ইতিকাফ
ইতিকাফ অর্থ কীঃ-?
ইতকাফ আরবি ‘আকফ’ মূল ধাতু থেকে গঠিত একটি শব্দ। আকফ শব্দের অর্থ হলো অবস্থান করা। ইতিকাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে স্থির থাকা, আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা।
ইতিকাফ কাকে বলেঃ-?
শরিয়তের পরিভাষায় নির্ধারিত সময়ে সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে পার্থিব ও জাগতিক সব ধরনের সংস্পর্শ ত্যাগ করে মসজিদে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে।
ইতিকাফ কতো প্রকারঃ-?
ইসলামী শরীয়তে ইতিকাফ ৩ প্রকার:
১|| সুন্নাত ইতিকাফঃ
রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা।
এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।
২|| ওয়াজিব ইতিকাফঃ
মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে, আমার অমুক কাজ সমাধা হলে আমি এত দিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল,
আমি এত দিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যত দিন শর্ত করা হবে তত দিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
৩|| নফল ইতিকাফঃ সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করা নফল। এর নির্ধারিত কোন মেয়াদ নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। সাওম পালন করা শর্ত নয়।
ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থানঃ-?
ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো বাইতুল্লাহ শরিফ এবং বাইতুল্লাহ শরিফের পর মসজিদে নববি। এরপর যথাক্রমে বাইতুল মাকদিস বা মুকাদ্দাস, জুমা আদায় করা হয় এমন মসজিদ, মহল্লার যে মসজিদে নামাজির সংখ্যা বেশি হয় সে মসজিদ।
ইতিকাফের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্যঃ-?
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) বলেন, মসজিদে ইতিকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা।
সেই সাথে চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ইতিকাফ হলো ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের একটি সর্বোত্তম উপায়।
এ জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাসুল (সা.) নিজে ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিরাসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এই সুন্নতের ওপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমল করে গিয়েছেন। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা : ২/৪২)
এছাড়া, ইতিকাফ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) এর কথা উল্লেখ করে ইরশাদ হয়েছে যে,
‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৫)।
সেই সাথে ইতিকাফ সম্পর্কে হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এর মধ্যে দুটি হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো—
১. ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করতেন। (মুসলিম, হাদিস নং-১১৭১)।
মদিনায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছরই ইতিকাফ পালন করেছেন এবং শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি রমজান মাসে ইতিকাফ ছাড়েননি।
২. আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- প্রতি রমজানের ১০ দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করতেন। তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান।’
(বুখারি, হাদিস নং-১৯০৩)।
ইতিকাফের গুরুত্ব অনেক বেশি:
হজরত আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) আজীবন রমজানের শেষ দশকগুলো ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁর বিবিগণ ইতিকাফ করতেন।
(বুখারি ও মুসলিম; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯)।
মহল্লার সবাইকেই কী ইতিকাফ করা লাগবেঃ-?
রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফমাহে রমজানের শেষ দশকে অর্থাৎ বিশ রমজান নিয়তসহ সূর্যাস্তের আগে মসজিদে প্রবেশ করে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা বা ইতিকাফ করাই হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া।
অর্থাৎ মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তি ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। মহল্লাবাসীর কেউ যদি ইতিকাফ না করে, তাহলে সবাই গোনাহগার হবে।
ইতিকাফ এর ফজিলতঃ-?
ইতিকাফ দ্বারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।
আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহে রমজানের শেষ দশকে আজীবন ইতিকাফ করতেন।’ (তিরমিজি : ৭৯০)।
ইতিকাফকারীর জন্য হজ ও ওমরার সওয়াবইমাম বায়হাকি বর্ণনা করেন, হুসাইন ইবনে আলী (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, সে যেন দুটি হজ ও দুটি ওমরা করেছে।’ (কাশফুল গুম্মাহ : ১/২১২)।
ইতিকাফকারী আল্লাহর মেহমানযারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করে, তাদেরকে আল্লাহতায়ালা মেহমান হিসেবে গ্রহণ করেন।
তখন তারা যা দোয়া করে, আল্লাহতায়ালা তা কবুল করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ইতিকাফকারী ইতিকাফের কারণে গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায় এবং সব নেকির সওয়াব অর্জন করে।’(আল মুগনি : ৩/৪৫৫)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেছেন, সে ব্যক্তি গোনাহসমূহ হতে বিরত থাকে এবং তার জন্যে নেকিসমূহ লেখা হয় ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে বাইরে থেকে যাবতীয় নেক কাজ করে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস-১৭৮১)
ইতিকাফকারীর জন্য জান্নাতে মহল তৈরি যারা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশে নিজের আরাম-আয়েশ এবং আলিশান ঘরবাড়ি ত্যাগ করে অল্প সময়ের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা বেহেশতে তাদের জন্য মনোরম মহল তৈরি করবেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে জামাত প্রতিষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে ইতিকাফে থাকবে, নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াত ছাড়া কোনো কথা বলবে না, তার জন্য বেহেশতে মহল তৈরি করা আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যাবে।’ (কাশফুল গুম্মাহ : ১/২১২)।
ইতিকাফের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ-?
রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদরপ্রাপ্তির মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ। যে ব্যক্তি উক্ত দিনগুলোতে ইতিকাফ করবে, তিনি নিশ্চয়ই ‘লাইলাতুল কদরের’ ফজিলত লাভ করবে।
আল্লামা হাফেজ ইবনে রজব (র:) বলেছেন,
‘ইতিকাফের উদ্দেশ্য হল সৃষ্টির সাথে সাময়িকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লাহর সাথে পরিচয় যত দৃঢ় হবে, সম্পর্ক ও ভালোবাসা ততো গভীর হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে।’
ইতিকাফের শর্তসমুহঃ-
১.মুসলমান হওয়া
২. পাগল না হওয়া
৩. বালেগ হওয়া
৪. মসজিদে ইতিকাফ করা
৫. ইতিকাফের নিয়ত করা
৬. ইতিকাফকারী সর্বদা জানাবাত (বা মহিলা হলে হায়েজ নেফাস) থেকে পবিত্র থাকা
৭. রোজা রাখা।
ইতিকাফ অবস্থায় যা করণীয়ঃ-
১. বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা,
২. কোরআন তিলাওয়াত করা,
৩. দ্বীনি আলোচনা করা ও শোনা,
৪. আল্লাহর জিকির করা,
৫. দোয়া করা,
৬. ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা।
ইতিকাফ অবস্থায় যা বর্জনীয়ঃ-
১. একেবারেই চুপচাপ বসে থাকা,
২. ঝগড়া-ঝাটি বা অনর্থক কথাবার্তা বলা,
৩. গীবত বা পরনিন্দা করা,
৪. মালপত্র মসজিদে এনে বেচা-কেনা করা।
যেসব কারণে ইতিকাফ ভেঙে যায় :
১. ওজরবশত বের হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলম্ব করা,
২. বিনা ওজরে মসজিদের বাহিরে যাওয়া,
৩. সহবাস করা,
৪. অসুস্থতা বা ভয়ের কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।
ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বৈধঃ-
১. মসজিদে পানাহার করা
২. শৌচকর্ম বা পেশাব-পায়খানার জন্য বাইরে যাওয়া
৩. ফরয গোসলের জন্য বাইরে যাওয়া
৪. জুমার নামাজের জন্য এতটুকু সময় নিয়ে বের হওয়া যাতে জামে মসজিদে গিয়ে খুতবার পূর্বে ২/৪ রাকাত সুন্নাত
আদায় করতে পারে
৫. আজান দেওয়ার জন্য বাহিরে যাওয়া।
লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি ও এ রাতের ঘোষিত ফজিলত লাভে ইতেকাফের চেয়ে উত্তম কোনো উপায় নেই। তাই এই সুযোগকে যথাযথ মূল্যায়ন করে যথাযথ কল্যাণ লাভে ধন্য হওয়া যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৪০, ২/৪৪৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৫১৫)
রাসুল (সা.) ইতিকাফ থাকাকালে আল্লাহর স্মরণে পূর্ণ মনোনিবেশ করতেন। তিনি সারাক্ষণ মসজিদে অবস্থান করতেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হতেন না। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন তিনি ইতিকাফে থাকতেন তখন প্রয়োজন ছাড়া বাসায় আসতেন না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৯)
একটি প্রচলিত ভুলঃ-
শরিয়ত মতে, পারিশ্রমিক দিয়ে ইতিকাফ করানো যায় না। কিছু এলাকায় দেখা যায়, রমজানের শেষ দশ দিনে এলাকার কেউ ইতিকাফ না করলে কোনো ব্যক্তিকে খাবার ও পারিশ্রমিক দিয়ে ইতিকাফ করানো হয়।
কিন্তু এ নিয়মে ইতিকাফ করানো শুদ্ধ নয়। ইতিকাফ অবিনিময়যোগ্য একটি ইবাদত। তাই ইতিকাফের জন্য বিনিময় নেওয়াও জায়েয নেই।
নারীদের ইতিকাফঃ
ইতিকাফ শুধু পুরুষের জন্য নয়। নারীরাও কিন্তু ইতিকাফ করতে পারেন। হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সহধর্মিণীরা ইতিকাফ করতেন।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত নবী করিম (সা.) তার ওফাত পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ করতেন। তার ওফাতের পর তার স্ত্রীরা ইতিকাফ করেছেন। (সহিহ বোখারি: ২০২৬ ও সহিহ মুসলিম: ১১৭২)
মাসয়ালা: মহিলাদের নামাজের স্থান তাদের ঘরের অন্দরমহল, মসজিদ নয়। কিন্তু মহিলারা সওয়াবের ক্ষেত্রে ঘরে নামাজ পড়ে ও ঘরে ইতিকাফ করে পুরুষদের মসজিদে নামাজ পড়ার সমপরিমাণ সওয়াবের অধিকারী বলে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ অর্থে মহিলাদের ঘরকে মসজিদের সাদৃশ্য আখ্যা দেয়া হয়েছে। যেন মহিলারা বেশি সওয়াব হাসিল করার আশায় মসজিদে আসার জন্য উদগ্রিব না হয়। মসজিদে গিয়ে শেষ ১০ দিন ইতিকাফ সুন্নতে
মোয়াক্কাদার হুকুম পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য নয়। সুতরাং মহিলারা চাই ঘরে ইতিকাফ করুক চাই মসজিদে পুরুষদের দায়িত্ব আদায় হবে না। তবে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি মসজিদে ইতিকাফ করে তাহলে গ্রামবাসীর পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। (সহহি বোখারি, হাদিস: ২০৩৩, উমদাতুল কারী: ১১/১৪৮, বাদায়েউস সানায়ে: ২/১১৩, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৩/১৪৫)
মাসয়ালা: মহিলারা ঘরে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন। যদি আগে থেকেই ঘরে নামাজের জন্য কোনো স্থান নির্ধারিত না থাকে তাহলে ইতিকাফের জন্য একটি স্থান নির্ধারিত করে নেবেন। সেখানেই ইতিকাফ করবেন। (হেদায়া: ১/২৩০, আলমগীরি: ১/২১১)
মাসয়ালা: রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া, তবে নারীদের জন্য তা মুস্তাহাব।
মাসয়ালা: বিবাহিত নারীকে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ বা অন্য সময়ের নফল ইতিকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। স্বামীদের উচিত, যুক্তিসঙ্গত, গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ দেয়া। এতে কিন্তু উভয়ই সওয়াব পাবেন। (শামী: ৩/৪২৯, আলমগীরি: ১/২১১)
মাসয়ালা: স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা দিলেও সে বাধা মানা স্ত্রীর জন্য জরুরি নয়। (শামী: ৩/৪২৮, আলমগীরি: ১/২১১)
মাসয়ালা: ইতিকাফ অবস্থায় (রাতেও) স্বামী-স্ত্রী মেলামেশা করা যাবে না। করলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। (সূরা বাকারা: ১৮৭, বাদায়ে: ২/২৮৫, শামী: ৩/৪৪২)
মাসয়ালা: মহিলাদের ইতিকাফের জন্য হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। হায়েজ, নেফাস অবস্থায় ইতিকাফ সহিহ হয় না। (বাদায়ে: ২/২৭৪, আলমগীরি: ১/২১১)
মাসয়ালা: মহিলাদের ইতিকাফে বসার আগেই হায়েজ-নেফাসের দিন-তারিখ হিসাব করে বসা উচিত। যাতে ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে না যায়। তবে কারোর রমজানের শেষ দশকে পিরিয়ড হওয়ার নিয়ম থাকলে তিনি পিরিয়ড শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল ইতিকাফ করতেই পারেন।
মাসয়ালা: ওষুধ-বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা রাখলে, ইতিকাফ করলে রোজা ও ইতিকাফ সহিহ হবে।
মাসয়ালা: ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরে শুধু একদিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫০২)
মাসয়ালা: মহিলারা ঘরের যে স্থানটিকে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত করবেন তা মসজিদের মতো গণ্য হবে। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া তারা সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে গেলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। (আলমগীরি: ১/২১১, বাদায়ে: ২/২৮২)
মাসয়ালা: মানবিক প্রয়োজন বলতে বুঝায়, প্রস্রাব-পায়খানা। সুতরাং ইতিকাফ অবস্থায় মহিলারা প্রস্রাব-পায়খানার জন্য ইতিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবেন। অজুর জন্য বাইরে যেতে পারবেন।
মহিলারা খুব কমই ইতিকাফ করেন। অথচ ইতিকাফ অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। মহিলাদের জন্য ইতেকাফ খুব সহজও। কারণ তারা ঘরেই ইতিকাফ করবেন। ফলে সংসারের খোঁজখবরও নিতে পারবেন। সংসার ঠিক রেখে তাদের ইতিকাফও হয়ে যাবে।
সুতরাং এমন সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই উচিত নয়। নারীদের মধ্যে ইতিকাফের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা উচিত। পুরুষদের উচিত নারীদের ইতিকাফের জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং সুযোগ তৈরি করে দেয়া। তাহলে পুরুষরাও সওয়াব পাবেন।
👉 মুসলিম হয়েও জাহান্নামে যাবে যারা!:
👉 জেনে নিন: পশু জবেহ করার সঠিক পদ্ধতি: