মাজহাব মানা কি কতটুকু প্রয়োজন নাকি ওয়াজিব?
উত্তর : বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত চারজন ইমামের অনুসরণ মূলত চারটি মাজহাব নামে পরিচিত। তারা প্রত্যেকেই তাদের সময়ের বিখ্যাত আলেম ছিলেন। তাদেরকে অনুসরণ করা যাবে যতক্ষণ না কুরআন বা সহীহ হাদিসের বিপরীতে যায়। মনে রাখা ভালো যে শুধু ইমাম নয় প্রসিদ্ধ কোন সাহাবীদের কথা যদি মুহাম্মদ (সা:) বিপরীতে যায় সেটার পরিণাম খুবই ভয়াবহ।।
ইমাম অনুসরণ করতে চাইলে করতে পারেন, তবে সেই ইমামকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা যাবে। মাজহাব মানা সুন্নাত ও নয়, কারন নবী, সাহাবী, তাবীঈ, এমনকি ইমামরা ও মাজহাব কে অনুসরণ করেনি। মনে রাখবেন, আপনার লক্ষ্য হলো আল্লাহ আর মাধ্যম হলো মুহাম্মদ (সা)। ইমামদের সম্পর্কে কিছু তথ্য:
ইমামের নাম জন্ম মৃত্যু
- আবু হানীফা (রহ) ৮০ হিজরী ১৫০ হিজরী
- ইমাম মালেক (রহ) ৯৩ হিজরী ১৭৯ হিজরী
- ইমাম শাকেরী (রহ) ১৫০ হিজরী ২০৪ হিজরী
- আহমদ বিন হাম্বাল (রহ) ১৬৪ হিজরী ২৪১ হিজরী
বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বান শাহ ওলিউল্লাহ দেহেলভী (রহ) এর কথা যদি মেনে নেওয়া যায় যে ৪০০ হিজরীর আগে কোনো মাযহাব ছিল না, এবং ৪০০ হিজরীর পরে মানুষেরা মাযহাব সৃষ্টি করেছে, তার মানে এটা দাঁড়ায় যে আবু হানীফার ইন্তেকালের ২৫০ বছর পর হানাফী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম মালেকের ইন্তেকালের ২২১ বছর পর মালেকী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম শাফেরীর ইন্তেকালের ১৯৬ বছর পরে শাফেরী মাযহাব এবং ইমাম আহমাদের ইন্তেকালের ১৫৯ বছর পর হাম্বলী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে।
ইমাম আবু হানিফা (র) বলেন,
“যখন কোন হাদিস সহীহ সাব্যস্ত হবে, সেটাই আমার মাজহাব”।
রাদ্দুল মুহতার- ১ম খন্ড, পৃ ৪৬২
মাজহাব অর্থ মত, তাই মনে করবেনা যে তিনি তার মাজহাবের ঘোষনা দিয়ে গেছেন।
অন্যত্র বলেন,
“কারো জন্য আমাদের কথা মেনে নেওয়া বৈধ নয়; যতক্ষন না সে জেনেছে যে, আমরা তা কোথা থেকে গ্রহন করেছি”।
হাশিয়া ইবনুল আবেদীন ২/২৯৩
রাসমুল মুফতী, পৃষ্ঠা- ২৯, ৩২
শা’ রানীর মীথান ১/৫৫;
ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩০৯
👉 কোন সময়ে আল্লাহ ‘তালা পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন?:
👉 জান্নাতিদের জন্য কি কি নেয়ামত অপেক্ষা করছে?:
👉 হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে কিভাবে দোয়া চাইতে হয়?:
ইমাম মালেক (র) বলেন,
“আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কথা ভুল হতে পারে আবার ঠিকও হতে পারে। সুতরাং তোমরা আমার মতকে বিবেচনা করে দেখ। অতঃপর যেটা কিতাব ও সুন্নাহর অনুকুল পাও তা গ্রহন কর। আর যা কিতাব ও সুন্নাহর প্রতিকুল তা বর্জন করো”।
জানেউ বায়ানিল ইলম ২/৩২, উসুলুল আহকাম ৬/১৪৯
“রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর এমন কোনো ব্যাক্তি নেই যার কথা ও কাজ সমালোচনার উর্ধে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা) ই সমালোচনার উর্ধে”।
ইবনু আবদিল হাদী, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, আল ফতোয়া – আসসাবকী, ১ম খন্ড ১৪৮ পৃষ্ঠা, উসুলুল আহকাম ইবনু হাযম, ষষ্ঠ খন্ড ১৪৫ – ১৭৯ পৃষ্ঠা
এভাবে প্রতিটি ইমামের উক্তি রয়েছে যারা বলেছেন তাদের কথার যদি রাসুলের সাথে মিলে তাহলেই গ্রহণ করতে কারন তারাও মানুষ তদের ভূল হতেই পারে।
দ্বিতীয়ত, ইমামদের যুগে সকল হাদিস লিপিবদ্ধ ছিলোনা, তাই তাদের কাছে যে হাদিস পৌছে ছিল তার উপর ফতুয়া দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সব হাদিস লিপিবদ্ধ। তাই ইমামের কথা যদি সহীহ হাদিসের বাইরে যায় তাহলে সেটা বর্জন করা বাধ্যতামূলক।
তৃতীয়ত, ইমামরা মানুষ তাদের ভূল হয়েছে, তবে না জেনে বা তদের কাছে সহীহটা পৌঁছেনি বলে। কোন নির্দিষ্ট ইমামকে নয় বরং সকল ইমাম এমনকি বর্তমানের আলেমদের মধ্যে থেকে সঠিকটা নিতে হবে আর ভুল বর্জন করতে হবে। তাই যখন একজন ইমামকে অনুসরণ করবেন, তখন ভুলের মধ্যে পরবেন এটাই স্বাভাবিক। তাদের কথাগুলো হাদিস দিয়ে যাচাই করে তার পর গ্রহন করবেন।
বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে যে কোন তথ্য যাচাই করা খুবই সহজ, এ জন্যে শুধু বিখ্যাত আলেমদের বইগুলো পরতে হবে। আর দলিল দিয়ে যাচাই করতে হবে।
কেননা, আল্লাহ বলেন,
মুমিনগণ! যদি কোন ফাসিক ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও
সূরা হুজুরাত- ০৬
মুহাম্মদ (সা) বলেন, “কেউ যদি আমার নামে কোন কথা বলে আর তা যদি আমার না হয় পরিনাম জাহান্নাম”।
সহীহ বুখারী – ৫২
উমর (রা) আবু মুসা (রা) নিকট থেকে বাড়ির দরজায় গিয়ে সালাম দেওয়া ও উত্তর না পেলে ফিরে আসার হাদিস শুনে প্রমাণ চান যে কথাটি রাসুলের অন্যথায় হত্যার হুমকি দেন।
সহীহ মুসলিন- ১ম খন্ড পৃ ২১০
উমর (রা) একজন সাহাবীর ব্যাপারে যদি কঠরতা অবলম্বন করেন, তাহলে আমাদের কি করা উচিত? কোন ইমাম বা মাজহাবের কথা কুরআন ও সহীহ হাদিসের সাথে না মিললে সেটা গ্রহন করা যাবেনা। ইমামরা মানুষ, তাদের নিকটে সহীহ হাদিস না পৌছার কারনে ভুল করেছেন বলে আপনি ও ভুল করবেন এমনটা নয়। আর প্রত্যেক ইমাম সর্বচ্চভাবে মুহাম্মদ (সা) কে মানার চেষ্টা করেছেন।
তাই প্রত্যেক ইমামের সেই কথা মনতে হবে যা কুরআন ও সহীহ হাদিসের সাথে মিলে। মনে রাখবেন, মুহাম্মদ (সা) ব্যতিত অন্য কাউকে অন্ধ অনুসরণ করলে সফলতা নয় বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অতএব, মাজহাব মানার ক্ষেত্রে মিলিয়ে দেখবেন আমলটি মুহাম্মদ (সা) এর কিনা।
👉২৫ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস-
👉৩০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস-
👉মা বোনদের জন্য ১৫ টি হাদিস :-