Islamic Path
Monday, January 30, 2023
No Result
View All Result
  • Home
  • Islamic Story
  • Quran-Translation
  • Islamic-Drama
  • About Us
Islamic Path
No Result
View All Result
চিরকুট (ইসলামিক গল্প)

চিরকুট (ইসলামিক গল্প)

Notes (Islamic Story)

islamicpath by islamicpath
April 21, 2022
in Islamic Story
0
0
SHARES
231
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter
চিরকুট
ফাতিমা আফরিন

আব্দুল মালেক চাচা গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তি । গ্রামের সবাই তাঁকে গুরুজন হিসেবেই মানে । তাঁর একমাত্র নাতনিকে একজন দ্বীনদার পাত্রের হাতে তুলে দেওয়াই এখন তাঁর একমাত্র কাজ ।

 

তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সাথেই আদায় করেন । মসজিদের ইমাম সাহেবের তিলাওয়াতের কণ্ঠে তিনি বিমুগ্ধ ।

 

অল্প বয়স্ক ইমাম , নূরানি চেহারা , মুখ ভর্তি চাপ দাড়ি । যেন পুরাে চেহারা জুড়ে নূরের ঝলকানি ।

 

একদিন নামাজ শেষে তিনি মসজিদে বসেবসে তাসবিহ পড়ছিলেন আর ইমাম সাহেবের সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন । মসজিদ লােকশূন্য হওয়ার পর তিনি ইমাম সাহেবের ঠিক সামনে গিয়ে বসলেন । ইমাম সাহেবের হাত ধরে বললেন , “ বাজান , তােমার নাম কী ?

 

 

‘ আমার নাম মাহমুদুল হাসান ।
‘ ভারি সুন্দর নাম তাে ! তা বাজান তােমার বাড়ি কোনহানে ?
‘ আমার বাড়ি এইতাে পাশের গ্রামে ।
তােমার আব্বা কি কাম করে বাজান ? ”

 

 

‘ আমার আব্ব একজন ব্যবসায়ী ।
মেশিনারি পার্টস – এর ব্যবসা করেন ।
‘ বাজান ,
তােমারে একখান কতা কইলে তুমি কি রাগ করবা ?

 

” না না চাচা , রাগ করবাে কেন , আপনি নিশ্চিন্তে বলতে পারেন ।
‘ তুমি কি বিয়াশাদী করছাে বাজান ?
না চাচা , এখনও বিবাহ করিনি ।
‘ চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আব্দুল মালেক চাচা বললেন ,

 

 

“ বাজানরে , আমার একটা নাতনি আছে মেলা সুন্দরি । কিন্তু বাজান নামাজ কালামের ধার ধারে না । সারাদিন টিভি দেখে আর বান্ধবীগাে লগে আড্ডা মারে । তােমার তিলাওয়াত শুইনা আর তােমার ব্যবহার দেইখা আমি খুশি হইয়া গেছি ।
বাজান । আমার মেলা ইচ্ছা আমার নাতনিডারে তােমার লগে যদি বিয়া দিতে পারতাম ! আমার বদ মেজাজি নাতনিডারে বিয়া করবা বাজান ?

 

 

মাহমুদ হতভম্ভ হয়ে চুপ করে রইলাে । চাচা মাহমুদের চুপ থাকা দেখে বললেন ,
‘ কী হইলাে বাজান চুপ কইরা আছাে যে ? ‘
চাচা , আমি আমার আব্দুর সাথে কথা বলে জানাবাে । এখন হুঠহাট করে কোনাে সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না ।

 

 

মাহমুদ বাসায় এসে চিন্তায় পড়ে গেল । এরকম বদ মেজাজি মেয়েকে নিয়ে সংসার করবাে কী করে ! আবার মুরুব্বী লােকটার জন্যও খারাপ লাগছে । সব মিলিয়ে মাহমুদ খুব চিন্তিত । মাহমুদ সব কথা তার বাবাকে খুলে বালল। মাহমুদের বাবা মাসউদুর রহমান খুবই ভদ্র একজন মানুষ । তিনি ছেলেকে বললেন , তুমি কিছুদিন চিন্তা করাে , ইস্তেখারা করাে ।
দেখাে । ফলাফল আসে ।

 

 

মাহমুদ ইস্তেখারা করে কয়েকদিন চিন্তা – ভাবনা করে ওর বাবাকে বলল , ‘ আব্ব , আমি চিন্তা করে যা পেয়েছি সেটা হলাে- যদি একজন আন্দ্রা মডার্ন মেয়েকে দ্বীনের পথে আনতে পারি তাহলে এটাই হবে আমার জীবনের সবচে বড় অর্জন ।
আর ইস্তেখারা করে আমার মন কিছুটা ঝুঁকেছে ।
এখন আপনার মতামতের উপর ছেড়ে দিলাম ।
‘ আলহামদুলিল্লাহ !

যদি তােমার মন ঝুঁকে যায় তাহলে আমার আপত্তি নেই । তবে মেয়ের পরিবার ও মা কেমন ? তাদের পরিবারে অন্যান্য সদস্যদের আচরণ কেমন এগুলাে একটু যাচাই করা দরকার । ‘ পরদিন মাহমুদের সাথে আব্দুল মালেক চাচার দেখা হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন , বাজান , তােমার আব্বার কাছে কইছাে ব্যাপারখানা ?

 

 

জি চাচা বলেছি । আব্রু আমার উপর ছেড়ে দিয়েছেন ।
আর আম্মু আর আমি সামনের শুক্রবারে ইনশাআল্লাহ আপনার নাতনিকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি । যদি আম্মুর পছন্দ হয় তাহলে আমরা সেদিনই বিবাহ পড়িয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসবাে । কোনাে অতিরঞ্জিত আয়ােজন করবেন না ।
সাদামাটাভাবেই সবকিছু হবে ।

 

 

সুন্নাহ অনুযায়ী হবে ।। চাচা খুশিতে কান্না করে দিয়ে বললেন , ‘ আজ আমি মেলা খুশি । তােমার মতাে একজন মানুষের হাতে আমার নাতনিডারে তুইলা দিয়া আমি মইরাও শান্তি পামু । ‘ তিনি বাড়ি গিয়ে ছেলে ও বউমাকে ডেকে নাতনির বিবাহের কথা তুললেন । কেউ তার মুখের উপর কথা বলতে পারে না ।

 

 

তার ছেলের ইচ্ছা হলাে , মেয়েকে বড় ইঞ্জিনিয়ার কিংবা চাকরিজীবী ছেলের হাতে তুলে দেবেন ।
চিরকুট
ফাতিমা আফরিন

 

 

 

 

 

কিন্তু বাবার কথার উপর কথা বলার সাহস তার নেই । অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবার কথায় রাজি হয়ে গেল । কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালাে নাতনি সাবিহা নওরিন । সে কিছুতেই হুজুর ছেলেকে বিয়ে করবে না।

 

 

তার ধারণা হুজুররা আনস্মার্ট , বােকাসােকা , অসামাজিক । নওরিন বদমেজাজি ঠিক , কিন্তু দাদার কথার উপর কথা বলার সাহস পেল না ।
ঘােরবিরােধী হওয়া সত্ত্বেও চুপচাপ মেনে নিলাে দাদার কথা । নওরিন নাওয়া – খাওয়া ছেড়ে সারাদিন ঘরের দরজা আটকে কাঁদতে থাকে ।

 

 

পাড়ার বান্ধবীরা এসে টিপ্পনী কেটে বলে , কিরে নওরিন , শেষমেশ একজন মােল্লা বেছে নিলি ? হুজুরদের কেমম যেন দাদা দাদা লাগে । অল্প বয়সেই দাদার ভাব ধরে ।

 

 

আর কোনাে ছেলে খুঁজে পেলি না ? নওরিন ঝাঁঝালাে কন্ঠে বলল , দেখ ! কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে আসিস না । এমনিই মন – মেজাজ ভালাে না , তারপর উপর এসব কথা ভাল লাগছে না । আমার পরিবার যদি আমাকে নরকে ফেলে শান্তি পায় , পাক ।

 

 

কোনাে কথা বলবাে না । তবে ওই ব্যাটারে সাইজ না করে আমি ছাড়ছি না । কী দরকার ছিল আমাদের এলাকায় এসে ইমামতি করার ! আমার দাদাও ওই খ্যাতটাকেদেখে একদম দিওয়ানা হয়ে গেছে । তােরা এখন যা তাে , আমাকে একটু একা থাকতে দে। নওরিনকে সাজুগুজু করিয়ে বরপক্ষের সামনে আনা হলো ।

 

 

নওরিন । চুপচাপ বসে চোখের পানি ঝরাচ্ছে । মাহমুদ সালাম দিল , নওরিন কোনাে উত্তর না দিয়ে মুখটা ভার করে বসে আছে । সালামের উত্তর না পেয়ে মাহমুদ বলল , আচ্ছা আপনি এবার যেতে পারেন । নওরিন যেন হাফছেড়ে বাঁচলল । ওর মনের আশাটা পূর্ণ হয়েছে , তার ধারণা ছেলে পক্ষ তার এমন আচরণে বিবাহ না করে চলে যাবে । কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল তার উল্টো হয়েছে ।

 

 

মাহমুদ তার আম্মুকে বলল , ‘ আম্মু , আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করবাে , এবং তাকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনবাে ইনশাআল্লাহ ! মাহমুদের আম্মু বলল , ‘ বাবা , তুমি পারবে তাে ? এটা একটা বড় পরীক্ষা ! ‘ আম্মু তুমি চিন্তা কোরাে না । ইনশাআল্লাহ আমি পারবাে । আল্লাহ আমার । সাথে আছেন । এরপর নওরিনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাহমুদের সাথে বিয়ে হয়ে গেলাে ।

 

 

নওরিন চুপচাপ বসে নীলাকাশ দেখছে , তার পরিণতির কথা ভাবছে । শেষ পর্যন্ত একজন মােল্লাকে বিয়ে করতে হলাে ওর ! কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না নওরিন ।
মাহমুদ সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলাে । নওরিন কোনাে উত্তর না দিয়ে চড়া গলায় বলল , এই যে দেখুন !

 

 

আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে ঠিক , কিন্তু কোনােপ্রকার আদিখ্যেতা দেখাতে আসবেন না । এই বিয়েতে আমার একটুও মত ছিল না । দাদার জন্য বিয়েটা করতে হলাে । আমি আপনার মতাে মােল্লার সাথে সংসার করতে পারবাে না । আপনি আমার থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকবেন । ‘ মাহমুদ শান্ত গলায় বলল , “ আচ্ছা , আপনি যতদিন চাইছেন না , ততােদিন আমি দূরেই থাকবাে ।

 

 

‘ যতিদিন চাইছি না মানে ? আমি কোনােদিনই চাই না । তবে আপনি যদি আমার একটা উপকার করেন তাহলে অনেক কৃতজ্ঞ থাকবাে । “ বলুন কী উপকার করতে পারি ? ”

“ আপনি আমার জন্য একজন চাকরিজীবী ছেলে ঠিক করুন । মাহমুদ জোরে হেসে উঠলাে । মাহমুদের হাসি দেখে নওরিনের ব্লগ চরমে উঠে গেল । দাঁত কটমট করতে করতে বলল , এই যে শুনুন ! এভাবে পিশাচের মতাে হাসবেন না । ‘
‘ আচ্ছা হাসবাে না । আমার খুব ঘুম পাচ্ছে । অন্তত ঘুম তাে পড়তে দিন । শরীরটা খুব ক্লান্ত ।

 

 

‘ তা ঘুমান , তবে আমার সাথে ঘুমাবেন না ।
ফ্লোরে ঘুমান । ‘ মাহমুদ কথা না বাড়িয়ে ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়লাে । নওরিনের চোখে ঘুম নেই দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না ।
কীভাবে এই মােল্লার সংসার করবে সে ! সমাজ তাকে ছিঃ ছিঃ করবে । সমাজের চোখে নওরিনকে করুণার পাত্রি হয়ে বাঁচতে হবে ।

 

 

লােকে বলবে , শেষ পর্যন্ত একটা মােল্লাকে বেছে নিলি ? মােল্লাদের কী আছে , বাড়িঘর কিছুই নেই , সারাজীবন অন্যের দরজায় দরজায় ঘুরে – ঘুরে দাওয়াত খেয়ে বেড়ায় । নাহ । আর এসব ভাবতে পারছে না । ফজরের নামাজ আদায় করে এসে দেখে নওরিন এখনও ঘুমে । নওরিনকে না ডেকে নাশতা বানিয়ে রুমে ঢুকে নওরিনের কানের পাশে একটি ইসলামিক সংগীত ছেড়ে দিয়ে নিচে চলে আসলাে মাহমুদ ।

 

 

নওরিন সংগীতের আওয়াজে ধড়ফড় করে উঠে পড়লাে । ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখে ৮,৩৫ বাজে ।

 

 

দ্রুত ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে দেখলাে নাশতা সামনে রেখে মাহমুদ ডাইনিং টেবিলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। নওরিন নাশতা না করে সােজা উপরে এসে আবার শুয়ে পড়লাে ।

 

 

খাদেমা খালার ডাকে মাহমুদের ঘুম ভেঙ্গে যায় । নাশতা সেরে মাদরাসায় । চলে যায় মাহমুদ । এদিকে নওরিন না খেয়ে জেদ ধরে শুয়ে আছে ।
খাদেম এসে নওরিনকে ডেকে বলল , “ ভাবিসাব আয়ে অহনাে ঘুমেত্তে উডেন নাই ?

 

চিরকুট

 

 

ভাইসাব তাে সেই কোন সুমায় চইল্লা গেছে । আহেন নাশতা খাইয়া যান । আরে শাশুড়ি যদি জানে আন্নে নাশতা না খাইয়া শুইয়া রইছেন তালিপরে । আমার কপালে শনি আছে । আইচ্ছা ভাবিসাব , আম্নের মনডা কি অনেক খারাপ ? হারাদিন দেহি মনমরা হইয়া থাকেন ।

 

 

‘ খাদেমার কথা শুনে নওরিনের খুব রাগ হচ্ছে । কিছু বলতে যাবে । এমনসময় ওর মনে হলাে , যাে রাগ সব তাে মাহমুদকে ঘিরেই । শুধুশুধু খাদেমার সাথে রাগ করে কী লাভ ! এসব ভেবে নিচে এসে নাশতা খেয়ে নিলাে । টেবিলের উপর একটি চিরকুট পেয়ে হাতে নিয়ে বিরক্তির সাথে পড়তে লাগলাে
“ নাশতা খেয়ে নিও ।

 

 

খাদেমা আসতে দেরি হয়ে গেছে তাই নিজেই নাশতা বানিয়ে তােমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম । জানি , আমার হাতের নাশতা তােমার পছন্দ হবে না । নাশতা খেয়ে আমাকে গালাগাল কোরাে না । ইতি- তােমার মাহমুদ ।

 

 

” নওরিন চিরকুটটা ছিড়ে কুটিকুটি করে মিনমিনিয়ে বলল , কীহ ! আমার মাহমুদ ! নেকামাে যত্তসব । আমার দাদা যে কেন এই জোকারটার গলায় । আমাকে ঝুলিয়ে দিলাে !

 

মুখভর্তি জঙ্গলের মতাে একগােছা দাড়ি , বুড়ােদের মতাে আলখাল্লা পাঞ্জাবী পরে জোকার সেজে থাকে সারাদিন । আমি নাকি তার বউ ! অসম্ভব ! এটা আমি মেনে নিতে পারবাে না ।

 

 

কিন্তু জোকারটার হাতের লেখা এতাে সুন্দর ! ‘ নওরিন পরক্ষণেই আবার মুখে ভেঙচি কেটে বলল , ক্ষ্যাতটার আর যাইহােক হাতের লেখাটা বেশ সুন্দর । হাতের লেখার মতাে নিজেকেও যদি একটু স্মার্ট বানাতাে !

 

 

একমাত্র পুত্রবধূ নওরিনকে তার শ্বশুর – শাশুড়ি মেয়ের স্থানে বসিয়েছে । শাশুড়ি নওরিনকে পাশে বসিয়ে বলল ,
‘ মা , তােমার সাথে আমার কিছু কথা আছে । নওরিনের মন – মেজাজ ভালাে নেই । শাশুড়ির মুখের উপর বলে দিলাে , আমার এখন ঘুম পাচ্ছে ,
কথা শুনার সময় নেই । ‘ নওরিনের ঝাঁঝালাে কণ্ঠ শুনে কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন তিনি । পুত্রবধূর এমন আচরণে খুব কষ্ট পেলেন মাহমুদের আম্মা ।

 

 

ছেলে মাদরাসা থেকে ফিরে সােজা মায়ের ঘরে গিয়ে সালাম দিল । সালামের উত্তর দিয়ে । মাহমুদের আম্মা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে ছেলের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন ।
মায়ের চোখে পানি দেখে মাহমুদ বলল , ‘ একি ! আম্মা আপনি কাঁদছেন কেন ? ‘ ‘ কই না তাে ! চোখে মনে হয় কিছু পড়েছে ।

 

 

মাহমুদ মায়ের মুখে দু’হাত দিয়ে আলতাে করে ছুঁয়ে বলল , ‘ আম্মা , আমি এখন আর সেই ছােট্টটি নেই , অনেক বড় হয়ে গেছি । ‘ মাজেদা বেগম আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন , ‘ জানি তাে বাবা ! আমার ছােট্ট মাহমুদ এখন অনেক বড় হয়ে গেছে ।

 

 

তাের কথা ভেবেই চোখে । পানি এসে গেলাে । মাহমুদ বিস্মিত হয়ে বলল , ‘ আমার কোন কথা ভেবে ভেবে কাঁদছেন । আম্মা ?
এই যে আমার ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে । তাকে একটা বউ এনে দিলাম ! ভাবছি বউটা আমার ছেলের সাথে ভালাে আচরণ করবে তাে ! ‘

 

এমন কথা কেন বলছেন আম্মা । কিছু হয়েছে ? ‘
‘ না বাবা , কিছু হয়নি । তবে নওরিনকে বলেছিলাম , তােমার সাথে কিছু কথা আছে । কিন্তু তার ঘুম পাচ্ছিল ,

 

আমার কথা শুনার সময় নেই তার । নতুন বউ , সবেমাত্র এলাে । এখনই এমন আচরণ করছে তাহলে সামনে কেমন হবে সেসব ভেবেই অস্থির হয়ে যাচ্ছি । আমার ছেলের জীবন কিভাবে কাটবে । মাহমুদ শান্ত গলায় বলল , ‘ চিন্তা করবেন না আম্মা । সব আমার উপর ছেড়ে দিন ।

 

 

মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে নওরিন বসে বসে মােবাইল টিপছে । সালাম দিয়ে রুমে প্রবেশ করলাে । নওরিন সালামের উত্তর দিয়ে মােবাইল রেখে শুয়ে পড়লাে ।

মাহমুদও কথা না বাড়িয়ে নিচে বিছানা পেতে শুয়ে পড়লাে । নওরিন শােয়া থেকে উঠে জানালার গ্রিল ধরে রাতের আকাশ দেখছে । আজ রাতের আকাশে চাঁদ নেই । আমাবস্যার চাঁদরে ঢেকে আছে পুরাে শহর । কোলাহল মুক্ত পরিবেশ ।

 

 

নওরিন উদাস হয়ে ভাবছে , কেন আমার পরিবার আমার চাওয়া – পাওয়ার মূল্য বুঝলাে না ! আমার জীবনকে তারা মূল্যহীন করে দিল । বন্ধুমহলে মুখ দেখাবাে কীভাবে আমি ? কী ভাববে সবাই ? রাগে কটকট করতে করতে ঘুমিয়ে গেল ।

 

 

ঘুম থেকে উঠে দেখে বালিশের পাশে একটি কাগজের টুকরাে । চোখ কচলাতে কচলাতে কাগজটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারল নিশ্চয় মাহমুদ আবার কিছু লিখে রেখে গেছে । চিরকুটটা না পড়ে জাজিমের নিচে রেখে দিল ।

 

 

মাহমুদের আম্মা মাজেদা বেগম আবার নওরিনের কাছে গেলেন , পাশে বসলেন । নওরিনের হাত ধরে বললেন , ‘ তুমি আমার পুত্রবধূ নও , তুমি আমার মেয়ের মতাে । আমি তােমাকে মেয়ের স্থানে বসাতে চাই । সবসময় মন খারাপ করে থাকো কেন ? আমাদের কারাে কথায় কষ্ট পেয়েছে ? ‘

 

 

“ না আম্মা ।
‘ ‘ মাহমুদ কিছু বলেছে ?
“ না । ” ‘

 

তাহলে সারাদিন মন খারাপ করে থাকো কেন ? ‘ নওরিন কোনাে কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে । শাশুড়িকে তার অপছন্দের কথা বলতে পারে না । মাজেদা বেগম নওরিনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল , ‘ মা ! এই জগত সংসার বড় বিচিত্রময় । যদি তুমি সহজ মনে করাে , তাহলে পানির মতাে সহজ । যদি তুমি জটিল বানিয়ে ফেল তাহলে অনেক কঠিন এই জীবনপ্রবাহ । আমাদের ছােট্ট সংসার ।

 

 

গােয়ালভরা গরু নেই , মাঠভরা ধান নেই । তােমার সাহায্যের জন্য খাদেমা তাে আছেই । তবুও সারাদিন তােমার মন খারাপ দেখে আমরা ভাল থাকতে পারি ? নওরিন শাশুড়ির কথা শুনে যাচ্ছে ।

 

 

কোনাে কথা বলছে না । মাজেদা বেগব নওরিনের চুপচাপ থাকা দেখে কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন । বসে বসে তিনি ভাবছেন , আমার সংসারে আবার সুখ ।

 

 

ফিরে আসবে তাে ! সাজানাে সংসারটি তছনছ হয়ে যাবে না তাে ! মেয়েটাকে এতাে সুন্দর করে বুঝলাম , তার অন্তর একটুও নরম হলাে না ? মাহমুদ কেন । এই মেয়েকে বিয়ে করতে গেল ! বদমেজাজি মানুষ ভালাে হতে অনেক সময় লাগে ।
মাহমুদ জামাকাপড় গুছাতে গুছাতে বলল , “ নওরিন , গুছিয়ে নাও তােমাদের বাড়িতে যেতে হবে । দাদাভাই ফোন করে বলল , তােমাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসতে ।

 

 

নওরিন ভ্রু কুঁচকে বলল , আমি যাবাে , তবে আপনার সাথে নয় । আমি একা যেতে পারি । ‘ ‘ আমি আমার স্ত্রীকে একা ছাড়বাে না ।

 

 

আমার সাথে যেতে হবে । ‘ এই যে শুনুন , আপনি আমার উপর স্বামীর অধিকার ফলাতে যাবেন না । এসব আদিখ্যেতা আমার ভালাে লাগে না । ‘ আমি অধিকার ফলাতে আসিনি । আপনার পরিবার আপনাকে আমার হাতে তুলে দিয়েছেন ।
আপনার ভালােমন্দ আমাকেই দেখতে হবে । এতাে জেদ ধরতে নেই । ‘ আমি জেদ ধরবাে নাকি চুপ করে থাকবাে সেসব বিষয়ে আপনার মাথা ঘামানাে লাগবে না ।

 

 

‘ নওরিনের টাস – টাস উত্তর শুনে মাহমুদ খুব কষ্ট পেল । মায়ের সাথে অপ্রতিকর আচরণ মাহমুদ এখনও ভুলতে পারেনি । মাহমুদ জামাকাপড় গােছানাে বাদ দিয়ে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে ।

 

 

রাগে – কষ্টে চোখ । লাল হয়ে গেছে । আকাশপানে উদাস দৃষ্টে তাকিয়ে ভাবছে , এটা কি আমার কোনাে পাপের শাস্তি , নাকি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনলাম ! কখনও কাউকে পাওয়ার আশায় দিওয়ানা হইনি । রবের উপর ছেড়ে দিয়েছলাম । তিনি যা করবেন তাতেই আমি খুশি ছিলাম ।

 

 

মাহমুদ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে হাতে খাতা কলম নিয়ে একটি চিরকুট লিখে নওরিনের বালিশের পাশে রেখে নিচে শুয়ে পড়লাে.
রাত তিনটা বাজে । চারদিক নীরব , নিস্তব্ধ । সবাই দ্ৰিাপুরে । মাহমুদ তার বিছানায় উঠে বসলাে । অলসতা ঝেড়ে অযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল । হঠাত কান্নার আওয়াজে নওরিনের ঘুম ভেঙ্গে গেল ।

 

চোখ কচলাতে কচলাতে লাইট জ্বালিয়ে দেখলাে , রুমের কোণ ঘেঁষে জড়ােসড়াে হয়ে মাহমুদ মােনাজাতে কেঁদে কেঁদে কী যেন অভিযােগ করছে ।

নওরিন হতভম্ভ তাকিয়ে ভাবছে , আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়ে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে অভিযােগ করছে না তাে ?!
আমার কী দোষ !

 

 

আমি তাে তাকে কষ্ট দিতে চাইনি । আমার মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দিল কেন ! সব দোষ দাদার । এসব সাতপাঁচ ভেবে লাইট বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়লাে । চতুর্দিক আজানের সুরে মুখরিত । মুয়াজ্জিন সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলছে প্রভুর ডাকে সাড়া দিতে । মাহমুদ নওরিনের পাশে গিয়ে নওরিনকে কয়েকবার ডাক দিল ।

 

 

 

কোনাে সাড়াশব্দ না পেয়ে মসজিদে চলে গেল । মাজেদা বেগম নওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে ডেকে উঠালেন । শান্ত গলায় বললেন , ‘ মাহমুদ ফজরের সময় তােমাকে ডেকে উঠাইনি ?

 

 

এখন তাে ফজরের ওয়াক্ত নেই । ‘ নওরিন চোখ কচলাতে কচলাতে বলল , জানি না । ‘ মাজেদা বেগম ভাবছেন , কাউকে কটু কথা বলে ভাল বানানাে যায় না ।
আদর সােহাগ দিয়েই আদর্শ বানানাে যায় । তিনি নওরিনের হাত ধরে বললেন , ‘ চলাে মা , নাশতা খেতে হবে । ‘ নওরিন চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতাে শাশুড়ির সাথে নাশতা খেতে বসেছে ।

 

 

এরই মধ্যে মাহমুদের স্কুল জীবনের বন্ধুরা এসে হাজির । মাজেদা বেগম পর্দার আড়াল থেকে তাদেরকে মেহমানখানায় বসতে বলে নাশতা তৈরি করতে লাগলেন । নওরিন কোনােরকম নাশতা খেয়ে মেহমানদের সাথে দেখা করতে চলে গেছে।

 

মাহমুদের এক বন্ধু বলে উঠলাে- “ নিশ্চয় আপনি আমাদের ভাবি ! নওরিন মুচকিহেসে উত্তর দিল- ‘ জি । আরেকজন বলল- ‘ মাহমুদ কই , ওকে তাে দেখছি না ।

 

 

ফোন করেছিলাম , ও বলল তােরা যা আমি এক্ষুণি আসছি ।
এখনও আসেনি ?
‘ না এখনও আসেনি । আরেকজন বলে উঠলাে- ভাবি , আপনি যে দেখতে খুব সুন্দরী সেটা কি আপনি জানেন ? ছেলেটার মুখে প্রশংসা শুনে আনন্দে গদগদ করে বলল- “ তাই নাকি !

 

 

“ হুম , শিওর । নওরিন লজ্জা পেয়ে চলে যেতেই দেখলাে মাহমুদ ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে । মাহমুদের রাগ মাথায় উঠে গেল ! মনে হচ্ছে নওরিনের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেবে ।

 

 

কিন্তু না , সে রাগের ঢােকটি খুব কষ্টে গিলে নিয়ে শান্ত গলায় বলল , এখান থেকে যাও । ‘ নওরিন চুপচাপ চলে গেল । মাহমুদ সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকলাে ।
নাশতা সেরে সবাই গল্পে মেতে উঠলাে । হঠাত এক বন্ধু বলে উঠলাে , মাহমুদের বউ অনেক সুন্দরী । ভাই ! তুই তাে লাকি । এরকম একটা মাল কোথায় পেলি ? মাহমুদ বিরক্ত হয়ে বলল , “ মাল কী শব্দ ? একটা মেয়েকে এরকম । অপ্রিতিকর শব্দ ব্যবহার করে অপমান করা কোন ধরণের মানুষিকতা ?

 

 

 

সে আমার স্ত্রী । মেয়েদের সম্মান দিয়ে কথা বলা উচিত । তারা মায়ের জাতি । তুই তাের মাকে এমন শব্দ বলতে পারবি ? তােরও তাে বােন আছে । তাের
চিরকুট
বােনকে যদি তাের সামনে কেউ এমন ভাষায় সম্বােধন করে তখন তুই ঠিক থাকবি ? ‘ আমার ভুল হয়ে গেছে । সত্যিই বুঝতে পারিনি । আসলে এমন ভাষা ব্যবহার করা আমার উচিত হয়নি ।

 

 

বন্ধুদের বিদায় দিয়ে মাহমুদ চুপচাপ ছাদে গিয়ে বসলাে । আকাশের দিকে নির্বাক তাকিয়ে নীরবে কাঁদছে । ছেলেরা খুব বেশি কষ্ট না পেলে সহজে কাঁদে না ।
মাহমুদ সবসময় একটি নােটবুক কাছে রাখে । নােটবুকের একটি পৃষ্ঠা ছিড়ে বড় করে একটি চিরকুট লিখে নওরিনের বালিশের পাশে রেখে চলে । গেল । আজ মাহমুদের মনটা ভীষণ খারাপ । কারাে সাথে তেমন কথা বলে না ।

 

 

 

সারাক্ষণ মনমরা করে বসে থাকে । আনমনে কী যেন ভাবে । মাজেদা বেগমছেলের নীরবতা দেখে খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন । তিনি ছেলের কাছে গিয়ে বসলেন , মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন , “ তােমার কী হয়েছে বাবা ?

 

 

মন খারাপ করে বসে আছাে কেন ? মাহমুদ কান্না সংবরণ করতে পারল না । মায়ের কোলে মাথা রেখে হু হু । করে কেঁদে ফেলল । ছেলের কান্না দেখে মাজেদা বেগম নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না । তিনিও কেঁদে ফেললেন । নওরিন চিরকুটগুলাে না পড়ে জাজিমের নিচে রেখে দিল ।

 

 

 

প্রতিদিন এসব আদিখ্যেতা তার ভাল লাগে না । মােবাইলটা বের করে বান্ধবী সােহাকে ফোন দিয়ে বলল , “ কতদিন হয় তােদের দেখি না । এখন আর জমিয়ে আড্ডা করতে পারি না । তােরা এসে আমাকে দেখে যা । ‘ সােহা তার আরও বান্ধবীদের সাথে নিয়ে আসবে বলে আশ্বাস দিল ।

 

 

নওরিন আনন্দে নাচতে নাচতে শাশুড়ির কাছে গিয়ে বলল , ‘ আম্মা , আমার কয়েকজন বান্ধবী আসতে চাচ্ছে , তাদের নিয়ে আসবাে ?
মাজেদা বেগম বললেন , “ আসতে বলাে সমস্যা নেই । তাছাড়া তুমি তাে সারাক্ষণ মুখ গােমরা করে থাকো , বান্ধবীরা আসলে মনটা হালকা হবে ।

 

 

পরদিনই দলবেঁধে নওরিনের বান্ধবীরা বেড়াতে এসেছে । আজ ওর আনন্দ কে দেখে ! বান্দবীদের নিয়ে সােজা নিজেররুমে নিয়ে গেল । মাহমুদ মাদরাসা থেকে এসে রুমে ঢুকতে গিয়ে মেয়েদের দেখে আবার ফিরে আসলাে ।

 

 

আস্তে করে নওরিনকে ডেকে বলল , তাদেরকে অন্য রুমে বসতে দিতে । ওর ঘরে কাজ আছে । ‘ ‘ আরে এরা তাে আমার বান্ধবী ! আপনি আপনার কাজ করুন , কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না ।

 

 

‘ আমি ওখানে যাবাে না , আপনি তাদের অন্য রুমে বসতে দিন । ‘ এসব বুজুর্গি আর মােল্লাগিরি ছাড়ুন । এতাে সুফি আমার ভালাে লাগে ।

‘ নওরিনের বান্ধবীরা হাসাহাসি করতে লাগলাে । একজন বলে উঠলাে , আরে মােল্লারা সামাজিকতা বােঝে না । আরেকজন বলল , উপর দিয়ে সুফি সাজে , ভেতরে গিয়ে দেখ সব গােবর ভরা । মাহমুদ কথা না বাড়িয়ে মায়ের রুমে চলে গেল । নওরিন বান্ধবীদের সাথে গল্পে মেতে উঠেছে ।

 

 

 

এতদিনের জমানাে কথা সবাই উগড়ে দিয়ে ভাগাভাগি করে নিচ্ছে । বান্ধবীদের মধ্যে সােহা নামের মেয়েটা বলল , “ এই নওরিন আমাদের ক্লাসের সীমার কথা শুনেছিস ? ” নওরিন বলল , “ কই না তাে ! কি হয়েছে ওর ?
চিরকুট

 

 

‘ ওর একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল । অনেক দিনের সম্পর্ক । দু’জন দুজনকে খুব ভালবাসতাে । সীমার বাবা – মা ওদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি । সীমার অন্য জায়গায় বিয়ের আলচোনা চলছিল । বিয়ের কথা ছেলেটাকে বললে ছেলেটা সীমাকে পালিয়ে বিয়ে করার কথা বলে ।

 

 

সীমাও রাজি হয়ে যায় । সীমা নিজের , মায়ের ও ভাবির সব গহনা চুরি করে সাথে নিয়ে নেয় । স্বর্ণকারের কাছ থেকে দুই ভােরি স্বর্ণের চেইন বাকিতে কিনে নেয় । আরও কয়েকজনের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা করজ নেয় । দিন – তারিখ ঠিক করে ওরা সুখের সংসার গড়তে রওয়ানা হয় । ঢাকায় একটা হােটেলে ওঠে ওরা ।
ছেলেটা ওর কয়েকজন বন্ধুকে ঠিক করে রেখেছিল ।

 

 

 

ওরা সবাই মিলে সীমার কাছ থেকে টাকাপয়সা , স্বর্ণ – গহনা সব হাতিয়ে নিয়েছে । পালাক্রমে ওর সম্ভ্রমহানি করে অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তায় ফেলে চলে যায় । এক পথিক ওকে দেখতে পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় । কিছুদিন চিকিৎসা করার পর সুস্থ হয়ে ওঠে সীমা । লােকটা সীমার বাবার নাম্বার নিয়ে ফোন করে । মেয়ের খবর পেয়ে তারা
ছুটে যায় ঢাকা । মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসে ।

 

 

এখন গ্রামের সবাই তাকে ছিঃ ছিঃ করছে । নওরিন সীমার এই অবস্থার কথা শুনে ব্যাথিত হয়ে বলল , “ ইশ ! মেয়েটা । এরকম কেন করলাে ! ‘ এদিকে মাহমুদ রাগ করে জামা – কাপড় গুছিয়ে একটি চিরকুট লিখে টেবিলের পর রেখে দেয় ।
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চল্লিশ দিনের জন্য তাবলীগের সফরে চলে যায় ।

 

 

 

বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে একা হয়ে যায় নওরিন । কিছু ভালাে লাগছে না ওর । অনেক রাত হয়ে গেছে , অথচ মাহমুদের আসার নাম নেই । ভয়ও
আসেনি এখনও ? পাচ্ছে । নওরিন শাশুড়ির কাছে গিয়ে বলল , “ মা ! আপনার ছেলে বাসায় মাজেদা বেগম বললেন , মাহমুদ তাে চল্লিশ দিনের জন্য তাবলীগের সফরে চলে গেছে ।

 

 

 

তােমাকে কিছু বলেনি ? ‘ কই না তাে ! ‘ ‘ ওর কিছু ভালাে লাগছিল না , তাই বাসা থেকে চলে গেছে । তবে সময়টা যেন কাজে লাগে এজন্য এদিক – ওদিক না গিয়ে তাবলীগেই চলে গেল ।

 

 

আজ প্রথমবার নওরিন মাহমুদের প্রতি কেমন যেন টান অনুভব করছে । ঘর জুড়ে যেন হাহাকার পড়ে গেছে । কোনােকিছুতে শান্তি পাচ্ছে না সে । আনমনে বসেবসে ভাবছে- মানুষটা হয়তাে আমার উপর রাগ করে চলে গেছে । আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তাকে ।

 

 

আচ্ছা , আমি তাে তাকে ভালবাসি , কিন্তু তার জন্য এতাে কষ্ট হচ্ছে কেন আমার ? তার অভাব জেঁকে ধরেছে । কেন আমায় ? তাহলে আমি কি তাকে ভালবেসে ফেলেছি ? সে হুজুর হলেও তার চেহারায় অদ্ভুত একটা মায়া আছে ।

 

 

আমি বরং ঘরের কাজে লেগে থাকি তাহলে তার কথা মনে পড়বে না । • এই ভেবে টেবিল গােছাতে গিয়ে দেখে একটি কাগজে কী যেন লেখা । হাতে নিয়ে দেখে মাহমুদের হাতের লেখা । চিরকুটটা দেখে আগের চিরকুকগুলাের কথা মনে পড়ে গেল ।

জাজিমের নিচ থেকে সবগুলাে চিরকুট বের করে আসন গেড়ে বসে পড়া শুরু করলাে নওরিন চিরকুটটি বুকে জড়িয়ে কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল , অনেক ভুল করে ফেলেছি আমি । মানুষটি এতােটা ভালাে ! আমি কত কষ্ট দিই তবুও সবসময় ভালাে ব্যাবহার করেছে । জমে থাকা অশ্রু মুছে আরও একটি চিরকুট খুলে পড়তে লাগলাে

 

 

“ আমার স্ত্রী বাজারের পণ্য নয় । সে আমার কাছে স্বর্ণের চেয়েও দামি । আমি চাই না আমার কোনাে বন্ধু তাকে দেখে কোনাে বাজে মন্তব্য করুক । আমার স্ত্রীকে কেউ লােলুপ দৃষ্টিতে দেখুক সেটা আমি চাই না । জানাে , সেদিন যখন আমার বন্ধুরা তােমাকে দেখে নানান মন্তব্য করেছিল , তখন আমার নিজেকে অনেক ছােট মনে হয়েছিল ।

 

 

 

ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে। নারী গােপন জিনিস , তাকে স্বযত্নে আগলে রাখতে হয়. পুরুষের কুদৃষ্টি থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় । ” নওরিনের মনে পড়লাে সীমার কথা ।

 

 

সীমা ভুল পথে যাওয়ার কারণে আজ তার কী করুণ দশা ! সে যদি নিজেকে সংবরণ করতাে তাহলে সে আজ সমাজের চোখে এতাে খারাপ হতাে না । আসলেই ইসলাম শান্তির ধর্ম । ইসলাম শান্তির বাণী শেখায় । এরপর আরও একটা চিরকুট খুলল “ জানাে নওরিন , কখনও কোনাে মেয়েকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখিনি । সবসময় চেয়েছি , আল্লাহ আমার তাকদিরে যাকে রেখেছেন সে – ই হবে আমার হৃদয় রাজ্যের রানি । আর আমি হব তার রাজা ।

 

 

 

বাইরের সব মেয়ের থেকে আমার চোখে তুমি সবচেয়ে বেশি সুন্দর । অন্য কোনাে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমি চোখের জিনা করতে চাই না । অন্যসব মেয়ে আমার চোখে বােনের মতাে ।

 

 

আমি শুধু তােমাকে নিয়েই সুখে থাকতে চাই । কিন্তু তুমি আমার মনটা বুঝলে না , বুঝার চেষ্টা ও করলে না । আমি হুজুর বলেই তােমার সমস্যা । আমি নবীর সুন্নাত পালন করে দাড়ি রেখেছি বলেই তুমি আমায় অপছন্দ করাে ।

 

 

আমার কিছু বলার নেই , আমি তােমার চাহিদার পূরণে অক্ষম । যদি আমার সাথে থাকতে ভালাে না লাগে , তাহলে তােমার পরিবারকে জানাবে । আমি কাউকে জোর করে বেঁধে রাখতে চাই না ।

 

 

ভালােবাসা জোর করে আদায় করা যায় না । কারাে জীবনে কাঁটা হয়ে থাকতে চাই না । আমি তােমার থেকে বহুদূরে চলে যাচ্ছি । জানি না ফিরে আসতে পারব কি না । যদি আমার কথায় কিংবা কাজে কষ্ট পেয়ে থাকো , দয়া করে ক্ষমা করে দিও । ইতি- মাহমুদ । ”

 

 

চিরকুট নওরিন এত শক্ত থেকেও কখন যে তার হুজুরকে ভালােবেসে ফেলেছে । | নিজেও জানে না । মেয়েটি অজান্তে বলে ফেলল , ভালােবাসি মাহমুদ । এই বলে চিরকুটগুলাে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল , আমি আর ভুল করব না , দয়া করে আপনি ফিরে আসুন । মাজেদা বেগম নওরিনের রুমে এসে দেখেন সে মুনাজাত ধরে কাঁদছে ।

 

 

আর মাহমুদের ফিরে আসার দোয়া করছে । মাজেদা বেগম পুত্রবধূর কান্না দেখে তার পাশে গিয়ে বসলেন । নওরিন । মােনাজাত শেষ করে শাশুড়িকে ধরে বলল , ‘ মা ! আমি অনেকভুল করেছি , আমায় ক্ষমা করে দেন । মাজেদা বেগম নওরিনকে জড়িয়ে ধরে বলল , ‘ পাগলী মেয়ে , মা কি কখনও সন্তানের উপর অভিমান করে থাকে ? ‘ মা , আমি আজ থেকে আপনার মেয়ে হতে চাই । ‘
‘ তুমি তাে আমারই মেয়ে । ‘

 

 

আপনার ছেলে আমায় ক্ষমা করবে তাে ?
‘ অবশ্যই করবে । মাহমুদ তাে চায় তুমি তােমার ভুল বুঝে ফিরে আসাে ।
‘ মাহমুদের বিয়ােগ ব্যথায় নওরিন অস্থির হয়ে পড়ে । একেকটা দিন ওর কাছে মাসের মতাে মনে হয় । ঠিক চল্লিশ দিন পর মাহমুদ বাড়ি আসে ।

 

 

এই দিনটির জন্য নওরিন এতদিন ধরে ধরে অপেক্ষা করছে । মাহমুদ বাড়ি এসে দেখলাে , বাড়ির পরিবেশ আজ অন্যরকম । যেন জান্নাতি পরিবেশ । মায়ের সাথে দেখা করে এরপর নওরিনের কাছে গিয়ে দেখে , সে নামাজ পড়ছে । মাহমুদ নওরিনের নামাজ পড়া দেখে অস্ফুটে বলে । উঠলাে- আলহামদুলিল্লাহ ! নওরিন নামাজ শেষ করে মাহমুদের দিকে তাকিয়ে বলে , ‘ আজ বুঝি আসার সময় হলাে ! ‘

 

 

মাহমুদ মুচকিহেসে বলল , “ আজই তাে আসার কথা ছিল নওরিন মাহমুদের হাতে একটি চিরকুট ধরিয়ে দিল । মাহমুদ চিরকুট খুলে দেখলাে বড় অক্ষরে লেখা “ আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি ।

 

 

 

” মাহমুদ আলতাে করে নওরিনের চোখ ধরে বলল , “ চোখ খুলবে না ।
‘ যদি খুলি ? ‘ মাইর হবে ।
‘ আচ্ছা খুলব না । ‘ এরপর মাহমুদ নওরিনের হাতে একটি গােলাপ আর একটি হিজাব দিয়ে মুচকি হেসে বলল , ‘ সারাজীবন একটি হিজাবী বউয়ের স্বপ্ন পুষেছিলাম । ‘

Tags: ইসলামিক উপন্যাস ডাউনলোডইসলামিক গল্পইসলামিক গল্প উপন্যাসইসলামিক গল্প নতুনইসলামিক গল্প পর্দাইসলামিক গল্প পর্দা নিয়েইসলামিক ছোট গল্পইসলামিক বাস্তব গল্প নামাজ নিয়েচিরকুটচিরকুট (ইসলামিক গল্প)নতুন ইসলামিক গল্পবাংলা ইসলামিক গল্পমজার ইসলামিক গল্প

Related Posts

খলিফা হারুনুর রশিদ এর একটি শিক্ষনীয় ঘটনা
Islamic Story

খলিফা হারুনুর রশিদ এর একটি শিক্ষনীয় ঘটনা

November 19, 2022
মায়াজাল (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

মায়াজাল (ইসলামিক গল্প)

April 29, 2022
শ্যামপরী (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

শ্যামপরী (ইসলামিক গল্প)

May 20, 2022
অপেক্ষা  (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

অপেক্ষা (ইসলামিক গল্প)

April 26, 2022
আবৃত মুক্তা  (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

আবৃত মুক্তা (ইসলামিক গল্প)

April 28, 2022
বেহেশতী আলোয় আলোকিত মন্দ মানুষ (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

বেহেশতী আলোয় আলোকিত মন্দ মানুষ (ইসলামিক গল্প)

April 27, 2022
Next Post
মায়াবতী (ইসলামিক গল্প)

মায়াবতী (ইসলামিক গল্প)

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Posts

  • কাউকে মেরি-ক্রিস্মাস বা শুভ বড়দিন উইশ করার আগে নিচের আয়াত গুলো পড়ে দেখুন December 27, 2022
  • মাত্র ৪০ দিনে নিজের জীবন পরিবর্তনের ২০টি চ্যালেঞ্জ- November 19, 2022
  • খলিফা হারুনুর রশিদ এর একটি শিক্ষনীয় ঘটনা November 19, 2022
  • জান্নাতি মৃত্যুর ১২ টি লক্ষণ November 19, 2022
  • নামাজের বৈজ্ঞানিক উপকারীতা: November 18, 2022

Categories

  • INTEREST-ING (79)
  • Islamic Story (26)
  • Islamic-Drama (5)
  • Quran-Translation (4)
Islamic Path

We bring you the best article for you. stay with us and stay happy. thank you.

Categories

  • INTEREST-ING
  • Islamic Story
  • Islamic-Drama
  • Quran-Translation

Recent News

  • কাউকে মেরি-ক্রিস্মাস বা শুভ বড়দিন উইশ করার আগে নিচের আয়াত গুলো পড়ে দেখুন
  • মাত্র ৪০ দিনে নিজের জীবন পরিবর্তনের ২০টি চ্যালেঞ্জ-
  • খলিফা হারুনুর রশিদ এর একটি শিক্ষনীয় ঘটনা
  • Privacy Policy
  • Terms and Condition
  • Contract Us

© 2021 Easy Path of Islam. Website design and Develop by Skylark It.

No Result
View All Result
  • About Us
  • Blog
  • Contract Us
  • Home
  • Privacy Policy
  • Sample Page
  • Terms & Conditions

© 2021 Easy Path of Islam. Website design and Develop by Skylark It.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password? Sign Up

Create New Account!

Fill the forms below to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
x