Islamic Path
Sunday, January 29, 2023
No Result
View All Result
  • Home
  • Islamic Story
  • Quran-Translation
  • Islamic-Drama
  • About Us
Islamic Path
No Result
View All Result
বোরকা পড়া মেয়ে (STORY)

বোরকা পড়া মেয়ে (STORY)

The girl wearing the burqa (Islamic Story)

islamicpath by islamicpath
June 23, 2022
in Islamic Story
0
0
SHARES
591
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter
বোরকা পড়া মেয়ে

আমি শান্ত। বাসা ঢাকায়। আর পড়ালেখা করি ঢাকার এক সনামধন্য আলিয়া মাদ্রাসায়।

মাদ্রাসায় পড়লেও আমি আর মাদ্রাসার ১০ জন ছেলেদের মত ছিলাম না। অর্থাৎ পাঞ্জাবি /জুব্বা এসব পড়তাম না। শার্ট পেন্ট পড়তেই বেশি পছন্দ করতাম।
আর মাদ্রাসার অন্যান্য ছেলেদের মত ওতটা সাধুও ছিলাম না। সারাদিন গান বাজনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।

 

গান বাজনা যেনো লাইফের একটি পার্ট হয়ে ছিলো। আর মুভি না দেখলেতো ঘুম আসতোই না।নতুন কোনো মুভি আসলেই দেখার জন্য পাগল হয়ে যেতাম। বিশেষ করে একশন মুভিগুলি।

 

আর নামাজ!! সেতো জুম্মার দিন ছাড়া আমাকে কেউ বাটি চালান দিয়েও মসজিদের আশেপাশেও পায় না। তাও সব জুম্মা না। বেশিরভাগ জুম্মার দিনেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে কাটাই।

 

তবে পড়ালেখায় তেমন একটা খারাপ নই আমি।ক্লাসে যখনই টপ বয়দের নাম আসতো,,তখনই আমার নামটা হয়তো প্রথমে নয়তো দ্বিতীয় থাকতো। খেলাধুলেও মাদ্রাসার সকল ছাত্রদের শীর্ষে থাকতাম। (যাইহোক নিজের সুনাম নিজেই করলাম,এই আর কি)
তো এই হলো আমার পরিচয়।

 

একদিন রাতে আমার রুমে মুভি দেখতেছিলাম।রাত তখন প্রায় ৩টা। দেখতে দেখতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ি।
একটু পড়ে মায়ের চেচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

 

 

মাঃ শান্ত এই শান্ত, ঘুম থেকে ওঠ। ফজরের আজান দিছে। নামাজ পড়বি তাড়াতাড়ি উঠ।
(আগেই বলেছি আমি নামাজ পড়ি না,তবুও মা রোজ সকালে এভাবেই ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে।)

 

আমিঃ আরে কি বলো মা,সবে মাত্র ঘুমালাম, ঘুমাতে দেও।
এই বলে আবারো ঘুমিয়ে পড়লাম। বুজতে পারলাম মা যেনো ফিসফিস করে কিছু একটা বলে চলে গেলো।
একটু পর এসে আবারো ডেকে তুললো,,

 

আমিঃ মা আরেকটু ঘুমিয়ে নিই। এতো ভোরবেলা ঘুম থেকে কেউ উঠে নাকি!!
(তখন প্রায় সকাল ১০ টা)
মাঃ ঝাটা আর পানি কোথায় যে রাখলাম!!
আনিকা ঝাটা’টা নিয়ে আয়তো।
(আনিকা আমার ছোট বোন)

 

আমিঃ কি যে বলো না মা! আমিতো জেগেইছিলাম। একটু মজা করলাম এই আর কি।
এর মধ্যে আনিকা ঝাটা নিয়ে হাজির…
আনিকাঃ এই নাও মা, আর আচ্ছাছে ওকে ধোলাই দেও।(খিল খিল করে হাসছে আনিকা)

 

 

আমিঃ আচ্ছা মা ভালো কথা, আনিকা না কালকে……….
আনিকাঃ আরে ভাইয়া! আমিতো মজা করছিলাম। আসলে ঘর ঝাড়ু দিবোতো। তাই এনেছিলাম ঝাটা।
মাঃ(কিছু বুজতে না পেরে) এই তোদের ব্যাপারটা কি বলতো।!
আনিকাঃ না, মা কিছুই না। তুমি যাও,আমি ভাইয়ার রুম ঝাড়ু দিচ্ছি।

 

 

আমিঃ কিরে পুচকি!!হঠাৎ এতো ভদ্র যে!!
আনিকাঃশোন তুই আমাকে আচার চুরি করে খেতে দেখেছিস তাই আজও তুই আমাকে ব্ল্যাকমেল করিস।
আমিঃশোন আমি তোকে কোন প্রকার ব্ল্যাকমেল করি না। কিন্তু ফের যদি আমার পিছনে লাগতে এসেছিস তো,,,,,

 

 

আনিকাঃতো কি?কি করবি তুই? তোকে কি আমি ভয় পাই নাকি।তোর সাথে কথা বলা মানে সময় নষ্ট।
আমিঃ যা ভাগ এখন….

 

আনিকা চলে যাওয়ার পর মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি আজকে শুক্রবার। ওহ! আজকে শুক্রবার তাও একটু ভালো করে ঘুমাতে দিল না।প্রতিদিন সকালে এমন ভাবে ঘুম থেকে টেনে তোলে, মনে হয় ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ লাগছে আর একটা সৈন্য কম পড়ছে। ধুর ধুর কিছুই ভালো লাগে না।এরপর আম্মু ডেকে বললো নাসতা করে বাজারে যেতে।

 

 

এই হলো আরেকটা প্যারা। ছুটির দিনে যত কাজ, খালি শান্ত করবে।আরে বাবাওতো ছুটির দিনে বাসায় থাকে নাকি।
যেই কথা সেই কাজ।

 

 

নাসতা করে বাসা থেকে বের হলাম। গান গাইতে গাইতে বাজারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। কিছু দূর যাবার পর ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা বের করে দেখি , এ কি! মা’র ফোন! এখন আবার ফোন দিলো কেন!
ভাবলাম হয়তও আরো কিছু আনতে বলবে।
মাঃকিরে, শান্ত! তুই কই?

 

 

 

শান্তঃআজব প্রশ্নতো! আমি কই মানে!! এই মাত্রইতো বাজারে পাঠালে।
বলতে বলতে খেয়াল করলাম,,বাজারের ব্যাগও আনি নি,এমনকি বাজার করার টাকাও আনিনি।

 

 

বুজতে আর বাকি রইলো না কেনো ফোন দিয়েছে। ফোন রেখে আবার ফিরলাম বাড়ির দিকে।

 

 

বাসা থেকে তাড়াহুড়ো করে সব কিছু নিয়ে বের হবো,ঠিক তখনই কার সাথে যেনো ধাক্কা খেলাম। যার সাথে ধাক্কা খেলাম সে মেইনগেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছিলো,আর আমি বের হচ্ছিলাম। তার সাথে আরো দুজন ছিলো।
(যার সাথে ধাক্কা খেলাম বোরকা পড়া ছিলো,,চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না)
আমিঃসরি দাদি।

 

 

 

 

মেয়েঃ এই আমাকে দেখে কি আপনার দাদির মতন মনে হয়?
আমিঃ আমার কি দোষ। আপনি আমার দাদির আমলের বোরকা পড়ে আছেন,তো কি বলবো?

 

 

মেয়েঃএক্সকিউজমি,,মুখ সামলে! আপনি কি মুসলমান না? মুখেতো দিব্বি দাড়ি রেখেছেন।তাই বলে কি আমি আপনাকে দাদু বলে ডাকব?
আমিঃ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।(রেগে গিয়ে) দাড়ি রাখা সুন্নত(যদিও দাড়ি রাখা ওয়াজিব)তাই দাড়ি রেখেছি,এ জন্য কি দাদু বলতে হবে নাকি?
মেয়েঃহ্যা! আর ইসলামে পর্দা করা ফরয তাই এই বোরকা পড়েছি সে জন্যে কি আমাকে দাদী বলতে হবে?!

 

 

 

 

 

( আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখনই আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো ।ফোনে কথা বলতে বলতে আমি গেটের বাইরে চলে গেলাম।ফোন কেটে যখন গেটের ভিতরে এলাম তখন আর মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না।

 

 

 

ভাবলাম মেয়েটি মনে হয় চলে গেছে। আরে মেয়েটা হুজুরনি ঠিক আছে তাকে দাদী না হয় ভুলেই বলেছি,তাতে আমাকে এত কথা শুনাবে!এতো দেখি ঝগড়াতে হুজুরনি।)
আমি বাজার করে বাজার থেকে ফিরলাম।ফিরে আম্মুর কাছে যখন বাজার দিতে যাবো,তখন দেখি সেই মেয়েটা ঘরে বসে আছে।

 

 

 

আমি বাজার করে বাজার থেকে ফিরলাম।ফিরে আম্মুর কাছে যখন বাজার দিতে যাবো,তখন দেখি সেই মেয়েটা ঘরে বসে আছে।
মেয়েটা আমাকে দেখে বলল,,,,,,,,,,

 

 

মেয়েঃ আরে কি আশ্চর্য আপনি আবার এখানেও চলে এসেছেন?
আমিঃ আরে আমি……
মেয়েঃ আবার কি বলবেন। এখন কি নানি বলবেন?
আমিঃ দেখুন আসলে এটা….

 

 

মেয়েঃ কোন কথা বলবেন না,চলে যান এখান থেকে।।
আমিঃএই আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।
মেয়েঃ মোটেও বাড়াবাড়ি করছি না।

 

 

আমিঃ আপনি পর্দাশীল মেয়ে।আমি জানতাম পর্দাশীল মেয়েরা ভালো হয়। আপনার মত যে ঝগড়াটে হয় তাতো জানতাম না।
মেয়েঃ আমি ঝগড়াটে? (রাগান্বিত কন্ঠে)
আমিঃ হ্যা,আপনি ঝগড়াটে মেয়ে।

 

 

মেয়েঃ একটা ছেলে একটা মেয়েকে বাজে মন্তব্য করলে, সেই মেয়ে যদি প্রতিবাদ করে, তাহলে সেটার জন্য তাকে ঝগড়াটে বলাটা বখাটে ছেলেদের কাজ।
আমিঃআমি বখাটে? (মায়ের সামনে বখাটে শুনে লজ্জা পেলাম।)

 

 

এরপর মেয়েটা আম্মুকে বলছে দেখেছেন আন্টি এই ছেলেটার কত বড় সাহস এই ছেলেটা আমার পিছু পিছু আপনাদের বাসায় পর্যন্ত চলে এসেছে।
এরপর আম্মু বলল,
মাঃ এ তো আমার ছেলে, শান্ত।

 

 

মেয়েঃহ্যা মানে,,না মানে।(মেয়েটি এই কথা শুনে আমতা আমতা করতে লাগলো)
আমিতো রাগে গজগজ করছিলাম।

 

 

দেখি মেয়েটা আমার দিকে আর তাকিয়ে নেই।যদিও ওর মুখটা দেখতে পাইনি।(মুখ ঢাকা ছিলো)
মায়ের কাছে বাজারের ব্যাগ দিয়ে,আমি রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে ভাবতে লাগলাম এই মেয়েটা আবার কে? আর আমাদের বাড়িতেই বা করছে কি? মাকে সব জিজ্ঞেস করতে হবে।

 

 

না! না! আগে আমাদের ঘরের লিটল সিনিয়র সাংবাদিক কে জিজ্ঞেস করতে হবে,এইতো গেলেন না কনফিউজ হয়ে?এখানে আবার সাংবাদিক টা কে। আরে আমার ছোট বোন আনিকা।
আনিকা কে ডাক দিলাম।

 

 

আমিঃ আনিকা, এই আনিকা এদিকে আয়তো।
আনিকাঃ কিরে ডাকছিস কেন?
আমিঃওই আমি কি তোর ছোট না বড়?
আনিকাঃ ছোট হাহাহাহাহা।

 

 

আমিঃ কি বললি!! আচ্ছা,মেনে নিলাম। এবার একটা কথা বলতো।
আনিকাঃকি কথা?
আমিঃআচ্ছা আমাদের বাড়িতে যে মেয়েটা এসেছে ও কে?
আনিকাঃআচ্ছা এই ব্যাপার না। মাকে’তো বলতে হচ্ছে।
আমিঃআরে এতে আবার মাকে বলার কি আছে।

 

 

 

আনিকাঃআছে আছে,বলার অনেক কিছু আছে।
আমিঃআরে ফাজলামো করিস না, আগে বলতো ও কে?
আনিকাঃও হ্যালো!
আমিঃকি হলো আবার?
আনিকাঃনা বলব না।
আমিঃবলনা প্লিজ।

 

 

আনিকাঃআমি যে বলব আমার লাভ কি?
আমিঃএতে আবার লাভ কিসের?
আনিকাঃলাভ ছাড়া আনিকা,কাউকে কিছু বলে না।হুম্মম্মম..
আমিঃআচ্ছা!আইস্ক্রিম খাওয়াবো।
আনিকাঃসত্যি?
আমিঃআরে হ্যা রে এবারতো বল।

 

 

 

আনিকাঃ আচ্ছা শোন, ও হলো বাবার বন্ধুর মেয়ে। আসলে ওরা এখানে নতুন।ওর বাবার বদলি হয়েছে। আর এখন মাসের অর্ধেক তাই বাসাও পাচ্ছে না কোথাও! এই জন্য আমাদের বাসায় থাকবে এই কয়েকদিন।
আমিঃআচ্ছা যা এখন।
আনিকাঃআমার আইস্ক্রিম?
আমিঃবিকেলে পাবি।

 

 

তারপর আনিকা চলে গেল আমি বক্সে গান ছেড়ে গান শুনছিলাম।তখন আবার আনিকা এসে বলল,,
আনিকাঃএই এই গান বন্ধ কর।
(শুনেও না শোনার ভান ধরলাম)
আনিকাঃ দাড়া আমিই বন্ধ করছি।
আমিঃ কি! গান বন্ধ করলি কেন?

 

 

আনিকাঃআয়েশা আপু বলেছে গান বন্ধ করতে।
আমিঃ আরে পাগল খেয়ে, গাজা হয়ে গেলি নাকি?
আনিকাঃকি বললি? পাগল খেয়ে গাজা হয়ে গেছি, মানে কি??

 

 

 

আমিঃ না মানে, গাজা খেয়ে কি পাগল হয়ে গেছিস? আমাদের বাসায় আয়েশা নামের কেউ নেই।
আনিকাঃ আরে আমাদের বাসায় আজকে যে মেয়েটা এসেছে তার নাম আয়েশা।
আমিঃ তো? তার কি গানটা ভালো লাগেনি?
দাড়া অন্য আরেকটা গান ছাড়ছি।

 

 

আনিকাঃ তোকে আর কোনো গান ছাড়তে হবে না।সে গান শোনে না গজল শোনে। মাদ্রাসায় পড়েতো তাই।
আমিঃমাদ্রাসায়তো আমিও পড়ি, তাহলে?
আনিকাঃতোর কথা বাদ তুইতো মাদ্রাসার ছাত্র নামের কলঙ্ক।
আমিঃকি বললি তুই।
আনিকাঃঠিকি বলছি। আর হ্যা এই রুমটা ছাড়তে হবে।
আমিঃকেন ?এটা আমার রুম।

 

 

আনিকাঃ আজ থেকে এখানে আয়েশা আপু থাকবে। কই আপু? এসো।
যাহ তুই বাইরে যা, মা ডাকছে।
আরে অবাক ব্যাপার আজকে সকাল থেকে আমার উপর তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলছে।
ধুর ধুর ভালো লাগে না।সবাই আমাকে এমন ভাবে ধরেছে মনে হয় আমি মঙ্গল গ্রহের প্রাণী।

 

 

তারপর গেলাম মায়ের কাছে।
মাঃশান্ত, বাজারে গিয়ে মাংস নিয়ে আয়তো।
আমিঃআরে আমি একটু আগেইতো মাংস আনলাম।
মাঃএখন মুরগির মাংস আনবি। আয়েশা আবার গরুর মাংস খায় না।
এই আয়েশাকে নিয়ে সবাই পড়ল কেন।হঠাৎ আয়েশা পিছন থেকে মাকে ডাক দিল।

 

 

 

আয়েশাঃআন্টি,এই মুভির ডিভিডি ক্যাসেটগুলো পেলাম, শান্ত ভাইয়ার রুমে।
আমিঃএগুলো ধরেছেন কেন?
আয়েশাঃএগুলো দেখা ঠিক না। ইসলামে হারাম এটা।
আমিঃআমাকে এগুলো দিন বলছি।
আয়েশাঃনা, দেবো না।
আমিঃমা, দিতে বল।

 

 

মাঃওতো ঠিকি বলেছে। যাও মা তুমি ওগুলো ফেলে দাও।
আমিঃকিন্তু…..
মাঃআরেকটাও কথা বলবি না,যা।
আমিঃকাজটা ঠিক করলেন না আয়েশা।
মাঃ যাবি নাকি গরম খুন্তি দিয়ে দাগ দেবো!

 

 

 

আমিঃআচ্ছা যাচ্ছি যাচ্ছি। টাকা দাও।
এরপর মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বের হলাম বাজারের উদ্দেশ্যে ।বাজার থেকে ফিরলাম তারপর;
আমিঃএই নাও তোমার বাজার। কোথাকার কোন মেয়ের জন্য আমাকে দুইবার বাজারে পাঠিয়েছো।
মাঃকিছু বললি?

 

 

 

আমিঃনা কিছু না, বলছিলাম আজকের দিনটা আমার খুব ভালো কাটছে।
মাঃতাতো কাটবেই।
তারপর আমি গোসল করে জুম্মার নামাজ পড়তে গেলাম।

 

 

 

নামাজ শেষে জিলাপি দিতেছিলো। অনেক আশা নিয়ে লাইনে দাড়িয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্য এতো ভালো যে,জিলাপি শেষ!! এইখানেও জিলাপি আমার সাথে প্রতারণা করলো। দিনটাই আজ খারাপ যাচ্ছে।কি আর করার,১০ টাকার জিলাপি কিনে খেতে খেতে বাসায় চলে আসলাম।

 

 

১০ টাকার জিলাপি কিনে খেতে খেতে বাসায় চলে আসলাম।
সকাল থেকে কিছু খাইনি (জিলেপি ছাড়া)।
পেটের ভিতরে এবার ৪র্থ বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। তারপর মা ডেকে খাবার দিলো।

 

 

আনিকা রোজ আমার সাথে বসেই খায়।কিন্তু আজ খাবারের টেবিলে আনিকা’কে দেখছি না।
মাকে জিজ্ঞাসা করলাম..,

 

 

আমিঃমা,আনিকা কোথায়?ও খাবে না?
মাঃ আনিকা, আয়েশার সাথে তোর ঘরে বসে খাচ্ছে।
আমিঃ ঘরে বসে কেন? এখানে বসে খাওয়া যায় না?
মাঃ আয়েশা আবার চেয়ার টেবিলে বসে খায় না।

 

 

(বুজতে পারলাম,চেয়ার টেবিলে খাওয়া সুন্নত নয়,,তাই সুন্নতি তরিকায় খাবার খাচ্ছে।)
তারপর তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নিলাম।
খাবার পর,এবার একটু বিছানায় গড়াগড়ি দিতেই হবে।

 

 

যেই আমার রুমে ঢুকতে যাবো,তখনই মনে পড়লো। আমার ঘড়েতো ওই মেয়েটা থাকবে। তো আমি কোথায় থাকবো?
চলে গেলাম মায়ের কাছে..
আমিঃ মা আমার রুমেতো ওই এশাকে পাঠিয়েছো। তাহলে আমি কোথায় থাকব?
মাঃএই এশাটা কে আবার? ওর নামতো আয়েশা।

 

 

আমিঃ ওই হলো একটা।
মাঃ ছাদে যে ঘড়টা পরে আছে সেখানে থাকবি তুই।
আমিঃকিইইই!!! ওইখানে এত গরমে,আমিতো সিদ্ধ হয়ে যাব।
মাঃ কিছু হবে না বাবা, যা বলছি তাই কর।
আমিঃ আমার, মানে নিজের ছেলের চিন্তা তোমার একটুও নেই।

 

 

 

তুমি ওই মেয়েকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলে? আগে জানতাম ছেলেরা বউ পেলে মাকে ভুলে যায়। আর আজ দেখছি আরেক মেয়েকে পেয়ে মা ছেলেকে ভুলে গেছে।
মাঃকি বললি?
আমিঃ(মনে হয় কেস জন্ডিস)না!না! আমি বললাম তুমি ঠিকই বলেছো, ছাদে আসলেই খুব ঠান্ডা। আমি যাই ঠিক আছে।

 

 

 

( তখন আর ছাদে গেলাম না।বাহিরে বের হয়ে গেলাম।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাতে বাসায় ফিরলাম।)
দিনটা যে কত কষ্টে কাটলো বুজাতে পারব না।রাতের খাবার মা এসে রুমে দিয়ে গেলো।খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।এই হয়েছে কাজ বিছানায় এতো লাল পিপড়ে কোথা থেকে এলো??

 

 

তারপর, বিছানার চাদর বাইরে রেখে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছে না।আমার আবার নিজের রুম ছাড়া ঘুম আসে না। আর ঘুম না আসলে গান শুনতে হয়। এককথায় গান ছাড়া আমার পেটের ভাত হজম হয় না। কিন্তু গান কিভাবে শুনবো আমার ফোনের স্পিকার নেই, সাউন্ড বক্সতো আয়েশা যেখানে থাকে সেখানে।এপিঠ ওপিঠ করতে করতে কারেন্ট চলে গেল।আর কি ঘুম হয়??

 

 

 

এরপর দরজা খুলে খোলা আকাশের নিচে ছাদের উপর শুয়ে পড়লাম। আকাশের দিকে তাকাতেই মন ভালো হয়ে গেলো। তারা গুলো মিটিমিটি করে জ্বলছে। মনে হলো,মায়ামাখা তারাগুলো আমাকে যেনো কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। তারপর তারাগুলো গুনতে গুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।

 

 

 

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো,বুজতে পারলাম চোখের উপরে পানির ফোটা পড়ছে। আরে ব্যাপার কি বৃষ্টি হচ্ছে নাকি ?
নাহ! এতো দেখি বিনা মেঘে বৃষ্টি। দেখলাম মুখে কাপড় জড়ানো একটা মেয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর তার হাতে ছোট একটা বালতি। তার ঠিক পাশে দাড়িয়ে আছে আনিকা।

 

 

 

বুঝতে বাকি রইলো না আসলে ব্যাপারটা কি ঘটেছে।
আমিঃআরে আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন ? আর আমাকে ঘুম থেকে তুললেন কেন?
আয়েশাঃ আন্টিকে বলবো,কাল যেনো আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।
আমিঃকেন কেন?

 

 

 

আয়েশাঃএখন ফজরের আযান হয়ে গেছে, আর আপনি রাত দেখলেন কোথায়?
আমিঃতা না হয় বুঝলাম কিন্তু এখানে কেন এলেন?
আয়েশাঃ কেন আবার! এখন নামাজের সময়।নামাজ পড়বেন। এমনেতেই আমার জন্য আপনাকে ছাদে ঘুমাতে হলো তাই ওযুর জন্য পানি এনেছি, কষ্ট করে আর নিচে যেতে হবে না।আর হ্যা, খবরদার! নামাজ না পড়ে ঘুমাবেন না।

 

 

 

কথাটা বলেই আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নিচে চলে গেলো ।আমি মনে মনে ভাবছি কি উটকো ঝামেলা বাড়িতে এসে উঠলো! ওর জন্য আমার রুম ছাড়তে হয়েছে।আর এখন ঘুম থেকে উঠিয়ে বলছে নামায পড়তে!!

 

 

কিছুক্ষণ ভাবলাম কি করব? তারপর চিন্তা করলাম মেয়েটা আমার জন্য কষ্ট করে পানি নিয়ে এসেছে, এখন যদি নামাজ না পড়ি তাহলে বেশি পাপ হবে, নামাজটা পড়েই ফেলি।

 

 

ওযু করলাম তারপর নামায পড়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছে না। একটা কথা বার বার মনে হচ্ছে মেয়েটা আমার সাথে কথা বলে কিন্তু আমি ওর মুখটা এখন পর্যন্ত দেখতে পারিনি। যতবার আমার সামনে এসেছে ততবার মুখ ঢাকা ছিল। মেয়েটা আসলে কি চায়?

 

 

 

মেয়েটাকে আমি ভাবতাম ঝগড়াটে, কিন্তু তা নয়। আসলেই মেয়েটা ভালো। যদি ভালো নাই হবে আমার জন্য ওযুর পানি আনতে গেল কেনো?
সাত পাচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।সকাল ৭:৩০ মিনিটে ঘুম ভাঙলো।

 

 

 

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচের তলায় গেলাম খাবার এর জন্য। গিয়ে দেখি সব খাবার টেবিলে রেডি, বাহ আজ এত তাড়াতাড়ি নাস্তা পেয়ে খুশি হলাম। মাকে ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সাড়া পেলাম না।এরপর ডাক দিলাম আনিকাকে তার ও কোন সাড়া নেই।

 

 

 

ব্যাপারটা কি কোথায় গেলো সব? আমি ভাবলাম এখনো হয়তো সবাই ঘুমাচ্ছে। তাই খাওয়া শুরু করলাম। কি বলবো, খাবারটা এতো মজাদার হয়েছে বলার বাহিরে। আপনারা খেলে আপনারাও বুঝতেন ।
পিছন থেকে একজন বলে উঠলো;খাবারটা কেমন হলো?

 

 

 

আমিঃদারুন,সুপার,অসাধারণ,জবাব নেই।
(আ! কিন্তু পিছন থেকে কে কথা বললো?।পিছু ফিরে দেখি আয়েশা দাঁড়িয়ে আছে।)
আমিঃ তুমি?মানে আব আবা আপনি?

 

 

আয়েশাঃ হ্যা, কেনো? চমকে গেলেন?
আমিঃ না না চমকাবো কেন? আর খাবারটা না একদম ভালো হয় নি।
আয়েশাঃ তাহলে এর আগে যে বললেন!

 

 

 

 

আমিঃ কি বললাম আবার। আচ্ছা মা আর আনিকা কোথায়?
আয়েশাঃ তারাতো একটু কাজে বের হয়েছে।
আমিঃ এত সকালে আবার কাজ কিসের??
আয়েশাঃ এত সকাল কোথায়!? এখন বাজে ১১ঃ৪৬।

 

 

আমিঃ কি এটা কি করে হতে পারে? আমিতো দেখলাম ৭ঃ৩০।
আয়েশাঃ আগেই বলেছিলাম।চোখের ডাক্তার দেখাতে।
আমিঃ যাক আমার জন্য ভালো হয়েছে। প্রতিদিন যেনো বের হয়।
আয়েশাঃ কেনো?

 

 

আমিঃ কেন আবার! তাহলে এত মজার খাবার মিস করতে হবে না। আর ঘুমটাও হবে ভালোভাবে।
আয়েশাঃ আপনিতো এই মাত্র বললেন খাবার ভালো হয় নি। এখন আবার!!
আমিঃহ্যা তাতো ঠিকই বলেছি।

 

 

বলে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলাম।আড়াল থেকে দেখলাম আয়েশা দাঁড়িয়ে আছে। মুখতো আর দেখতে পাই নি কারন মুখে কাপড় জড়ানো ছিল। তবে চোখ দেখে যা বুঝালাম,ও হাসছিল।

 

 

এভাবেই কাটতে লাগলো দিনগুলি। মাস প্রায় শেষ হবার পর্যায়। ওরাও নতুন বাসায় শিফট হয়ে গেছে। যাওয়ার আগে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলো, বখাটে বলার কারনে।

 

 

যাওয়ার দিন দেখেছিলাম আনিকা আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে কাদছিলো,আর আয়েশার চোখ দুটিও টলমল করছিলো।
তা দেখে প্রথম দিন একটু খারাপ আমারো লেগেছিলো।

 

 

 

কিন্তু পরেরদিন থেকে দিনগুলো আগের মতই কাটছিলো। একদিন দুপুরে লাঞ্চ করে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় গান শুনছিলাম, হঠাৎ ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো।
মেসেজে লেখা ছিল,,,,,,,,,,,,,,,,

পরেরদিন থেকে দিনগুলো আগের মতই কাটছিলো। একদিন দুপুরে লাঞ্চ করে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় গান শুনছিলাম, হঠাৎ ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো।
মেসেজে লেখা ছিলো –

 

 

: আসসালামু আলাইকুম।
আমিঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম। কিছু মনে করবেন না,আমি আপনাকে চিনতে পারি নি।
: আয়েশা, নামটা কি মনে আছে?
আমিঃও হ্যা, কেমন আছেন?

 

 

আয়েশাঃআলহামদুলিল্লাহ, ভালো। আপনি?
আমিঃ এইতো ভালো।
আয়েশাঃ শুধু ভালো বলতে নেই। সবসময় বলবেন, “আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।”
আমিঃআচ্ছা, ঠিক আছে।
আয়েশাঃ তো বলুন কেমন আছেন?

 

 

 

 

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।
আয়েশাঃ আসলে আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো তাই বিরক্ত করছি।
আমিঃ হ্যা কি কথা বলেন? আর বিরক্ত হওয়ার কথা বলছেন কেন? আমি কি বলেছি যে আমি বিরক্ত?
আয়েশাঃ না, তা বলেন নাই।

 

 

আমিঃহুম,তো বলেন কি বলবেন?
আয়েশাঃআমাকে ক্ষমা করবেন, প্লিজ।
আমিঃক্ষমা? (হাহা ইমুজি)
আয়েশাঃ কি হাসির ইমুজি দিলেন যে?

 

 

আমিঃ আরে বোকা যে অপরাধী’ই না, তাকে ক্ষমা করব কি করে?
আয়েশাঃ না আমি আপনার সিডি গুলো নষ্ট করেছিলাম তাই।
আমিঃআচ্ছা এই ব্যাপার। তাতে আমি কিছু মনে করে নি। আসলে ভালো হয়েছে। কারন ওগুলো যার থেকে এনেছিলাম সে বলেছে সিডির টেম্পার নাকি শেষ,এই জন্য সে টাকাও নেয় নি সিডির।

 

 

 

আয়েশাঃ আচ্ছা,আসরের নামাজের সময় হয়েছে। আমি নামাজ পড়ব। আপনিও নামাজ পড়তে যান।
আমিঃওকে।
আমি মনে মনে ভাবছি নামাজ পড়ব তো বলে দিলাম। কিন্তু যদি এখন না পড়ি তাহলে দিগুন পাপ হবে। এক হলো মিথ্যা কথার, আরেক হলো নামাজ না পড়ার।

 

 

 

তাই তাড়াতাড়ি নামায পড়তে গেলাম।নামায পড়ে আসার পড় যখন ঘড়ে ঢুকলাম,দেখি মা আর আনিকা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমিঃআরে আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছো যেনো আমি মঙ্গল গ্রহ থেকে আসা কোনো এলিয়েন।
মাঃ আনিকা? আমি কি স্বপ্ন দেখছি?

 

 

আনিকাঃ মা আমিও তো তাই ভাবছি। মা, এটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন?
আমিঃআরে হয়েছেটা কি? দাঁড়াও পানি দিয়ে তোমাদের জেগে স্বপ্ন দেখা দেখাচ্ছি।
আনিকাঃনা না ভাইয়া এবার ঠিক আছে এটা কোনো স্বপ্ন না সত্যি।
মাঃহ্যা তাই।
আমিঃ ব্যাপারটা কি?

 

 

মাঃবাবা তুই আজ নামায পড়তে গেলি কি মনে করে?
আমিঃকি মনে করে আবার!!একটা ভালো কাজ করলাম কোথায় সবাই উৎসাহ দেবে তা না খালি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেই চলেছে।ধুর ভালো লাগে না।
ভালো লাগে না বলে রুমে চলে গেলাম।মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি,আয়েশার এসএমএস এসেছে। লেখাছিল,,,,,,,,,,,,

 

 

 

আয়েশাঃ কি নামাজ পড়েছেন?
আমিঃ হ্যা, পড়েছি। কি করেন?
আয়েশাঃ এইতো আচার খাই।একটা কথা রাখবেন?
আমিঃকি কথা?
আয়েশাঃ রাখবেন তো আগে বলুন।

 

 

 

আমিঃ আরে আগেতো বলেন।
আয়েশাঃ আচ্ছা ঠিক আছে শুনুন,যত কিছুই হোক নামাজ ছাড়বেন না।পাচ ওয়াক্ত নামাজ
পড়বেন।নামাজের কোনো বিকল্প নেই। আপনিতো মাদ্রাসায় পড়েছেন।আশা করি জানেন নামাজ পড়ার গুরুত্ব।

 

 

 

আমিঃ হুম্ম।
আয়েশাঃ হুম্ম কি! কথাটা রাখবেন?
আমিঃনা মানে একটু,,,,,,
আয়েশাঃ কোন মানে মানে করবেন না।যা বলেছি তাই করবেন।

 

 

 

(জোর করে কেউ আমার উপর কিছু চাপিয়ে দিবে,,সেটা আমি কখনোই পছন্দ করতাম না। যদিও সে নামাজ পড়ার কথা বলেছে। তারপরও এতদিন যেহেতু পড়িনি,,তার কথায় পড়বোই বা কেনো?)

 

 

আমিঃ দেখুন,এতদিন যেহেতু আমি নামাজ পড়িনি৷ হঠাৎ করে আপনার কথায় নামাজ পড়তেই বা যাবো কেনো? আর আসরের নামাজটা বলেছেন,আমার মনে চেয়েছিলো তাই পড়ছি।তাই বলে আপনার সব কথা মানতে হবে এমনটাতো নয়।তাই না!!

 

 

আয়িশাঃ আমি সত্যিই দুঃখিত। আমাকে মাফ করে দিবেন।ভালো থাকবেন।
এই বলে মেসেজ দেওয়া বন্ধ করে দিলো। বুজতে পারছি এমনভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। আর মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। তবুও যা বলার সরাসরি বলে দিয়েছি,,মিথ্যে বলেতো লাভ নেই।

 

 

 

তারপর ছাদে চলে গেলাম, কেন জানি ভালো লাগছে না। তাই ঘরে এসে গান চালু করে গান শুনতে লাগলাম।
কিন্তু কি আজব ব্যাপার! যে গানটা আমার সবচেয়ে প্রিয়, সেই গানটিও আমার ভালো লাগছে না।

 

 

 

কোনোকিছুতেই যেনো মন বসতে চাইছে না।
বুজতে আর বাকি রইলো না যে আয়েশাকে ওইভাবে কথা বলে নিজেকে বাহির থেকে ঠিক রাখতে পারলেও ভিতরটা যেনো বলছে বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
ভাবতে লাগলাম,মেয়েটাতো আমাকে খারাপ কিছু বলেনি। নামাজ পড়ার কথাই বলেছে। আর এটাতো আমার ভালোর জন্যই বলেছে।

 

 

তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আয়েশাকে সরি বলবো। ওইদিন আর কিছু বললাম না।রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আর মাকে বলে ঘুমালাম ফজরের সময় আমাকে উঠিয়ে দিতে নামাজ পড়ার জন্য।মা আবারো অবাক হলো,যাইহোক তাতে পাত্তা না দিয়ে ঘুমাতে চলে আসলাম।

 

 

ফজরের সময় হয়েছে।মা ডেকে তুলে দিলো। উঠে ওযু করে নিলাম। চারদিকে নিস্তব্ধতার মধ্যে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে।
আহা কি না মধুর লাগছে। এর আগে কবে যে ফজরের সময় উঠে আজান শুনেছি তা মনে নেই।

 

 

তারপর তাড়াতাড়ি মসজিদে নামাজ পড়তে চলে গেলাম। নামাজ পড়তে গিয়ে খেয়াল করলাম ইমামসহ আমার দিকে অনেকেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মনে হয় যেনো এবার অন্য কোনো গ্রহ থেকে এলিয়েন এসেছে।

 

 

যাইহোক বুজতে পারলাম, এতো সকালে আমাকে মসজিদে দেখতে মোটেও কেউ প্রস্তুত ছিলো না।আমি সেদিকে আর বেশি খেয়াল দিলাম না।

 

 

নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে কিছুক্ষন হাটাহাটি করলাম। সকালের শীতল বাতাস,সাথে সূর্যোদয়। সব মিলিয়ে পরিবেশটা সত্যিই অসাধারণ লাগছিলো। যা বলে বুজানো সম্ভব নয়। ভাবলাম,এতদিন আমি এমন সময় ঘুমিয়ে বোকামি ছাড়া আর কিছুই করিনি। সকালে নামাজ পড়ে হাটাহাটি করার মধ্যে অসম্ভব ভালো লাগা রয়েছে।

 

 

হাটাহাটি শেষে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে মনে পড়লো আয়েশাকে মেসেজ দিতে হবে। মেসেজ দিলাম….
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম।
!
!

 

 

বেশ কিছুক্ষন সময় চলে গেলো কোনো রিপ্লাই নেই। এরই মধ্যে মা নাস্তা করার জন্য ডাক দিলো।
মোবাইলটা চার্জে দিয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম।

 

 

হঠাৎ শুনতে পেলাম আমার রুম থেকে মোবাইলে মেসেজ আসার শব্দ এলো।বুজতে পারলাম আয়েশার মেসেজ এসেছে।

 

 

তাই তাড়াতাড়ি নাস্তা করে রুমে চলে গেলাম।মোবাইলটা হাতে নিতেই মেজাজটা গরম হয়ে গেলো।
দেখলাম মেসেজটা আয়েশার না,মেসেজে লেখাছিলো…
বাংলালিংকঃ

(দারুন অফার! ৯৯ মিনিট-৭দিন মাত্র ৫৭ টাকা!কিনতে রিচার্জ/ ডায়াল *১৬৬*৫৭#)
মনে মনে গালি দিতে দিতে সিম কোম্পানির অফিসে মেসেজ দিলাম…..
আমিঃ তোদের দারুন অফার দেওয়ার আর সময় পাইলি না?(এংরি রিয়েক্ট)

 

 

সিম কোম্পানিঃ ধন্যবাদ স্যার,আমাদের সাথে থাকার জন্য। আরো দারুন দারুন অফার পেতে ডায়াল করুন *৮৮৮#।
আমিঃ ***********************।

 

তারপর ভাবলাম, এভাবে আয়েশা রিপ্লাই দিবে না। তাই একটু অন্যভাবে মেসেজ দিলাম।জানি
এভাবে মেসেজ দিলে রিপ্লাই অবশ্যই দিবে…

 

 

তারপর ভাবলাম, এভাবে আয়েশা রিপ্লাই দিবে না। তাই একটু অন্যভাবে মেসেজ দিলাম।জানি এভাবে মেসেজ দিলে রিপ্লাই অবশ্যই দিবে……
আমিঃ সালামের উত্তর দেয়া কিন্তু ওয়াজিব!
কিছুক্ষন পর ……..

 

 

আয়েশাঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম।
(দেখলেন কিভাবে মেসেজের রিপ্লাই পেতে হয়!!মেসেজের রিপ্লাই পাওয়ার নিঞ্জা টেকনিক!)
আমিঃ কেমন আছেন?

 

 

আয়েশাঃ আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। আপনি?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। তো ফজরের নামাজ পড়েছেনতো?।
( আয়েশাতো পড়েছে তা সিউর। আমি পড়েছি কিনা সেটা যেনো জিজ্ঞাসা করে তাই প্রশ্ন করলাম।)
আয়েশাঃ হুম পড়েছি।

 

 

 

(কি হলো! আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করলো না নামাজ পড়ার কথা? বুজতে পারলাম এখনো রাগ করে আছে।তাই আমি নিজেই বললাম..)
আমিঃ আর হ্যা,,আমিও কিন্তু ফজরের নামাজ পড়েছি। আর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো।

 

 

 

নামাজ ছেড়েতো লাভ নেই। বরং নামাজ না পড়লে ক্ষতি।আর হ্যা,,আপনিও নিয়মিত নামাজ পড়বেন।
(ভাব মনে হয় বেশিই নিয়ে ফেলেছি।)
আয়েশাঃ সত্যিই? খুব ভালো সিদ্ধান্ত। আল্লাহ আপনাকে কবুল করুক।
(বুজতে পারলাম শুনে খুব খুশি হয়েছে।)

 

 

 

আমিঃ আমিন। আর শুনুন কালকের ব্যবহারের জন্য সরি।
আয়েশাঃ সরি বলতে হবে না। নামাজ পড়বেন নিয়মিত, এটা শুনেই খুশি হয়েছি।
আমিঃ হুম দোয়া করবেন।
আয়েশাঃ অবশ্যই।

 

 

 

আমিঃআচ্ছা,,এখন একটু ঘুমাবো। পরে কথা হবে।
আয়েশাঃ এখন!এতো সকালে?
আমিঃ আসলে আজ আগে উঠেছিতো তাই ভালো মত ঘুম হয়নি। অনেক ঘুম পাচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ।
এরপর ঘুমিয়ে গেলাম…

 

 

 

হঠাৎ মেসেজের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। দেখি আয়েশা মেসেজ দিয়েছে…
আয়েশাঃ আসসালামু আলাইকুম।
আমিঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম। কিছু বলবেন?
আয়েশাঃ কি করছেন?
আমিঃ ঘুমাচ্ছিলামতো। এই একটু আগেইতো বললাম ঘুমাবো।
আয়েশাঃ কয়টা বাজে, খেয়াল আছে?

 

 

 

আমিঃ এখনতো সময় সকাল ৯ঃ০০ টা।
আয়েশাঃ আমি জানতাম!আপনি এমন কিছুই বলবেন। আপনাকে তো আগেই বলেছি চোখের ডাক্তার দেখান। এখন সময় ১২ঃ৪৫। তাড়াতাড়ি উঠে গোসল করে নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেন।

 

 

 

(ধুরু,, কি যে হইছে? সময়টা শুধু উল্টো পাল্টা দেখি। সম্ভবত মোবাইলের সময় ম্যানুয়াল ছিলো,,চার্জ না থাকায় ফোন বন্ধ হয়ে সময় উলোটপালোট হয়ে রইছে।)
তারপর গোসল করে নামাজ পড়তে চলে গেলাম।

 

 

এবারও মসজিদের ইমামসহ অনেকেই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
কি মুশকিল!! নামাজ পড়তে আসছি, সবাই উৎসাহ দিবে তা না ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মনে হয় আমি চিড়িয়াখানার পলাতক কোনো জীবজন্তু।

 

 

 

ধুরু! সবসময়তো এমনটা ভালো লাগে না। তাই এবার তাদের দিকেও আমিও হা করে তাকিয়ে মুখটাকে ভ্যাচকিয়ে বিরক্তিকর হাসি দেওয়া শুরু করলাম।
হ্যা হ্যা,বুদ্ধিটা কাজে লেগেছে। এবার কেউ আর আমার দিকে তাকিয়ে নেই।

 

 

এবার নিজেকে বুদ্ধির ঢেকি গোপাল ভাড় মনে হলো। ( যাইহোক,আবারো আমি আমার প্রশংসা করলাম)
তারপর নামাজ পড়া শেষ করে বাসায় চলে আসলাম।
আমি আর আনিকা একসাথে বসে খাবার খাচ্ছি।

 

 

আনিকা বললো,,,,,
আনিকাঃ ওই শোন।
আমিঃ শোন মানে? আমি তোর ছোট না বড়।ভাইয়া বল।
আনিকাঃ আচ্ছা,,ভাইয়া শুনেন,,আজ বিকেলে আপনি আমাকে ঘুড়তে নিয়ে যাবেন। আপনার এই, এতো সুন্দর পরীর মত একটা বোন কতদিন ঘুড়তে যায় না খেয়াল আছে!?

 

 

 

আমিঃ আহারে আসছে আমার পরীর মত বোনটা। পরি নাকি পেত্নি একটা।
আনিকাঃ কি? কিছু বললেন নাকি?
আমিঃ না ম্যাডাম।তেমন কিছু না। আপনি এতো সুন্দর পরী,তা আমার সাথে বের না হওয়াটাই ভালো। পরীর মতো একটা বোনের সাথে আমার মত এমন একটা আনস্মার্ট ছেলে ঘুড়তে যাওয়া কি মানায়?

 

 

 

আনিকাঃ তা আপনাকে এতো ভাবতে হবে না।আপনি আমার বডিগার্ড হয়ে আমার সাথে থাকবেন। আমার মত পরিকে দেখে যখন বখাটে ছেলেরা সিটি দিবে তখন আপনি তাদের ধাম ধুম মারবেন। অবশ্য আপনি যা,,তাতে মার আপনি নিজেই খাবেন।(বলছিলো আর খিল খিল করে হাসছিলো।)

 

 

 

 

তারপর বিকেলে ঘুড়তে যাবার কথা বলে ঘরে চলে গেলাম।
ঘরে গিয়ে শুয়ে শুয়ে গান শুনছিলাম। ভাবলাম আয়েশাকে মেসেজ দি।
আমিঃআসসালামু আলাইকুম।
আয়েশাঃ ওয়ালাইকুমুসুসালাম। কি করছেন?
আমিঃ গান শুনছি।আপনি?

 

 

আয়েশাঃ কিছু না। আচ্ছা একটা কথা বলি?
আমিঃ বলেন।
আয়েশাঃ দেখুন,গান শোনা হারাম। আর যারা মুসলামান তাদের উচিত হারাম হালালগুলো মেনে চলা।

 

 

আর গান শুনলে নামাজ পড়েও তৃপ্তি পাওয়া যায় না। নামাজটাকে বোজা বলে মনে হয়।যেহেতু নামাজ পড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন সেহেতু গানটাও ছেড়ে দিন।আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে আপনি গান ছেড়ে দিতে পারবেন।
আর এখনতো অনেক সুন্দর সুন্দর গজল আছে,,সেগুলো শুনে দেখুন ভালো লাগবে।

 

 

(এখন যদি আবার না বলি তাহলে রাগ করবে।আর আয়েশাতো আমার ভালোর জন্যই বলেছেন।)
আমিঃ আচ্ছা। কথা দিলাম। আমি আর গান শুনবো না।
আয়েশাঃ তাহলে এখনই আপনার ফোন থেকে গানগুলো ডিলিট করে দিন।
আমিঃ ওকে। ডিলিট করছি।

 

 

এই বলে গানগুলো সব ডিলিট করে দিলাম। এখন গান ছাড়া ভালো লাগছে না। যে গান ছাড়া আমার ঘুমই আসে না,আজ সেগুলোর সাথেও ব্রেকআপ করতে হলো।

 

 

তারপর ইউটিউবে ঢুকে গজল শুনছিলাম।আহ কি মধুর গজল। সত্যিইতো, আয়েশা ঠিক বলেছে। বর্তমানে নতুন গজলগুলোতো শুনতে অসাধারণ। গজল শুনে মনের ভিতরে অন্যরকম শান্তি অনুভব হলো। কিছুক্ষন পর গজল শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

 

 

তারপর বিকেলে আসরের নামাজ পড়ে আনিকাকে নিয়ে হাটতে বের হলাম।
আনিকা বায়না ধরলো,মডার্ন পার্কে যাবে। পার্কটি আমাদের পাশের এলাকাতেই,বেশি দূর নয়।
যেই বায়না সেই কাজ। একটা রিকশায় উঠে বসলাম। রিকশা চলছে…..
আনিকাঃ কিরে! আয়েশা আপু কি তোরে মেসেজ দেয়?

 

 

 

আমিঃ মানে?(হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে চমকে গেলাম।)
আনিকাঃ না মানে,,আমি আয়েশা আপুকে তোর নাম্বার দিছিলাম। তাই আর কি!
আমিঃও,,তাইলে এই কাজটা তোর।

 

 

আনিকাঃ হ্যা জনাব,,এই মহৎ কাজটা আমারই। আর আয়েশা আপুও দেখতে অনেক সুন্দর। আমার ভাবি হলে খুব ভালো হবে।(খিলখিল করে হাসছে)
আমিঃ চুপ কর। এতো পাকনা পাকনা কথা তোরে কেউ বলতে বলছে?(একটু রাগ রাগ ভাব)

 

 

 

বলতে বলতে, পার্কের সামনে এসে রিকশাটি থামলো। রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দেওয়ার জন্য মানিব্যাগ থেকে ভাড়া বের করছিলাম,হঠাৎ খেয়াল করলাম আনিকা আমার পাশে নেই।ভাড়াটা তাড়াতাড়ি দিয়ে পিছনে ঘুরতেই চমকে উঠলাম।

 

 

 

বলতে বলতে পার্কের সামনে এসে রিকশাটি থামলো। রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দেওয়ার জন্য মানিব্যাগ থেকে ভাড়া বের করছিলাম,হঠাৎ খেয়াল করলাম আনিকা আমার পাশে নেই।ভাড়াটা তাড়াতাড়ি দিয়ে পিছনে ঘুরতেই চমকে উঠলাম।

 

 

দেখলাম একটা বোরকা পড়া মেয়ে, আর তার পাশে হাত ধরে আনিকা দাড়িয়ে আছে। বুজতে বাকি রইলো না এটা আয়েশা।
কিন্তু বুজতে পারলাম না,,আয়েশা এখানে দাড়িয়ে আছে কেনো? আর আনিকা’ই রিকশা থেকে নামতে না নামতেই ওকে চিনলো কিভাবে? (বোরকা পড়া ছিলো, এত তাড়াতাড়ি চেনার কথাতো না)

 

 

 

তারপর আয়েশাকে জিজ্ঞাসা করলাম….
আমিঃ আপনি এখানে?কোনো কাজের জন্য এসেছেন?
আয়েশাঃ আপনিইতো আসতে বললেন।
আমিঃ আমি মানে!! আমি কখন আসতে বললাম??

 

 

আয়েশাঃ দুপুরে আপনিতো মেসেজ দিয়ে বললেন, – “আয়েশা, বিকেলে মডার্ন পার্কের সামনে এসো। জরুরি কাজ আছে। আর এখন মেসেজ দিও না। সরাসরি কথা হবে।”
আমিঃ আরে আজবতো, আমি আপনাকে এখানে আসতে বলবো কেনো? আপনি নিশ্চয়ই মজা করছেন। (কিছুই বুজতে পারছি না)

 

 

 

আয়েশাঃ দেখুন মজা আমি না আপনি করছেন।
এই বলে মোবাইলটা বের করে মেসেজটা দেখালো।
কি আজব! মেসেজটাতো আমার মোবাইল থেকেই পাঠানো। কিন্তু আমিতো এমন কোনো মেসেজ দেইনি। তাহলে মেসেজটা আসলো কোথা থেকে?

 

 

আর আয়েশাওতো মিথ্যে বলার মত মেয়ে না। আর মিথ্যেই বা হবে কেনো,,মেসেজটাতো প্রমান করে ও মিথ্যে বলছে না।
কিন্তু মেসেজটাতো আমার না তাতো বুজাই যাচ্ছে,,হঠাৎ খেয়াল হলো আমিতো আয়েশাকে তুমি করে বলিনা।

 

 

আমিঃ দেখুন,আমিতো কখনোই আপনাকে তুমি করে বলিনি। মেসেজেতো তুমি করে লিখা।
আয়েশাঃ হ্যা তাইতো,,এটাতো খেয়াল করিনি।
এবার দুজনেই কনজিউজ হয়ে গেলাম।
তাহলে মেসেজটা দিলো কে??

 

 

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখ গেলো আনিকার দিকে। আনিকাকে দেখলাম ও খিল খিল করে হাসছে।
আমিঃ আনিকা,এই কাজটা তোর নাতো আবার?
আনিকাঃ জ্বী জনাব! এটা আমারই কাজ।(এবার হাসিটা আরো বাড়িয়ে দিলো)
আমি আর আয়েশাতো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।

 

 

 

আমিঃ মানে!! তুই কখন মেসেজ দিলি?
আনিকাঃ তুই যখন দুপুরে ঘুমাচ্ছিলি,তখন চুপিচুপি তোর রুমে গিয়ে মেসেজটা দিয়েছি।
আমিঃ কিন্তু কেন?

 

 

 

আনিকাঃ কেন মানে!! আয়েশা আপুকে কতদিন হলো দেখি না। তাকে দেখতে মন চাইছিলো,তাই এমনটা করেছি! কি আয়েশা আপু ভুল কিছু করেছি আমি?
আয়েশাঃ না, আনিকা।তুমি ভালোই করেছো। অনেকদিন হলো আমিও তোমাকে দেখি না।
এই বলে দুজন হাটা শুরু করলো।

 

 

আমি কাকতাড়ুয়ার মতো দাড়িয়ে রইলাম। আমিতো ওর বুদ্ধি দেখে রীতিমতো অবাক । ভাবছি ও আমার বোন? ওর মাথায় এতো বুদ্ধি? বুদ্ধিগুলো ঘুমোনোর সময় রাখে কই? ওর থেকে একটু বুদ্ধি চুরি করে নিতে হবে।
আনিকাঃ কি জনাব,,আসবেন নাকি দাড়িয়ে থাকবেন??

 

 

 

আমিঃহ্যা হ্যা,আসছি…..
টিকিট কেটে পার্কের ভিতরে ঢুকলাম। তিনজনে হাটতেছি। সামনে ফুলের বাগান। বাগানের সামনে লিখাছিলো ফুল ছিড়া সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু আনিকা বায়না ধরলো ওখান থেকে ফুল ছিড়ে এনে তাকে দিতে হবে। আচ্ছা মুশকিলতো!!

 

 

 

আমিঃ এইযে ম্যাডাম,,ওই উপরে দেখেন কি লেখা। এখান থেকে ফুল নেওয়া যাবে না।
আনিকাঃ আরে রাখেন আপনার সাইনবোর্ড। ফুল আনতে বলেছি তো ফুল নিয়েই আসবেন।

 

 

 

কি আর করার বায়না যখন ধরেছে তখন ফুল এনে দিতেই হবে। ফুল ছিড়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। গিয়ে একটা একটা করে ফুল ছিড়ছি।এরই মধ্যে মালি এসে হাজির,,,
মালিঃ এ কি! কি করছেন আপনি?

 

আমিঃ কেন ভাই কি হইছে? (বলছি আর ফুল ছিড়তেছি…)
মালিঃ কেন মানে,,ফুল ছিড়া নিষেধ। লেখা আছে দেখেন না?
আমিঃ ইয়ে মানে,,দেখি নাইতো। কোথায় লেখা আছে ভাই? (বলছি আর ফুল ছিড়তেছি….)
মালিঃ ওইযে, দেখেন না!!নাকি পড়তে জানেন না?
আমিঃ ঠিক বলেছেন ভাই পড়তে জানি

 

 

না। কি বলবো আর দুঃখের কথা! ছোটকালে বাবা অনেক মারধর করে স্কুলে পাঠাতো। আমার স্কুলে যাবার মোটেও কোনো ইচ্ছে ছিলোনা। ক্লাস ওয়ানে দুইবার ফেল করছিলাম। ক্লাস থ্রিতে ৩ বার। আর ক্লাস ফাইবে মাত্র ৪ বার।……..
(কান্নাজড়িত কন্ঠ নিয়ে বলছি আর ফুল ছিড়ছি। যেভাবেই হোক,ফুলতো আমাকে নিতেই হবে)
মালিঃ এ কি,,তবুও আপনি ফুল ছিড়ছেন!??( রেগে এবার রবির মতো জ্বলে উঠেছে)

 

 

হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,মোটামুটি ভালোই ফুল তুলে ফেলেছি। আর এ মালিটা যেভাবে চেচামেচি করা শুরু করেছে, তাতে আর বেশিক্ষন এখানে থাকা যাবে না।
আমিঃ ভাই,,ওই আপনাকে কে জানি ডাকতেছে।(পিছন দিকে দেখিয়ে )।
মালি পিছনে তাকাতে না তাকাতে আমি ভীরের মধ্যে হারিয়ে গেলাম। তারপর ফুল এনে আনিকাকে দিলাম। ফুল পেয়ে মহারানী এখন মহাখুশি।
আমিঃঅনেক কষ্টে এনেছি, থ্যাংকস বল।

 

 

আনিকাঃ তোকে থ্যাংকস বলতে আমার বয়ে গেছে। (আবারো হাসিটা দিলো।ওর হাসিটা আমার কাছে অসম্ভব ভালো লাগে।)
তারপর সামনের দিকে হাটা শুরু করলো।

 

 

এবার আনিকা বায়না ধরলো রাইডে উঠবে। তো রাইডটা ছোটদের ছিলো,,তাই আনিকাকে উঠিয়ে আমি আর আয়েশা নিচে দাড়িয়েছিলাম। আনিকা উঠার সময় ফুলগুলো আয়েশার হাতে দিয়ে যায়।
এবার ঘটলো আরেক ঘটনা। আমার জীবনে বাশ ছাড়া কি কিছু নাই!! ঘটনাটা হলো পাশের বাসার আঙ্কেল এসে হাজির।। সে তার ছেলেকে নিয়ে এসেছে পার্কে। আমাকে দেখেই বলা শুরু করলো….
আঙ্কেলঃ কিরে শান্ত! তুই এখানে??

 

 

আমিঃ এইতো,, একটু আনিকাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি।আর আপনি?
আঙ্কেলঃ আমিতো ছেলেটাকে নিয়ে এসেছি।তো তোর সাথে আনিকাকেতো দেখছি না।
(বার বার আয়েশার দিকে তাকাচ্ছে,আর আয়েশার হাতের ফুলের দিকে।বুজলাম আজ বাশটা ভালোভাবেই খাবো।)

 

 

 

আমিঃ আপনার সাথেওতো আপনার ছেলেকে দেখছি না!! (বিরক্তিকর ভাব নিয়ে।)
আঙ্কেলঃও তো রাইডে উঠেছে।
আমিঃ তো আনিকাকে কি এখানে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে আসছি? (এবার একটু বেশিই বিরক্তিকর ভাব)
বুজতে পারলো তার উপস্থিতিতে আমি বিরক্ত হচ্ছি । তাই তাড়াতাড়ি আমাদের থেকে দূরে অবস্থান করলো।

 

 

 

আনিকা আসার পর পার্কের বাকিটা ঘুরে নিলাম। এবার বায়না ধরলো ক্ষিদে পেয়েছে। তো খাওয়ার জন্য হোটেলে ঢুকলাম।
ভাবলাম এবার মনে হয় আয়েশার চেহারা একটু দেখতে পাবো।খাওয়ার সময়তো মুখ খুলতেই হবে। কিন্তু না,, আয়েশা বলছে সে কিছুই খাবে না। সে এতো মানুষের মধ্যে খেতে পারবে না।আর তাছাড়াও সে চেয়ার টেবিলে বসেতো খাবার খাবেই না।
আমিঃ দেখুন আজ একদিন চেয়ার টেবিলে বসে খেলে কিছু হবে না!

 

 

আয়েশাঃ দুঃখিত,শান্ত ভাইয়া।আমি সাময়িক সময়ের জন্য আমার আকিদাহ থেকে বিরত থাকতে পারবো না।
আমি মেয়েটাকে যত দেখেছি ততই অবাক হচ্ছি। এই আধুনিক সভ্যতার সময় এসেও এমন মেয়ে আছে বলে আমার কল্পনার বাহিরে ছিলো।আমাদের মাদ্রাসার মেয়েরাওতো এতো ধার্মিক না।
তবে একটা কথা বুজতে পারলাম। আমি আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলে,

 

 

 

আর উনি কওমি মাদ্রাসায়। সত্যিই এই দুইটা মাদ্রাসার পড়ালেখায় আকাশ পাতাল ব্যবধান।
তারপর আমিও আর কিছু খেলাম না।আনিকা একা একা খাওয়া শেষ করলো।
মাগরিবের আজানের সময় হয়ে এসেছে। আয়েশাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আমরা বাসায় চলে আসলাম।

 

 

বাসার গেট দিয়ে ঢুকার সময় খেয়াল করলাম,পাশের বাসার সেই আঙ্কেলের স্ত্রী বাসা থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। বুজলাম আজ ঘরে সাইক্লোন বা টর্নেডো কিছু না কিছু হবে……..

 

বাসার গেট দিয়ে ঢুকার সময় খেয়াল করলাম,পাশের বাসার সেই আঙ্কেলের স্ত্রী বাসা থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। বুজলাম আজ ঘরে সাইক্লোন বা টর্নেডো কিছু না কিছু হবে।
তারপর আনিকা’কে গেটের সামনে দাড়া করিয়ে সব বুজিয়ে বললাম। বললাম,
আমিঃ দেখ তোর জন্য আজ আমার কপালে ঝাটা আছে।
আনিকাঃ কেন,,আমি কি করলাম!!

 

 

 

আমিঃ কেন মানে! তুই যদি ওই আয়েশাকে না আসতে বলতি তাহলেতো আর আজ আন্টিটা বিচার দিয়ে যেতে পারতো না!! যাইহোক,,দেখ মা মনে হয় অনেক কষ্ট পাইছে,,আর রাগতো আছেই। তুই মা’কে সবকিছু বুজিয়ে বলিস। নাহলে আজকের রাতের খাবার কিন্তু আমার বন্ধ হয়ে যাবে।
আনিকাঃ তাতো ভালো কথাই। (খিল খিল করে হাসছে)
আমিঃ শোন,, আমি মোটেও মজা করার পরিস্থিতিতে নাই। তাই যা বলছি তাই কর।
আনিকাঃ আচ্ছা বাবা! চিন্তা করিসনাতো ,, আমি থাকতে আমার ভাইটার কিছু হবে না।

 

 

তারপর আমি আনিকাকে বাসার গেটের সামনে রেখেই মসজিদে নামাজ পড়তে চলে গেলাম। নামাজ পড়া শেষে মোনাজাতে একটা চাওয়াই ছিলো, যেনো আজ মায়ের হাতে ঝাটা খেতে না হয়।
মসজিদ থেকে বেড়িয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাটছি,আর পাশের বাসার আঙ্কেলকে গালাগালি করতেছি।
আর ভাবতেছি,এগুলো তার স্ত্রীকে বলার কি দরকার ছিলো? আর স্ত্রীকে বলছে ভালো কথা, মা’কে এসব না বললে কি হতো না!!!

 

 

 

মা কি না কি মনে করেছে? জীবনেও যা করি নি,তার দোষ আজ মাথায় নিতে হবে।ধুরু ভালো লাগে না।দুনিয়ার সব বিপদ আমারেই চোখে দেখে কেনো!
এসব ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলাম সেই আঙ্কেলটা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। তাকে দেখে মেজাজটাতো আরো গরম হয়ে গেলো।ভাবলাম মার আমি একা খাবো কেন!

 

 

ওই বেটারে একটু মজা বোঝাই।
কিন্তু মজাটা বোঝাবো কিভাবে? এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম অনেকগুলি নুড়ি পাথর পড়ে আছে। (মাথায় এখন ওই তৃষ্ণার্থ কাকের গল্পের মতো বুদ্ধি ঘোরপাক খাচ্ছে। তবে নুড়িপাথর কোনো কলসিতে ফেলবো না। বেটার টাকে ফেলবো)।তারপর হাতে একটা পাথর তুলে নিলাম।
(টাক ছিলো লোকটি, সম্ভবত সুখ টাক। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলাম আজ বেটার বেলটাকে ফাটিয়ে দুঃখ টাক বানিয়ে দিবো।)

 

 

 

পাথরটি দিলাম বেটার বেলের মধ্যে ছুড়ে। পাথরটি লাগতে না লাগতেই লোকটা জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। চারপাশের সব লোক জড়ো হয়ে গেলো।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করে গলির ভিতরে দৌড়ে পালালাম।
( আর দৌড়েতো আমি মাদ্রাসায় সবসময়ই প্রথম হতাম,তাই কেউ আমাকে ধরতে পারলো না,আর বুজতেও পারলো না পাথরটি কে মেরেছে।)

 

 

 

এক দৌড়ে বাসার গেটের সামনে হাজির। এবার একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবছি লোকটা মনে হয় অনেক ব্যথা পাইছে। মনে এখন নানা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।
একবার মন বলছেঃ না শান্ত তুই এটা ঠিক করিস নাই।
আরেকবার বলছেঃ ঠিকই করছিস। বেটা তার কাজের ফল পাইছে।

 

 

যাইহোক, যা করার করে ফেলেছি। এখন আর ভেবে লাভ নেই। এখন ঘরে গিয়ে দেখি মা আমার জন্য কি সারপ্রাইজ রেখেছে।
তারপর বাসার মধ্যে ঢুকে আমার রুমে চুপিচুপি চলে গেলাম। ঘরের ভিতরে ঢুকে বসতে না বসতে বাতাসে ভেসে এলো গুনগুন কান্নার আওয়াজ। বুজতে পারলাম মা কান্না করছে। আর আনিকা থামানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু মা থামছেই না।

 

 

 

 

গুনগুন করে কেদেই চলেছে। আমিতো অবাক,,মা আমাকে বকা না দিয়ে কান্না করছে! মায়ের কান্না শুনে আমার অন্তরটাও নীরবে কেদে উঠলো।কারন মাকে এর আগে কান্না করতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তাও আজ আমার জন্যই কান্না করছে।
না! এভাবে বসে থাকলে হবে না। মাকে গিয়ে সরি বলতে হবে। আর সবকিছু বুজিয়ে বলতে হবে। মার কান্না সহ্য করতে পারছি না।

 

 

 

তাই নিজেকে শারিরীক ও মানসিক দুইভাবেই প্রস্তুতি করে চলে গেলাম মায়ের রুমে। গিয়েই মায়ের পা ধরে কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললাম,
আমিঃ সরি মা। আমার জন্য তোমাকে আজ কাদতে হচ্ছে।আমাকে মাফ করে দেও মা। আসলে……..
কথা শেষ করতে না করতেই মায়ের পাশে একটা ঝাটা ছিলো ওইটা দিয়ে আমাকে মারা শুরু করলো। মারতেছেতো মারতেছেই ,থামার কোনো নামই নেই।

 

 

উফফফ কি ব্যাথা। এরকম মার অনেক ছোটবেলা খাইছি। তা মায়ের হাতেই।কারন বাবা আমাকে কখনো মারেনি। বাবা সবসময়ই খুব আদর করতো।
যাইহোক,,মার খাচ্ছি আর ভাবছি আজ মা আমার জন্য কান্না করছে, তাই মায়ের মার আমাকে সহ্য করতেই হবে।
চুপ করে একজায়গাতেই দাড়িয়ে রইলাম।তারপর টানা ১০ মিনিট মার খাওয়ার পর মুক্তির দেখা মিললো। মা এবার একটু শান্ত হলো।

 

 

এবার বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষনটি দিতে বড্ড ইচ্ছে করলো,,
(এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।
মার যখন খেয়েছি দরকার হলে আরো খাবো,
তবুও মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে ছাড়বো।)

 

 

 

মনের মধ্যে ভাষনের লাইনগুলি আওড়াতে আওড়াতে নিজের ঘরে চলে এলাম। এসে শরীরটাকে বিছানার সাথে হেলিয়ে দিলাম।উহুহু কি ব্যাথা!
এবার ঘরের দরজার সামনে থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। আরে আশ্চর্যতো।এই মাত্র মার কান্নার আওয়াজ পেলাম,এখন আবার কে হাসছে।
দরজার সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই দেখতে পেলাম আনিকা দাড়িয়ে হাসছে।
এবার রাগান্বিত কন্ঠে বললাম,

 

 

আমিঃ মা কান্না করলো। আর আমাকেও মারলো। এখন তোর হাসি পাচ্ছে??
আনিকাঃ তাতো পাবেই।( হাসি আরো বাড়িয়ে দিলো)
আমিঃ পাবে মানে! তোকে না সবকিছু বুঝিয়ে বলতে বললাম,তুই কিছুই বললি না। তোর জন্য আজ আমাকে মার খেতে হলো।
আনিকাঃ আমার জন্য না জনাব,,আপনি আপনার নিজের দোষেই মার খাইছেন।
আমিঃ মানে!! এখানে আমার দোষ কি?

 

 

আনিকাঃ হ্যা এখানে আপনারই দোষ। (এবারতো হাসিটাকে আরো বাড়িয়ে দিলো।)
আমিঃ শোন ভালোলাগছে না কিন্তু! যা বলার সোজাসোজি বল।
আনিকাঃ মা কান্না করছিলো কেন? জানেন আপনি?
আমিঃ কেন আবার! ওই আন্টিটা বিচার দিয়ে গেলো তাই।

 

 

আনিকাঃ জ্বী না। মা অন্য কারনে কান্না করছিলো।
আমিঃ মানে!!কেন কান্না করছিলো? (আমিতো পুরাই অবাক)
আনিকাঃ মায়ের বিয়ের শাড়িটা যত্ন করে রেখেছিলো। মায়ের অনেক শখ ছিলো বড় ছেলের বউকে মানে আপনার বউকে এটা পড়তে দিবে। কিন্তু ওটা আজ দেখে ছিড়ে গেছে। তা দেখেই মা কান্না করছিলো। আর তখনই আপনি গিয়ে সরি বললেন,,তাই মা ভাবছে শাড়িটা আপনি ছিড়ছেন।(হাসিটা এবারও বাড়িয়ে দিলো।)
আমিঃ তাহলে ওই আন্টিটা??

 

 

আনিকাঃ ওই আন্টিটা কোনো বিচার দেয়নি। উনি এমনেই এসেছিলেন।
কথাটা শোনার পর আমার মাথায়তো বাজ পড়লো। তাহলে আমি মার খেলাম কেন?
এরই মধ্যে আবার আনিকা বলে উঠলো,

 

 

আনিকাঃ আর হ্যা,,ঘুড়তে যাবার আগে আমার জামা বের করতে গিয়ে শাড়িটা কোনোভাবে ছিড়ে যায়।ছিড়লাম আমি আর মার খেলেন আপনি।হাহাহাহা(এবার ওর হাসি কে থামায়।)
বলতে বলতে আমার রুম থেকে চলে গেলো।
আমারতো হার্টএটাকের পালা। কি হলো এসব? কার দোষ কে নিলো?

 

 

আমি কি করেছিলাম এখানে? আমি কেন মার খেলাম? আর ওই আঙ্কেল্টাকেই বা বিনা কারনে মারলাম কেন?
এসব ভাবতে ভাবতে এবার বুজি পাগলই হয়ে যাবো। মাথার চুলগুলি এবার টেনে টেনে পাগলের মতো ছেড়া শুরু করলাম। মাথাটা এবার হ্যাং করা শুরু করছে।
এরই মধ্যে এশারের নামাজের সময় হয়ে গেছে।চারদিকে এশারের নামাজের আজান চলছে।তাই তাড়াতাড়ি ওযু করে নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিলাম। ঘর থেকে যখনই বের হবো,,তখনই দরজার বেলটা বেজে উঠলো। এসময়ে আবার কে আসলো,ভাবতে ভাবতে দরজাটা খুললাম।দরজাটা খুলতেই চমকে গেলাম…..

 

 

 

ঘর থেকে যখনই বের হবো,,তখনই দরজার বেলটা বেজে উঠলো। এসময়ে আবার কে আসলো,ভাবতে ভাবতে দরজাটা খুললাম।দরজাটা খুলতেই চমকে গেলাম।
পাশের বাসার সেই আন্টি এসেছে।
কিন্তু আবার কেন এসেছে?
ওই আঙ্কেল্টাকে আমি ঢিল মেরেছি তা জানতে পারেনিতো?
কিন্তু তা জানবে কিভাবে?আমাকেতো কেউ দেখেনি।

 

 

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আন্টিকেই জিজ্ঞাসা করলাম,
আমিঃ আন্টি,এখন এই রাতে আমাদের বাসায় আসলেন কি মনে করে?
আন্টিঃ আর বলো না বাবা,তোমার আঙ্কেলে খুব ব্যাথা পেয়েছে। একটু বরফ লাগবে,দিতে পারবে বাবা?
আমিঃ কি বলেন আন্টি!আঙ্কেলে ব্যাথা পাইছে!! একটু দাড়ান,এখনই বরফ নিয়ে আসছি। (আমি সম্পূর্ন নিষ্পাপ)
তারপর খুব বিচলিত ভাব নিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রিজ থেকে বরফ এনে হাতে দিলাম।

 

 

 

আমিঃ এই নেন আন্টি। কিন্তু আঙ্কেলে ব্যথা পেলো কিভাবে? (আমি যেনো কিছু জানি না,এই মাত্র আকাশ থেকে পড়লাম)।
আন্টিঃ না,ইয়ে মানে,,তেমন কিছু না। বাসার গেটের সাথে ধাক্কা খেয়েছে।
(কি হলো! আন্টি মিথ্যে বললো কেন? আঙ্কেলকেতো আমি মারলাম। কিন্তু আন্টি অন্য কথা বলছে। কিছুই বুজতে পারলাম না। যাইহোক, কেউতো আর বুজতে পারেনি আমি মেরেছি। এবারের মতো বেচে গেলাম। এতো কিছু ভেবে আর লাভ নেই )
তৎক্ষনাৎ আন্টি বরফ নিয়ে বাসায় চলে গেলো। এরই মধ্যে মা এসে জিজ্ঞাসা করছে,

 

 

 

মাঃ শান্ত,কে এসেছিলোরে?
আমিঃ ওই যে পাশের বাসার সকিনা আন্টি।
মাঃ ওও,তো কি বললো?
আমিঃ ওই তার স্বামী নাকি ব্যথা পাইছে। তাই বরফ নিতে আসছিলো।
মাঃ কি! ব্যথা পাইছে!! কিন্তু কিভাবে?
আমিঃ এতো কিছু জানিনা। তুমি গিয়ে দেখে আসো৷ আমি নামাজে গেলাম।

 

 

 

 

এই বলে নামাজে চলে গেলাম। আর মা সেই আন্টির বাসায় চলে গেলো। নামাজ শেষ করে বাসায় এসে রুমে বসে আছি। ভাললাগছিলো না তাই গজল শুনতেছিলাম। হঠাৎ আনিকা এসে বলে,,
আনিকাঃ ভাইয়া কি হইছে জানিস?
আমিঃ না বললে কিভাবে জানবো?
আনিকাঃ ওইযে পাশের বাসার সেই আঙ্কেলটা নাকি গাঞ্জা বিক্রি করতে গিয়ে ধরা খাইছে। তারপর জনগনে আচ্ছাছে ধোলাই দিছে।
আমিঃ তুই জানলি কিভাবে?

 

 

 

 

আনিকাঃ মা উনাদের বাসায় গেছিলো। মায়ের সাথেতো সকিনা আন্টির খুব ভালো সম্পর্ক। উনি নিজেই বলেছে।
আমিঃ ও আচ্ছা তুই এখন যা।
আনিকা চলে গেলো। এখন বুজতে পারলাম আন্টি মিথ্যে কেন বলেছে। আমি যখন ঢিল মারি তখন আঙ্কেল গাঞ্জা বিক্রি করতে যাচ্ছিলো। ঢিল মারার পর চিৎকার দেওয়ায় সবাই যখন একত্রিত হয় তখন গাঞ্জাটা পাব্লিকের নজরে পড়ে। তখনই ধোলাইটা খায়।
যাইহোক,এখন নিজেকে নিজেই বাহবাহ দিতে মন চাচ্ছে। আমার জন্য এক গাঞ্জাখোর ধোলাই খাইছে।

 

 

আমিতো অসাধারণ একটা কাজ করছি। বাহ,, শান্ত। ইউ আর গ্রেট।তোরতো তুলনাই হয় না।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেলটাতো তোর প্রাপ্য। ( নিজের প্রশংসায় নিজেই মগ্ন)
তারপর রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে দেখি আয়েশা মেসেজ দিয়েছে।
আয়েশাঃ আসসালামু আলাইকুম।
আমিঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম।
আয়েশাঃ বাসায় যেতে কোনো সমস্যা হয়নিতো??

 

 

 

আমিঃ না,,তেমন কিছুই হয়নি।
আয়েশাঃ ওও,,আচ্ছা নামাজ পড়ছেন?
আমিঃ হ্যা পড়েছি। আপনি?
আয়েশাঃ না। কিন্তু কেন পড়িনি দয়া করে তা জিজ্ঞাসা করবেন না।
আমিঃ আচ্ছা,,ঠিক আছে।
(বিষয়টা বুজতে পারলাম। তাই আর এ বিষয়ে কোনো কিছু বললাম না।)

 

 

 

 

তারপর কিছুক্ষন কথা বলে ঘুমিয়ে গেলাম….
এভাবে বহুদিন কেটে গেলো। আয়েশার সাথে কথা বলতে বলতে এক সময় বুজতে পারলাম আমি আয়েশার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি। তারপর আমি একদিন ওকে বললাম।
আমিঃ আয়েশা, একটা কথা বলব?
আয়েশাঃ হ্যা বলুন না। এতে আবার অনুমতি নেবার কি আছে?

 

 

 

 

আমিঃনা মানে,আসলে,,,,,,,,,
আয়েশাঃ হ্যা বলুন না।
আমিঃনা মানে আপনার কি আছে?
আয়েশাঃআমার কি আছে?
আমিঃনা মানে কিছু না।
আয়েশাঃ না না কিছু না কিভাবে হয় ?কি বলতে চেয়েছিলেন বলুন ।

 

 

 

আমিঃযদি কিছু মনে করেন…
আয়েশাঃবলুনতো আগে।
আমিঃআসলে আমি না আপনাকে,,,,,,,,,,
আয়েশাঃ জ্বি বলুন।
আমিঃআমি না আপনাকে পছন্দ করি।

 

 

 

আয়েশাঃহাহাহা, আমি দেখতে কালো। আমাকে পছন্দ করলেন কি দেখে?
আমিঃ দেখুন আমি আপনাকে পছন্দ করি এটা বড় কথা, আপনি সুন্দর না কালো এটা বড় কথা নয়।
( যদিও আয়েশা বলছে সে দেখতে সুন্দর না কিন্তু আনিকা বলেছে আয়েশা নাকি দেখতে অনেক সুন্দর। কিন্তু আমি ওকে আজ পর্যন্ত দেখিনি,সবসময় পর্দায় থাকে।)
আয়েশাঃ শুনুন,আপনার যদি পছন্দ হয়,তবে আপনার বাবা মাকে বলুন।তারাই কোনো না কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন। কারন আমি কোনো হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হতে চাই না।

 

 

 

আমিঃ হ্যা,বুজতে পারছি। তবে এখন যেহেতু বেকার আমি,তাই নিজের পায়ে দাড়িয়ে বলতে হবে। নাহলে,,বাবা মা অনেক প্রশ্ন তুলবে। প্লিজ সে পর্যন্ত আপনি আপনার বাবা মা’কে আপনার বিয়ের ব্যাপারে অন্য কোথাও কথা বলতে না করবেন।
আয়েশাঃ তা আল্লাহই ভালো জানেন। কারন বিয়ে আল্লাহর ইচ্ছেতেই হবে। আপনি চেষ্টা করতে পারেন। আমিও যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।তবে সম্পূর্ণ বিশ্বাস আল্লাহর উপরেই রাখতে হবে।
আমিঃহুম,অবশ্যই। আল্লাহ’ই আমাদের এক করবেন করবেন।ইনশাআল্লাহ।

 

 

 

আয়েশাঃহুম,আল্লাহ যদি চান।
আমিঃআচ্ছা পরে কথা হবে।আল্লাহ হাফিজ।
আয়েশাঃফি-আমানিল্লাহ।
সেদিন কথাটা বলার পর এতটুকু সিউর হলাম যে,আয়েশাও আমাকে পছন্দ করে।কারন পছন্দ যদি না করতো,

 

 

 

তবে আমাকে সরাসরি না করে দিতো। বাবা মা’কে বিয়ের কথা বলতে বলতো না।
তাই আমিও নিজের পায়ে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম অর্থাৎ চাকরি করার জন্য অনেক জায়গায় আপিল করলাম।কিন্তু চাকরিটা তো আর মামার বাড়ির হালুয়া না যে চাওয়া মাত্র পেয়ে যাবো।
অনেক কষ্টের পরও কোনো কাজ হলো না।মাঝখান থেকে গাড়ি ভাড়া গুলো আমায় দিতে হলো। তবুও হাল ছাড়লাম না,চেষ্টা চালিয়ে গেলাম।
একদিন ফজরের নামাজ পড়ে বন্ধুদের সাথে ঘুড়তে বের হয়ে, ঘুরাঘুরি শেষ করে জোহরের নামাজ পড়ে বাসায় আসলাম।

 

 

 

 

বাসায় এসে খাবারে জন্য টেবিলে বসে পড়লাম।টেবিলে খাবারগুলো খুব সুন্দর করে সাজানো ছিলো। আর খাবারগুলো দেখতেও খুব সুস্বাদু মনে হচ্ছিলো। তাই দেরি না করে খাওয়া শুরু করলাম।
খেতে খেতে খেয়াল করলাম, যে খাবারগুলো খাচ্ছি এই খাবারের স্বাদতো মা’র হাতের রান্নার না। তবে খাবারগুলোর স্বাদটা পরিচিতই মনে হচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়লো এটাতো আয়েশার হাতের রান্না।

 

 

 

খেতে খেতে খেয়াল করলাম, যে খাবারগুলো খাচ্ছি এই খাবারের স্বাদতো মা’র হাতের রান্নার না। তবে খাবারগুলোর স্বাদটা পরিচিতই মনে হচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়লো এটাতো আয়েশার হাতের রান্না।
কিন্তু আয়েশা এখানে আসবে কি করে? আর তার রান্নাই বা আসবে কোথা থেকে? তাই একবার ভাবলাম হয়তো মনের ভুল। তাই খাবারে দিকে মনোযোগ দিলাম।
কিন্তু খাবার যতই খাচ্ছি ততই মনে হচ্ছে এটা আয়েশার রান্না করা খাবার। এবার প্রশ্নগুলো খুব জটিলভাবে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
হঠাৎ পিছন থেকে আওয়াজ আসলো,

 

 

 

– “খাবারগুলো কেমন হয়েছে?”
( বুজতে আর বাকি রইলো না আওয়াজটা আয়েশারই। গতবার বলে দিয়েছিলাম খুব সুস্বাদু। কিন্তু মনে মনে ঠিক করলাম এবার আর ভুল করা যাবে না। আয়েশার সাথে একটু মজা করি।)
আমিঃ ছি ছি,,এতো বিচ্ছিরি খাবার কে রান্না করলো? একটুও স্বাদ নেই। খেয়ে আমার মুখটাই নষ্ট হয়ে গেলো।
আয়েশাঃ কি বললেন?( রাগান্বিত কণ্ঠে)

 

 

 

বুজতে পারলাম আয়েশা রেগে গেছে। আর মেয়ে মানুষ রেগে গেলে কি হয় তা আর বলতে হবে না,সবাই জানেন।
তাই তাড়াতাড়ি পিছনে ঘুরে আয়েশার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমিঃ আরে আপনি এখানে! কখন আসলেন?
আয়েশাঃ আগে বলুন আপনি কি বললেন? খাবার বিচ্ছিরি হইছে?(রাগে গজগজ করছে)

 

 

 

আমিঃ না,মানে, ইয়ে,আমি কখন এ কথা বললাম।আমিতো বললাম এতো সুস্বাদু খাবার কে রান্না করলো! তারেতো নোবেল দেওয়া দরকার।
আয়েশাঃ সত্যি বলছেনতো?
আমিঃহ্যা,,সম্পূর্ণ সত্য কথা। দাড়ান,আমি নোবেলটা নিয়ে আসি।

 

 

 

 

আয়েশাঃ হইছে,আর অভিনয় করতে হবে না।তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে নেন।
তারপর পেট ভরে খাবার খেয়ে নিলাম। এবার অনেক ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু আয়েশা যেহেতু এখানে তখন আমাকে ছাদের রুমটাতেই যেতে হবে। তাই রুমটাকে পরিষ্কার করার জন্য আনিকাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলাম।
আনিকা আর আমি দুজন মিলে রুমটা পরিষ্কার করছি……

 

 

 

আমিঃ আনিকা,তোর আয়েশা আপু এখানে আসলো কেনরে? কোনো সমস্যা নাকি?
আনিকাঃ আমারতো মনে হচ্ছে সমস্যা তোর হচ্ছে।
আমিঃ কি!! আমার সমস্যা হবে কেনো?
আনিকাঃ এইযে,তোর রুম ছেড়ে অন্য রুমে আসতে হলো তাই।
আমিঃ শোন পাকনা কথা বাদ দিয়ে,তোকে যেটা জিজ্ঞাসা করছি সেটা বল।
আনিকাঃ তেমন কোনো কারনে আসে নাই। আমাদের দেখতে মন চাচ্ছিলো তাই আসছে।

 

 

 

আমিঃ ওও আচ্ছা।
আনিকাঃ হুম,আর আমাদের বলতে আমাকে আর মাকে। অন্য কারো কথা ভাবিস না।( খিলখিল করে হাসছে)
(ধুরু, মনে একটু লাড্ডু ফুটতেছিলো,তাও শেষ করে দিলো)
আমিঃ আমি কি তোকে বলছি অন্য কারোর কথা? যা এখান থেকে,গিয়ে তোর আয়েশার আপুর সামনে বসে থাক, তোকে প্রান ভরে দেখুক।
আনিকাঃহ্যা যাচ্ছি,যাচ্ছি। তোর এখানে থাকতে আসি নাই।
আনিকা চলে গেলো। এবার চোখ দুটিকে বুজিয়ে একটু স্বপ্নের জগতে হারিয়ে গেলাম।

 

 

 

মোবাইলের এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।চোখ মেলে দেখি আসরের নামাজের সময় হয়েছে।তাই ওযু করতে নিচে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি আয়েশা নামাজ পড়তেছে, যদিও পিছন দিক থেকে দেখছি,তবুও বোঝা যাচ্ছিলো যে আয়েশার মুখে এখন কোনো পর্দা নাই,,মানে মুখটা খোলাই।
তাই চেহারা একটু দেখার জন্য সামনের দিকে যেতে চাইলে আয়েশা খুব দ্রুত সালাম ফিরিয়ে বললো,
আয়েশাঃ দয়া করে এখন এদিকে আসবেন না।আমি এখন নিকাব পরিহিতা নই।
( আমি আর সামনে না গিয়ে সোফায় বসে পড়লাম।)

 

 

 

 

 

আমিঃ আচ্ছা,,এতো পর্দা করার কি কোনো দরকার আছে। আপনি হিজাব পড়তে পারেন না?হিজাবতো পর্দার অংশই।
আয়েশা মনে হয় রেগে গেলো। গলার স্বরটা একটু ভারি করে বললঃ
আয়েশাঃ আপনাকে কে বলেছে হিজাব পর্দার অংশ?
আমিঃ সবাই তো এখন হিজাব পরেই পর্দা করে।

 

 

 

আমি কত হাজি সাহেবদেরকেও দেখেছি
তাদের বউ ও মেয়েকে হিজাব পড়িয়ে
রাখে। আর অনেক হুজুররাওতো বলে মুখ হাত খোলা রাখা যাবে।
আয়েশাঃ মাথায় টুপি আর পাঞ্জাবি/জুব্বা পড়া সুন্নত জেনে হজ্ব করলেই হাজি হওয়া যায় না।
যারা পর্দার মূল অর্থই জানে না তারা হজ্ব
করে কিভাবে? আর হাজিই বা হয় কিভাবে?

 

 

 

আমিঃ তাহলে আলেমরা যে বলে তা কি ভুল?
আয়েশাঃ যেসব আলেম এসব কথা বলে তাদের স্ত্রীদের দেইখেনতো কখনো হাত মুখ খোলা রাখে নাকি?এসব আলেম সমাজে ফেতনা ছড়ানোর জন্য এমনটা বলে। আর আমাদের নবীজি(সা) এসব আলেমদের সম্পর্কে খুব জোড়ালো ভাবে সতর্ক করে গেছেন।
তারপর একটা হাদীস শুনিয়ে দিলো-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

 

 

 

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘শেষ যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব অলীক কথা-বার্তা উপস্থিত করবে, যা না তোমরা শুনেছ না তোমাদের বাপ-দাদা শুনেছে। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে বেঁচে থাকো এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে বাঁচাও। অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকো। যাতে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং তোমাদের বিপথগামী করতে না পারে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৪।

 

 

 

 

(কথা শুনে বুঝতে পারলাম আয়েশার হাদীস সম্পর্কে ভাল জ্ঞান আছে। জ্ঞানী লোক ভয়ংকর হয়, আর মেয়েরা যদি জ্ঞানী হয় তাহলে তো ভয়ংকরের বাপ হয়ে যায়)
আমি আয়েশাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ
আমিঃ তাহলে পর্দার মূল অর্থ কি?

 

 

 

আয়েশা কোরআন থেকে দুটি আয়াত শুনালোঃ
‘‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা ও মুসলিম রমণীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমন্ডলের) উপর
টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। (লম্পটরা তাদেরকে উত্যক্ত করবে না।)
– সূরা আহযাব ৩৩:৫৯।

 

 

 

‘মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে ও লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যা প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের(অন্যান্য) আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (উড়না অথবাচাদর) দ্বারা আবৃত করে।
– সূরা আন-নূর ২৪:৩১।
আয়াত বলার পর আয়েশা প্রশ্ন রাখলোঃ

 

 

 

 

 

আয়েশাঃ এই আয়াত দ্বারা পর্দার ব্যাপারে স্পষ্ট বুঝা যায়। যারা এই আয়াত মানে না অবশ্যই তারা পর্দার ব্যাপারে অজ্ঞ,আর তারা পথভ্রষ্ট । আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার ডিজিটাল ও বাতিল আলেমদের ফেতনা থেকে রক্ষা করুন।আমিন।
পর্দার আলোচনা পুরোপুরি বুঝতে পারলাম। নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে,তাই কথা আর না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজে চলে গেলাম।

 

 

 

নামাজ শেষে হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলাম আয়েশার বলা হাদীস আর আয়াত সম্পর্কে। হুজুর বললো সবকিছু সম্পূর্ণ ঠিক বলেছে। কোনো ভুল নেই।
আমি মনে মনে ভাবলাম,,বাহ আয়েশা ম্যাডামতো বড় একজন আলেমা হইয়া গেছে। যাক ভালোই হলো,,আয়েশাকে বিয়ে করতে পারলে হয়তো অনেক কিছু জানতে পারবো।
শুধুমাত্র চাকরিটা ভেজাল লাগিয়ে দিলো,এখনো বাসায় কিছু বলতে পারেনি।তবুও হাল ছাড়বো না,,চেষ্টা আমাকে করতেই হবে।আল্লাহর উপরে ভরসা রাখলে আল্লাহ ঠিকই ব্যবস্থা করে দিবেন।
তারপর বাসায় এসে দেখি….

 

 

 

 

আমি মনে মনে ভাবলাম,,বাহ আয়েশা ম্যাডামতো বড় একজন আলেমা হইয়া গেছে। যাক ভালোই হলো,,আয়েশাকে বিয়ে করতে পারলে হয়তো অনেক কিছু জানতে পারবো।
শুধুমাত্র চাকরিটা ভেজাল লাগিয়ে দিলো,এখনো বাসায় কিছু বলতে পারেনি।তবুও হাল ছাড়বো না,,চেষ্টা আমাকে করতেই হবে।আল্লাহর উপরে ভরসা রাখলে আল্লাহ ঠিকই ব্যবস্থা করে দিবেন।
তারপর বাসায় এসে দেখি আয়েশা বাসায় যাবার জন্য রেডি হয়ে আছে।মা বললো আয়েশা’কে বাড়ি এগিয়ে দিতে।

 

 

 

আমি আর আনিকা গিয়ে আয়েশাকে তার বাসায় দিয়ে আসলাম।
দেখতে দেখতে রমজান মাস চলে এলো ,এখনো কোনো চাকরির দেখা মিললো না। চাকরিটা মনে হয় না এই কপালে আর জুটবে বলে।
রমজানের প্রথম দিন সেহরি খেয়ে শুয়ে পড়লাম।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মোবাইলটা হাতে নিতেই আয়েশার মেসেজ দেখলাম।
আয়েশাঃ আসসালামুয়ালাইকুম।

 

 

 

 

আমিঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম। কেমন আছেন?
আয়েশাঃ আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। এটা কি মাস জানেন?
আমিঃ কি মাস আবার মে মাস।
আয়েশাঃ আরে আমি সেটা বলছি না। এখন
রমজান মাস। আর সেহরির সময় মেসেজ দিয়েছিলাম রিপ্লাই দিলেন না কেন? রোজা কি রাখেন নি?

 

 

 

 

আমিঃ না! না! রোজা রেখেছি।মোবাইলে চার্জ ছিল না।
আয়েশাঃ ওও, ফোনে সবসময় চার্জ দিয়ে রাখবেন। কখন কারো জরুরি দরকার হলে যেনো সে নিরাশ না হয়।
আমিঃ ওকে ওকে আর হবে না।

 

 

 

আয়েশাঃআর শুনুন এটা রমজান মাস। এই মাসটা এবাদতের মাস এবং এই মাসে বেশি বেশি তাওবা করবেন।আর দোয়া করবেন সবার জন্য।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই মাসে ৪ টি আমলের কথা বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন।
*২টি হলো বান্দা পক্ষ থেকে আল্লাহর জন্য-

 

 

 

১. বেশি বেশি কালেমা পড়া।
২. এস্তেগফার পড়া।
*আর ২টি হলো বান্দার নিজের জন্য-
৩. আল্লাহর নিকট জান্নাত চাওয়া।
৪. জাহান্নাম হতে মুক্তি চাওয়া।

 

 

 

আমিঃ ওকে। আমলগুলো করার চেষ্টা করবো।
আয়েশাঃহুম,অবশ্যই। আর প্রতিদিন কম করে হলেও দুই পাড়া কোরান শরীফ পড়বেন।কি মনে থাকবে তো?
আমিঃ হ্যা, থাকবে।
আয়েশাঃ এখনই কোরান শরীফ তিলাওয়াত করতে বসেন।।
আমিঃএখনি?
আয়েশাঃ হ্যা।
আমিঃআচ্ছা ঠিক আছে।

 

 

 

 

দেখতে দেখতে প্রায় রমজান মাস শেষের দিকে।এ রমজান মাসটা বেশ আমলের সাথেই কাটতেছিলো।আর অন্যরকম একটা ভালোলাগাও কাজ করছে।
একদিন দুপুর ৩ টা বাজে আয়েশা আমাকে ফোন দিলো-
আমিঃআসসালামুয়ালাইকুম।কেমন আছেন?
আয়েশাঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম। আপনি একটু বের হতে পারবেন?

 

 

 

 

আমিঃ কেন? কোথায়?
আয়েশাঃ আপনার বাসার সামনে,আমি রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আমিঃওও,,দাড়ান এখনি আসছি।
তাড়াহুড়ো করে একটা নতুন শার্ট পড়ে ছুটে গেলাম গেটের বাহিরে। গিয়ে দেখি আয়েশা একাই রিকশায় বসে আছে। আমাকে দেখে রিকশায় উঠে বসতে বললো।
রিক্সায় ওঠার পড়……
আমিঃ আজকে হঠাৎ এভাবে রিকশা নিয়ে এলেন যে,জরুরি কোনো কাজ আছে?

 

 

 

 

আয়েশাঃ না তেমন জরুরি কিছু না।
আমিঃ আর এই গরমে রোজা রেখে বোরকা পড়ে বের হয়েছেন আপনারতো কষ্ট হচ্ছে।
আয়েশাঃ এ আর কি কষ্ট! এর চেয়ে কত কষ্ট পরকালে মানুষকে সইতে হবে।
আমিঃ হুম,তাতো ঠিক।
তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। আজ মনে হচ্ছে আয়েশার মনটাও ভালো নেই। কথার মাঝে হতাশা খুজে পাচ্ছি।

 

 

 

আমিঃ আচ্ছা,আমরা যাচ্ছি কোথায়?
আয়েশাঃ বেশি কথা না বলে চুপ করে বসে থাকেন।
বেশ কিছুক্ষণ চলার পরে রিকশা এসে থামলো একটা শপিংমলের সামনে। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিতে যাবো কিন্তু সেটাও আয়েশা দিলো। ভাবলাম আজ ওর সাথে একা প্রথম বের হলাম আর ও আজকেই ভাড়া দিয়ে দিলো।
যাইহোক কিন্তু শপিংমলে নিয়ে আসলো কেন?এখানে আবার কি কাজ?

 

 

 

 

ভাবতে ভাবতে আয়েশার সাথে শপিংমলে ঢুকলাম। আয়েশা আগে হাটছে, আমি তার পিছনে। হঠাৎ একটা পাঞ্জাবির দোকানের সামনে দাড়ালো। তারপর আয়েশা আমার মাপের ৫ টা পাঞ্জাবি-পায়জামা কিনল। বাকি মার্কেট ঘুড়ে আতর কিনলো, টুপি কিনলো, জুতো কিনলো।
(আমি কিছুই বুজতে পারতেছি না হঠাৎ এগুলো কিনে দেওয়ার মানে কি! আমাকে বললেতো আমি নিজেই কিনে নিতে পারতাম।)

 

 

 

তারপর শপিংমল থেকে বের হয়ে আবার একটা রিকশায় উঠে পড়লো। এবার মনে মনে ভাবলাম এবার ভাড়াটা আমিই দিবো। রিকশা চলছে..।
একটা ঝিলের পাড়ে এসে রিকশাকে থামতে বলে নেমে গেলো। এবার ভাড়াটা আমিই দিলাম।

 

 

 

ঝিলের পাড়ে হালকা হালকা বাতাস বইছে।আয়েশা দাঁড়িয়ে আছে, আমিও দাঁড়িয়ে আছি। দুজনে পাশাপাশি। পরিবেশটা অনেক ভালো লাগছিলো যা বলে বুজাতে পারবো না। কিন্তু মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন যেনো ভালোলাগাটা সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে দিচ্ছিলো না।
আয়েশা আজ হঠাৎ কেনো রিকশা নিয়ে আমাদের বাড়ির সামনে আসলো?

 

 

 

 

কেনো শপিংমলে নিয়ে গিয়ে এতো কিছু কিনে দিলে?
কেনই বা ঝিলের পাশে এসে নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে?
প্রশ্নগুলো মনের মধ্যে এক আতংকের সৃষ্টি করলো।
হঠাৎ আয়েশা আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
আয়েশাঃ একটা কথা রাখবেন।?

 

 

 

 

আমিঃ কি কথা বলেন! আমি আপনার কোন কথাটা রাখিনি!
আয়েশাঃ আপনি আগামি কাল থেকে আর শার্ট প্যান্ট পড়বেন না।
আমিঃ এ আবার এমন কি কথা।
আয়েশাঃ এভাবে কথাটা উড়িয়ে দিলে চলবে না।আপনি মুসলমান তাই আপনার পোশাকটাও সুন্নতি তরিকার হওয়াটা জরুরী। যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
আমিঃআচ্ছা।

 

 

 

আয়েশাঃ দেখুন পড়কালে যদি নবী (সাঃ) এর শাফাআত পেতে চান তাহলে তাকে অনুসরণ করতে হবে। তাই আমার একটাই অনুরোধ শার্ট প্যান্ট পড়া বাদ দিবেন আগামি এক সপ্তাহের ভিতরে।
আমিঃআচ্ছা। (বেশি কথা না বলে কথায় শুধু সম্মতি দিয়ে যাচ্ছি।)
আয়েশাঃ দেখুন আপনার বাবা মায়ের অনেক আশা যে আপনাকে তারা আলেম বানাবে। কিন্তু আপনি যদি তাদের আশা পূরন না করেন তাহলে তারা খুব কষ্ট পাবে। আর তাদের কষ্ট দিলে আপনাকে পরকালে শাস্তি পেতে হবে।
আমিঃহুম।

 

 

 

আয়েশাঃ আর শুধু আলেম হলেই হবে না। আমলদার আলেম হতে হবে। আগে নিজে সংশোধন হয়ে অপরকে সংশোধন করতে হবে। আপনারা যদি হাদিস কোরান না শিক্ষা দেন তাহলে কারা দ্বীন ইসলামের খেদমত করবে?
আমিঃ হুমম। কিন্তু আজ এত কথা বলার কারন কি জানতে পারি?
আয়েশাঃ অবশ্যই জানবেন।তার আগে আরো কিছু বলার আছে। অনুমিত দিলে বলব।
আমিঃ হ্যা বলুন।

 

 

 

আয়েশাঃ আর মা-বাবার খেদমত করবেন, তাদের কখনো কষ্ট দিবেন না। আর যত কিছুই হোক নামায ছাড়বেন না।আর জীবনের সব চাওয়া একমাত্র আল্লাহ পাকের কাছে চাইবেন।কারন “””নবি করিম (সাঃ) বলেছেন- যদি তোমাদের জুতার ফিতে ছিড়ে যায় তাহলে সেটা তোমরা আল্লাহর কাছে চাও।”””
আমিঃহ্যা বুঝতে পাড়লাম।কিন্তু কেনো বললেন কথা গুলো আজ?
আয়েশাঃ আগে বলুন কথাগুলো রাখবেন কিনা?
আমিঃ হ্যা রাখব।

 

 

 

আয়েশাঃ আজকে এই কথা গুলো বলার কারন হলো আগামি এক সপ্তাহ পর আমার বিয়ে।
(কথাটা শুনার পর মনে হলো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।)
আমিঃ কি! কি বললেন,বিয়ে মানে??
আয়েশাঃ হ্যা ঠিকই শুনেছেন।

 

 

 

 

আমিঃকিন্তু এমনটাতো হবার কথা ছিলো না।
আয়েশাঃ হ্যা, কিন্তু পরিবারের কাছে আমি অসহায়। আমি কিছুই করতে পাড়ব না।বাবা মা হঠাৎ সবকিছু ঠিক করেছেন। আমি বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারবো না। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন। নিজের অজান্তেই হয়তো আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আর ভাববেন না যে আমি নেই,আমি ছিলাম আপনার পাশে,আছি আপনার পাশে আর ভবিষ্যতেও থাকবো ।

 

 

 

 

এটাই ভাববেন সবসময় । আর এই পাঞ্জাবি-পায়জামার মধ্যে যেটা পছন্দ হয়ে সেটা পড়ে বিয়েতে আসবেন। এটা আমার অনুরোধ আর আশা করি এই শেষ উপহার টুকু রাখবেন।
কথা গুলো বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। আমি পাঞ্জাবিগুলো হাতে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। চারদিকের নিরবতা আমাকে জানিয়ে দিচ্ছিলো এ দুনিয়াতে সবাই সবকিছু পায় না,দুনিয়ার নিয়মই এটা।
এরপর বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে কিছুক্ষন কাঁদলাম, কিছুই ভালো লাগছে না।

 

 

 

কোনোকিছুতেই মন বসছে না। একটা হতাশা আমাকে সারাক্ষনই তাড়া করে বেড়োচ্ছে। কখন যে চোখ থেকে পানি বের হচ্ছে নিজেও বুজতে পারতেছি না।তারপর থেকে আয়েশার সাথে আর আমার কথা হয়নি।
সেদিন থেকে নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে ওকে পাওয়ার জন্য ফরিয়াদ করতাম।
কেটে গেল এভাবে চারদিন……

 

 

 

আজ ঈদের দিন। কিছুই ভালো লাগছে না। প্যান্ট শার্ট সব পুড়িয়ে ফেলেছি। আজকে আয়েশার উপহার দেয়া পাঞ্জাবির মধ্যে থেকে একটা পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়লাম। আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখলাম খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আমাকে। আয়েশার চয়েস আছে বলতে হবে। ভাবতে ভাবতে আবারো চোখের কোনে পানি জমে গেলো।
তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। এক বন্ধু ফোন দিয়ে ডাকলো। গেলাম বন্ধুর সাথে দেখা করতে। গিয়ে দেখলাম ও সিগারেট খাচ্ছে, তো আমি ওকে বললাম।
আমিঃ সিগারেট খাচ্ছিস কেন?
বন্ধুঃ ভাই কষ্টে।

 

 

 

 

আমিঃ আরে ভাই এই খুশির দিনে কষ্ট কিসের?
বন্ধুঃ ভাই ওইযে সাদিয়ার সাথে প্রেম করতাম ওর সাথে ব্রেকাপ হইছে গত তিন দিন আগে। একটা নতুন ছেলের সাথে প্রেম করে। আমি ওকে বললাম তুমি চলে গেলে কি নিয়ে থাকবো। নিলা বলল কেন সিগারেট নিয়া থাকবা।
আমিঃ হাহাহা।তোর প্রেমিকা তোকে নেশার রাস্তা চিনিয়ে দিয়ে চলে গেলো।আর আমি যাকে ভালোবাসতাম সে আমাকে ইসলামের সঠিক পথ চিনিয়ে চলে গেছে।
(আরো কিছু কথপোকথন এর পরে ওর থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম)

 

 

 

আজ আয়েশার বিয়ে বাবা মা সবাই চলে গেছে শুধু আমি রয়ে গেলাম পরে যাব এই কথা বলে।
বৃষ্টি নেমেছে খুব।এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে করছে। তাই ছাদে চলে গেলাম। ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিস্তব্ধ হয়ে ভিজছি। চোখ বেয়ে বোধহয় পানি পড়ছে,বৃষ্টিতো তাই বুজা যাচ্ছে না।

 

 

 

 

 

নিস্তব্ধ হলেও ভিতর থেকে যেনো নিস্তব্ধ নেই,ভিতর থেকে শুধু হাহাকারের প্রতিধ্বনি। বেশিক্ষণ আর এই নিস্তব্ধতা ধরে রাখতে পারলাম না,,হঠাৎ একটা চিৎকার দিয়ে হাটু ঘেরে বসে পড়লাম,,আর ইচ্ছে মতো কান্না শুরু করলাম। এ কান্না কারো কানে পৌছবে না,,এ কান্নার স্বাক্ষী থাকবে শুধু বৃষ্টি। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টের কান্নার মধ্যে এটিই হবে শ্রেষ্ঠ।
বেশকিছুক্ষন পর ঘরে চলে আসলাম।মোবাইলে রিং বাজছে…..

 

 

 

 

কল ধরতেই ওপাশ থেকে আনিকা বলছে ভাইয়া তাড়াতাড়ি আয়েশা আপুদের বাসায় আয়।কখন বললি আসবি,এখনো আসলি না।আর বিছানার উপর যেটা রাখা আছে সেটাই পড়ে আয়।
আনিকা একটা পাঞ্জাবি চয়েস করে রেখে গেছে।ওইটা পড়েই চলে গেলাম বিয়ে বাড়ি।

 

 

 

 

 

আয়েশাদের বিয়ে বাড়িতে যেতেই ওদের গেটের সামনে দাঁড়ানো সবাই বলতে লাগলো জামাই এসেছে জামাই এসেছে,আমি ভাবলাম আমার পিছনে আসছে মনে হয় তাই সাইড দেয়ার জন্য সড়ে দাড়ালাম। আমি দেখি সবাই আমাকে দেখে বলছে জামাই এসেছে। আমি পুরো বোকা হয়ে গেলাম। এরই মধ্যে আনিকা এসে আমাকে পাগড়ী পড়িয়ে দিলো।তারপর সবাই আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলো। বরের আসনে বসাল।
আমিঃএই আনিকা এখানে কি হচ্ছেরে?

 

 

 

আনিকাঃতোকে ওতো কিছু জানতে হবে না।চুপ করে সবাই যা বলে তাই কর।
বিয়ে হলো। বউসহ বাড়িতে আসলাম।বাড়ি পুরো সাজানো।আর আমি আয়েশাদের বাসায় যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাড়ি সাজানো ছিল না, কিন্তু আসার পড় দেখি সব সাজানো।কিন্তু কাকে বিয়ে করলাম আর কেন বিয়ে করলাম,কিছুই বুঝতে পারছি না।মাকে,আনিকাকে, সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম যে কি করলে তোমরা এটা। কিন্তু যাকেই জিজ্ঞাসা করি সেই কিছু না বলে মুচকি হাসে।

 

 

 

 

মা বললো আগে তোর রুমে যা। গেলাম রুমে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে বসে আছে। মানে যিনি বর্তমানে আমার বউ।তারপর কাছে গেলাম, গিয়ে দেখি মেয়েটা ঘোমটা লম্বা করে দিয়ে বসে আছে। এখন মেয়েটাকে দেখবো কিভাবে? ঘোমটা সরাবো যে লজ্জা লাগছে,তাও সরালাম।সরিয়ে দেখলাম এক অপুর্ব সুন্দরী মেয়ে বসে আছে। মেয়ে দেখেছি কিন্তু এত সুন্দর মেয়ে কখনো দেখি নি।আমি মেয়েটাকে নাম জিজ্ঞেস করলাম।
আমিঃআচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি?

 

 

 

 

বউঃ নামতো আগে থেকেই জানেন।
আমিঃনা আমিতো জানি না। (গলার আওয়াজটা পরিচিত লাগছে)
বউঃ আপনি কেমন পুরুষ?যাকে বিয়ে করলেন তার নামটাও জানেন না?
আমিঃনা…

 

 

 

বউঃ আর জেনেই বা লাভ কি! ভালোবাসছেন একজন মেয়েকেই, তাও আবার তাকে না দেখেই।
এবার আমার মাথায় ঘন্টা বাজলো যে এই মেয়েটা জানলো কিভাবে? একটু চিন্তা করার পর বুজলাম এই কন্ঠ কার।
আমিঃআপনি আয়েশা তাই না?

 

 

 

আয়েশাঃ হ্যা জামাই।
( আমি ভাবতেও পারিনি আয়েশা এতোটা সুন্দরী।)
আয়েশাঃআচ্ছা,চলুন দু রাকাত নামাজ আদায় করি আগে।
আমিঃতাতো করব’ই,কারন যাকে আল্লাহ পাকের কাছে চেয়েছি আজ তাকেই পেয়েছি।
———-সমাপ্ত———-

Tags: ইসলামিক উপন্যাস ডাউনলোডইসলামিক গল্পইসলামিক গল্প উপন্যাসইসলামিক গল্প নতুনইসলামিক গল্প পর্দাইসলামিক গল্প পর্দা নিয়েইসলামিক ছোট গল্পইসলামিক বাস্তব গল্প নামাজ নিয়েনীল ডায়েরিনীল ডায়েরি (ইসলামিক গল্প)বাংলা ইসলামিক গল্পবোরকা পড়া মেয়েমজার ইসলামিক গল্প

Related Posts

খলিফা হারুনুর রশিদ এর একটি শিক্ষনীয় ঘটনা
Islamic Story

খলিফা হারুনুর রশিদ এর একটি শিক্ষনীয় ঘটনা

November 19, 2022
মায়াজাল (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

মায়াজাল (ইসলামিক গল্প)

April 29, 2022
শ্যামপরী (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

শ্যামপরী (ইসলামিক গল্প)

May 20, 2022
অপেক্ষা  (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

অপেক্ষা (ইসলামিক গল্প)

April 26, 2022
আবৃত মুক্তা  (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

আবৃত মুক্তা (ইসলামিক গল্প)

April 28, 2022
বেহেশতী আলোয় আলোকিত মন্দ মানুষ (ইসলামিক গল্প)
Islamic Story

বেহেশতী আলোয় আলোকিত মন্দ মানুষ (ইসলামিক গল্প)

April 27, 2022
Next Post
বেহেশতী আলোয় আলোকিত মন্দ মানুষ (ইসলামিক গল্প)

বেহেশতী আলোয় আলোকিত মন্দ মানুষ (ইসলামিক গল্প)

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Posts

  • কাউকে মেরি-ক্রিস্মাস বা শুভ বড়দিন উইশ করার আগে নিচের আয়াত গুলো পড়ে দেখুন December 27, 2022
  • মাত্র ৪০ দিনে নিজের জীবন পরিবর্তনের ২০টি চ্যালেঞ্জ- November 19, 2022
  • খলিফা হারুনুর রশিদ এর একটি শিক্ষনীয় ঘটনা November 19, 2022
  • জান্নাতি মৃত্যুর ১২ টি লক্ষণ November 19, 2022
  • নামাজের বৈজ্ঞানিক উপকারীতা: November 18, 2022

Categories

  • INTEREST-ING (79)
  • Islamic Story (26)
  • Islamic-Drama (5)
  • Quran-Translation (4)
Islamic Path

We bring you the best article for you. stay with us and stay happy. thank you.

Categories

  • INTEREST-ING
  • Islamic Story
  • Islamic-Drama
  • Quran-Translation

Recent News

  • কাউকে মেরি-ক্রিস্মাস বা শুভ বড়দিন উইশ করার আগে নিচের আয়াত গুলো পড়ে দেখুন
  • মাত্র ৪০ দিনে নিজের জীবন পরিবর্তনের ২০টি চ্যালেঞ্জ-
  • খলিফা হারুনুর রশিদ এর একটি শিক্ষনীয় ঘটনা
  • Privacy Policy
  • Terms and Condition
  • Contract Us

© 2021 Easy Path of Islam. Website design and Develop by Skylark It.

No Result
View All Result
  • About Us
  • Blog
  • Contract Us
  • Home
  • Privacy Policy
  • Sample Page
  • Terms & Conditions

© 2021 Easy Path of Islam. Website design and Develop by Skylark It.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password? Sign Up

Create New Account!

Fill the forms below to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
x