রাসূলুল্লাহ(ﷺ ) ও এক আগন্তুকের অবিশ্বাসনীয় ঘটনা
একদিন ‘রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ ও সাহাবায়ে (রা.) কেরাম বাইরে বের হলেন”
যখন তাঁরা মদীনার বাইরে গিয়ে উপনীত হলেন, হঠাৎ লক্ষ করলেন, এক উক্ট্রারোহী লোক তাঁদেরই দিকে এগিয়ে আসছে।
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ ও তাঁর দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করলেন। অতঃপর সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন, মনে হচ্ছে আগন্তক আমাদের দিকেই আসছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই উটে’আরোহী লোকটি তাঁদের কাছে এসে থামলেন। তাঁদের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলেন।
নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে? কোথাথেকে এসেছ?
আগন্তুক তার পথের দুঃখ-কষ্টের বিবরণ দিয়ে কাঁদতে লাগলেন। বলতে লাগলেন,
আমি আমার পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও গোত্র ছেড়ে এসেছি। নবীজী আগন্তকঃ কে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাচ্ছ?
আগন্তুক জওয়াব দিলেন, আমি আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাচ্ছি। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাঁকে পেয়ে গেছ।
নবীজী -র কথা শুনে আগন্তকের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। দেহ ও মনে এক আনন্দের শিহরণ বয়ে গেল। বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
ঈমান কী জিনিস- আপনি আমাকে তা বলে দিন। নবীজী বললেন, তুমি এই সাক্ষ্য প্রদান কর যে-
“আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। মুহাম্মাদ ” রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ” আল্লাহর রাসূল।
অতঃপর সালাতকায়েম করো; যাকাত প্রদান করো; রামাদানের সওম রেখো; বাইতুল্লাহর হজ্জ সম্পাদন করো।
আগন্তক বললেন, আমি এগুলো সবই স্বীকার করে নিলাম। আগন্তুক তখনও তাঁর কথা পুরোপুরি শেষ করতে পারেননি,
এমন সময় হঠাৎ তাঁর উটটি তাঁকে নিয়ে নড়েচড়ে ওঠল। ফলে উটের পা ইঁদুর বা এ জাতীয় কোনো কিছুর গর্তে গিয়ে পড়ল।
উটটি ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেল। আগন্তুক তখন উটের উপরই ছিলেন। তিনি উটের উপর থেকে উল্টো হয়ে মাথার উপর পড়লেন।
মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেলেন। তাঁর দেহটি কিছুক্ষণ তড়পাতে তড়পাতে স্থির হয়ে গেল।
নবীজী বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আম্মার ইবনে ইয়াসির ও হুযাইফা (রা.) তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে বসানোর চেষ্টা করলেন,
কিন্তু তিনি বসলেন না। তাঁকে নাড়াচাড়া দিলেন, কিন্তু তিনি নড়লেন না। উভয়েই বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আগন্তক পরপারে চলে গেছেন।
নবীজী তাঁর দিকে তাকালেন। সাথে সাথেই আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। তারপর হুযাইফা ও আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) দিকে তাকিয়ে বললেন,
তোমরা কি তার থেকে আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি লক্ষ করেছ? আমি দেখলাম, দু’জন ফেরেশতা তাঁর মুখে জান্নাতের ফল তুলে দিচ্ছে!
বুঝতে পারলাম, সে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।[মুসনাদে আহমাদ : ৪/৩৫৯, আল মু’জামুল কাবীর লিত-ত্ববরানী : ২/৩১৯, হাদীস নং ২৩২৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১/৪১, হিলয়াতুল আউলিয়া : ৪/২২৫]
আল্লাহ ইরশাদ করেন—
” کُلُّ مَنۡ عَلَیۡہَا فَانٍ”
“وَّ یَبۡقٰی وَجۡہُ رَبِّکَ ذُو الۡجَلٰلِ وَ الۡاِکۡرَامِ”
ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে, সবই নশ্বর। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া। [সূরা আর রহমান : ২৬-২৭]
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী ইরশাদ করেছেন :”যখন জানাযা [খাটিয়ায়] রাখা হয় এবং পুরুষ লোকেরা তা তাদের কাঁধে তুলে নেয়,
তখন সে নেককার হলে বলতে থাকে আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আর নেককার না হলে সে আপন পরিজনকে বলতে থাকে- হায় আফসোস!
এটা নিয়ে তোমরা কোথায় যাচ্ছ? মানবজাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পায়। মানুষ যদি তা শুনতে পেত, তা হলে অবশ্যই জ্ঞান হারিয়ে ফেলত। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩১৪]