর আমি বাচ্চা না যে একা একা যেতে পারববো না।
অসহ্য বলেই পাশ কেটে চলে আসলাম।
নিচে গিয়ে দেখলাম,,ভাবি আর আন্টি বসে গল্প
করছেন।
এখানে আসার পর থেকেই খেয়াল করছিলাম,,,ভাবি
ঘরেও পর্দা করে। এই জিনিসটা আমি কিছুতেই বুঝে
উঠতে পারছিলাম না।
যাক এইসব কথা,,,
উনাদের সাথে আমার প্রয়োজন ছাড়া কথা হয় না।আর
বাবুটার সাথে মাঝে মাঝে খেলা করি। দেখি পাশে
বাবুটা খেলা করছে। আমি ওর গালে হাত দিয়ে আদর
করে আন্টির কাছে গেলাম।
-কোথায় যাচ্ছিসস মা, আর এইভাবে কেন বের
হচ্ছিস। (আন্টি)
-একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
বলেই চলে আসলাম উনাদের কোন কথার
সুযোগ না দিয়ে।
জানি তো উনারাও লেকচার শুরু
করবেন।
-পার্কে গেলাম,,এখানেই নীল আসার কথা
বলেছিল। দূর থেকে দেখতে পেলাম নীল
বসে আছে।
পেছন থেকে গিয়ে কাঁদে হাত রাখলাম। ও
পেছনে ফিরে থাকালো।
আমি স্থব্দ হয়ে
গেলাম।
অনেক দিন পর সেই চেনা মুখ। আমি আর
চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না।
-পার্কে গেলো নুসরাত,,,এখানেই নীল আসার
কথা বলেছিল। দূর থেকে দেখতে পেলাম নীল
বসে আছে।
পেছন থেকে গিয়ে কাঁদে হাত রাখলাম। ও
পেছনে ফিরে থাকালো।
আমি স্থব্দ হয়ে
গেলাম।
অনেক দিন পর সেই চেনা মুখ । আমি আর
চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না ।
-এই পাগলী,, কাঁদছ কেন,, হুম। আমি সরি তো আমি
বুঝতে পারিনি। তুমি কি রকম পরিস্থিতিতে পড়ে বিয়েটা
করেছ। আর এমন হবে না। মাফ করে দাও প্লিজ
।এই কান ধরছি(নীল)
-ছিঃ কি করছো। সবাই দেখছে তো। আরে পাগল
আমি তো সেই কবে তুমাকে মাফ করে দিয়েছি।
আমি জানতাম একদিন তুমার ভুল ভাঙবে ।
-হুম,,আচ্ছা বসো। বলেই ওর পাশে আমাকে
বসালো। আমার খুব ভালো লাগছিল। এক অন্যরকম
অনুভূতি ।
নীল হাত ধরে বলল,,,
-ভালোবাস-ভালোবাসি তো,,,
আমি কোন উত্তর দিতে দিতে পারছিলাম না। মনে
হচ্ছিল কোন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে উত্তর
দিতে বাধা দিচ্ছি। শুধু একটু মুচকি হাসলাম,,,জানিনা কেন
এইরকম হলো।
নীল আর কিছু বলল না,,,তারপর,,,
অনেকক্ষণ দুজনে গল্প করলাম। তারপর বিদায়
জানয়ে বাড়ি ফিরে আসলাম।
রুমে এসে দেখি। উনি বসে আছেন।
-এসে গেছেন,,,আমি তো আরো ভাবছিলাম
আপনার প্রাক্তন আপনাকে ছাড়বেই না।(ইমন)
আসলে ইমন,,নুসরাত বেরিয়ে যাবার পর,,ওর পিছু পিছু
গেছিল,,,
-এই যে,,আপনি কি বলতে চাইছেন।
-আমি এটাই বলতে চাইছি। আমি আপনার স্বামী।
আপনার ওপর আমার পুরো অধিকার আছে। আর
আপনার ঘরে স্বামীকে রেখে আপনি বাইরে
যান। অন্য পরপুরুষ এর সাথে দেখা করতে।
আচ্ছা
আপনার বুকটা কি একটুও কাপে না এই রকম নিকৃষ্ট গুনাহ
করতে। আপনি জানেন,,আপনি যেটা করছে সেটা
জঘন্য যিনাহ। আর যেনাহ কারীর শাস্তি কতই না
নিকৃষ্ট।
-সব যখন জেনেই গেছেন,,তাহলে আমি এখন
আমি বলি কিছু,, যদি এতো সমস্যা আমাকে
নিয়ে,,আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিন। ব্যাস সব
সমস্যা সমাধান হয়ে গেল ।
আর কোন কথাই উনি বললেন না।
ঐদিকে ইমন,,,মন খারাপ করে মায়ের রুমের দিকে
যেতে যেতে ভাবছে,,,
-মেয়েটা কথায় কথায় ডিভোর্স দিয়ে দিন,,
ডিভোর্সি দিয়ে দিন,, এই কথাটাই বলে,,আমি কী
করে ওকে ছেড়ে দেব।
আমিও তো ওকে
ভালোবেসে ফেলেছি,,, না আমাকে ধৈর্য্য
হারালে হবে না। নুসরাতকে দ্বীনের পথে
আনতেই হবে,,,হে আল্লাহ নুসরাতকে হেদায়াত
দিন ।
আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে ,,,,মায়ের রুমে
চলে গেল ইমন।
মন খারাপের সময় মা ই একমাত্র সঙ্গি। মা কে গিয়ে
সব বললাম।
-দেখ বাবা,,তুই ধৈর্য্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে
দেখিস।
-আর কতো মা, আর কতো। ও কি একটুও বুঝে না।
আমি আর চোখের সামনে এতকিছু নিতে পারছি না
মা…
-যা বাবা,,দু রাকায়াত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চা।
আল্লাহ সব সহজ করে দিবেন।
যা
,,,চলে আসলাম মায়ের রুম থেকে। অজু করে
নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। যত ইচ্ছা তত আল্লাহর
দরবারে চোখের পানি ঝরালাম ।
এদিকে,,,এইভাবেই চলছিল নুসরাত আর নীলের
দিনগুলা,,,,
নীলের সাথে দেখা করে,কথা বলে। ভালোই
কাটছিল নুসরাতের।নীলের সাথে জমিয়ে প্রেম
করছে দিনের পর দিন।
আর এদিকে ইমন,,চোখের সামনে নিজের
স্ত্রীর এইরকম গুনাহ ওপর গুনাহ করা দেখে
কষ্টে দিন কাটাচ্ছিল। এখন সে আলাদা রুমেই থাকে।
কারণ,, নুসরাতের এইরকম নীলের সাথে কথা বলা
একদম মেনে নিতে পারছিল না। দিনের পর দিন
বুঝিয়েই যাচ্ছে নুসরাতকে।
কিন্তু,,,,,,
ক্রিং ক্রিং ক্রিং,,
-হ্যালো নীল,,বল
-নীলা আমি একটু ব্যবসার কাজে ময়মনসিংহ যাচ্ছি। দুদিন
তুমাকে কল দিতে পারবো না ।
কারণ ক্লায়েন্টের সাথে খুব ব্যস্ত থাকবো।
-ওহ,,আচ্ছা ঠিক আছে।
-রাগ করেছো,,প্লিজ রাগ করনা লক্ষিটি। মাত্র তো
দুইদিন। এরপর থেকে জমিয়ে কথা বলবো ।
-আরে রাগ কেন করবো। ঠিক আছে।
ভালোভাবে যেও।
-ওকে বাই,,লাভ ইউ
-বাই,,
,,,বিকেলে নুসরাত একা একা ঘরে বসে আছে।
ইমনের সাথেও তেমন কথা হয় না আর। একা একা
ঘরে বোর হচ্ছিল। তাই ইমনের মায়ের রুমে
গেল নুসরাত
-আন্টি আসবো,,
উনি জায়নামাজে বসে তসবি পড়ছিলেন।
আমাকে দেখে পড়া বন্ধ করে দিলেন
-হ্যাঁ,,আসো। কিছু দরকার।
-না এমনিতেই। আসলাম।
তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন।
-মন খারাপ ।
-অবাক হয়ে, কি করে বুঝলেন না।
-মায়েরা সব বুঝে। কি হয়েছে বল(আন্টি)
-না মানে এমনি ভালো লাগছে না ।
-আচ্ছা এই নাও।
একটা বই দিলেন। সম্ভবত এটা ইসলামিক বই।
-হাতে নিলাম। এটা কিসের বই?
-পড়েই দেখো।
-জ্বী,,বলে রুম থেকে চলে আসলাম।
বিছানায় গিয়ে বই পড়া শুরু করলাম। বইটা পড়তে এতই
ভালো লাগছিল যে বুঝানোর মতো না। পুরো
বইটা একটা মেয়ের কস্টের কাহিনী। তাও পুরোটা
পর্দা নিয়ে। মেয়েটা পর্দা করার জন্য এত কষ্ট সহ্য
করলো। আমার চোখে পানি চলে আসল…
আর আমি তো,,,,
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম। না আজ থেকে
আমিও পর্দা করবো।
দুইদিন পর,,,,,,
নীল ফোন করে বলল তার সাথে দেখা করতে,,
আজ আর সাজিনি। বোরকা পড়েই বেড়িয়ে পড়লাম।
ইমন আন্টি ভাবি অদ্ভুত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে
ছিলেন। বেশ ভালোই লাগছিল ।
পার্কে পৌছে নীল কে দেখতে
পেলাম,,,সম্ভবত নীল আমাকে চিনতে পারে নি।
আমি পেছন গিয়ে আস্তে করে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কি
চমকে দেওয়া যাবে।
হঠাৎ,,,নীলের ফোন বেজে উঠল
-হ্যা জান বলো(নীল)
-……..
-না জান আমি ভুলিনি তুমাকে, আমার জান পাখিটাকে আমি
কি করে ভুলি। সেইদিন কি আর ভুলতে পারি।
…………
-হ্যাঁ জান আমার মনে আছে,,ময়মনসিংহে কি
হয়েছিল। আরে তুমি চিন্তা কেন করছো।
আমি
তুমাকেই বিয়ে করবো।
আচ্ছা জান রাখি এখন। হ্যাঁ
-বাই লাভ ইউ ।
-……
আমি দাঁড়িয়ে এতক্ষণ ওদের কথা শুনে স্থব্দ হয়ে
দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ কি শুনলাম আমি ।
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে
ইচ্ছে হচ্ছে ।
আমি দাঁড়িয়ে এতক্ষণ ওদের কথা শুনে স্থব্দ হয়ে
দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ কি শুনলাম আমি ।
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে
ইচ্ছে হচ্ছে ।
-কেন নীল কেন,,,,,
নীল পেছনে চেয়ে আমাকে দেখে বেশ
অবাকই হলো।
-কি ভয় পেলে,,,আসলে এই প্রতিদান দিলে আমার
ভালোবাসার।আমি তুমার জন্য আমার স্বামী সংসার
ফেলে।সবার চোখে খারাপ হয়েও তুমার সাথে
দেখা করতে আসতাম।
কারণ তুমাকে প্রচন্ড
ভালোবাসতাম বলে।
-নিশ্চুপ,,,,,।
-কি হল উত্তর দাও,,কেন এমন করলে কেন নীল
কেন,, কি দোষ করেছি আমি। আমাকে কেন
ধোকা দিলে,,,
হাহা হাহা হা হা,,, নীল অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
আমি অবাক হয়েই চেয়ে রইলাম।
-তুই ভাবলি কি করে তকে আমি ভালোবাসবো। তর
মতো নষ্টা মেয়ে তো আমার বেডে যাওয়ার ই
যোগ্য না।
যে মেয়ে স্বামীকে ছেড়ে অন্য
একটা পুরুষের সাথে দিনের পর দিন চুটিয়ে প্রেম
করতে পারে। সে কি করে ভালো হতে পারে।
আমি তো জাস্ট তকে ইউজ করছিলাম। প্রয়োজন
ফুরিয়ে গেলে আমি নিজেই তকে ছুড়ে
ফেলে দিতাম।
আমি অবাক হই তর স্বামী সব
জেনেও তকে ছেড়ে কেন দেয়নি। তর
স্বামীও কি তর মতো না কি রে,,,,(ভ্রু কুচকে
নীল বলল)
নুসরাত ঠাস করে নীলকে চড় বসিয়ে দিয়ে,,
-খবরদার,, আর একটা বাজে কথা উনার বিষয়ে বলছিস তো,,
আমাকে বলছিস বল,,আমি এটারই যোগ্য,,
কিন্তু আমার স্বামীকে নিয়ে আর একটা বাজে
কথা বলিস তো।
তকে আমি খুন করে ফেলবো,,,
-এখন এতো দরদ উতলিয়ে পড়ছে দেখি। এতদিন
এই দরদটুকু কোথায় ছিলো রে,,,(নীল)
-ওই আর একটা কথা বলবি না।
আসলে তকে আমি বিশ্বাস করেই ভুল করছি।
আমার আগে থেকেই তকে সন্দেহ হতো,,
এই ২ মাসে তোর অনেক পরিবর্তন আমি পেয়েছিলাম। কিন্তু,,তোর মতো রাস্তার কুকুরের প্রেমে অন্ধ ছিলাম। তাই আমি বুঝতে পারি নি।
উনার মতো এতো ভালো মনের মানুষকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছেন ।
তাতে আমি অখুশি নই। আমি খুশিই আছি ।
নেক্সট টাইমে তর মুখও যেন আমায় না দেখতে
হয় ,,কথাগুলা বলেই ওখান থেকে কাঁদতে
কাঁদতে চলে আসলাম।
রুমে বসে কান্না করতেছিলাম। এমন সময় উনি
আসলেন।
-আস সালামু আলাইকুম। আসতে পারি।
আমি তাড়াতাড়ি কান্না মুছে ফেললাম।
-ও য়ালাই কুমুস সালাম,, জ্বী আসুন।
উনি আমার কথা শুনে বেশ অবাকই হলেন জানি। কারণ এর আগে কোনদিনই উনার সালামের উত্তর আমি দেই নি।
-জ্বী,,আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল
-জ্বী বলুন।
-আপনি চাইছিলেন আপনাকে ডিভোর্স দেই।
আমি উকিলের সাথে কথা বলে নিয়েছি।
বলছে,,ছয় মাস পড় ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবো।
উনার কথা শুনে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল।
জানিনা কেন এতো কষ্ট হচ্ছে।
-আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি জানি আপনি
আমায় সহ্য করতে পারেন না।
ছয় মাস একটু কষ্ট
করে নিন। এরপর আর সহ্য করতে হবে না আমাকে।
বলেই উনি চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আন্টি
এলেন খেতে যাওয়ার কথা বললেন।
আমি বললাম।,,,
-জ্বী মা আপনি যান আমি আসছি।
মা ডাক শুনে উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে।
বুকে জড়িয়ে কপালে চুমো দিলেন ।
আমি জানি উনি এটা শুনে খুব খুশিই হয়েছেন।
-কি বললি আবার বল(ইমনের মা)
-মা বললাম ।
উনি এবার কেঁদেই দিলেন। আর বললেন,,
-আমার কোন মেয়ে নেই,,আজ থেকে তুইই
আমার মেয়ে। বলেই কপালে আরেকটা চুমো
দিলেন। আর আমিও কান্না করে দিলাম।
তারপর উনি চলে গেলেন। আমি ফ্রেস হয়ে নিলাম।
আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম,,হ্যাঁ এই বাড়িতে
আর যত দিন আছি। ওদের আর কষ্ট দিব না ।
,,,,,,,,
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে গেলে হঠাৎ মাথাটা ঘুরে
উঠল,,,
চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম সবকিছু।
তাল সামলাতে না পেরে সিড়ি থেকে পড়ে
গেলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই।
,,,,,,,,তখন ইমনের মা (শাহানারা বেগম বললেন,,)
-কিসের শব্দ হলো আয়শা,,,
-জানিনা মা,,,
তখনি ইমন চিৎকার করে বলল,,,
-নুসরাত..
সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখে,,নুসরাত সিঁড়ি থেকে
পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
ইমন নুসরাতকে পাঁজাকোলে করে রুমে নিয়ে গেল,,,
-এই যে,,নুসরাত নুসরাত,,মা উনি কথা বলছেন না কেন (ইমন)
-শান্ত হ বাবা,,আমি তর ডাক্তার আন্টিকে কল দিচ্ছি
(শাহানারা বেগম)
-ভাবি পানি নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি(ইমন)
-হ্যাঁ আনছি,, এই নাও(আয়শা)
ইমন মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো,,,
কি হলো জ্ঞান ফিরছে না কেন,,,
-এইতো তোর ডাক্তার আন্টি এসে গেছে।
(শাহানারা বেগম )
-আসলামু আলাইকুম,,কি সমস্যা এতো জরুরি তলব
(ডাক্তার)
-আমার বউমা সিঁড়ি থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে
গেছে। একটু দেখ তো কি হয়েছে। অনেক
চিন্তা হচ্ছে। (শাহানারা বেগম)
-আচ্ছা,,আমি দেখছি আপনারা চিন্তা করবেন না।
(ডাক্তার)
সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে,,
এখনো জ্ঞান ফিরে নি নুসরাত এর,,
-আমি ইনজেকশন দিয়ে দিছি।
শরীর দুর্বল থাকার
কারণে এমনটি হইছে। উনাকে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করাবেন। মাথা একটু ফেটে গেছে।
আমি ব্যান্ডেজ করে দিছি। চিন্তার কোন বিষয় নেই।
এক ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে। উনাকে খাইয়ে এই
ঔষধগুলা খাইয়ে দিবেন(ডাক্তার)
-শুকরিয়া,, কি চিন্তাটাই না হচ্ছিল মেয়েটাকে নিয়ে
(শাহানারা বেগম)
-আচ্ছা আজ আসি তাহলে,,,
-না না কি বলছিস ,,একটু চা নাস্তা খেয়ে যা। আয়শা উনার জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করো(শাহানারা বেগম)
-না না ঠিক আছে। আমার অনেক জরুরি patient
রয়েছে,,তাকে দেখতে হবে গিয়ে।
আজ না অন্য একদিন অবশ্যই আসবো।
আজ আসি আল্লাহ হাফিজ
ডাক্তার কে বিদায় দিয়ে সবাই নুসরাতকে
দেখতে গেল,,,
ক্তার কে বিদায় দিয়ে সবাই নুসরাতকে দেখতে
গেল,,,
-বাবা ইমন নুসরাতের জ্ঞান না ফিরা পর্যন্ত আমরা
এইখানে অপেক্ষা করছি। তুই খেয়ে নে যা।
কিছুই খাস নি। (শাহানারা বেগম)
-না মা আমি ঠিক আছি। তুমরা যাও খেয়ে নাও। নুসরাতের জ্ঞান ফিরলে আমি খেয়ে নিব।
খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো যাও। ভাবি মাকে নিয়ে যাও।(ইমন)
-না বাবা আমি আমার মেয়েকে এইভাবে ফেলে
রেখে যেতে পারবো না ।(শাহানারা বেগম)
-মা দেখ তুমি এমনিতেই অসুস্থ। এইরকম বসে
থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। আমি তো
আছি এইখানে। সমস্যা হবে না মা। যাও না মা,,,,,(ইমন)
-আচ্ছা বাবা যাচ্ছি,, নুসরাতের জ্ঞান ফিরলে আমাদের ডাকিস। আয়শা আয় তো মা।
(শাহানারা বেগম)
মা ও ভাবি চলে গেল,,ইমন বসে আছে নুসরাতের
পাশে। ইমনের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । কারণ,,
নুসরাতকে এই অবস্থায় দেখে সহ্য হচ্ছে না তার।
নিজের অজান্তেই নুসরাতকে ভালোবেসে ফেলেছে ।
হঠাৎ করেই ইমন উঠে গেল,,,,তারপর অজু করে
নামাজে দাঁড়িয়ে গেল,,,মোনাজাতে নুসরাতের
সুস্থতার জন্য অনেক দোয়া চাইল।
আর এমনকি তার হেদায়াতের জন্যও।
একসময় ইমন জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়ল।
চোখ খুলে নুসরাত নিজেকে বিছানায় শুয়ে
থাকতে দেখে। ফ্লোরে ইমনকে দেখতে
পায়। জায়নামাজে ঘুমিয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ
চেয়ে থাকলো এইভাবে। নিজের অজান্তেই মুখ
থেকে বেড়িয়ে গেল,,মা শা আল্লাহ,,
কি সুন্দর
মায়াবী চেহারা। মনে হচ্ছে নূর ঝরছে। এইভাবে
আর কোনদিন খেয়াল করে নি ও ইমনকে।
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল নুসরাতের ।
পানির পিপাসা পাওয়ায় উঠে নিতে চাইলে।
মাথাটা ভার হয়ে যায়।
-উফফ,,,মাথাটা প্রচন্ড ভারী লাগছে ।
কস্ট করে উঠে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিতে চাইলে হাত থেকে গ্লাস পরে যায়।
এই যা,, গ্লাসটা ভেঙ্গে গেল ।
গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ শুনে ইমন ধড়ফড় করে উঠে বসল,,
দেখে নুসরাতের সামনে পানির গ্লাস পরে আছে।
হয়তো পানি খেতে চাইছে,,
-আমাকে বলা যেত না বুঝি। পানি খাবেন (ইমন)
-না মানে,,দেখলাম আপনি ঘুমিয়ে তাই আর বিরক্ত
করতে চাইছিলাম না (নুসরাত)
-আচ্ছা আপনি শুয়ে থাকুন,, আমি আসছি
বলেই ইমন বেড়িয়ে গেল,,,
কিছুক্ষণ পর খাবারের প্লেট আর পানি নিয়ে
এলো।
-নিন এবার খাবার টুকু খেয়ে নিন দয়া করে(ইমন)
নুসরাতের ও প্রচন্ড খিদে পেয়েছিল তাই সে
খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে খেতে গেলে,,
পারছিল না হাত কেটে যাওয়ার কারণে,,,।
-আমি খাবনা,,খিদে নেই। আপনি নিয়ে যান এইগুলা
(নুসরাত)
-খেতে তো হবেই,, সাথে ঔষধ ও খেতে
হবে। দিন প্লেটটা এই দিকে দিন।
ইমন প্লেটের ভাত মাখিয়ে নুসরাতের মুখের
সামনে ধরল,,,
-নিন হা করুন।
নুসরাত অবাক হয়েই চেয়ে রইল,,
যে মানুষটাকে এতদিন ধরে এতো কষ্ট দিলাম,,
সে মানুষটাই এতো যত্ন নিচ্ছে সব ভুলে।
কি করে পারলাম আমি এমনটা করতে,,,, (মনে মনে)
চোখ দিয়ে নুসরাতের নিজের অজান্তেই টুপ
করে একফোঁটা পানি বেড়িয়ে আসার আগেই কান্না
আড়াল করে নিলো।
,,ইমন খাইয়ে দিতে লাগল। আর নুসরাত ইমনের
দিকেই চেয়ে রইল।
প্রচন্ড খিদে থাকার কারণে,,নুসরাত পুরোটা খাবার
খেয়ে নিল।
-এই নিন ঔষধটাও খেয়ে নিন।
ইমন ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বলল,,,
-এইবার চুপচাপ শুয়ে পড়ুন। আসছি(আল্লাহ হাফিজ,,)
ইমন চলে যেতে নিলে,,,
নুসরাত খপ করে ইমনের হাতটা ধরে ফেলে।
-আপনি খেয়েছেন?(নুসরাত)
-জ্বী না মানে,,(ইমন)
-হইছে,,,বুঝেছি খান নি। প্লিজ খেয়ে নিন। যান। (নুসরাত)
ইমন চলে যাচ্ছিল,,,আবার নুসরাত ডাক দিল,,
-এই যে শুনুন,,,প্লিজ খেয়ে এইখানেই আবার
আসবেন। আজকে আপনি এইখানে থাকবেন।
আমার ভয় করছে ,,,
,,,ইমন ওর এমন বাচ্চামু মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি
হেসে বলল,,,
-জ্বী ঠিক আছে আমি আসছি …।(ইমন)
,,কি সুন্দর উনার হাসি। আমি উনাকে যত দেখছি তত
ভালো লাগছে।
এ কি হচ্ছে আমার সাথে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে এইসব ভাবছি,,,
কিছুক্ষণ পর উনি চলে আসলেন।
-আচ্ছা এইবার ঘুমিয়ে পড়ুন,,,
ইমন কথাটি বলেই বালিশ নিয়ে সোফাতে শুয়ে
পড়ল।
-শুনছেন,,,(নুসরাত)
-জ্বী বলুন,, (ইমন)
-ইয়ে ম,,মানে,,(আমতা আমতা করে),,আপনি যদি কিছু মনে না করেন। বিছানায় শুতে পারেন(নুসরাত)
-জ্বী না আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি এইখানেই ঠিক
আছি। আপনার কিছু লাগলে আমাকে ডাক দিবেন।
-না মানে,,আমার অনেক ভয় লাগছে। প্লিজ।(নুসরাত)
-আচ্ছা ঠিক আছে(ইমন)
নুসরাত মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে দিল। ইমন একবার তাকিয়েই ,,পরে মুখ ফিরিয়ে,,অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পড়ল। ইমন জানে এমনটা হওয়ারই ছিল।
রাত ৩টা,,হঠাৎ করেই নুসরাতের কানে কারো চাপা
কান্না এলো। নুসরাত ঘুম থেকে উঠে গেল।
দেখল ইমন পাশে নেই। দরজাটা খুলাই রয়েছে।
তাই সে পা টিপে টিপে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
-উফফ,,পায়ের ব্যাথার কারণে ঠিকমতো হাটতেও
পারছি না ।
কোনরকমে দেয়াল ধরে ধরে গেল পাশের
রুমে। রুমে লাইট জ্বলছিল,, হয়তো কেউ আছে
রুমটাতে। একবার উঁকি দিতেই নুসরাত ইমনকে
দেখতে পেল।
ইমন জায়নামাজে বসে মোনাজাতে কান্না
করতেছে। আর নুসরাতের সুস্থতার জন্য ও তার
হেদায়াতের জন্য প্রার্থনা করছে ।
নুসরাত এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি আটকে
রাখতে পারলো না ।
একমুহূর্তও সেখানে না থেকে কোনরকমে পা
টেনে চলে এলো রুমে। এসেই ফ্লোরে পড়ে গেল।
এই মানুষটাকে আমি কি করে এতো কষ্ট দিলাম।
ছিঃ নুসরাত ছিঃ (নুসরাত নিজেই নিজেকে
ধিক্কার দিচ্ছে) তারপর,,,
কোনরকমে দেয়ালটা ধরে উঠে দারাল নুসরাত।
তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে,,
নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।
-নামাজ শেষে মোনাজাত করে সীমাহিন অশ্রু
ঝরালো…
হে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দাও মাবুদ। আমি
বুঝে না বুঝে অনেক গুনাহ করে ফেলেছি।
আমাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ তুমি আমার
তাওবা কবুল করে নেও। আর আজ থেকে
আমাকে তুমার নেক বান্দি হিসেবে কবুল করে
নেও মাবুদ…
মোনাজাত শেষে জায়নামাজ থেকে উঠে গেল
নুসরাত। কোনরকম বিছানায় গিয়ে শুয়েছে।
কিছুসময় পর ইমন এলো,,
ইমন বুঝতে পারে নি নুসরাত এত সময় কি কি করছিল।
নুসরাত ঘুমের ভান ধরে ঘুমিয়ে ছিল।
ইমন বিছানায় উঠে অন্যপাশ হয়ে আবার শুয়ে পড়ল।
”
,,,আজানের ধ্বনিতে নুসরাতের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
পাশেই ইমন শুয়ে ছিল,,,,তাই আস্তে করে ইমনের
কপালে হাত দিয়ে ইমন কে ডাকতে লাগল।
-এই যে শুনছেন,,,এই যে উঠুন আযান দিয়ে দিছে।
নামায পড়বেন উঠুন।
কিছু সময় ডাকার পর ইমন উঠে গেল।
-নামাজ পড়বেন না। আযান তো দিয়ে দিল।
ইমন নুসরাতের এইরকম কথা শুনে রীতিমতো
অবাকই হচ্ছিল।
-কি হলো,,এইভাবে বসে কি ভাবছেন। আযান তো
দিয়ে দিছে।
-না আসলে ক্লান্ত ছিলাম অনেক,,তাই আযান শুনতে
পাই নি ।
-আচ্ছা বুঝেছি। এখন উঠে নামাজে যান। আমিও
নামাযটা পড়ে নেই।
এই বলে নুসরাত যেমনি দাঁড়াতে যাবে অমনিতেই
আহ! বলে চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল।
ইমন দৌড়ে এসে,,,
-আরে আপনি উঠতে গেলেন কেন। আপনার
পায়েও আঘাত লেগেছে। আসুন হাত ধরুন,,
বলেই ইমন হাত বাড়িয়ে দিল।
নুসরাত ও হাত ধরে উঠল। তারপর ইমন নুসরাতকে
বিছানায় বসিয়ে দিল।
নুসরাত বলল,,
-আমি তো নামায পড়বো।
-আপনি এই পা নিয়ে পড়তে পারবেন তো।
-হ্যাঁ পারবো আমি।
নুসরাত আবার উঠে যেতে নিলে, আবার পায়ে ব্যাথা
লেগে কুকিয়ে উঠল,,আহ!
-হ্যাঁ,,বুঝেছি আপনি কেমন পারবেন।
তারপর ইমন নুসরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে।
কিছু না বলেই,,,,
নুসরাতকে কোলে তুলে নিল,,,,
আমি দাঁড়িয়ে এতক্ষণ ওদের কথা শুনে স্থব্দ হয়ে
দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ কি শুনলাম আমি ।
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে
ইচ্ছে হচ্ছে ।
-কেন নীল কেন,,,,,
নীল পেছনে চেয়ে আমাকে দেখে বেশ
অবাকই হলো।
-কি ভয় পেলে,,,আসলে এই প্রতিদান দিলে আমার
ভালোবাসার।আমি তুমার জন্য আমার স্বামী সংসার
ফেলে।সবার চোখে খারাপ হয়েও তুমার সাথে
দেখা করতে আসতাম। কারণ তুমাকে প্রচন্ড
ভালোবাসতাম বলে।
-নিশ্চুপ,,,,,।
-কি হল উত্তর দাও,,কেন এমন করলে কেন নীল
কেন,, কি দোষ করেছি আমি। আমাকে কেন
ধোকা দিলে,,,
হাহা হাহা হা হা,,, নীল অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
আমি অবাক হয়েই চেয়ে রইলাম।
-তুই ভাবলি কি করে তকে আমি ভালোবাসবো। তর
মতো নষ্টা মেয়ে তো আমার বেডে যাওয়ার ই
যোগ্য না।
যে মেয়ে স্বামীকে ছেড়ে অন্য
একটা পুরুষের সাথে দিনের পর দিন চুটিয়ে প্রেম
করতে পারে। সে কি করে ভালো হতে পারে।
আমি তো জাস্ট তকে ইউজ করছিলাম। প্রয়োজন
ফুরিয়ে গেলে আমি নিজেই তকে ছুড়ে
ফেলে দিতাম। আমি অবাক হই তর স্বামী সব
জেনেও তকে ছেড়ে কেন দেয়নি। তর
স্বামীও কি তর মতো না কি রে,,,,(ভ্রু কুচকে
নীল বলল)
নুসরাত ঠাস করে নীলকে চড় বসিয়ে দিয়ে,,
-খবরদার,, আর একটা বাজে কথা উনার বিষয়ে বলছিস তো,,
আমাকে বলছিস বল,,আমি এটারই যোগ্য,,
কিন্তু আমার স্বামীকে নিয়ে আর একটা বাজে
কথা বলিস তো। তকে আমি খুন করে ফেলবো,,,
-এখন এতো দরদ উতলিয়ে পড়ছে দেখি।
এতদিন
এই দরদটুকু কোথায় ছিলো রে,,,(নীল)
-ওই আর একটা কথা বলবি না।
আসলে তকে আমি বিশ্বাস করেই ভুল করছি।
আমার আগে থেকেই তকে সন্দেহ হতো,,
এই ২ মাসে তোর অনেক পরিবর্তন আমি পেয়েছিলাম। কিন্তু,,তোর মতো রাস্তার কুকুরের প্রেমে অন্ধ ছিলাম। তাই আমি বুঝতে পারি নি।
উনার মতো এতো ভালো মনের মানুষকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছেন ।
তাতে আমি অখুশি নই। আমি খুশিই আছি ।
নেক্সট টাইমে তর মুখও যেন আমায় না দেখতে
হয় ,,কথাগুলা বলেই ওখান থেকে কাঁদতে
কাঁদতে চলে আসলাম।
রুমে বসে কান্না করতেছিলাম। এমন সময় উনি
আসলেন।
-আস সালামু আলাইকুম। আসতে পারি।
আমি তাড়াতাড়ি কান্না মুছে ফেললাম।
-ও য়ালাই কুমুস সালাম,, জ্বী আসুন।
উনি আমার কথা শুনে বেশ অবাকই হলেন জানি। কারণ এর আগে কোনদিনই উনার সালামের উত্তর আমি দেই নি।
-জ্বী,,আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল
-জ্বী বলুন।
-আপনি চাইছিলেন আপনাকে ডিভোর্স দেই।
আমি উকিলের সাথে কথা বলে নিয়েছি।
বলছে,,ছয় মাস পড় ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবো।
উনার কথা শুনে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল।
জানিনা কেন এতো কষ্ট হচ্ছে।
-আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি জানি আপনি
আমায় সহ্য করতে পারেন না। ছয় মাস একটু কষ্ট
করে নিন। এরপর আর সহ্য করতে হবে না আমাকে।
বলেই উনি চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আন্টি
এলেন খেতে যাওয়ার কথা বললেন।
আমি বললাম।,,,
-জ্বী মা আপনি যান আমি আসছি।
মা ডাক শুনে উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে।
বুকে জড়িয়ে কপালে চুমো দিলেন ।
আমি জানি উনি এটা শুনে খুব খুশিই হয়েছেন।
-কি বললি আবার বল(ইমনের মা)
-মা বললাম ।
উনি এবার কেঁদেই দিলেন। আর বললেন,,
-আমার কোন মেয়ে নেই,,আজ থেকে তুইই
আমার মেয়ে। বলেই কপালে আরেকটা চুমো
দিলেন। আর আমিও কান্না করে দিলাম।
তারপর উনি চলে গেলেন। আমি ফ্রেস হয়ে নিলাম।
আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম,,হ্যাঁ এই বাড়িতে
আর যত দিন আছি। ওদের আর কষ্ট দিব না ।
,,,,,,,,
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে গেলে হঠাৎ মাথাটা ঘুরে
উঠল,,,
চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম সবকিছু।
তাল সামলাতে না পেরে সিড়ি থেকে পড়ে
গেলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই।
,,,,,,,,তখন ইমনের মা (শাহানারা বেগম বললেন,,)
-কিসের শব্দ হলো আয়শা,,,
-জানিনা মা,,,
তখনি ইমন চিৎকার করে বলল,,,
-নুসরাত..
সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখে,,নুসরাত সিঁড়ি থেকে
পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
ইমন নুসরাতকে পাঁজাকোলে করে রুমে নিয়ে গেল,,,
-এই যে,,নুসরাত নুসরাত,,মা উনি কথা বলছেন না কেন (ইমন)
-শান্ত হ বাবা,,আমি তর ডাক্তার আন্টিকে কল দিচ্ছি
(শাহানারা বেগম)
-ভাবি পানি নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি(ইমন)
-হ্যাঁ আনছি,, এই নাও(আয়শা)
ইমন মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো,,,
কি হলো জ্ঞান ফিরছে না কেন,,,
-এইতো তোর ডাক্তার আন্টি এসে গেছে।
(শাহানারা বেগম )
-আসলামু আলাইকুম,,কি সমস্যা এতো জরুরি তলব
(ডাক্তার)
-আমার বউমা সিঁড়ি থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে
গেছে। একটু দেখ তো কি হয়েছে। অনেক
চিন্তা হচ্ছে। (শাহানারা বেগম)
-আচ্ছা,,আমি দেখছি আপনারা চিন্তা করবেন না।
(ডাক্তার)
সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে,,
এখনো জ্ঞান ফিরে নি নুসরাত এর,,
-আমি ইনজেকশন দিয়ে দিছি। শরীর দুর্বল থাকার
কারণে এমনটি হইছে। উনাকে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করাবেন। মাথা একটু ফেটে গেছে।
আমি ব্যান্ডেজ করে দিছি। চিন্তার কোন বিষয় নেই।
এক ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে। উনাকে খাইয়ে এই
ঔষধগুলা খাইয়ে দিবেন(ডাক্তার)
-শুকরিয়া,, কি চিন্তাটাই না হচ্ছিল মেয়েটাকে নিয়ে
(শাহানারা বেগম)
-আচ্ছা আজ আসি তাহলে,,,
-না না কি বলছিস ,,একটু চা নাস্তা খেয়ে যা। আয়শা উনার জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করো(শাহানারা বেগম)
-না না ঠিক আছে। আমার অনেক জরুরি patient
রয়েছে,,তাকে দেখতে হবে গিয়ে।
আজ না অন্য একদিন অবশ্যই আসবো।
আজ আসি আল্লাহ হাফিজ
ডাক্তার কে বিদায় দিয়ে সবাই নুসরাতকে
দেখতে গেল,,,
ডাক্তার কে বিদায় দিয়ে সবাই নুসরাতকে দেখতে
গেল,,,
-বাবা ইমন নুসরাতের জ্ঞান না ফিরা পর্যন্ত আমরা
এইখানে অপেক্ষা করছি। তুই খেয়ে নে যা।
কিছুই খাস নি। (শাহানারা বেগম)
-না মা আমি ঠিক আছি। তুমরা যাও খেয়ে নাও। নুসরাতের জ্ঞান ফিরলে আমি খেয়ে নিব।
খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো যাও। ভাবি মাকে নিয়ে যাও।(ইমন)
-না বাবা আমি আমার মেয়েকে এইভাবে ফেলে
রেখে যেতে পারবো না ।(শাহানারা বেগম)
-মা দেখ তুমি এমনিতেই অসুস্থ। এইরকম বসে
থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে।
আমি তো
আছি এইখানে। সমস্যা হবে না মা। যাও না মা,,,,,(ইমন)
-আচ্ছা বাবা যাচ্ছি,, নুসরাতের জ্ঞান ফিরলে আমাদের ডাকিস। আয়শা আয় তো মা।
(শাহানারা বেগম)
মা ও ভাবি চলে গেল,,ইমন বসে আছে নুসরাতের
পাশে। ইমনের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । কারণ,,
নুসরাতকে এই অবস্থায় দেখে সহ্য হচ্ছে না তার।
নিজের অজান্তেই নুসরাতকে ভালোবেসে ফেলেছে ।
হঠাৎ করেই ইমন উঠে গেল,,,,তারপর অজু করে
নামাজে দাঁড়িয়ে গেল,,,মোনাজাতে নুসরাতের
সুস্থতার জন্য অনেক দোয়া চাইল।
আর এমনকি তার হেদায়াতের জন্যও।
একসময় ইমন জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়ল।
চোখ খুলে নুসরাত নিজেকে বিছানায় শুয়ে
থাকতে দেখে। ফ্লোরে ইমনকে দেখতে
পায়। জায়নামাজে ঘুমিয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ
চেয়ে থাকলো এইভাবে। নিজের অজান্তেই মুখ
থেকে বেড়িয়ে গেল,,মা শা আল্লাহ,,
কি সুন্দর
মায়াবী চেহারা। মনে হচ্ছে নূর ঝরছে। এইভাবে
আর কোনদিন খেয়াল করে নি ও ইমনকে।
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল নুসরাতের ।
পানির পিপাসা পাওয়ায় উঠে নিতে চাইলে।
মাথাটা ভার হয়ে যায়।
-উফফ,,,মাথাটা প্রচন্ড ভারী লাগছে ।
কস্ট করে উঠে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিতে চাইলে হাত থেকে গ্লাস পরে যায়।
এই যা,, গ্লাসটা ভেঙ্গে গেল ।
গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ শুনে ইমন ধড়ফড় করে উঠে বসল,,
দেখে নুসরাতের সামনে পানির গ্লাস পরে আছে।
হয়তো পানি খেতে চাইছে,,
-আমাকে বলা যেত না বুঝি। পানি খাবেন (ইমন)
-না মানে,,দেখলাম আপনি ঘুমিয়ে তাই আর বিরক্ত
করতে চাইছিলাম না (নুসরাত)
-আচ্ছা আপনি শুয়ে থাকুন,, আমি আসছি
বলেই ইমন বেড়িয়ে গেল,,,
কিছুক্ষণ পর খাবারের প্লেট আর পানি নিয়ে
এলো।
-নিন এবার খাবার টুকু খেয়ে নিন দয়া করে(ইমন)
নুসরাতের ও প্রচন্ড খিদে পেয়েছিল তাই সে
খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে খেতে গেলে,,
পারছিল না হাত কেটে যাওয়ার কারণে,,,।
-আমি খাবনা,,খিদে নেই। আপনি নিয়ে যান এইগুলা
(নুসরাত)
-খেতে তো হবেই,, সাথে ঔষধ ও খেতে
হবে। দিন প্লেটটা এই দিকে দিন।
ইমন প্লেটের ভাত মাখিয়ে নুসরাতের মুখের
সামনে ধরল,,,
-নিন হা করুন।
নুসরাত অবাক হয়েই চেয়ে রইল,,
যে মানুষটাকে এতদিন ধরে এতো কষ্ট দিলাম,,
সে মানুষটাই এতো যত্ন নিচ্ছে সব ভুলে।
কি করে পারলাম আমি এমনটা করতে,,,, (মনে মনে)
চোখ দিয়ে নুসরাতের নিজের অজান্তেই টুপ
করে একফোঁটা পানি বেড়িয়ে আসার আগেই কান্না
আড়াল করে নিলো।
,,ইমন খাইয়ে দিতে লাগল। আর নুসরাত ইমনের
দিকেই চেয়ে রইল।
প্রচন্ড খিদে থাকার কারণে,,নুসরাত পুরোটা খাবার
খেয়ে নিল।
-এই নিন ঔষধটাও খেয়ে নিন।
ইমন ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বলল,,,
-এইবার চুপচাপ শুয়ে পড়ুন। আসছি(আল্লাহ হাফিজ,,)
ইমন চলে যেতে নিলে,,,
নুসরাত খপ করে ইমনের হাতটা ধরে ফেলে।
-আপনি খেয়েছেন?(নুসরাত)
-জ্বী না মানে,,(ইমন)
-হইছে,,,বুঝেছি খান নি। প্লিজ খেয়ে নিন। যান। (নুসরাত)
ইমন চলে যাচ্ছিল,,,আবার নুসরাত ডাক দিল,,
-এই যে শুনুন,,,প্লিজ খেয়ে এইখানেই আবার
আসবেন। আজকে আপনি এইখানে থাকবেন।
আমার ভয় করছে ,,,
,,,ইমন ওর এমন বাচ্চামু মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি
হেসে বলল,,,
-জ্বী ঠিক আছে আমি আসছি …।(ইমন)
,,কি সুন্দর উনার হাসি। আমি উনাকে যত দেখছি তত
ভালো লাগছে।
এ কি হচ্ছে আমার সাথে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে এইসব ভাবছি,,,
কিছুক্ষণ পর উনি চলে আসলেন।
-আচ্ছা এইবার ঘুমিয়ে পড়ুন,,,
ইমন কথাটি বলেই বালিশ নিয়ে সোফাতে শুয়ে
পড়ল।
-শুনছেন,,,(নুসরাত)
-জ্বী বলুন,, (ইমন)
-ইয়ে ম,,মানে,,(আমতা আমতা করে),,আপনি যদি কিছু মনে না করেন। বিছানায় শুতে পারেন(নুসরাত)
-জ্বী না আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি এইখানেই ঠিক
আছি। আপনার কিছু লাগলে আমাকে ডাক দিবেন।
-না মানে,,আমার অনেক ভয় লাগছে। প্লিজ।(নুসরাত)
-আচ্ছা ঠিক আছে(ইমন)
নুসরাত মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে দিল। ইমন একবার তাকিয়েই ,,পরে মুখ ফিরিয়ে,,অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পড়ল। ইমন জানে এমনটা হওয়ারই ছিল।
রাত ৩টা,,হঠাৎ করেই নুসরাতের কানে কারো চাপা
কান্না এলো। নুসরাত ঘুম থেকে উঠে গেল।
দেখল ইমন পাশে নেই। দরজাটা খুলাই রয়েছে।
তাই সে পা টিপে টিপে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
-উফফ,,পায়ের ব্যাথার কারণে ঠিকমতো হাটতেও
পারছি না ।
কোনরকমে দেয়াল ধরে ধরে গেল পাশের
রুমে। রুমে লাইট জ্বলছিল,, হয়তো কেউ আছে
রুমটাতে। একবার উঁকি দিতেই নুসরাত ইমনকে
দেখতে পেল।
ইমন জায়নামাজে বসে মোনাজাতে কান্না
করতেছে। আর নুসরাতের সুস্থতার জন্য ও তার
হেদায়াতের জন্য প্রার্থনা করছে ।
নুসরাত এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি আটকে
রাখতে পারলো না ।
একমুহূর্তও সেখানে না থেকে কোনরকমে পা
টেনে চলে এলো রুমে। এসেই ফ্লোরে পড়ে গেল।
এই মানুষটাকে আমি কি করে এতো কষ্ট দিলাম।
ছিঃ নুসরাত ছিঃ (নুসরাত নিজেই নিজেকে
ধিক্কার দিচ্ছে) তারপর,,,
কোনরকমে দেয়ালটা ধরে উঠে দারাল নুসরাত।
তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে,,
নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।
-নামাজ শেষে মোনাজাত করে সীমাহিন অশ্রু
ঝরালো…
হে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দাও মাবুদ। আমি
বুঝে না বুঝে অনেক গুনাহ করে ফেলেছি।
আমাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ তুমি আমার
তাওবা কবুল করে নেও। আর আজ থেকে
আমাকে তুমার নেক বান্দি হিসেবে কবুল করে
নেও মাবুদ…
মোনাজাত শেষে জায়নামাজ থেকে উঠে গেল
নুসরাত। কোনরকম বিছানায় গিয়ে শুয়েছে।
কিছুসময় পর ইমন এলো,,
ইমন বুঝতে পারে নি নুসরাত এত সময় কি কি করছিল।
নুসরাত ঘুমের ভান ধরে ঘুমিয়ে ছিল।
ইমন বিছানায় উঠে অন্যপাশ হয়ে আবার শুয়ে পড়ল।
”
,,,আজানের ধ্বনিতে নুসরাতের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
পাশেই ইমন শুয়ে ছিল,,,,তাই আস্তে করে ইমনের
কপালে হাত দিয়ে ইমন কে ডাকতে লাগল।
-এই যে শুনছেন,,,এই যে উঠুন আযান দিয়ে দিছে।
নামায পড়বেন উঠুন।
কিছু সময় ডাকার পর ইমন উঠে গেল।
-নামাজ পড়বেন না। আযান তো দিয়ে দিল।
ইমন নুসরাতের এইরকম কথা শুনে রীতিমতো
অবাকই হচ্ছিল।
-কি হলো,,এইভাবে বসে কি ভাবছেন। আযান তো
দিয়ে দিছে।
-না আসলে ক্লান্ত ছিলাম অনেক,,তাই আযান শুনতে
পাই নি ।
-আচ্ছা বুঝেছি। এখন উঠে নামাজে যান। আমিও
নামাযটা পড়ে নেই।
এই বলে নুসরাত যেমনি দাঁড়াতে যাবে অমনিতেই
আহ! বলে চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল।
ইমন দৌড়ে এসে,,,
-আরে আপনি উঠতে গেলেন কেন। আপনার
পায়েও আঘাত লেগেছে। আসুন হাত ধরুন,,
বলেই ইমন হাত বাড়িয়ে দিল।
নুসরাত ও হাত ধরে উঠল। তারপর ইমন নুসরাতকে
বিছানায় বসিয়ে দিল।
নুসরাত বলল,,
-আমি তো নামায পড়বো।
-আপনি এই পা নিয়ে পড়তে পারবেন তো।
-হ্যাঁ পারবো আমি।
নুসরাত আবার উঠে যেতে নিলে, আবার পায়ে ব্যাথা
লেগে কুকিয়ে উঠল,,আহ!
-হ্যাঁ,,বুঝেছি আপনি কেমন পারবেন।
তারপর ইমন নুসরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে।
কিছু না বলেই,,,,
নুসরাতকে কোলে তুলে নিল,,,,
হ্যাঁ ,,বুঝেছি আপনি কেমন পারবেন।
তারপর ইমন নুসরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে।
নুসরাতকে কোলে তুলে নিল,,,
নুসরাতকে খানিকটা কেঁপে উঠল ইমনের স্পর্শে,,
-এই আপনি এটা কি করছেন। নামান বলছি।
আমি যেতে পারবো।
(নুসরাত)
-হ্যাঁ দেখতেই তো পারছি আপনি যাচ্ছেন। বলেই
মুচকি হাসি দিল ইমন
-দেখুন আমার ভয় করছে। নামান প্লিজ ।
-এইতো নামিয়ে দিলাম।
ওয়াশরুমে নিয়ে নুসরাতকে নামিয়ে দিল।
-নিন এবার অজু করে নিন।
-আপনি কি আবার এইসব করবেন ।
-হ্যাঁ তাছাড়া তো আর কোন উপায় দেখছি না। বলেই
আবার মুচকি হাসল ইমন
-দেখুন,,আপনার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আপনি নামাজে
যান আমি একা যেতে পারবো।
-তা তো হয়না। আপনি যদি চান আমার দেড়ি না হয়।
তাহলে কথা বন্ধ করে। তাড়াতাড়ি অজু করে নিন।
নুসরাত আর কোন কথা বলল না। অজু করে নিল।
ইমন আবার নুসরাতকে কোলে তুলে নিল। তারপর
জায়নামাজ বিছিয়ে দিয়ে গেল। নিন নামায পড়ুন। আমি আসছি। কিছুদুর যাওয়ার পর,,
আবার ইমন ফিরে আসল।
-ওহ আপনাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।
-জ্বী বলুন,,,
-আপনার ওজন এতো বেশি কেন। বলেই দুষ্টুমি
হাসলো ইমন,,,
-কিহহহ ,,দেখুন আমার ওজন বেশি না মাত্র ৪০। হুহ
-আচ্ছা আচ্ছা,আমি আসছি। আল্লাহ হাফিজ
ইমন বেরিয়ে গেল।আর নুসরাত নামাজটা পড়ে নিল।
তারপর ভাবতে লাগলো,,
আসলেই কি আমার ওজন বেশি হয়ে গেল ।
আমি কি মুটি হয়ে গেলাম না কি।
বলেই গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগল
ইমন মসজিদে যেতে যেতে ভাবছিল মেয়েটার
হঠাৎ করেই এতো পরিবর্তন হলো কি করে।
যাইহোক,, আলহামদুলিল্লাহ।
ইমন নামায পরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানালো।
নামায শেষে কিছু সময় কোররআন পড়লো।
তারপর মসজিদ থেকে বেড়িয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা
দিল,,,,
,,নুসরাত ওইভাবেইই গালে হাত দিয়ে বসে ছিল,,,,
-আস সালামু আলাই কুম।(ইমন)
-ও য়ালাই কুমুস সালাম,,,এতক্ষণে নুসরাতে ধ্যান
ভাঙলো।
-কি হয়েছে,,এইভাবে বসে রইছেন কেন(ইমন)
-আচ্ছা সত্যি করে বলবেন একটা কথা,,,(নুসরাত)
-জ্বী বলুন কি (ইমন)
-ইয়ে মানে,,,আমার ওজন কি সত্যিই বেশি।
না মানে আমি কি মুটি হয়ে গেছি(নুসরাত)
,,,নুসরাত মাথ নিচু করে আমতা আমতা করে কথাগুলা জিজ্ঞেস করছিল।,,,,,,
নুসরাতের এইরকম কান্ড দেখে ইমন মুখ টিপে
হাসছিল ।
-আরে না,, আমি তো তখন এমনিতেই বলছিলাম। মন খারাপ করলেন না কি,,, (ভ্রু কুচকে বলল ইমন)
-না না,,মন খারাপ কেন করবো,,আমাকে একটু
হেল্প করুন ।
-জ্বী বলুন
-আমাকে মায়ের রুমে দিয়ে আসুন একটু।
-আচ্ছা বলে নুসরাতের হাত ধরে ওকে উঠিয়ে
দিল। তারপর ধরে ধরে তাকে মায়ের রুমে দিয়ে
আসলো।
-আস সালামু আলাইকুম,, মা আসবো (নুসরাত)
-ও য়ালাকুমুস সালাম,,,হ্যাঁ মা আয়,,(শাহানারা বেগম)
-ইমন বাবা ওকে কেন নিয়ে এলি,,মেয়েটা হাটতেই
পারছে না। আমাকে ডাক দিলি না কেন। আমিই যেতাম।
-না আসলে মা,,,,,
ইমনকে থামিয়ে দিয়ে নুসরাত বলল,,,
-আরে মা তুমি উনাকে কিছু বল না। আমিই জিদ করছি।
আসলে ঘরে থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগছিল,,তাই
ভাবলাম আমার মায়ের সাথে গল্প করে আসি
-আচ্ছা আচ্ছা হইছে,,,দেখি তো পা টা।
ইসস,,কতটুকুই না কেটে গেছে। ইমন ওকে ঔষধ
খাইয়ে দিয়েছিস তো।
-হ্যাঁ মা দিছি। আচ্ছা আমি আসছি মা।
বলেই ইমন বেড়িয়ে গেলো,,,
নুসরাত মায়ের সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলো।
তারপর মিসেস শাহানারা বেগম নুসরাতকে কয়েকটা
ইসলামিক বই দিলেন,,,,
অবসর সময়ে বইগুলা পড়েই দিন চলে যেত,,
হাদীসের বই গুলা পড়ে পর্দার গুরুত্ব থেকে শুরু
করে অনেক কিছুই জেনে নিলো নুসরাত,,,।
আলহামদুলিল্লাহ।
প্রায় এক সপ্তাহ পর,,,,,
নুসরাত একদম সুস্থ হয়ে উঠল।
“”আমি যতদিন অসুস্থ ছিলাম,,উনি আমার পাশেই
থেকেছেন। যখন সুস্থ হলাম,,উনি চলে যেতে নিলে আমিই উনাকে যেতে দেই নি। কিছু একটা বলে আটকে ফেললাম””
কারণ প্রতিদিন সকালটা উনার ওই মায়াবী চেহারাটা
দেখেই শুরু করতে চাইছিলাম ।
উনি আমার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছিলেন,,,জানিনা এর নাম কি দিব। কিন্তু,,,উনাকে না দেখলে,,উনার সাথে কথা না বললে কেমন যেন অস্বস্তিতে পড়ে যাই,,,,
দিনগুলা এইভাবেই কাটছিল,,এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি,, আলহামদুলিল্লাহ
পর্দার খাস নিয়মটাও শিখে নিছি।
আলহামদুলিল্লাহ ভালোই কাটছিল অনেক দিনগুলা,,,,আমি রীতিমতো ভুলেই গিয়ে ছিলাম আমাদের ডিভোর্সের কথা,,,
দেখতে দেখতে কয়েকটি মাস কেটে গেল,,,,,
নুসরাত এখন অনেকটা স্বাভাবিক ইমনের সাথে,,,
ঐদিকে ইমন,,,নুসরাতের এমন পরিবর্তন
দেখে,,অনেক খুশিই হয়। আর সবসময় আল্লাহর
দরবারে শুকরিয়া জানায়,,,,
,,একদিন হঠাৎ ইমন নীলের কথা তুলে,,,
-আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল(ইমন)
-জ্বী বলুন,, (নুসরাত)
-না ম,,মানে ব,,বলছিলাম যে ওই যে ছেলেটা।
না মানে বলছি যে,,এখন আপনি নামায পড়েন পর্দা
করেন ইসলামের সব দিকটাই মেনে চলার চেষ্টা
করছেন আলহামদুলিল্লাহ,,,।
কিন্তু,,,,,আপনি কি ম,,মানে ওই ছেলের সাথে কথা
বলেন। ইয়ে আসলে বলছিলাম যে,,,এটা ইসলামে
হারাম,, পরপুরুষ এর সাথে কথা বলা অকারণে। আপনি কি,,,,,,
নুসরাত কথা থামিয়ে মুচকি হেসে বললো,,,
-আচ্ছা এতো আমতা আমতা করতে হবে না।
আমি ওই ছেলেটার সাথে এখন আর কথা বলি না।
আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। পারলে
আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আসলে আমি বুঝিনি,,,,
বলেই নুসরাতের মুখ কালো হয়ে গেল,,,
-আরে না না,,,আমি তো আপনাকে সেই কবেই
ক্ষমা করে দিছি। আপনি দয়া করে মন খারাপ করবেন না। (ইমন)
-আচ্ছা আমার মন খারাপ করানোর জন্য,,আপনাকে
শাস্তি পেতে হবে,, হুউউ (নুসরাত)
-জ্বী কি শাস্তি,, (ইমন)
-আপনি আজকে আমাদের বেড়াতে নিয়ে যেতে
হবে,,,আমি ঘরে থেকে থেকে খুব বিরক্ত হচ্ছি।
আমি মা আর ভাবি সবাইকে নিয়ে বেড়াতে
যেতে হবে….
ইমন মুচকি হাসলো,,
-আচ্ছা আপনারা রেডি থাকবেন
আমি অফিস থেকে এসে নিয়ে যাব।
-সত্যিইইইইই,,,বলেই দৌড়ে ইমনকে জড়িয়ে ধরল,,,
কারণ নুসরাত এতটাই এক্সাইটেড হয়ে গেছিল যে ,,,
সে কি করছে বুঝতে পারছিল না।
যখন বুঝতে পারলো,,তখন লজ্জা পেয়ে সরে গেল,,
আর বেচারা ইমন,,ওইভাবেই দাঁড়িয়ে রইল,,,কারণ
অনেক বড় শক খাইছে তো তাই।
নুসরাত এর আগে এইভাবে ইমনকে জড়িয়ে
ধরে নি,,,,তাই দুজনেই অনেক লজ্জা পেল।
নুসরাত এর আগে এইভাবে ইমনকে জড়িয়ে
ধরে নি,,,তাই দুজনেই অনেকটা লজ্জা পেল,,,
,,,,নুসরাত মাথা নিচু করেই বলল,,,
-আসলে আমি বুঝতে পারি নি,,,,সরি (নুসরাত)
-না না ঠিক আছে,,,আমি আসছি আপনারা রেডি
থাকবেন। আল্লাহ হাফিজ(ইমন বলেই বেড়িয়ে
গেল)
হঠাৎ নুসরাতের ফোনে কল আসলো,,
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
নুসরাতঃআস সালামু আলাই কুম মা,,
নুসরাতের মাঃ ও য়ালাই কুমুস সালাম,,কেমন আছিস রে মা,,
নুসরাতঃ আলহামদুলিল্লাহ মা আছি ভালোই,,তুমি কেমন আছো আর তপু কেমন আছে(নুসরাতের ভাই)
মাঃ হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি সবাই।
মা রে অনেক দিন হলো আসিস না বাসায়,,
জামাই বাবাজি কে নিয়ে আয় না একদিন।
নুসরাতঃ ঠিক আছে মা আমি উনাকে বলব,,
তারপর কিছু সময় নুসরাত ওর মায়ের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলো,,
তারপর,,,
নুসরাত খুশি খুশি ভাব নিয়ে শাশুড়ির রুমে গেল,,,
নুসরাতঃ আস সালামু আলাই কুম,,মা আসবো,,
শাহানারা বেগমঃ হ্যাঁ আয়,,,আমার রুমে আসতে তর
অনুমতি নেয়া লাগবে পাগলী,,,
নুসরাতকে হাত ধরে বসালেন তার শাশুড়ি,,,,,
-আজ আমার মেয়েটাকে বেশ খুশি খুশিই লাগছে,,
কারণ কি,,
-মা আজকে আমরা সবাই মিলে বেড়াতে যাব,,
আয়শা(ইমনের ভাবি)ঃআসসালামু আলাইকুম,,,
সালাম দিয়েই আয়শা রুমে প্রবেশ করল,,,
আমাকে ফেলে মেয়ে মা কি কথা বলছেন শুনি,,
মা আমাকে কি ভুলে গেলে। হুহ তুমার সাথে আড়ি
নুসরাতঃ দেখছো মা দেখছো,,তুমার বড় মেয়েটা
কত্ত হিংসুক হইছে। (নুসরাত)
-আরে আরে তোরা থাম,, আমি আমার দুইটা
মেয়েকেই অনেক ভালোবাসি হইছে,,,
এই বলে দুজনকেই জড়িয়ে ধরলেন,, শাহানারা
বেগম,,,
-আপু জানো,,আজ আমরা বেড়াতে যাব।
অফিস থেকে উনি এসে নিয়ে যাবেন।
তুমি রেডি
থেক। আর মা তুমিও,,,(নুসরাত)
নুসরাত এখন ইমনের ভাবিকে আপু বলে ডাকে,,,,,
শাহানারাঃ আমি গিয়ে কি করবো,,আমি বুড়ি হয়ে গেছি। তুমরা বাচ্চারাই যাও।
নুসরাতঃ কে বলল আমার মা বুড়ি হয়ে গেছে হু,,,
মা আমি কোন কথা শুনছি না। আমরা যাচ্ছি যাচ্ছি। কতদিন পর একটু ঘুরতে যাব ।
নুসরাতেকে এমন খুশি হতে দেখে,,,কেউ আর
কিছু বলল না,,,,
দুপুরে ইমন চলে আসল অফিস থেকে।
জোহরের নামাজ পড়ে,, সবাই রেডি হয়ে নিল।
নুসরাত,, নুসরাতের শাশুড়ি,, ও ভাবি,,
তারা বোরকা নিকাব পড়েই বের হলো।
ইমন গাড়ি বের করে,,সবাই উঠে তারপর রওনা দেয়।
কেউই জানে না তারা কোথায় যাচ্ছে।
নুসরাত ইমন কে বলল,,,
-আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি।
ইমনঃ গেলেই দেখতে পাবেন ইন শা আল্লাহ।
-জ্বী,,,
কারো মুখে কথা নেই,,,নুসরাত কিছু সময় পর
আড়চোখে ইমনকে দেখছিল।
“”উফফ আমি কেন বার বার উনার দিকে তাকাচ্ছি।
না চাইতেই চোখ চলে যাচ্ছে।
এ কোন মায়ায়
পড়ে যাচ্ছি (মনে মনে নুসরাত কথাগুলো ভাবছিল)
হঠাৎ করেই গাড়ি ব্রেক হলো,,,,
ইমনঃ আমরা এসে গেছি নামুন আপনারা
,,আমি আর মা শাশুড়ি নেমে গেলাম। আর ভাবি ও
বাবুকে নিয়ে নেমে গেল,,,,
মা শা আল্লাহ,,,জায়গাটা এতো সুন্দর ছিল,,
তা বলার মতো না। আমার তো এখান থেকে
যেতেই ইচ্ছে হচ্ছে না।
চারাপাশে অনেক ফুলের বাগান,,,আর একটা পুকুর,,,
আর সামনেই সবুজ মাঠ,,,
আর প্রকৃতির মুগ্ধকর বাতাস তো আছেই।
এতো ভালো লাগছিল,,, এখানে শুধু আরো কিছু
মহিলারা ছিল। আমাদের দেখে অনেকেই অবাক
হয়ে তাকিয়ে ছিল। কিছু কিছু মহিলারা আমাদের সাথে এসে পরিচয় হলো।
অনেক কথাবার্তা হলো,,,কিন্তু উনাকে দেখলাম
গাড়ির সাথে হেলান দিয়েই দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি উনার পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
নুসরাতঃ আপনি এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছেন। আসুন না আমাদের সাথে,,,
ইমনঃ না না ওখানে অনেক মহিলারা আছেন। আর
এইরকম যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ আমি গায়রে মাহরাম।
-ওহ আচ্ছা,,,বলেই আমিও উনার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম
ইমনঃ আরে আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি
ওনাদের সাথে গিয়ে কথা বলুন। ১ ঘন্টা পর আমারা
ফিরবো আবার ইন শা আল্লাহ। আসরের আজানের
আগে ফিরতে হবে,,
নুসরাতঃ না না আমি এইখানেই ঠিক আছি।
বলেই দুজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
কিছুসময় পর মা আর ভাবি আসল,,,
শাহানারা বেগমঃ বাবা ইমন এখন চল বাসায় যাই। আসরের ওয়াক্ত চলে আসছে।
-হ্যাঁ মা চলো,,,
বলেই সবাই গাড়িতে উঠে গেলাম,,,
নুসরাতঃ আচ্ছা আপনি আগে কেন নিয়ে এলেন না,
কাছেই এতো সুন্দর জায়গা ছিল যখন।
ইমনঃ আসলে,,,,
নুসরাতঃ আচ্ছা আচ্ছা,,,বলতে হবে না। উফফ খুব
ক্ষিদে পায়েছে। বাসায় যেতে আর কতো সময়
লাগবে
ইমনঃ এইতো ১ ঘন্টার মতো।
তখনই আয়শা বলল,,
আয়শাঃ দেখছো মা তুমার মেয়ে কতো রাক্ষসী,,
আসলাম ৩ ঘন্টা হলো না। আর খিদে পাইছে বলে,,,
নুসরাতঃ আপুউউউ তুমি আমাকে রাক্ষসী বললা,,
মা এর একটা বিহীত করো তো। আমাকে রাক্ষসী বলা
হচ্ছে না ।
শাহানারাঃ এই তুমরা বাচ্চাদের মতো ঝগড়া কেন
করছো। নুসরাত মা এইতো বাসায় যাব।
আর আয়শা তুই এতো ওর সাথে লাগিস কেন হ্যা,,,
বেচারির খিদে পাইছে বলেই তো বলল।
আয়শাঃ হইছে আমি তো তুমার মেয়ে না। ওর পক্ষিই
নাও সবসময়। হুহ ,,
শাহানারাঃ আরে আরে,,আমার মেয়েটাতো রাগ
করেছে।
এই দেখ নুসরাতকে কান ধরে দিলাম।
নুসরাতঃ মা তুমি ওর জন্য আমাকে বকা দিলা,,,ভ্যায়ায়ায়া
বলে নুসরাত ন্যাকা কান্না শুরু করে দিল ।
আর সবাই হেসে উঠলো ।
নুসরাতঃ এই তুমরা হাসছো কেন।
(নাক ফুলিয়ে নুসরাত বলল)
-নুসরাতের এমন বাচ্চামো দেখে,,সবাই মুখ টিপে
হেসেই যাচ্ছে। আর ইমন ও মুখ টিপে হাসছে।
নুসরাতঃ হইছে সবাই আর মুখ টিপে হাসা লাগবো না। জুড়েই হাসো। হুহ ,,
হাহা হাহা হাহা,,,সবাই এবার শব্দ করে হেসেই দিল
আর নুসরাত ইমনের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো।
তারপর তারা বাড়িতে এসে,,,আসরের নামায পড়ে নিল। আর ইমন চলে গেল বাজারে।
ইমন বাজার নিয়ে এলে,,,রাতের খাবার রান্না করে
নুসরাত। সবাই মানা করলেও কারো কথা শুনেনি।
সে আজকে রান্না করবেইই,,,,
মাগরিবের নামাজ শেষে নুসরাতের শাশুড়ি ও ভাবি
মিলে ইসলামিক বিষয় নিয়ে কিছুসময় কথাবার্তা হলো,, তারপর এশার নামাজ পড়ে নিলো,,
আর ইমন ও চলে গেল মসজিদে,,
রাত ১০ টায়,,,
খাবার দেওয়া হলো টেবিলে,,,
নুসরাত তার শাশুড়ি মা ও ভাবিকে ডেকে খাবার
টেবিলে পাঠাল।
তারপর নুসরাত গেল ইমনকে ডাকতে,,,
নুসরাতঃ আস সালামু আলাই কুম।
ইমনঃ ও য়ালাই কুমুস সালাম
নুসরাতঃ খাবার টেবিলে দিয়ে দিছি। আসুন খাবেন।
ইমনঃআপনি কি জানেন না,,যে আমি আলাদা খাই।
নুসরাতঃ ওহ,,আপনাকে এই কথা জিজ্ঞেস করতেই
ভুলে গেছি। আচ্ছা আপনি কেন এইভাবে সবার
সাথে বসে খান না। এটা তো সওয়াবের কাজ তাই না।
ইমনঃ হ্যাঁ সওয়াবের কাজ,,,কিন্তু ওখানে ভাবিও
বসবেন। আর তিনি সবসময় খিমার নিকাব পড়েই আমার সামনে থাকেন। পর্দার বরখেলাপ হবে বলে। আর খাওয়ার সময় উনি নিকাব পড়তে পারবেন না। তাই,, আমি উনার জন্য গায়রে মাহরাম।
নুসরাতঃ আচ্ছা,,,আমি এতো দিনে বিষয়টা বুঝতে
পারছি। আচ্ছা আপনি বসুন আমি আসছি।
নুসরাত নিচে নেমে বলল,,,,
-আপু,,মা,,তুমরা আমায় আগে বলবা না। যে উনি আপুর সাথেও পর্দা করেন। হুহ
শাহানারা বেগমঃ বলার সুযোগ হয়ে উঠে নি রে মা।
আচ্ছা আয় বস এখানে। ইমন পরে খেয়ে নেবে।
নুসরাতঃ না মা আমি উনাকে ফেলে খাবোনা আজকে।
শাহানারাঃ এতোদিন তো একসাথেই খাইছিস।
এখন কি হলো।
নুসরাতঃ না মা,,,মানে,,ম,,মা আমি (আমতা আমতা করছিল)
আয়শাঃ হইছে,,আর আমতা আমতা করতে হবে না।
আমারা যা বুঝার বুঝে গেছি। তাই না মা ,,
বলেই মুখ টিপে হাসা শুরু করল,,,
নুসরাতঃ তুমরা কি বুঝেছ(করুণ ভাবে থাকিয়ে নুসরাত বলল)
আয়শাঃ এইতো,,আমার ছোট্ট বোনটা দেবরজির
প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে
নুসরাতঃ আপুউউ ভালো হচ্ছে না কিন্তু,,,
(নুসরাতের ইচ্ছে করছে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে)
শাহানারাঃ এই এই তোরা আবার শুরু হলি,,থাম তো।
বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করতেই থাকে সবসময়।
নুসরাতঃ আমরা তো তুমার বাচ্চাই,,, তাই না আপু।
হুম বলেই দুজন শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরল ।
শাহানারাঃ আচ্ছা এইবার খাওয়া শুরু করো।
দেখি আমার মেয়েটা কেমন রান্না করছে।
বলেই নুসরাতের শাশুড়ি মুখে খাবার নিলেন।
নুসরাত বেশ নার্ভাস হচ্ছিল,,কিরকম হলো খাবার টা।
কেউ কিছুই বলছিল না।নিঃশব্দে খেয়ে যাচ্ছিল তারা।
নুসরাত দাঁড়িয়ে ভাবছিল।
হয়তো খাবারটা ভালো হয় নি।
তাই কেউ কিছু বলছে না।
নুসরাত বলে উঠল,,,,
হইছে আর খেতে হবে না,,,বুঝেছি খাবার ভালো
হই নি। এই প্রথম রান্না করছি তো। তাই হয়তো এমন
হইছে। বলেই নুসরাত মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে
রইল । নুসরাতের শাশুড়ি তখন বললেন,,,
শাহানারা বেগমঃ আরে মা,,খাবারটা অনেক ভালো
হইছে। এই আয়শা ভালো হইনি তুইই বল ।
আয়শাঃ হ্যাঁ নুসরাত খাবারটা তো অনেক ভালোই
হইছে। নেক্সট টাইম থেকে আরো ভালো হবে
ইন শা আল্লাহ
নুসরাতঃ তুমরা সত্যি বলছ তো(নুসরাত)
শাহানারাঃ হ্যাঁ সত্যি,, এখন আমাদের খেতে দে তো।
আর তুই যা ইমনকে খাবারটা দিয়ে আয়..
নুসরাতঃ আচ্ছা,,যাচ্ছি ।
নুসরাত প্লেটে খাবার আর পানি নিয়ে রুমে চলে
গেল।
ইমন খাটের উপর হেলান দিয়ে শুয়ে ছিল।
নুসরাতঃ আসুন খেয়ে নিন।
-জ্বী,
ইমন হাত ধুয়ে খেতে লাগলো। প্রথম লোকমা
মুখে দিয়েই নুসরাতের দিকে তাকালো,,,
ইমনঃ আজকে খাবারটা কে রান্না করছে,,,
নুসরাতঃ কি,,,ভালো হইনি বুঝি,,আমি জানতাম। আসলে প্রথম রান্না করছি তো তাই ।
( মাথা নিচু করে নুসরাত বলল)
ইমনঃ আপনি রান্না করছেন। আরে আমি তো
জানতে চাইলাম শুধু খাবারটা কে রান্না করলো।
অনেক ভালো হইছে তো তাই ।
ইমনঃসত্যিইইইইই
ইমনঃ জ্বী,,,,
হঠাৎ করেই ইমন কাশতে শুরু করল,,,আর চোখ লাল হয়ে আসছে। নুসরাত কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। পানি খেয়ে ইমন আবার
খেতে লাগলে,,,, নুসরাত বলল,,,
নুসরাতঃ আচ্ছা আমি যা বুঝার বুঝেছি,,,আর খেতে
হবে না। আমিই খেয়ে দেখি এখন,,
ইমনঃ আরে কি করছেন প্লেট কেন নিচ্ছেন।
দেখুন খাবারটা অনেক ভালো। আপনি খাবারটা
খেতে পারেন না। আমার অনেক খিদে লাগছে
আমিই খাবো। দিন তো প্লেটা টা,,,
নুসরাত জোড় করেই,,,একটু ভাত মুখে দিল,,,
আর সাথে সাথে ফেলে দিয়ে কাশতে লাগলো।
ইমন পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,,
ইমনঃ আমি বলছিলাম না। আপনি খাবেন না।
কেন খেলেন ,,
নুসরাতঃ আ,,,আপনি,,এই খাবার কি রকম ভাবে খেলেন। এতো ঝাল কি রকম খেলেন।
মা আর আপু ও খেল কি করে । বলেই,,,
(নুসরাত ফুঁপিয়ে কান্না করছে)
ইমনঃ আরে আপনি শান্ত হোন,,খাবারটা মজা হইছে।
একটু ঝাল হলে সমস্যা নাই। আর প্রথম রান্না করলে
এইরকম একটু আধটু হয়।
নুসরাত কান্না করতে করতে দৌড়ে রুম থেকে
বেড়িয়ে গেল,,,,,
ইমনঃ আরে শুনুন,,,
ইমন ও নুসরাতের পিছু গেল,,,নুসরাত শাশুড়ির রুমের দিকে গেল,,,
নুসরাতঃ মা,,,বলেই নুসরাত জড়িয়ে ধরল শাশুড়ি মা
কে,,,আর কান্না করতে লাগলো।
শাহানারাঃ কি হয়েছে আমার মেয়েটা কান্না কেন
করছে।
ইমন ও এলো রুমে,,,
শাহানারাঃ এই ইমন,,তুই কি আমার মেয়েকে কিছু
বলেছিস। আমার মেয়েটা এইভাবে কান্না কেন
করতেছে।
ইমনঃ মা আমি কিছু বলিনি,,উনি……
নুসরাত ইমনকে থামিয়ে দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে
বলল,,,,
-মা আপনারা সবাই এতো ঝাল তরকারি খেলেন
কি করে। একটু টু শব্দ করলেন না।
আমাকেও
বুঝতে দিলেন না। এতো ভালো হতে কেন
গেলেন মা,,,,,
শাহানারা বেগমঃ দেখো মেয়ের কথা,,,আরে ওসব
কিছু। আজ একটু ঝাল হইছে তো কি হইছে। পরে
ভালো হবে। আর খাবার নষ্ট করলে গুনাহ হবে।তাই,,
নুসরাতঃ মা আমার জন্যই আপনারা এতো কষ্ট পাইছেন। আমি শুধু কষ্টই দিতে পারি সবাইকে । (নুসরাত আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল)
শাহানারাঃ এই মেয়ে এই কে বলছে। তুই আমাদের
কষ্ট দিচ্ছিস হ্যাঁ। পাগলী। আমার মেয়েটা কতো
মিষ্টি। আমার মেয়ে কাউকে কষ্ট দিতেই পারে না।
যা তো ইমন এই পাগলীটাকে নিয়ে যা ।
,,যা মা,,,গিয়ে শুয়ে পড়।
নুসরাত আরো একবার শাশুড়ি মা কে জড়িয়ে ধরে
চলে আসলো। ইমনকে বলল,,,
নুসরাতঃআপনি রুমে যান,, আমি আসছি,,
ইমনঃ জ্বী,,
তারপর আয়শার রুমে গেলো নুসরাত,,,।
নুসরাতঃ আপু,,খাবারে এতো ঝাল হইলো,,একটি বার বললা না কেন,,,
আয়শাঃ আরে আমার মিষ্টি বোন রে,,,এতো কষ্ট
করে আমার বোনটা রান্না করলো। আর আমি এইসব
বলব।। তা তো হয় না ।
– আপুউউ বলেই নুসরাত জড়িয়ে ধরল আয়শা কে।
নুসরাতঃ তুমরা এতো ভালো কেন আপু,,,
আয়শাঃ আচ্ছা হইছে,,এখন যা তো রুমে গিয়ে শুয়ে
পড়।আর একদম মন খারাপ করবি না বলে দিলাম।
নুসরাতঃ আচ্ছা,,, বলেই নুসরাত বেরিয়ে নিজের
রুমে গেল,,,
ইমন নুসরাতের জন্যই অপেক্ষা করছিল,,,
নুসরাত রুমে ডুকতেই বলল,,,,
ইমনঃ দেখুন,,আপনি একদম মন খারাপ করবেন না
বুঝলেন। এই রকম প্রথম প্রথম রান্না করলে ভুল
হয়ই। আর মানুষ ভুল না করে কোন কিছু শিখে না।
আপনি ভুল করতে করতে একসময় খুব ভালো রাঁধুনি হয়ে যাবেন। তখন কিন্তু,,আপনার রান্না খাওয়ার জন্য সবাই পাগল থাকবে,,,তখন কিন্তু বিরক্ত হতে পারববেন না। আর শুনুন,,
আপনাকে মন মরা একদম ভালো লাগে না। আপনার মুখে হাসিই মানায়,,
নুসরাত কিছু না বলেই,,আচমকা দৌড়ে গিয়ে,,ইমনকে
জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে
লাগলো ,,,,
নুসরাতঃ আপনারা এতো ভালো কেন,, হুম।
আপনাদের কতো কষ্ট হইছে রান্নাটা খেয়ে,, তা
চিন্তা না করে আমি কষ্ট পাচ্ছি কি না তা চিন্তা
করতেছেন ।
ইমন মুচকি হেসে নুসরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে
দিতে বলে,,,
ইমনঃ আরে আপনি কান্নাটা তো বন্ধ করুন।
আপনাকে কান্না করলে না,,
একদম পেত্নির মতো লাগে ,,
নুসরাত উঠে ইমনের দিকে চোখ বড়বড় করে
তাকিয়ে বলল,,,
নুসরাতঃ কিহহহহ,,,আমাকে পেত্নির মতো লাগে তাই
না। দাড়ানন,,আমি এক্ষুণি মা কে বিচার দিচ্ছি,,
আপনি আমায় পেত্নি বলছেন ।
বলেই নুসরাত যেতে নিলে,,
ইমন নুসরাতের হাত ধরে টান দিয়েই একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে,,,,,
নুসরাত যেতে নিলে,,ইমন নুসরাতের হাত
ধরে টান দিয়েই একদম নিজের কাছে
নিয়ে আসে,,,,,
ইমনঃ যান,, এখন গিয়ে বলুন,,,
নুসরাত নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ইমনের
কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতেই পারছিল না,,
ইমনঃ এইরকম মুচড়া মুচড়ি করে লাভ নাই।
পারবেন না আপনি,,,
হঠাৎ ইমনের মনে পরলো, নুসরাতের সঙ্গে
আর আট দশটা স্বামী স্ত্রীর মতো ওদের
সম্পর্ক নয়,,,
নুসরাতঃ উহু,,,আপনি না ছাড়লে আমি যাব
কি করে,,আগে ছেড়েইই দেখুন।
,,নিশ্চুপ,,,হয়ে ইমন শুধু তাকিয়েই আছে,,।
এতক্ষণে ইমনের হুস এলো,,যে সে এতক্ষণ
নুসরাতকে ধরে রইছিল।
তারপর,,নুসরাতকে ছেড়ে দিল,,
ইমনঃ সরি,, (মাথা নিচু করে ইমন বলল)
নুসরাতঃ জ্বী,,কেন
ইমনঃ আসলে আমি বুঝতে পারিনি,,তাই
আপনাকে স্পর্শ করে ফেলেছি। আ,,আমার
আসলে খেয়াল ছিল না ।
আপনি রাগ
করবেন না। আর কখনো এইরকম ভুল হবে না ,,, ।
“নুসরাত কি বলবে সে নিজেও বুঝতে
পারছে না,,,নিঃশব্দে কান্না করছিল নুসরাত….
ওর যে কিছুই বলার নেই। আসলে তার
কারণেই তো ইমন এমন করে বলছে।
নিজের স্ত্রীকে স্পর্শ করে অপরাধী ভাবছে নিজেকে,
নুসরাতঃ জ্ব,,,,জ্বী,, আ,,আমি তো,,,
ইমনঃ আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন আমি আসছি,,,
বলেই ইমন বেড়িয়ে গেল,,নুসরাতকে কোন
কথার সুযোগ না দিয়ে,,।
নুসরাত বিছানায় গিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে
কান্না করতেছিল,,,,
নুসরাতঃ আমার কারণেই উনি আজ
নিজেকে এইরকম অপরাধী ভাবছে
নিজেকে। আসলে আমিই একটু বেশি করে
ফেলেছি।
নীলের অভিনয়ে অন্ধ হয়ে
উনার মতো এতো মহান মনের মানুষকে
আমি কষ্ট দিছি।আমি উনার মতো
মানুষের যোগ্যই নই। আল্লাহ আমাকে মাফ
করবেন কি না জানিনা।
হে আল্লাহ আমি এখন কি করবো,,,
উনাকে আমি কেমন করে বুঝাবো আমিও যে উনার
মায়ায় পড়ে গেছি,,,,বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল নুসরাত । কাঁদতে কাঁদতে কখন যে নুসরাত ঘুমিয়ে
পড়ল তা নিজেও জানে না।
,
এদিকে ইমন,,,ছাদে গিয়ে আকাশ পানে
চেয়ে নুসরাতকে নিয়ে ভাবছিল। আর
নিজের অজান্তেই চোখের কোণে
বারবার জল চলে আসছিল ।
নিজের ভালোবাসার মানুষটি এত কাছে
থেকেও একটাবার ছুঁয়েও দিতে পারি
না। একটাবার মুখ ফুঁটে ভালোবাসার
কথাটিও বলতে পারি না ।
কতটা ভালোবাসি নুসরাত আপনাকে আমি
জানিনা। আপনার হাসিমাখা মুখ দেখলে
আমি সব ভুলে যাই,,যে আপনার আর আমার
সম্পর্কটা যে খুবই ভিন্ন ।
হে আল্লাহ আর কতো পরীক্ষা নিবা তুমি।
আমি যে আর পারছিনা ।
কিছু সময় এইভাবেই আকাশের দিকে
তাকিয়ে রইল ইমন,,,তারপর চোখ মুছে
নিচে চলে আসল।
রুমে গিয়ে দেখল,,নুসরাত বাচ্চাদের মতো
গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। ইমন নুসরাতের
গায়ে কাথা দিয়ে। ইমন ও শুয়ে পড়ল।
,,,,,,,,,,,
নুসরাত তাহাজ্জতের জন্য রাত ৩ টায় উঠে
গেল। এখন থেকে প্রতিদিনই নুসরাত
তাহাজ্জত নামায পড়ে।
ইমনকেও ডেকে
তুলল নুসরাত,,,,
তারপর দুজনেই তাহাজ্জত নামাজ পড়ে নিল।
তারপর অনেক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করল।
তারপর,,দুজনেই চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকল।
ফজরের আজান দিয়ে দিলে,,,
ইমন মসজিদে চলে যায়।
আর নুসরাত নামাজ পড়ে নেয়।
তারপর রান্না ঘরের দিকে যায়।
সবার জন্য চা রান্না করে। এর মাঝেই ইমন
নামায পড়ে চলে আসে।
নুসরাত আয়শাকে আর শাশুড়িকে চা দিয়ে
ইমনের জন্য চা নিয়ে ঘরে যায়।
নুসরাতঃ আপনার চা,,
ইমনঃ আপনি কেন কষ্ট করতে গেলেন।
নুসরাতঃ ভাববেন না,,চা টা ঠিকই করতে
পারি। খেতে পারেন।
ইমনঃ আরে,,,আমি,, আরে শুনুন….
ইসস চলে গেলো,,আমি কি এই কথা বলতে
চাইছিলাম না কি। মেয়েটা না একটু
বেশিই বুঝে।
নুসরাত দৌড়ে ছাদে চলে গেল,,,
নুসরাতঃ আমি জানিনা আমার কেন এতো
কষ্ট হচ্ছে।
আমি উনাকে যত দেখছি। ততই উনার
মায়ায় পড়ে যাচ্ছি। আমি কি করে বলব
উনাকে। আমি উনাকে যে ভালোবেসে ফেলেছি ।
হে আল্লাহ আমি কি করবো।
বলেই নুসরাত কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ।
আমি যা করছি তারপর কি করে
নির্লজ্জের মতো উনাকে বলি,,,,
,,,,
ইমন নুসরাতকে সব জায়গায় খুঁজে না
পেয়ে,,ছাদে চলে আসে।
ইমনঃ আরে আপনি এখানে। আমি
আপনাকে কতো জায়গায় খুঁজেছি আপনি জানেন।
,,নুসরাত পেছনে ফিরে দেখে ইমন
দাঁড়িয়ে আছে। নুসরাত কোন জবাব না
দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার আকাশের
দিকে চেয়ে থাকে।
ইমনঃ দেখুন আমি ওই সময় এটা বলতে চাই
নি। যে আপনার চা টাও ভালো হবে না।
আমি জাস্ট বলতে চাইছি,,আপনি কেন কষ্ট
করতে গেলেন।
আপনি একটা কথা কি জানেন,,আপনি না
মাঝে মাঝে অনেক বেশিই বুঝেন।
আপনার যদি চা টা ভালোও না
হত,,তাহলেও আমি নিঃশব্দে খেয়ে নিতাম।
এক নিঃশ্বাসে ইমন কথাগুলা বলে থামল।
নুসরাত একমনে আকাশের দিকে চেয়েই আছে।
তারপর ইমন বলল,,,
ইমনঃ আচ্ছা আমি দুঃখিত,, আপনাকে আমি
কষ্ট দিতে চাই নি।
পারলে আমাকে মাফ
করে দিবেন..
বলেই ইমন চলে যেতে চাইলে,,,
নুসরাত বলল,
নুসরাতঃ আমি কিছু মনে করি নি। আসলে
আপনি ঠিকই বলেছেন আমি একটু বেশিই বুঝি।
তাইতো আপনাকেও আমি কষ্ট দেই বারবার।
বলেই নুসরাতের গলা ভারি হয়ে
আসলো,,কান্নায়। কোন মতে কান্না
আটকিয়ে বলল,,,
আচ্ছা এখন নিচে চলুন তো।
বলেই নুসরাত নিচে নেমে এলো,,ইমন ও
পিছু পিছু এলো।
,,,,,,,,,,
সকাল ১০ টায় ইমন রেডি হচ্ছে অফিসে
যাওয়ার জন্য,,,
নুসরাতঃ টেবিলে খাবার দিছি। আসুন।
ইমনঃ জ্বী আসছি।
তারপর ইমন খাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়ল।
,,,,আজকে নুসরাতের মনটা একদম ভালো
না। ওর শাশুড়ি বুঝতে পেরে,, ওকে একটা
ইসলামিক বই দিলেন পড়ার জন্য।
তারপর নুসরাত বইটা পড়েই কিছু সময়
কাটিয়ে দিল। আজ নুসরাত আর দুষ্টুমি
করলো না। তাই বাড়িটাই নিস্তব্ধ হয়ে
ছিল। এইরকম নুসরাতের সারাদিন কেটে গেল।
মাগরিবের নামাজ পড়ে,,নুসরাত শাশুড়ির
রুমে গিয়ে দেখল আয়শাও(ভাবি) বসে আছে।
নুসরাত গিয়ে শাশুড়ির পাশে বসল।
শাহানারা বেগমঃ কি রে মা আজ
আমাকে ঝালাসনি কেন।
তুই দুষ্টুমি না করলে বাড়িটাই কেমন
ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
তখন আয়শা বলল,,,
আয়শাঃ মা আমি আবার তোমার সাথে
রাগ করছি। তুমি শুধু নুসরাতকেই বেশি
ভালোবাসো । ও দুষ্টুমি না করলে
বাড়ি ফাঁকা লাগে আর আমি,,,হুহ
নুসরাতঃ এই আপু তুমি এতো হিংসুটে কেন
হু,,,(নুসরাত এতক্ষণে মুখ খুলল),,
এটাই তো আয়শা (নুসরাতের
ভাবি)চাইছিল।
আয়শাঃ ওই তুই আমাকে হিংসুক বললি
কেন। আজ,,আজকে তোর খবর আছে। বলেই
নুসরাতকে চিমটি কাটল আয়শা ।
নুসরাতঃ উহু,,,মা দেখো এই রাক্ষসীটা
আমার মাংস খেতে চাইছে।
আয়শাঃ ওই আমি রাক্ষসী,,,তবে রে দাঁড়া।
নুসরাতঃ মা,,বাঁচাও,,, বলেই শাশুড়ির
পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল নুসরাত।
আয়শাঃ মা আজ তুমি ওকে বাঁচাতে
আসবেনা। ও আমায় রাক্ষসী বলছে।
তাহলে আজ ওকে আমি রাক্ষসী সত্যি
প্রমাণ করবো। আজ ওকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো ।
নুসরাতঃ মা দেখছো,,রাক্ষসীটা কি
হিংস্র হইছে। ওই রাক্ষসী ফ্রিজে কাঁচা
মাংস আছে ওইটা খাও গিয়ে ।
আয়শাঃ কি বললি পেত্নি,,আমি কাঁচা
মাংস খাবো। ওয়াক থু,,,
নুসরাতঃ ওই আপু তুমি আমায় পেত্নি
বললা,,,কেন হুম।
তুমি রাক্ষসী পেত্নি,, ভুতনি,,সব ।
আয়শাঃ মা আজ তো তোমার মেয়ে গেছে,,,,
বলেই নুসরাতকে আয়শা ধরতে
গেলে,,,নুসরাত দিলো ভু দৌড় ।
,,নুসরাতের শাশুড়ি মিসেস শাহানারা
বেগম ওদের বাচ্চামু দেখে হাসতাছে ।
পাগলী মেয়েগুলা,,
,,নুসরাত সারা ঘরে দৌড়াচ্ছে। আয়শা
ওকে ধরতেই পারছে না।
আচমকা নুসরাত কিসের সাথে ধাক্কা
লেগে পড়ে যেতে নিলে,, কেউ ওকে ধরে ফেলে,,
আর নুসরাত মাগো,,বলেই চোখ বন্ধ করে নেয়।
নুসরাতকে আর কেউ ধরেনি,,ইমনই ধরছে।
দরজা খোলা থাকার কারণে আর নক করতে হয় নি।
আয়শা ইমনকে দেখে ততক্ষানাৎ চলে
আসলো রুমে।
নুসরাত যখন বুঝতে পারে সে পড়ে যায়
নি,,কেউ একজন ওকে ধরে আছে।
তখন,,আস্তে আস্তে চোখ মিলে তাকায়।
দেখে ইমন ওকে ধরে আছে। তারপর
নুসরাতকে ছেড়ে দিয়ে ইমন বলে,
ইমনঃ এখনই তো পড়ে যেতেন। যদি আমি
না আসতাম এমন সময়। নিজের একটু খেয়াল
রাখবেন দয়া করে ।
নুসরাত শুধু অবাক হয়েই ইমনের দিকে
তাকিয়ে আছে,,,এই চোখে তার জন্য
অফুরন্ত মায়া দেখতে পাচ্ছে নুসরাত, ,,
তাইতো এতো মিষ্টি করে শাসন করছে,,,
নুসরাতের খারাপ লাগছে না এক
অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে ওর ভিতর,,,
ইমনঃ এই যে,,কি হলো আপনার।,,
নুসরাতের হুস এলো এতক্ষণে,,নুসরাত
কিছুটা লজ্জা পেল যে এত সময় সে ইমনের
দিকে ফ্যালফ্যাল করে থাকিয়ে ছিল,,,
নুসরাত নিচের দিকে তাকিয়ে,,,
নুসরাতঃ জ্বী কিছুনা,,আসলে আমি,,,আপু…
ইমনঃ আচ্ছা ঠিক আছে। দয়া করে একটু
নিজের খেয়াল রাখবেন এবার থেকে।
নুসরাতঃ জ্বী,,,,
নুসরাতের হঠাৎ চোখ গেল,,ইমনের
পাঞ্জাবীরর দিকে,,,,
নুসরাতঃ আরে আপনি তো ভিজে গেছেন
দেখছি,,,হায় আল্লাহ আপনার তো ঠান্ডা
লেগে যাবে। আর আপনি এতক্ষণ আমাকে
লেকচার দিচ্ছিলেন। নিজের যে খেয়াল
রাখতে হবে সেদিকটা বুঝেন না,,,তাই না,,,
(নুসরাত কোমরে হাত দিয়ে ইমন কে বলছিল)
ইমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল,,,
ইমনঃ জ্বী,,না মানে,,গাড়িটা সামনেই
এসে নষ্ট হয়ে যায়,,, আর হঠাৎ করে বৃষ্টিও
শুরু হয়ে গেছিলো,, তাই হেঁটে আসতে হইছে।
নুসরাতঃ আচ্ছা,, এখন যান তো তাড়াতাড়ি
চেঞ্জ করে নিন,,,আমি আপনার জন্য চা
আনছি।
ইমনঃ জ্বী,,,,
ইমন চলে গেল রুমে,,,
আর নুসরাত গেল রান্না ঘরের দিকে,,,
ইমন ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এসে বিছানায় বসে,,,
নুসরাত এমন সময় চা নিয়ে ডুকে,,,
-নিন চা টা খেয়ে নিন,,,
ইমন হাতে কাপ নিয়ে এক চুমুক দিয়েই
বলে উঠে,,,
-আহ! চা তো খুব ভালোই হইছে,,
আমাকে প্রতিদিন কিন্তু এইভাবে চা
করে খাওয়াতে হবে ঠিক আছে।
নুসরাতঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,,
ইমন চা খেতে খেতে এশার আযান দিয়ে দেয়,,,
চা খেয়ে ইমন বলে,,
-আচ্ছা আমি নামায পড়ে আসছি
ইন শা আল্লাহ,, আপনিও নামায পড়ে নিন।
নুসরাতঃ আরে এই বৃষ্টির মধ্যে কি করে,,
আজকে ঘরেই পড়ে নিন,,
ইমনঃ না না কোন সমস্যা হবে না,,এখন
বৃষ্টি অনেকটাই কমে গেছে। আমি ছাতা
নিয়ে যাচ্ছি। আসছি (ফি আমানিল্লাহ)
নুসরাতঃ ফি আমানিল্লাহ
ইমন মসজিদে চলে গেল,,,নুসরাত ও ওজু
করে নামাজ পড়ে নিল। তারপর কোরআন
পড়ে কিছু সময় যিকির করল।
,,,,,,,,তারপর আয়শার রুমে গেল,,,
-আস সালামু আলাই কুম,,আপু আসবো,,,
আয়শা ওর স্বামীর সাথে কথা বলছিলো,,
আয়শাঃ আচ্ছা আমি এখন রাখছি আপনাকে
পরে ফোন দিবো,,আল্লাহ হাফিজ।
-……..
আরে নুসরাত আয় আয়,,,নামায পড়েছিস
নুসরাতঃ হ্যা শেষ করেই আসলাম। আচ্ছা
আপু তুমি ভাইয়ার সাথে কথা বলে নাও
আমি পরে আসি।
আয়শাঃ আরে না আমি পরে কথা বলে
নিবো,,তুই বল,,
নুসরাতঃ আচ্ছা আপি ভাইয়া কানাডায়
যাওয়ার কতদিন হলো,,,
আয়শাঃ এইতো ৫ বছর এর মতো,,
নুসরাতঃ ভাইয়া কি আর একবার ও দেশে
আসেন নি,,
আয়শাঃ আসছেন তো অনেক বারই,,তোর
বিয়ের ১ মাস আগেও এসে গেলেন,,
নুসরাতঃ ওহ আপু বলছিলাম কি,, আমি
আজকে রান্না করবো। তুমি একটু দেখিয়ে
দেখিয়ে দিবা। আমার ও তো রান্না
শিখা লাগবে না কি। আমার এইরকম কাজ
না করে বসে থাকতে ভালো লাগছে না আপু,,,
আয়শাঃ এই আচ্ছা আচ্ছা মন খারাপ কেন
করছিস। আয় আজ থেকে তকে আমি রান্না
শিখিয়ে দেব।
নুসরাত আর আয়শা রান্না ঘরে চলে গেলো,,,
তারপর আয়শা সবজি কেটে কেটে
নুসরাতকে সাহায্য করছে।
নুসরাত ও
কাটছে,,,তারপর আয়শা ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে
দিলো,,নুসরাত আয়শার সাহায্য রান্নাটাও সকাল
সকাল করে ফেলল।
আয়শাঃ বাহ,,নুসরাত খুব ভালো রান্না
হইছে। এখনি এতো মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে।
উফফ আমার না জিহবায় পানি এসে
যাচ্ছে।
নুসরাতঃ হইছে হইছে আপু,,,আর পাম দিতে
হবে না।
আয়শাঃ আমি মোটেও পাম দিচ্ছি না।
সত্যি বলছি।
নুসরাতঃ আচ্ছা,,আসো টেবিলে খাবার
লাগিয়ে দেই।
আমি আর তুমি আজকে একসাথে
খাবো,,উনি আর মা খেয়ে নিলে,,,
আয়শাঃআচ্ছা ঠিক আছে,,
টেবিলে খাবার দিয়ে নুসরাত শাশুড়িকে
ডাকতে গেল,,,
-আস সালামু আলাই কুম,,মা আসবো
-ওয়ালাই কুমুস সালাম হ্যা আয়,,,
-মা খাবার টেবিলে দিয়ে দিছি।
আসো
খেয়ে নিবে।
-আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।
নুসরাত বেরিয়ে এখন ইমনকে ডাকতে
গেল,,
-আস সালামু আলাই কুম,,,
-ওয়ালাই কুমুস সালাম,,
-খেতে আসুন
-না না আমি এখন খাবো না,,ভাবি…
ইমনের কথা থাময়ে,,,
-ভাবি আর আমি আজকে একসাথে খাবো।
আজকে আপনি মায়ের সাথে খাবেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে। চলুন।
ইমন আর তার মা,,একসাথে খেতে বসল।
নুসরাত তাদের খাবার বেড়ে দিচ্ছিল।
ইমন খাব
ইমন নুসরাতের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
ঘুমিয়ে পড়ল,,,
নুসরাত কিছুসময় ইমনের ঘুমন্ত চেহারার দিকে
চেয়ে রইল,,,কি নিষ্পাপ চেহারা উনার,,,
একসময় নুসরাত ও ঘুমিয়ে পড়ল,,,,
আযানের ধ্বনিতে ইমনের ঘুম ভেঙ্গে গেল,,,
উঠে যেতে নিলে,,,বুকে কিছু ভারী জিনিশ অনুভব
করে,,,তাকিয়ে দেখে নুসরাত ইমনকে ধরে
গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে,,,
ইমন তো নুসরাতকে এইভাবে দেখে,,,
হাজার ভোল্টেজের শক খায়। সাথে ভয় ও পায়।
না জানি মেয়েটা এইভাবে আমাকে দেখলে কি না কি
ভাববে,,,,পাশে তাকিয়ে দেখে এক বালতি পানি
রাখা,,ইমনের আর বুঝতে বাকি নেই,,
রাত্রে তার জ্বর চলে আসছিল।
একবার নুসরাতের দিকে তাকায় তো একবার বালতির দিকে,,,ইমন ভাবতে থাকে,,,
তাহলে মেয়েটা সারারাত আমার সেবা করছে,
তাই মুখটা শুকনো লাগছে,,,,।
ইমন চাইছে না,,নুসরাতকে সরিয়ে দিতে,, কারণ এর আগে নুসরাতকে এতো কাছ থেকে দেখে নি।
কিন্তু,,,ইমন কে যে সরতেই হবে,,,তা না হলে
আবার কি না জানি ভেবে বসে,, ,এই বলে
আস্তে করে ইমন উঠে যেতে নিলে,,,
নুসরাত ও কিছু নড়া পেয়ে চোখ খুলে তাকায়,,,
ইমন তো ভয়ে শেষ,, না জানি এখন কি হবে,,,
তাই ইমন লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে যায়,,
ইমনঃ আ,,আসলে,, আ,,আমি বুঝতে পারিন। আমি সত্যি নিজে ইচ্ছে করে আপনাকে স্পর্শ করিনি।
আ,,,আমি জানি আ,,আপনি এই অধিকার আমাকে দেন নি,,,দে,,,দেখুন আমাকে ভুল বুঝবেন না।
আ,,,আমি তাড়াতাড়িই ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছি। তারপর থেকে আপনি আমাকে আর দেখবেন না।
বলেই ইমন বেরিয়ে গেল নামায পড়তে,,,
নুসরাত এতক্ষণ ইমনের কথাগুলা চুপচাপ শুনছিল।
ইমনের কথার উত্তর দেওয়ার মতো ভাষা সে
খুঁজে পাচ্ছিলো না। কারণ,, দোষটা যে তারই,,,
নুসরাত নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে,,,,,
কি বলবে সে,,,কি বলে আটকাবে সে ইমনকে
নুসরাত কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
কিছুক্ষণ পর নুসরাত উঠে নামাজ পড়ে প্রতিদিনের
মতো কোরআন পড়ে নিল,,,,
তারপর সবার জন্য চা করল,,,,
ইমন যেন নুসরাতের সামনে যেতেই লজ্জা
পাচ্ছে। ইমন ভাবছে,,,নুসরাত হয়তো ওকে খারাপ
ভাবছে। হে আল্লাহ আমি এখন কি করবো।
না উনাকে আর আমি কষ্ট দিবো না।
উনার ভালো লাগা খারাপ লাগা আছে,,,
আর যে জায়গাতে উনিই আমায় পছন্দ করেন না।
উনাকে আটকে রাখার কোন অধিকারীই আমার নেই। আমি খুব তাড়াতাড়িইই উনাকে মুক্ত করে
দিবো। উনি খুশি থাকলে আমিও খুশি,,
বলতেই ইমনের চোখ থেকে টুপ করে পানি
বেরিয়ে গেল,,,ইমন কিছু একটা ভেবে,,,
হাতে মোবাইল নিয়ে বারান্দায় গিয়ে উকিলকে
ফোন দিল,,,,
,,ক্রিং ক্রিং ক্রিং,,,
রিসিভ করতেই,,
-আস সালামু আলাই কুম চাচা,,কেমন আছেন।
-……………………
-জ্বী আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
চাচা বলছিলাম না আপনাকে ডিভোর্স পেপারটা,,,, ৬ মাস তো প্রায় এসে গেছে। আর ২ দিন বাকি,,,,,,,
-…………..……
-জ্বী ঠিক আছে চাচা আপনি কাগজপত্র রেডি করে
আমাকে পাঠিয়ে দিবেন,,,,,
-………………
-জ্বী আল্লাহ হাফিজ।
নুসরাত এতক্ষণ ইমনের কথাগুলো শুনে ওখানেই
নিস্তেজ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল,,,ইমনকে চা দিতে
এসে নুসরাত কথাগুলা শুনে নেয়।
নুসরাতের হাত থেকে চায়ের কাপটি পড়ে
ভেঙ্গে যায়,,,
কিছু পড়ার শব্দ শুনে ইমন পেছনে তাকিয়ে
দেখে নুসরাত দাঁড়িয়ে আছে,,,,
আর সামনেই কাপটি পড়ে ভেঙ্গে আছে,,,,
ইমন এগিয়ে এসে নুসরাতকে জিজ্ঞেস করে,,,
-কি হয়েছে আ,,,,,
কথাটা পুরোপুরি বলার সুযোগ না দিয়ে নুসরাত দৌড়ে
সেখান থেকে চলে যায়,,,
অন্য একটা রুমে গিয়ে দরজা লক করে
দেয়,,,তারপর,,,
ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে যায়,,
নুসরাতের যেন পুরো পৃথিবীটাই থমকে
গেছে,,, নুসরাত কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,,
-হে আল্লাহ এ কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছ,,,আমি কি
করে উনাকে ছেড়ে থাকবো। না না আমি পারবো
না,,,উনাকে যে আমি ভীষণ ভালোবেসে
ফেলেছি। হে আল্লাহ উনি কি একটুও বুঝেন না।
নুসরাত পাগলের মতো বিলাপ করতে থাকে,,,
এর এদিকে ইমন নুসরাতকে খুঁজতে খুঁজতে
হয়রান,,,তারপর,,এই রুমটা ভেতর থেকে লক
দেখে,,,ইমন নুসরাতকে ডাকতে থাকে,,,
-এই নুসরাত নুসরাত,,,দরজাটা খুলুন। কি হয়েছে
আমাকে বলুন,,,আমি কি আপনাকে কোন কষ্ট দিয়ে
ফেলেছি।
নুসরাত কোন কথাই বলছে না,,,ঐদিকে ইমনের
চিল্লানী শুনে ইমনের মা ও ভাবি এসে গেল,
শাহানারা বেগমঃ কি হয়েছে বাবা,,তকে এমন দেখাচ্ছে কেন,,
ইমনঃ মা,,,দেখনা নুসরাত দরজা খুলছে না,,,ওর কিছু হয় নি তো মা,,,
-আরে তুই শান্ত হ,,কিছুই হয় নি,,আমি দেখছি,,
নুসরাত নুসরাত মা আমার দরজাটা একটু খোল তো
মা,,,কি হয়েছে বল। ইমন কি তকে কিছু বলছে,,
মা আমাকে বল। আমি ওকে বকা দেব।
নুসরাত কোন কথাই বলছিল না,,,
নীরবে কান্নাই করছিল,,,
সবাই অনেক ডাকার পর ও নুসরাত যখন দরজা খুলছিল না। তখন ইমন সিদ্ধান্ত নিলো দরজাটা ভাঙবে। এর মাঝেই নুসরাত বেরিয়ে এলো,,,
নুসরাতকে দেখে সবাই যেন প্রাণ ফিরে পেল,,,
শাহানারাঃ কি হয়ে মা তোর,,,আমাকে বল,,
নুসরাত একবার ইমনের দিকে তাকিয়েই চোখ
ফিরিয়ে নিলো,,,
নুসরাতঃ না মা কিছুনা। মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। বাড়ি যেতে ইচ্ছে হচ্ছে ।
-ওহ এই কথা আগে বলবে না পাগলী মেয়ে।
যা গুছগাচ করে নে,,ইমন তকে নিয়ে যাবে।
-না মা আমি যেতে পারবো। উনি অফিসে যাক।
-এভাবে একা তোকে তো আমি ছাড়তে পারি না মা।
ইমন তকে দিয়ে আসবে,,,
নুসরাত আর কিছুই বলল না,,,মাথা নিচু করে রুমে চলে গেল,,,তারপর সব গুছাতে লাগলো।
ইমনঃ হঠাৎ করে বাড়ি যাবেন যে,,,,
-নুসরাত একটা তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলল,,আমাকে আজ হোক তো কাল এখান থেকে তো চলে
যেতেই হবে। আর ৬ মাস হতে যে আর ২ দিন।
তাই এখানে থেকে আর মায়া বাড়াতে চাই না।
ইমন মাথা নিচু করে আছে,,,তার ও অনেক কষ্ট
হচ্ছে এইভাবে নুসরাত দূরে চলে যাচ্ছে
দেখে। নুসরাত সব গুছিয়ে নেয়,,ইমনকে বলে,,,
-যাবেন,,
ইমন নুসরাতের দিকে করুণ দৃষ্টিতে থাকায়,,
নুসরাত ইমনের দিকে আর তাকাচ্ছে না।
না হলে,,যে আর ও #মায়াজাল থেকে যেতে
পারবে না,,, নুসরাত মনের মাঝে ক্ষীণ আশা
রাখে,,,যদি একটিবার ইমন ওকে আটকায়,,
নুসরাত নিচে নামছে,,ইমন ও পিছু পিছু গেল,,
নুসরাত ভাবি আর শাশুড়ির কাছ থেকে বিদায় নেয়।
অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রাখছে নুসরাত।
নুসরাতের ইচ্ছে করছে ইমনকে জড়িয়ে ধরে
বলতে বড্ড ভালোবাসি আপনাকে,,
কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না,,,
ইমন নুসরাতকে আটকাতে যেয়েও আটকালো না।
যদি নুসরাত রাগ করে,, কষ্ট পায়,,,
নুসরাত গাড়িতে উঠে বসল,,,ইমন ও গাড়ি স্টার্ট
দিলো,,,দুজনেই সারা রাস্তা কোন কথা বলে নি।
আর নুসরাতের কান্নায় মুখের নিকাবটা পুরোপুরি
ভিজে একাকার,,
বাড়িতে পৌছে নুসরাত বলে,,
-ভিতরে আসবেন না,,
-না আপনি যান,, আমার একটু কাজ পড়ে আছে।
আল্লাহ হাফিজ।,,,
ইমন চলে গেলো গাড়ি নিয়ে,,,নুসরাত ওখানে
দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কান্না করল,,,
তারপর কলিং বেল চাপল,,,
নুসরাতের মা দরজা খুলে দিল,,,নুসরাতকে দেখে
বেশ অবাকই হলেন সেলিনা বেগম,(নুসরাতের মা)
-কি রে মা তুই,,,একটা ফোন করলি না যে আসবি,,,আর জামাই বাবাজি কোথায়।
-মা আমাকে কি ভেতরে যেতে দিবে।,,,
এতক্ষণে হুশ এলো সেলিনা বেগমের যে তিনি
এতক্ষণ নুসরাতকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।
-আরে মা আয় আয় ভিতরে আয়,,,,
বাবা তপু (নুসরাতের ভাই) এদিকে আয় তো,,
-হ্যাঁ মা বলো,,,আরে আপু তুই,,(তপু)
-যা তো বাবা নুসরাতের ব্যাগটা নিয়ে রুমে রেখে
আয়।
-আচ্ছা যাচ্ছি (তপু)
-তুই হঠাৎ কি করে রে মা,,আর জামাই বাবাজি আসলো না যে(সেলিনা বেগম)
-উনি এসেছিলেন,,,আবার চলে গেছেন উনার
জরুরি কাজ ছিল।
-তাই বলে একটু বসে যেতে পারলো না।
-বাদ দাও তো মা,,,আমি রুমে যাচ্ছি।
মা কে আর কোন কথার সুযোগ না দিয়ে নুসরাত
রুমে চলে আসলো,,,একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
বিছানায় গিয়ে বসল,,,,
কিছুক্ষণ পর তপু আসলো,,,
-আপু খেতে আয় মা ডাকছে,,,
-আয় তো ভাই এদিকে। এখানে বস তর সাথে একটু
কথা বলি,,,
-হ্যাঁ আপু বল,,,আপু তকে এতো মনমরা লাগছে
কেন। ভাইয়ার সাথে কি ঝগড়া হইছে।
-না রে ভাই। এমনিতেই। বল তর পড়ালেখার কি খবর।
আর হিফজ শেষ করতে আর কতদিন।
-এইতো আপু ইনশাআল্লাহ এই বছর শেষ হয়ে
যাবে।
-আলহামদুলিল্লাহ,,,
-আচ্ছা চল আপু,,,
নুসরাত আর তপু খেতে চলে গেল,,,
-নুসরাত খাচ্ছে না,,,
শুধু ভাত হাতে নিয়ে
নড়ছে,,,মিসেস সেলিনা বেগমের ব্যাপারটি চোখ
এড়ালো না। তিনি আসার পর থেকে নুসরাতকে
চুপচাপ দেখছেন,,,,
-নুসরাত কোন রকম একটু খেয়েই রুমে চলে
গেল,,,
-কি হয়েছে তোর,,,
মায়ের কথা ফিরে তাকাল নুসরাত,,,
-আমার আবার কি হবে মা,,,জোর করেই একটু মুচকি হাসলো নুসরাত ,
-আসার পর থেকেই দেখছি কেমন মনমরা হয়ে
আছিস,,
-না মা কিছুনা। তুমি যাও তো মা,,,
এর মাঝেই জোহরের আযান দিয়ে দিলো,,,নুসরাত
নামাজ পড়ে জায়নামাজে কিছুক্ষণ বসে রইল।
নুসরাতের মা নুসরাতকে নামাজ পড়তে দেখে
বেশ অবাকই হলেন,,,যে মেয়ে নামাজ পড়ার কথা
বললে দৌড়ে পালাতো সেই মেয়ের এতো
পরিবর্তন,,,মিসেস সেলিনা বেগম বেশ খুশি
হলেন,,,
,,,,,,২ দিন পর,,,,
আজ নুসরাতের মনটা একদম ভালো নেই,,,আজই ৬
মাস পূর্ণ হলো,, আজকের পর থেকেই উনি আমার
জীবন থেকে চলে যাবেন একেবারে,,,,
এই কথা মনে হলে নুসরাত আৎকে
উঠে ভয়ে,,
না না আমি কি করে থাকবো উনাকে ছাড়া কি করেএএ
,,,,
নুসরাত এইসব ভাবছিলো আর চোখের জল
ফেলছিলো,,
মিসেস সেলিনা বেগম হঠাৎ করেই নুসরাতের রুমে
ঢুকেন। মেয়েকে এইভাবে কাঁদতে দেখে
বেশ ভয় পেয়ে যান তিনি,,,
কাঁপা কাঁপা গলায় মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন,,
সেলিনা বেগমঃ কি হয়েছে মা,,এইভাবে বসে
কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে বল,,
নুসরাত আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না,,
মা কে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো,,,
মেয়ের এমন কান্না দেখে সেলিনা বেগম ও
কেঁদে দিলেন,,,
সেলিনাঃ মা রে বল না কি হইছে।
এইভাবে কান্না
কেন করছিস বল মা কেনো,,?
”নুসরাত কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,
-মাগো ও মা,,,আমার সব শেষ হয়ে গেল মা,,,আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে মা,,,,
উনাকে আমি হারিয়ে ফেলবো মা,
আজ আমি উনাকে হারিয়ে ফেলবো মা,,
পাগলের মতো নুসরাত কান্না করছে,,,
মিসেস সেলিনা বেগম,,মেয়েকে কি বলে শান্তনা
দিবেন তার ভাষা খুঁজে পেলেন না।
অনেক্ষন মা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে
নিজের মনকে হালকা করলো নুসরাত,,,
-মা তুমি এখন যাও।,,, (শান্ত গলায় বলল নুসরাত)
সেলিনা বেগম কিছুটা ভয় পেয়ে যান যদি মেয়েটা
উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে,,
-না রে মা আমি এইখানেই ঠিক আছি।
-ভয় নেই মা আমি নিজের কোন ক্ষতি করবো না।
আল্লাহ আমাকে সেই ধৈর্য্য দিয়েছেন। আমার
আল্লাহ আমার জন্য নিশ্চই কোন ভালো চিন্তা
করে রেখেছেন।
আল্লাহ যা করবেন ভালোর
জন্যই করবেন ইন শা আল্লাহ,,,
,,মেয়ের মুখে এইরকম কথা শুনে বেশ অবাক হন
সেলিনা বেগম,,,এতো কষ্টের মুহূর্তে মেয়েটা
কেমন ধৈর্য্য ধরে শান্ত হয়ে কথা বলছে।
মিসেস সেলিনা বেগম আর কিছু না বলে চলে
গেলেন,,
,
,
,,,,
এদিকে ইমন ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে বসে
আছে,,,
কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না। নুসরাতকে
ছেড়ে থাকা সম্ভব না ইমনের পক্ষে,,
ইমনঃ না না আমি উনাকে ছাড়তে পারবো না। এটা আমার দ্বারা হবে না,,,
আমি শেষ বারের মতো নুসরাতকে জিজ্ঞেস
করবো,,যে আসলেই উনি কি চান আমি উনাকে
ছেড়ে দেই,, হ্যাঁ আমাকে কথা বলতেই হবে,,
ইমন ডিভোর্স পেপারটি আলমারিতে রেখে
দিলো…।
,
,
,,নুসরাত উঠে দরজা লাগিয়ে ওজু করে দুরাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে সাহায্য চায়।
সেলিনা বেগম রুমে গিয়ে রেগে ইমনকে
ফোন করে ক্রিং ক্রিং,,,
ইমন অফিসে ছিলো,,,
ইমনঃ আস সালামু আলাই কুম,, মা ভালো আছেন।
সেলিনাঃ তুমি কি করে আমার মেয়েটাকে এইভাবে
শাস্তি দিচ্ছ,,কি করে আমার মেয়েটার জীবনটা নষ্ট
করে দিচ্ছো,,,
ইমনঃ মা আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
-এখন তো কিছুই বুঝতে পারবা না,,,আমার
মেয়েটাকে শেষ করে দিয়ে এখন তো দিব্যি
থাকবে। আসলে আমি বুঝতে পারিনি,, তোমাদের
মতো মানুষ ভালোমানুষ এর মুখোশ পরে এতটা
জঘন্য হতে পারে।
-মা আপনি শান্ত হোন,,,কি হয়েছে আমাকে বলুন।
-কি হবে কি,, অস্বীকার করতে পারবে,,তুমি আমার
মেয়েকে ডিভোর্স দিবে বলনি।,,,
ডিভোর্স কথাটি শুনে ইমন বড়সড় ধাক্কা খেল,,
-কি হলো জবাব নেই তো,,
আমার মেয়ের
জীবন নিয়ে খেলে কি শান্তি পেলে তোমরা।
আমার মেয়েটাকে এইভাবে জ্যান্ত লাশ করে
ছাড়লে।
-মা আগে আপনি শান্ত হোন,,আমি নুসরাতকে
নিজের ইইচ্ছায় ডিভোর্স দিচ্ছি না।
উনিই তো এটাই
চান ,,
-কি,,,আমাকে তুমি বোকা পাইছো,,আমি নিজের
চোখে যা দেখছি তা কি মিথ্যে হ্যা,,,যদি আমার
মেয়ে তোমার থেকে ডিভোর্সই চাইতো,,
তাহলে নিজেকে কষ্ট কেন দিচ্ছে।
কেন পাগলের মতো কান্না করছে,,,
-মা আপনি কি বলতেছেন,,নুসরাত কান্না করতেছে।
উনিই তো আমাকে বললেন। যেইদিন আমাদের
বিয়ে হয় সেইদিনই।
-হ্যাঁ তখনকার ব্যাপারটা আলাদা ছিলো। আমার মেয়ে হয়তো তুমার মতো মানুষকে,,,, তাই হয়তো এখন এতো কষ্ট পাচ্ছে। আর মা হয়ে মেয়ের জন্য
কিছুই করতে পারছি না।
-মা আপনি চিন্তা করবেন না। আমি যা বুঝার বুঝে
গেছি। এইটাই বুঝার বাকি ছিলো। আপনার মেয়েকে
আমি আর মরণের আগ পর্যন্ত ছাড়ছি না। দোয়া
করবেন।
মিসেস সেলিনা বেগম ইমনের এইরকম কথা শুনে
বড় রকম ধাক্কা খেলেন,,
-বাবা তুমি কি বলতেছ,,,
-জ্বি মা আমি ঠিকই বলছি,,
আচ্ছা মা আমি শুক্রবারে এসে নুসরাতকে নিয়ে যাব।
কয়েকদিন থাকুক।
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
-আর মা,,প্লিজ নুসরাতকে জানাবেন না আমি যে
শুক্রবারে আসবো।
-আচ্ছা বাবা আমি বলবো না। তুমরা সুখি হও এটাই দোয়া করি।
-আচ্ছা মা আল্লাহ হাফিজ।
ইমন ফোন রেখে ভাবছে,,পাগলীটা একাই কষ্ট
পাচ্ছে। ভালোবাসে সেটা বললেই কি হয়ে যেত
।
নুসরাতের দিন নাকের পানি আর চোখের পানি এক
করেই যাচ্ছিল,,,
আর ভাবছে আজ ১ সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে উনার
কোন খুঁজই নাই,,ডিভোর্স পেপার ও পাঠালেন না।
কিছুই তো নুসরাতের মাথা দিয়ে ডুকছে না।
আর এইদিকে ইমনের অবস্থাও নাজেহাল,,,
কখন শুক্রবার আসবে,,আর একদিন পর ইমন তার
মায়াপরীর কাছে যাবে,,,
ইমনের অবস্থাও নাজেহাল,
কখন শুক্রবার আসবে,, একদিন পর তার
মায়াপরীটাকে দেখতে পাবে,,,
অপেক্ষার প্রহর যেন কাটতেই চায় না,,,,
,,,,
অবশেষে আসলো সেই দিন,,,
ইমন অফিসের সব কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা
হয়ে গেল,,,
মাগরিবের আজান দিয়ে দিলেই,,,নামাজ পড়ে
নুসরাতের বাসার দিকে রওনা দেয় ইমন।
আর এইদিকে নুসরাত নামাজ পরে বিছানায় গিয়ে
ইসলামিকক বই নিয়ে বসে,
[আর মনে মনে ভাবতে থাকে,,মনটা কিছু সময়
আগেও কতো বিষণ্ণ ছিলো,,
কিন্তু এখন,, নামাজ পড়ার পর ভালোই লাগছে।
আসলেই আল্লাহর সান্নিধ্য সকল কষ্টকে তুচ্ছ
করে দেয়,,দুনিয়ার সকল দুঃখ কষ্টই তুচ্ছ মনে হয়
যে আল্লাহকে পায়,,তখন আল্লাহই ব্যক্তির জন্য
যতেষ্ট হয়ে যান,, ]
এমন সময় সেলিনা বেগম মেয়ের রুমে যায়,,
হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে।
-মা হাতে ওটা কি,
-শাড়ি,,
-শাড়ি দিয়ে কি হবে,,
-কেন তুই পড়বি,,
-মা দেখো তুমি কোথাও বাইরে যেতে চাচ্ছো।
তাহলে শুনে রাখো আমি বোরকা ছাড়া বাইরে
বের হই না। আর শাড়ি তো অসম্ভব।
-কে বলছে তকে বাইরে যেতে,,,
-তাহলে এটা কেন পড়বো,,
-এমনিতেই,, পড়বি,,,
-না মা আমার ভালো লাগছে না যাও,,,
– আমি কিছুই শুনছি না,,,তুই এটা পড়বি এখনই পড়বি। আমি যেন এসে আর এইভাবে না দেখি।
বলেই সেলিনা বেগম হন হন করে রুম থেকে
বেরিয়ে গেল,,,
নুসরাতের তার মায়ের অদ্ভুত আচরণের কারণই কিছুই বুঝতে পারছিল না।
শাড়িটা অনিচ্ছা সত্যেও হাতে নীল,,,
শাড়িটা দেখতে খুবই সুন্দর খয়েরী রঙের আর
পার গোল্ডেন কালারের শাড়িটা বেশ ভালোই
লাগলো নুসরাতের,,,
অবশেষে শাড়িটা পড়ে নিলো নুসরাত,,
তারপর বিছানায় গিয়ে বসল,,,
সেলিনা বেগম মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে যান,,
-বাহ আমারর মেয়েটাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।
কিন্তু কিছুর কমতি রয়ে গেছে,,
-আর কি মা,,,
-আয়।,,,
নুসরাতকে ধরে আয়নার সামনে বসিয়ে
সাজাতে লাগলেন সেলিনা বেগম।
মা কে অনেকবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে
নুসরাত,,, অবশেষ মায়ের ধমকে বাধ্য মেয়ের
মতো চুপ করে বসে রইল নুসরাত।
মেয়েকে হালকা সাজিয়ে দিয়েই রুম ত্যাগ
করলেন সেলিনা বেগম,,,
ইমন নুসরাতের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কলিংবেল চাপ দিতেই তপু দরজা খুলে দেয়।
-আস সালামু আলাই কুম ভাইয়া
-ওয়ালাই কুমুস সালাম,,
-আসুন ভাইয়া বসুন।
তপু ইমন কে বসতে দিয়ে মা কে ডাকতে যায়
কিছুক্ষণ পর সেলিনা বেগম চলে এলেন,,,
-আস সালামু আলাই কুম মা,,
-ওয়ালাইকুমুস সালাম,,
কেমন আছো বাবা,,
-এইতো আলহামদুলিল্লাহ,,
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে,, সেলিনা বেগম
বলেন,,
-আজকে তো রাত হয়ে গেছে বাবা,,আজ
থেকে যেও,,।
ইমন ও আর কিছু বলল না,,,
-জ্বী ঠিক আছে মা,,
-নুসরাত উপরেই আছে। তুমি যাও বাবা।
ইমন উঠে নুসরাতের রুমের দিকে পা বাড়ায়,,,
হঠাৎ করে নুসরাতের ধুকপুকানি বেড়ে যায়,,
হালকা দরজা ধাক্কা দিতেই,,দরজাটা খুলে যায়,,
ভেতরে যেয়ে নুসরাতকে দেখে পুরাই থ
হয়ে যায় ইমন,,অসম্ভব সুন্দর লাগছে নুসরাতকে,,
নুসরাত তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতের চুড়ি
খুলছিল,,,আয়নার দিকে তাকাতেই,,,অনেক বড় শক
খায় নুসরাত,,
কোনরকম শাড়ির আচল পেঁচিয়ে
মাথায় কাপড় দেয় নুসরাত
,,,কাপাকাপা গলায় জিজ্ঞেস করে,,
-আপনি এখানে কি করে,,আমাদের না ডিভোর্স
হওয়ার কথা,,
নুসরাত ঝাঁঝালো কন্ঠে প্রশ্ন করলো ইমনকে
-কিসের ডিভোর্স,,
আমি তো কিছুই জানিনা
-ফাজলামো পাইছেন,,,যাবেন এখান থেকে,,,
মা মা,,, চেঁচিয়ে উঠলো নুসরাত,,
ইমন দৌড়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরল,,,
-কি করছেন টা কি মা কে কেন ডাকছেন,,
-উহুম,,
-কি হলো বলুন,,,
-উম,,,নুসরাত ইশারা দিয়ে ইমনের হাতের দিকে
করল,,,
ইমন এতোক্ষনে বুঝতে পারলো সে
নুসরাতের মুখ চেপে ধরে ছিলো,,
-সরি,, ,
নুসরাতকে ছেড়ে দিলো,,
নুসরাত জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে,,,
-আরেকটু হলেই মরে যেতাম,,,
এতো জোড়ে কেউ মুখ চেপে ধরে,,,
-না আসলে,,
ইমন নুসরাতের দিকে একটা খাম এগিয়ে দেয়,,
-এটা কি,,
-খুলে দেখুন,,
নুসরাত খাম খুলে দেখে ডিভোর্স পেপার,,কিন্তু
এটাতে কারোরই সাইন নেই।
নুসরাত বেশ অবাক হয়,,ইমন এটাতে সাইন কেন
করলো না,,
ইমন বলল,,,
-আমি এইটাতে সাইন করি নি,,,আপনার কাছে আমার কিছু জানার ছিলো,,,
আপনি কি সত্যি চান যে আমাদের ডিভোর্সটা হয়ে
যাক,,
নুসরাত কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,,,
চুপ করে আছে,,
ইমন নুসরাতকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে বলে,,,
-আচ্ছা আমি আমার উত্তরটা পেয়ে গেছি।
আমি তাহলে আসছি,,আপনি সাইন করে পাঠিয়ে
দেবেন।,,,
ইমন চলে যেতে নিলে,,
নুসরাত ইমনের সামনে যেয়ে পাঞ্জাবির কলার
আঁকড়ে ধরে
-খবরদার আপনি আর একবার যদি বলছেন আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা,,,
তাহলে আপনাকে আমি চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো,,,
-কি রাক্ষস রে বাবাহ,,
-কিইইইইই আমি রাক্ষস
-না না রাক্ষসী
-কিইই,,,আপনি খুব পচা।
বলেই ইমনের বুকে কিল ঘুসি
দিতে লাগলো নুসরাত,,,
নুসরাতকে থামিয়ে জড়িয়ে ধরলো ইমন,,,
,,,,এর মাঝেই এশার আযান দিয়ে দিলো,,
নুসরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে ইমন বলল,,,
-বউ,,,
এই প্রথম ইমনের মুখে বউ কথাটি শুনে বেশ
লজ্জা পেলো নুসরাত,,,
-হু,,,
-আযান দিয়ে দিছে,,নামাজ পড়ে আসি,,,
নুসরাত ইমনের কাছ থেকে সরে এসে,,,
-আচ্ছা যান,,
ইমন বেরিয়ে গেলে আবার ফিরে আসে,,,
-কি হলো ফিরে এলেন যে,,,
-ভুলে গেছি,,,
-কি,,
ইমন কিছু না বলেই নুসরাতের কপালে ভালোবাসার
পরশ একে দিলো,,,
-এবার ঠিক আছে,,,
এটাও নবীর সুন্নত জানো,,
নামাজে যাওয়ার আগে এইভাবে আমাদের নবীও
উনার স্ত্রীদের কপালে চুমো দিতেন,,,
এতোদিন এই অধিকার পাই নি,,
তাই আর আজ হাত ছাড়া করলাম না,,,
আসছি ইন শা আল্লাহ,,(আল্লাহ হাফিজ)
ইমন চলে গেলো মসজিদে,,,
নুসরাত ভাবছে,,,তার ভাগ্যে কি এতটা সুখ ও
সইবে,,,তারপর,, নুসরাত ও নামায পড়ে নিলো,,,আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানালো,,
,,আজকে নুসরাত ইমনের জন্য রান্না করলো,,,
রাত্রে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেল,,,
ইমন রুমে গিয়ে,,,
-আসো আমরা দুজনে আল্লাহর দরবারে দু রাকাআত
নফল নামাজ পড়ে শুকরিয়া জানাই,,আল্লাহই আমাদের নতুন জীবন আবার শুরু করার সুযোগ দিয়েছেন।
-জ্বী চলুন,,,
তারপর দুজনেই নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে
শুকরিয়া জানালো,,
তারপর ইমন বলল,,,
-চলো ছাদে যাই
-এতো রাত্রে ছাদে কেন,,
-আরে চলো না,,
-না না মা দেখলে কি ভাববে,,,
-মা দেখবে না চলো তো,,,
-না
-বুঝেছি তুমি এমন করে যাবে না।
নুসরাতের পাশে গিয়ে ইমন নুসরাতকে
পাঁজাকোলে তুলে নেয়,,,
-এই ছাড়ুন,,বলছি,,,আমার ভয় লাগছে পড়ে যাব তো।
-আমি থাকতে তুমি পড়ে যাবা কেমনে,,
-আরে,,,আপনি কথায় কথায় কোলে তুলে নেন
কেন। আমি কি বাচ্চা না কি।
-হ্যা,,
-কিহহহ,,,
-জিহহ,,বাচ্চা না হলে ওজন এতো কম হয় না কি।
-আমার ওজন কম কোথায়,,,আপনিই তো সেইদিন
বললেন আমার ওজন বেশি।
-হিহিহিহি,,,আরে পাগলি আমি তো ওইদিন মজা করছিলাম।
-হু,,,
:
ইমন নুসরাতকে ছাদে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দেয়,,
দুজনেই ছাদে বসে চাঁদ দেখছে।
নুসরাত কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই ইমনের কাঁদে মাথা
রেখে বলে,,
-ভালোবাসি,,,অনেক বেশিই ভালোবাসি আপনাকে।
আর আমাকে এইভাবে কষ্ট দিবেন না তো। এই
একসপ্তাহে আমার কত কষ্ট হইছে জানেন ।
ইমন নুসরাতের কপালে আলতো করে চুমো
দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়,,,
-না আর কখনোই কষ্ট দিবো না আমার বউটাকে।
অনেক ভালোবাসি যে আমার বউটাকে।
আমার পাশে এইভাবেই থেকো সারাজীবন
তুমাকে দুনিয়াতেই নয়,,জান্নাতেও আমারা পাশাপাশি
পেতে চাই,,,চলবে কি আমার হাত ধরে দ্বীনের
পথে,,,
নুসরাতঃ ইন শা আল্লাহ।,,
,,,
আজ আকাশের চাঁদটাও মিটিমিটি হাসছে হয়তো ওদের দেখে ।
#হালাল_ভালোবাসা,,,
এখানে নাই কোন নুংরামি,,আর না আছে হারিয়ে
ফেলার ভয়,,,
সুখে থাকুক নুসরাত_আর_ইমনের মতো
প্রত্যেকটা দাম্পত্য,, সময় থাকতেই ফিরে
আসুন আল্লাহর কাছে,,,যারা হারাম প্রেমে যুক্ত
আছেন। হারাম ছেড়ে হালালের পথে চলুন।
দেখবেন দুনিয়াতেই জান্নাতের সুখ অনুভব
করবেন ।
#আল্লাহ_হাফেজ
★★★সমাপ্ত★★★