সুমাইয়া (রা.) এর করুণ কাহিনী:(যে মৃত্যু বিজয় আনে)
আরবের আগুন ঝরা মধ্যাহ্ন। উর্ধ্বাকাশ থেকে মরু-সূর্য যেন আগুন বৃষ্টি করছে।
মরুর লু’ হাওয়া আগুনের দাব-দাহ নিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকটা। এমনি সময় আগুন ঝরা মরুভূমির বুকে নির্যাতন চলছে এক নারীর উপর-
সুমাইয়া (রাঃ) এর উপর। ইসলাম প্রচারের শুরুতেই যাঁরা রাসূলের (সাঃ) এর আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন, সুমাইয়া (রাঃ) তাঁদেরই একজন। সুমাইয়া (রাঃ)
এর নারী দেহ ভংগুর, স্পর্শকাতুরে, কিন্তু আত্মা টা অজেয়। বক্ষে তাঁর বিশ্বাস-ঈমানের দুর্জয় শক্তি ও সাহস। সে প্রাণ বহ্নি নির্বাপিত হবার মত নয়।
সুমাইয়া (রাঃ) এর উপর এ নির্যাতন কেন? কেন তাঁকে এই প্রখর মধ্যাহ্নে সূর্যের বহ্নিতলে ক্রুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে?
তাঁর অপরাধ, এক আল্লাহকে প্রভু হিসাবে স্বীকার করেছেন, তাঁর যুগ ধরে পূজ্য লাত ওজ্জা-হোবলদের বিরোধিতা করেছেন,
তাঁর জীবন মৃত্যু-সাধনা সব কিছুই নিবেদন করেছেন আল্লাহর নামে। অমানুষিক নির্যাতনেও সুমাইয়া (রাঃ) অচল অটল।
তাঁর দেহ নির্যাতন নিপীরনে জর্জরিত হোক, তাঁর কোমল দেহ পুড়ে ছাই হয়ে যাক, তবু অসত্যের কাছে,
অত্যাচারের কাছে তাঁর অমর আত্মা কখনও নতি স্বীকার করবেনা। এত কষ্ট দিয়েও শত্রুর মন টললো না।
ইসলামের শত্রু আবু জাহল সুমাইয়া (রাঃ) এর অবিচল নিষ্ঠা, অপূর্ব সাহস-সহিষ্ণুতা ও দৃঢ়তা দেখে অস্থির হয়ে তাঁর দিকে বর্শা ছুঁড়ে মারল।
বর্শা গিয়ে সুমাইয়া (রাঃ) এর নিম্নাংগ ভেদ করল। সুমাইয়া (রাঃ)এর দেহ ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ল। তাঁর মৃত্যুজয়ী আত্মা চলে গেল জান্নাতে। দু’মুঠো মাটির দেহ তাঁর আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেল।
সুমাইয়া (রাঃ) এর পবিত্র রক্তে আরবের মাটি রঞ্জিত হলো-সেই রক্তে উত্তপ্ত হলো ভবিষ্যতের শত সহস্র শাহাদাত-আত্মত্যাগের বীজ।
সত্যের জন্য উৎসর্গিত প্রাণ যাঁর, মৃত্যুতে তাঁর কিসের ভয়, কিসের শংকা। সুমাইয়া (রাঃ) এর কন্যা হযরত উমামা (রাঃ) এর উপরও চলল অকথ্য নির্যাতন।
তপ্তবালুর উপর-পাথরের উপর তাঁকে জোর করে শুইয়ে রাখা হতো। উত্তপ্ত মরুর সূর্য প্রখর কিরণে তাকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতো।
মধ্যাহ্নে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো উন্মুক্ত মরুপ্রান্তরে। উষ্ণ লু-হাওয়া তাঁর সর্বাঙ্গ ঝলসে দিত-আত্মা তবু নতি স্বীকার করেনি।
অসত্যের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আত্মশক্তি চালিয়েছে তা অবিশ্রান্ত দুঃসাহসী সংগ্রাম-দুঃখ জয়। মৃত্যুজয়ী আত্মা সগৌরবে তুলে ধরেছে