কেন সবসময় অযু অবস্থাতে থাকা উচিত?
১) বিরতিহীন সওয়াবঃ
যদি কোনও ব্যক্তি অযু শুরুর আগে নিম্নলিখিত দু’আ পাঠ করে তবে যতক্ষণ না সে অযু ভেঙ্গে ফেলবে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য সওয়াব লিখতে থাকবেন:
بسم الله وحمد الله
বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ
অনুবাদ: আল্লাহর নামে এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
সাইয়্যিদুনা আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: হে আবু হুরাইরাহ! তুমি যখন অযু (করার নিয়াত) করবে তখন বলঃ বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ, তাহলে পাহারাদার ফেরেশতারা অনবরত সওয়াব লিখতে থাকবেন যতক্ষণ না তুমি সেই অযু ভেঙ্গে ফেল। (আল-মু’জামুস সাগীর, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা ৭৩৭৩)
‘আল্লামা হায়সামি (রহিমাহুল্লাহ) সনদটিকে হাসান বলেছেন, (মাজমাউয জাওয়াইদ, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ২২২- ওযুর সময় বিসমিল্লাহ বলার অধ্যায়।
২) মুমিনের আলামত, নেফাকী থেকে মুক্তিঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন ব্যতীত অন্য কেউ ওযুর যথাযোগ্য হিফাযত করে না। [সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৭,আহমাদ ২১৮৮৩, ২১৯২৭; দারিমী ৬৫৫,মুয়াত্তা মালিক ৬৬]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “একজন সত্যিকারের মুমিনই শুধুমাত্র তার ওযুকে সংরক্ষণ করে” [অর্থাৎ, অভ্যাসগত ভাবে ওযু অবস্থাতে থাকে]
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস: ২৭৭-২৭৮-২৭৯ ও সহীহ ইবনে হিব্বান; আল ইহসান, হাদীস: ১০৩৭) ইমাম ইবনে হিব্বান (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটিকে সহীহ বলে ঘোষণা করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(বাহ্যিক) পবিত্রতা অর্জন করা হল অর্ধেক ঈমান।” মুসলিম ২২৩
৩) শহীদের মর্যাদা লাভঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সাইয়্যিদুনা আনাসকে (রাদিয়াল্লাহু‘ আনহু) বলেছিলেন, “হে আমার বৎস! যদি পার তবে সবসময় ওযু অবস্থায় থাক, কারণ যদি মৃত্যুর ফেরেশতা কারও প্রাণ হরণকরে এবং সে ব্যক্তি তখন ওযু অবস্থায় থাকে, তাহলে সে শাহাদাহ (শহীদদের মর্যাদা) লাভ করে।
[মুসনাদ আবী ইয়া’লা, হাদীস: ৪২৭৭ এবং ৪৬১২, আল-মু’জামুস সাগীর, খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ৩২-৩৩, তারিখ ইবনে আসাকির, খণ্ড ৯ পৃষ্ঠা ৩৪০-৩৪৫-দারুল ফিকর, মাজমাউয জাওয়াইদ, খণ্ড ১ পৃ ২৭১-২৭২]
৪) জান্নাতের চাবিঃ
ওজুর সবচেয়ে বড় মাহত্ব হ’ল এটি নামাজের চাবি এবং নামাজ জান্নাতের মূল চাবিকাঠি।
(মুসনাদে আহমদ হাদীস ১৪৫৯৭)
৫) জাহান্নাম থেকে দূরে থাকা উপায়ঃ
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভালভাবে উযূ করে সওয়াবের নিয়্যতে তার রোগগ্রস্ত মুসলিম ভাইকে দেখতে যাবে, তাকে জাহান্নাম হতে সত্তর খারীফ (সত্তর বছর) পথ দূরে রাখা হবে।
[সূনান আবু দাউদ ৩০৮৪] ইমাম আবু দাউদ (রহিমাহুল্লাহ) এর সনদে কিছুটা দূর্বলতা থাকলেও এটি তাবারানীর একটি উত্তম সনদ দ্বারা সমর্থিত।
৬) মর্যাদা বৃদ্ধি, হজ্জের সমান সওয়াবঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যাক্তি উত্তমরূপে অযু করে কেবল সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে রওয়ানা হলে তার মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার একধাপ মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার একটি গুনাহ মাফ করেন।তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আহমাদ ৭৩৮২, তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যতক্ষণ কোন বান্দা মসজিদে নামাযের জন্য অপেক্ষা করবে, ততক্ষগ সে নামাযী হিসেবে গণ্য হবে।
ঐ ব্যক্তির অযু নষ্ট না হওয়া বা ঘরে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য এইরূপ দুআ করতে থাকেঃ “ইয়া আল্লাহ্! তাকে মাফ করে দাও। ইয়া আল্লাহ্! তাঁর উপর তোমার রহমত নাযিল কর।”[সূনান আবু দাউদ ৪৭১]
আবু উমামা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে নিজের ঘর থেকে ওজু করে (মসজিদের দিকে) বের হয়, সেই ব্যক্তির সওয়াব ইহরাম বাঁধা হাজির মতো হয়।’ (আহমাদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২১২; আবু দাউদ, হাদিস নং: ৫৫৮; তারগিব, হাদিস নং: ৩২০)
সালাতের পূর্বে মিসওয়াকের ব্যবহার, সালাতের সওয়াব ৭০ গুন বৃদ্ধি করে
সাইয়্যিদুনা জাবির (রাদিয়াল্লাহু’আনহু) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: ‘মিসওয়াক ব্যবহারের পরে দুই রাক‘আত সালাত ‘মিসওয়াক ছাড়া ৭০ রাক‘আতের চেয়ে উত্তম। (কিতাবুস সিওয়াক, আবু নুয়াইম; দেখুন তারগীব, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ১৬৮) ‘আল্লামা মুনযীরি (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন সনদটি হাসান
৭) নামাজরত ব্যক্তির মত সওয়াব পাওয়ার সুযোগঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যতক্ষণ কোন বান্দা মসজিদে নামাযের জন্য অপেক্ষা করবে, ততক্ষগ সে নামাযী হিসেবে গণ্য হবে।
ঐ ব্যক্তির অযু নষ্ট না হওয়া বা ঘরে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য এইরূপ দুআ করতে থাকেঃ “ইয়া আল্লাহ্! তাকে মাফ করে দাও। ইয়া আল্লাহ্! তাঁর উপর তোমার রহমত নাযিল কর।”[সহীহ মুসলিম ১৩৮১, সূনান আবু দাউদ ৪৭১]
আইয়াশ ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ইয়াহইয়া ইবনু মাইমূন তাকে বলেছেন যে, তিনি সাহল আস-সাঈদী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মসজিদে সালাতের অপেক্ষায় থাকে সে যেন সালাতের মধ্যে থাকে। সহিহ, তা’লিকুর রাগিব (১/১৬০)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে মাগরিবের ছালাত আদায় করলাম। তারপর যার চলে যাওয়ার সে চলে গেল, আর যার থাকার সে (মসজিদে) থেকে গেল। একটু পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এত দ্রুতবেগে ফিরে এলেন যে, তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হ’তে লাগল।
তিনি তাঁর দু’হাঁটুর উপর ভর করে বসে বললেন, ‘তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের প্রতিপালক আকাশের একাটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের সামনে তোমাদেরকে নিয়ে গর্ব করে বলছেন, ‘তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখ, তারা এক ফরয আদায়ের পর পরবর্তী ফরয আদায়ের জন্য অপেক্ষা করছে’।[ইবনু মাজাহ হা/৮০১; আল-মু‘জামুল কাবীর হা/১৪৫২৩]
ইবনে বাত্তাল বলেন, ‘অনেক বড় পাপী বান্দা যদি কামনা করে যে, কোন কষ্ট ছাড়াই তার পাপগুলো মিটিয়ে দেওয়া হোক, সে যেন ছালাতের পর তার মুছাল্লাতে (তাসবীহ-তাহলীলের মাধ্যমে) অবস্থান করাকে গনীমত মনে করে। কেননা এতে তার দো‘আ কবুল করা হয় এবং ফেরেশতারা তার জন্য দো‘আ করে ও তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে।
৮) জিহাদের সমান সওয়াবঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা সমবেত সহচরদের উদ্দেশ্যে) বললেন, “তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলব না কি, যার দ্বারা আল্লাহ গোনাহসমূহকে মোচন করে দেবেন এবং (জান্নাতে) তার দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?”
তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) কষ্টকর অবস্থায় পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, অধিক মাত্রায় মসজিদে গমন করা এবং এক অক্তের নামায আদায় করে পরবর্তী অক্তের নামাযের জন্য অপেক্ষা করা। আর এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ। এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ।” মুসলিম ২৫১, তিরমিযী ৫১, নাসায়ী ১৪৩
৯) গুনাহ (সগীরা) মাফের উছিলাঃ
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে আছে, নবীজী বলেছেন, মুসলিম বা মুমিন বান্দা যখন অযু করে, যখন সে মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে বা পানির শেষ কাতরার সঙ্গে ওই সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে দু চোখ দ্বারা করেছিল।
যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওই সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে হাত দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই পা ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওই সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে সে চলেছিল। এভাবে সে গুনাহ থেকে পাকসাফ হয়ে যায়।-সহীহ মুসলিম হাদীস ২৪৪
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অযু করে এবং উত্তমরূপে অযু করে, তার শরীর থেকে, এমনকি নখের নিচ থেকেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৫
‘উসমান ইবনে ‘আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এই ওজুর মত ওযু করতে দেখলাম। অতঃপর তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি এরূপ ওযু করবে, তার পূর্বকৃত পাপরাশি মাফ করা হবে এবং তার নামায ও মসজিদের দিকে চলার সওয়াব অতিরিক্ত হবে।” বুখারী ১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩, মুসলিম ২২৯
১০) হাশরের ময়দানে উজ্জ্বলতার মাধ্যমঃ
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের সামনে হাউযে কাউসারের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, মানুষ যেমন তার হাউয থেকে অন্য মানুষকে সরিয়ে দেয় তেমনি আমিও সেদিন কিছু মানুষকে সরিয়ে দিব।
সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, সেদিন কি আপনি আমাদের চিনতে পারবেন? নবীজী ইরশাদ করলেন, বল তো, কারো যদি হাতে ও পায়ে সফেদ চিহ্ন বিশিষ্ট কিছু ঘোড়া থাকে এবং সেগুলোকে অসংখ্য কালো রংয়ের ঘোড়ার মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে সেই ব্যক্তি কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না?
সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ, পারবে। ইয়া রাসূলুল্লাহ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তেমনি তোমাদেরও এমন কিছু চিহ্ন হবে যা অন্য কোনো উম্মতের হবে না। কিয়ামতের দিন তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও অযুর কারণে ঝলমল করতে থাকবে।’-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৬-২৪৯ অবলম্বনে।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার বন্ধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “(পরকালে) মু’মিনের অলংকার তত-দূর হবে, যতদূর তার ওজুর (পানি) পৌঁছবে।” মুসলিম ২৫০, নাসায়ী ১৪৯, আহমাদ ৭১২৬, ৮৬২৩
১১) জান্নাতের ৮টি দরজা দিয়ে প্রবেশের সুযোগঃ
উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পরিপূর্ণরূপে ওযু করে যে ব্যক্তি এই দো‘আ বলবে, ‘আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরাসূলুহ।’
অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দাস ও প্রেরিত দূত (রাসূল)। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে।” মুসলিম ২৩৪
অন্য একটি সহীহ হাদীসে আরো একটি সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হযরত উকবা ইবনে আমের রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
কোনো মুসলিম যখন সুন্দরভাবে অযু করে অতঃপর চেহারা-মন উভয়কে আল্লাহ অভিমুখী করে দণ্ডায়মান হয় এবং করে দু রাকাত নামায আদায় করে তখন তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।-সহীহ মুসলিম হাদীস ২৩৪
১২) প্রহরী ফেরেশতাদের নিরাপত্তা ও দোয়াঃ
ইমাম ইবন হিব্বান (রঃ) আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অজু অবস্থায়) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে।
অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ্র সমীপে ফেরেশতাটি আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করে বলে, হে আল্লাহ! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল’’
[সহীহ ইবন হিব্বান ৩/৩২৮-৩২৯, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১/৩১৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
যখন তুমি বিছানায় গমন করবে তখন নামাযের ওযুর মতো ওযু করে নাও। [সহীহ বুখারী ২৪৭]
১৩) দোয়া কবুলের সুযোগঃ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে মুসলিম রাত্রে পাক-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর যিকর করে ঘুমিয়ে যায়, তারপর রাত্রে জেগে উঠে আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহ তাকে (দুনিয়া ও আখিরাতে) অবশ্যই কল্যাণ দান করেন।
(আহমাদ, আবূ দাঊদ ৫০৪২, সহীহ আত্ তারগীব ৫৯৮, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৫৪)
‘উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে লোক রাত্রে ঘুম থেকে জেগে এ দু‘আ পাঠ করবেঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার, ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত গুনাহ হতে বাঁচার ও সৎকার্য করার ক্ষমতা কারো নেই।)।
তারপর বলবে, ‘‘রব্বিগ্ ফিরলী’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর) অথবা বললেন, পুনরায় দু‘আ পাঠ করবে। তার দু‘আ কবূল করা হবে। তারপর যদি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে ও সালাত আদায় করে, তার সালাত কবূল করা হবে। [বুখারী ১১৫৪]
আবুল ওয়ারদ ইবনে হামিদ রাহ. বলেন, আমি আব্দুর রহমান ইবনে সালমানী রাহ.-কে বললাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীর সঙ্গ লাভ করেছেন, যার থেকে আপনি কোনো হাদীস বর্ণনা করেন? তিনি বললেন হাঁ! আমি একাধিক সাহাবী থেকে হাদীস শুনেছি।
তারা বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন অযু করে বিছানায় যায় অতঃপর সে যিকির করতে করতে ঘুমায়, তার বিছানা তার জন্য মসজিদ হয়ে যায়। অথবা জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত পুরো সময় তার নামাযের মতো কাটে। -আততাহুর, কাসেম ইবনে সাল্লাম
ইমাম ‘আবদুর রাজ্জাক (রহিমাহুল্লাহ) এ বর্ণনাটি তাবেঈ আবু মুরাইয়া আল‘ ইজলি (রহিমাহুল্লাহ)’-এর বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন
(মুসান্নাফ ‘আবদুর রাজ্জাক, হাদীস: ১৯৮৩৭. তথ্যসূত্র: ফাতহুল বারী, হাদীস: ৬৩১১, খণ্ড ১১ পৃষ্ঠা ১১০)
১৪) আল্লাহ্কে সিজদার অনুমতিঃ
সাইয়্যিদুনা আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু ’আনহু) বলেছেন:
‘যখন কেউ ঘুমায়, তখন তাঁর আত্মা (রুহ) আল্লাহর আরশে উঠে যায়। যদি সে ওযুর সাথে শুয়ে থাকে তবে আত্মাকে সিজদা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
যদি সে নাপাক অবস্থায় শুয়ে থাকে তবে সিজদা র অনুমতি দেওয়া হয় না। ’
(ইবনুল মুবারক, কিতাবুয যুহুদ, হাদীস: ১২৪৫. আরও দেখুন: ফাতহুল বারী, হাদীস: ১১৪৯)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
তুমি অযু ছাড়া ঘুমোতে যাবে না। কেননা সকল রূহ পুনরুত্থিত হবে ঐ অবস্থার ওপর যে অবস্থায় তা কবজ করা হয়েছে।
ورجالهثقاتإلاأبايحيىالقتاتهوصدوقفيهكلام ) فتحالباريلابنحجر (১১/ ১১০)
👉 আপনি কি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করছেন ? মানসিক শান্তি কিভাবে পেতে পারি ?:
👉 আপনি কি পাপ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন? আপনি কি জানেন না কীভাবে ক্ষমা চাইতে হয় ?: