আউয়াল ওয়াক্তের নামাজ কখন পড়বেন?
আমাদের মসজিদে নামাজ ফজর- ৫:১৫, যহর-১:৩০ ও আসর ৪:৪৫ হয়, এটা কি আউয়্যাল ওয়াক্তের নামাজ?
উত্তর: প্রত্যেক ছালাতের মোট সময়ের প্রথম অর্ধাংশকে আউয়াল ওয়াক্ত বলা হয়। আর আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত করেছেন (আবুদাউদ ৪২৬,তিরমিযী ১৭০)
আবার যখন লোকেরা ছালাত দেরী করে পড়বে (অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে পড়বে না), তখন একাকী ছালাত আদায় করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সহীহ মুসলিম ৬৪৮, নাসাঈ ৮৫৯)
এ থেকে আউয়াল ওয়াক্তের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।
প্রচলিত ফযরের সালাত ৫:১৫ মিনিট হলে সেটা আউয়্যাল ওয়াক্তের মধ্যে পরে না। কেননা, ফযরের সালাতের উত্তম সময় যা হাদিসে এসেছে, মুহাম্মদ (সা) ফযরের সালাতে ১ রাকাতে ১৪০- ১৬০ আয়াত পড়তেন, ২য় রাকাতে ৬০ আয়াত পড়তেন। কিন্তু তার পরও সালাত শেষে অন্ধকার থাকতো যে সাহাবীরা একে অন্যকে চিনতে পারতো না।
أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: «إِنْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيُصَلِّي الصُّبْحَ فَيَنْصَرِفُ النِّسَاءُ مُتَلَفِّعَاتٍ بِمُرُوطِهِنَّ مَا يُعْرَفْنَ مِنَ الْغَلَسِ»
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সা) এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন যে, মহিলাগন চাদর আবৃত অবস্থায় বাড়ি ফিরে যেতেন অথচ অন্ধকারের কারনে তাদের চেনা যেত না। (আন-নাসায়ী-৫৪৫, ৫৪৬)
আবূ বারযাহ্ আল আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সলাত রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করে আদায় করতেন। তিনি ইশার সলাতের পূর্বে ঘুমানো এবং কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। আর ফাজরের সলাতে ষাট থেকে একশ’ আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করতেন এবং এমন সময় সলাত শেষ করতেন যখন আমরা পরস্পরকে মুখ দেখে চিনতে পারতাম না। (সহিহ মুসলিম-১৩৫০)
তবে, ফর্সা হওয়ার সময় ও পড়া যাবে। আবার ঘুম থেকে দেড়ি করে উঠলে, তখই পড়তে হবে। কেননা, কাযা সালাতের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। সবচেয়ে উত্তম হলো অন্ধকার দুর হওয়ার আগেই পড়া।
👉 যে দোয়া ১ বার পাঠ করলে রাত দিন অনবরত জিকিরের চেয়েও বেশি সওয়াব পাবেন!:
👉 সমস্ত গুনাহ মাফের দোয়া সমূহ:
👉 ফজরের নামাজের উপকারিতা / ফজিলত / বৈজ্ঞানিক উপকারিতা:
আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সূর্য (পশ্চিমাকাশে) ঢলে পড়ার পর নবী (সা) যোহরের সালাত আদায় করতেন। (বুখারী ৫৪১, ৫৪৭, ৫৯৯, ৭১১)
প্রচলিত যহরের সালাত ১:৩০ মিনিট যা ঠিক নয়। কেননা, দিন ছোট বা বড় হওয়ার জন্যে সালাতের সময় পরিবর্তিত হবে, এটিই নিয়ম। সারা বছর একই সময় যহরের সালাত পড়া উচিত নয়। বর্তমান সেপ্টেম্বর মাসে যহরের সালাত পড়ার উত্তম সময় হলো ১২: ২০ হতে ১২:৫০। এটাই উত্তম সময়, যা সৌদী সময়ের সাথে অনেক সাদৃশ্য পূর্ণ। তবে নেট থেকে সঠিক সময় জেনে ১ম ওয়াক্তেই সালাত পড়বেন। বিলম্বে সালাত পড়া মুনাফিকের ৪র্থ আলামত। (সূরা মাঊন- ৩+৪ ( ইবনে কাসির))
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রসূলুল্লাহ (সা) আসরের সলাত আদায় করতেন যখন ছায়া প্রতিটি বস্তুর সমান হতো। (সহীহ মুসলিম- ১২৯৬)
আপনার ও আপনার ছায়ার দৈর্ঘ্য যখন সমান হবে।
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন সময় আসরের সলাত আদায় করতেন যে, তখনো সূর্য কিরণ আমাদের কামরার মধ্যে ঝলমল করত। বেশ কিছুক্ষণ পরও কামরার মধ্যে ছায়া পড়ত না। আবূ বকর বলছেনঃ এরপরও বেশ কিছুক্ষণ উপরে উঠত না। (সহিহ মুসলিম, ১২৬৯)
এছারাও ১ম ওয়াক্তে সালাত পড়ার কতিপয় দলিল উল্লেখ করা হলো:
সহীহ মুসলিম, অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৪০;
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি যদি এমন ইমামের অধীনস্থ হয়ে পড় যে উত্তম সময়ে সলাত আদায় না করে দেরী করে আদায় করবে তাহলে কী করবে? আবূ যার বলেন – এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম (হে আল্লাহর রসূল!) , এরূপ অবস্থায় পতিত হলে আপনি আমাকে কী করতে আদেশ করছেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি উত্তম সময়ে সলাত আদায় করে নিবে। তারপরে যদি তাদের সাথে অর্থাৎ- ইমামের সাথে জামাআতে সলাত পাও তাহলে তাদের সাথেও আদায় করবে। এটা তোমার জন্য নাফল হিসেবে গণ্য হবে। (সহিহ মুসলিম ১৩৫১)
👉হেদায়াত লাভের গল্প-
👉হযরত আলী (রাঃ) ও ফাতেমা (রাঃ) একটি শিক্ষনীয় ঘটনা-
👉 যারা খুব বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন না, তাদের জন্য সহজ একটি আমল:
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃহে আবূ যার! আমার পরে অচিরেই এমন আমীর বা শাসকদের আবির্ভাব ঘটবে যারা একেবারে শেষ ওয়াক্তে সলাত আদায় করবে। এরূপ হলে তুমি কিন্তু সময় মতো (সলাতের উত্তম সময়ে) সলাত আদায় করে নিবে। পরে যদি তুমি তাদের সাথে সলাত আদায় করো তাহলে তা তোমার জন্য নাফল হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি তা না হয় তাহলে তুমি অন্তত তোমার সলাত রক্ষা করতে সক্ষম হলে। (সহিহ মুসলিম ১৩৫২)
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার বন্ধু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আমীরের বা নেতার আদেশ শুনতে ও মানতে আদেশ করেছেন যদিও সে একজন হাত-পা কাটা ক্রীতদাস হয়। আর আমি যেন সময় মতো (প্রথম ওয়াক্তে) সলাত আদায় করি। এরপরে তুমি দেখ যে, লোকজন (জামা‘আতে) সলাত আদায় করে নিয়েছে তাহলে তুমি তো আগেই তোমার সলাত হিফাযাত করেছ। অন্যথায় (অর্থাৎ- তাদের সাথে জামা‘আতের সলাত পেলে) তা তোমার জন্য নাফল হিসেবে গণ্য হবে। (সহিহ মুসলিম ১৩৫৩, ১৩৫৪, ১৩৫৫)
‘আবদুল্লাহ ইবনুস সামিত (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ যার তাকে বললেন – তোমরা অথবা বললেন (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তুমি যদি এমন লোকদের মধ্যে অবস্থান করো যারা সময় মতো সলাত আদায় না করে দেরী করে পড়ে তাহলে কী করবে? এরপর আবার নিজেই বললেন, তুমি সময়মত (প্রথম ওয়াক্তে) সলাত আদায় করে নিবে। তারপর জামা‘আতে সলাত হলে তাদের সাথেও সলাত আদায় করে নিবে। কারণ এটি তোমার জন্য বাড়তি সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য হবে। (সহিহ মুসলিম ১৩৫৬, ১৩৫৭)
যহরের সালাতের ওয়াক্ত আসরের পূর্ব পর্যন্ত এবং আসরের সময় মাগরিবের (সূর্যাস্তের) পূর্ব পর্যন্ত। এই দলিলের উপর বিত্তি করে প্রতিদিন শেষ ওয়াক্তে সালাত পড়া মুনাফিকের পরিচয় ছারা কিছুই নয়।
বাংলাদেশের প্রচলিত সালাতের সূচির সাথে (সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরের ও আশে পাশের দেশগুলোর) কোন মিল নেই। নিচের লিংক হতে সালাতের সঠিক সময় জেনে সালাত পড়বেন। পারলে পড়ে আবার জামাতের সাথে ফরজটা আদায় করবেন, তাহলে জামায়াতের ফজিলাত।
আল্লাহ আমাদের সাবাইকে সঠিক সময়ে সালাত আদায় করার তৌফিক দাও।
👉ইসলামের জন্য প্রথম জীবন দেন যে নারী-
👉হযরত মুসা (আঃ) ও আল্লাহ তালার কথোপকথন-
👉রাসূলুল্লাহ(ﷺ ) ও এক আগন্তুকের অবিশ্বাসনীয় ঘটনা-