রাণী বিলকিসের ইসলাম গ্রহণের গল্প
রাণী বিলকীস ছিলেন হযরত সুলাইমান (আ.)-এর রাজত্বকালে সারা রাজ্যের সম্রাজ্ঞী। সমস্ত প্রাণীর উপর হযরত সুলাইমান (আ.)-এর রাজ ছিল। হযরত সুলাইমান (আ.) পাখির কথাও বুঝতেন। একদিন হুদহুদ নামক এক পাখি এসে হযরত সুলাইমান (আ.)কে সংবাদ দিল যে, আমি সাবা রাজ্যে এক নারী সম্রাজ্ঞীকে দেখে এসেছি। সে সূর্যের পূজা করে। হযরত সুলাইমান (আ.) একটা চিঠি লিখে হুদহুদকে দিলেন যে, রাণী বিলকীসের দরবারে চিঠিটি ফেলে দিয়ে আসবে। হুদহুদ যথাসময়ে চিঠি পৌঁছে দিল ।
হযরত সুলাইমান (আ.) সেই চিঠিতে লিখেছিলেন: “তোমরা সকলে মুসলমান হয়ে আমার দরবারে হাজির হও।” চিঠি পেয়ে বিলকীস পরামর্শে জন্য তার আমীর ও মন্ত্রীবর্গকে ডাকলেন । অনেক কথাবার্তার পর অবশেষে রাণী বিলকীস নিজেই এই সিদ্ধান্ত দিল যে, আমি তাঁর খেদমতে কিছু উপহার সামগ্রী পাঠাব। যদি তিনি তা গ্রহণ করেন, তাহলে বুঝব তিনি দুনিয়াদার বাদশাহ্ । আর যদি গ্রহণ না করেন, তাহলে বুঝব তিনি আল্লাহর নবী। সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করা হল। উপহার সামগ্রী হযরত সুলাইমান (আ.)- এর হাতে আসার পর তিনি এই বলে তা ফেরত পাঠালেন যে, আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদের সম্পদের চেয়ে অনেক উত্তম ।
তোমরা তোমাদের হাদিয়া ফেরত নাও। আর জেনে রাখা ঈমান না আনলে শিগগিরই তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠাচ্ছি । একথা শুনে রাণী বিলকীসের দৃঢ় বিশ্বাস হল যে, হযরত সুলাইমান (আ.) নিশ্চিতই আল্লাহ্ নবী। এরপর
রাণী বিলকীস ইসলাম গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে নিজ দেশ ছেড়ে রওনা হলেন । রাণী বিলকীসের একটা মূল্যবান সিংহাসন ছিল। রাণী বিলকীস তার দেশ থেকে রওয়ানা হওয়ার পর হযরত সুলাইমান (আ.) নিজ মুজিযা বলে রাণী বিলকীসের সেই সিংহাসনটি তুলে এনে নিজের দরবারে রেখে দিলেন । উদ্দেশ্য, রাণী বিলকীন এসে তার সিংহাসন এখানে দেখে নবীর মুজিযা বুঝতে পারবে। সাথে সাথে তিনি সিংহাসনের কিছু মণি-মুক্তা একদিক থেকে তুলে অন্যদিকে স্থাপনপূর্বক তাতে সামান্য পরিবর্তনও সাধন করালেন। রাণী বিলকীস পৌঁছার পর তার বুদ্ধি পরীক্ষা করার জন্য বলা হল, দেখ তো! এটা তোমার সিংহাসন কি-না?
উত্তরে রাণী বললেন হ্যাঁ, তেমনই তো মনে হয়। তবে কিছু আকৃতি পরিবর্তন করা হয়েছে। তার উত্তরে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া গেল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা হযরত সুলাইমান (আ.) কে যে বাদশাহী ও রাজত্ব দান করেছেন তা রাণী বিলকীসের রাজত্ব ও বাদশাহীর চেয়ে অনেক বড়, রাণীকে তা দেখানোর উদ্দেশ্যে আদেশ করলেন একটি পানির হাউজ তৈরি করে তার উপর স্বচ্ছ কাঁচের বিছানা বিছিয়ে দাও । তাই করা হল। তারপর হযরত সুলাইমান (আ.) এমন স্থানে গিয়ে বসলেন যে, সেই কাচের উপর দিয়ে ছাড়া তাঁর কাছে পৌঁছার আর কোন উপায় নেই। আর কাঁচটি ছিল এতই স্বচ্ছ ও সূক্ষ্ম যে, তা কারও দৃষ্টিতেও পড়ত না। রাণী বিলকীসকে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর কাছে যাওয়ার জন্য বলা হল । রাণী যাওয়ার সময় কাঁচ দেখতে পেলেন না। তিনি ভাবলেন আমাকে পানির উপর দিয়েই যেতে হবে। এই ভেবে যে-ই তিনি কাপড় উঠাতে যাবেন, অমনি তাকে বলে দেয়া হল যে, পানির উপর কাঁচ রয়েছে, কাপড় তুলতে হবে না, আপনি সোজা চলে আসুন ।
রাণী বিলকীস হযরত সুলাইমান (আ.)-এর দরবারে নিজের সিংহাসন। দেখে বুঝলেন এটা নবীর মুজিযা। তারপর এত সূক্ষ্ম শিল্প কারিগরী দেখে। বুঝলেন সুলাইমান (আ.)-এর রাজত্বের সাথে তাঁর রাজত্বের কোন তুলনা হয়। না। এমন মহা রাজত্ব আল্লাহর বিশেষ দান ছাড়া হতে পারে না। এসব কিছু মিলিয়ে তিনি বুঝলেন যে হযরত সুলায়মান (আ.) নিশ্চিতই আল্লাহর নবী। তিনি তৎক্ষণাৎ কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন। কোন কোন আলেম বলেছেন, তারপর হযরত সুলাইমান (আ.) তাকে বিবাহ করেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন ইয়ামানের এক বাদশাহের সাথে তাকে বিবাহ দিয়ে দেন।
ফায়দা : এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হল রাণী বিলকীসের মন কত অহংকার মুক্ত ছিল। একটা রাজ্যের সম্রাজ্ঞী হওয়া সত্ত্বেও যখন তার সামনে সত্য প্রকাশ পেল, তখন আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে তা মেনে নিলেন অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করলেন। কোন সম্মানবোধ কিংবা লজ্জাবোধ সত্য গ্রহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল না। এ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় হল সত্য কথার সন্ধান পাওয়ার পর পুরাতন ভুলকে ধরে বসে না থাকা। আমাদের উচিত কোন সহীহ কথা জানতে পারলে তা মেনে নেয়া । বাপ-দাদারা বা পূর্ব পুরুষরা কী করে আসছে, বা সমাজে কী রছম চলে আসছে, তা না দেখা। অনেক সময় দেখা যায়, বাপ-দাদারা একটা রছম করে আসছে অথচ সেটা ঠিক নয় জানার পরও আমরা সে রছম বর্জন করি না বরং বলে থাকি, বাপ- দাদা এবং মুরব্বীরা করে আসছে, তা ছাড়া যায় না। এরূপ বলা বা এরূপ করে যাওয়া ঠিক নয়। বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে অন্যায় করলে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।