যারা খুব বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন না,
তাদের জন্য সহজ একটি আমল:
(১) সুরা ইখলাস তিনবার পড়লে একবার কুরআন খতম দেওয়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়ঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ইখলাস সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটা ক্বুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।”
(সহীহ মুসলিমঃ ৮১২, তিরমিযীঃ ২৮৯৯।)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যাক্তি অপর এক ব্যাক্তিকে বারবার “ইখলাস” সূরাটি তিলাওয়াত করতে শুনল। (সে বার বার তা মুখে উচ্চারন করছিল)। সকাল বেলা সে ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়ে তার নিকট এ ব্যাপারটি উল্লেখ করল।
সে ব্যাক্তিটি যেন সূরা ইখলাসের (মহত্তকে) কম করে দেখছিল। এই প্রেক্ষিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে মহান সত্তার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি! এই সূরাটি মর্যাদার দিক দিয়ে অবশ্যই কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ। [সহীহ বুখারী ৬৮৭০]
(২) সুরা ইখলাস দশবার পড়ার ফযীলতঃ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে”। [সহীহ আল-জামি আস-সগীর ৬৪৭২]
রাসূলুল্লাহ্ (সঃ ) আরও বলেছেন–” যে ব্যক্তি সূরাহ ইখলাস ১০ বার পড়বে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করবেন,যে ২০ বার পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতে দুটি প্রাসাদ তৈরি করবেন এবং যে ব্যক্তি ৩০ বার পাঠ করবে তার জন্য আল্লাহ্ তিনটি প্রাসাদ তৈরি করবেন।”
এ কথা শুনে উমার বিন খাত্ত্বাব (রাদিয়াল্লাহু আ’নহু) বললেন, ‘তাহলে আমরা বেশি বেশি করে পড়ব হে আল্লাহর রাসূল!’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আল্লাহও বেশি দানশীল ও বেশি পবিত্র।”
–[আহমাদ ১৫৬১০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৫৮৯,দারিমী-৩৪৯২, শায়খ আলবানী বলেনঃ এই সানাদটি সহীহ এবং রিজাল সিক্বাত , বুখারী ও মুসলিমের রিজাল।)]
(৩) রাতের বেলা সুরা ইখলাস পড়া মুস্তাহাবঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাহাবীদেরকে বললেন, “তোমরা কি রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে পারনা?” প্রস্তাবটি সাহাবাদের কাছে কঠিন মনে হল। তাই তাঁরা বলে উঠলেন, “হে আল্লাহর রসুল! আমাদের মধ্যে এই কাজ কে করতে পারবে?”
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, “ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহা’দ, আল্লাহুস স্বামাদ (সুরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।” (অর্থাৎ, এই সুরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।) (সহীহ বুখারীঃ ৫০১৫, নাসায়ীঃ ৯৯৫, আবু দাউদ ১৪৬১।)
(৪) যে ব্যক্তি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসবে, এই ভালোবাসা তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেঃ
এক সাহাবী এসে বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আমি এই (সুরা) ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহা’দকে ভালবাসি।” আল্লাহর রাসুল বললেন, “এই ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।”
(সহীহ বুখারীঃ ৭৭৪, তিরমিযীঃ ২৯০১, মুসনাদে আহমাদঃ ১২০২৪।)
👉 সাহাবাদের ২৫ টি প্রশ্ন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তর:
👉 বিয়ে না হওয়া নিয়ে ডিপ্রেশন?:
(৫) মুসনাদে আবী ইয়ালায় হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ আমরা তাবুকের যুদ্ধ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে ছিলাম। সূর্য এমন স্বচ্ছ, উজ্জ্বল ও পরিস্কারভাবে উদিত হলো যে, ইতিপূর্বে কখনো এমনভাবে সূর্য উদতি হতে দেখা যায়নি।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে হযরত জিবরাঈল (আঃ) এলে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আজ এ রকম উজ্জ্বল দীপ্তির সাথে সূর্যোদয়ের কারণ কি?”হযরত জিবরাঈল (আঃ) উত্তরে বললেনঃ “আজ মদিনায় মুআ’বিয়া ইবনে মুআ’বিয়ার (রাঃ) ইন্তেকাল হয়েছে। তাঁর জানাযার নামাযে অংশগ্রহনের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সত্তর হাজার ফেরেশতা আসমান থেকে পাঠিয়েছেন”
রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রশ্ন করলেনঃ “তাঁর (মর্যাদা) কোন আমলের কারণে এরূপ হয়েছে?”
জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ ” তিনি দিন রাত সব সময় চলাফেয়ায় উঠা বসায় সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। আপনি যদি তাঁর জানাযার নামাযে হাজির হতে চান তবে চলুন, আমি জমীন সংকীর্ণ করে দিচ্ছি। ” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হ্যা, তাই ভাল”
অতপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইবনে মুআ’বিয়া (রাঃ) এর জানাযার নামায আদায় করলেন।”
মুসনাদে আবী ইয়ালায় অন্য একটি সনদে বর্ণিত হয়েছেঃ
রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইবনে মু’আবিয়ার জানাযায় তাঁর পিছনে ফেরেশতাদের দুটি কাতার বা সারি দেখতে পেলেন। প্রত্যেক সারিতে সত্তর হাজার ফেরেশতা ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “মুআ’বিয়ার”(রাঃ) এরূপ মর্যাদার কারণ কি?” জবাবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেনঃ সূরা ইখলাসের প্রতি তাঁর বিশেষ ভালবাসা এবং উঠতে বসতে, চলতে ফিরতে, আসতে ও যেতে এ সূরাটি পাঠ করাই তাঁর এ মর্যাদার কারণ।
[তাফসীর ইবনে কাসির(সূরা ইখলাস), বায়হাকী(দালাইলুন নবুওয়াত ৫/২৯৬),মুসনাদে আবী ইয়ালা, দুররে মানসূর ]
(৬) পূর্ণ রাত কিয়ামুল লাইলের সওয়াব যদি ২৫ বার পড়া হয় (২৫ * ৪ =১০০ আয়াত )
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“যে ব্যক্তি রাতে এক শো আয়াত পাঠ করল,
তার জন্য পূর্ণ রাতের কিয়াম লিখা হবে”। [আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/১১), দারামি: (৩৪৫০), আল-বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে: (৬৪৬৮)]
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “দশ আয়াত দ্বারা যে কিয়াম করবে, তাকে গাফেলদের মধ্যে গণ্য করা হবে না, আর যে এক শো আয়াত দ্বারা কিয়াম করবে তাকে অনুগতদের মধ্যে গণ্য করা হবে,
আর যে এক হাজার আয়াত দ্বারা কিয়াম করবে তাকে (কিন্তার* এর) প্রাচূর্যের অধিকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে”। [আবু দাউদ: (১৩৯৮), ইব্ন মাজাহ: (২৫৭২), ইব্ন খুজাইমাহ: (১১৪৪), দারামি: (৩৪৪৪), হাকেম: (২০৪১), আল-বানি ‘সহিহ তারগিব ওয়া তারহিব’: (৬৩৯) ]
*অনেক আলেম বলেছেন কিন্তার হচ্ছে ৪ হাজার স্বর্ণমূদ্রা
সূরা ইখলাস ২৫০ বার (=১০০০ আয়াত) পড়লে ৪ হাজার স্বর্ণমূদ্রা দানের সওয়াব + জান্নাতে ২৫ টি প্রাসাদ + ৮৩ বার কুরআন খতমের সওয়াব লাভ করা যাবে
👉 কোন সময়ে আল্লাহ ‘তালা পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন?:
👉 জান্নাতিদের জন্য কি কি নেয়ামত অপেক্ষা করছে?:
👉 হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে কিভাবে দোয়া চাইতে হয়?: